
বিমান মৈত্র-র কবিতা
লেখন এক
অবাধ্য কামের সামনে নৈসর্গিক বনভোজনের পালা, সম্মোহন, বিগ্রহ দর্শন, তুলসী, দুর্বাদল, বেলের পল্লব আদি গলবস্ত্র তথা — এ বাথানের সুলভ শৌচালয়ে সমস্ত দুর্লভ সম্ভার মজুত, উপলব্ধ যথার্থ সময়ে। এই নামল ঝড়জল পূর্বাভাস দিয়েছে আগেই। যেসব সুখের পাখি আসেনি এখনও, কোঁচানো পরিধানের ভাঁজে ভাঁজে ইচ্ছে পূরণের কথা জলের দরে বিক্রি করতে তাদের জন্য সে গুলে নেয় সন্ধ্যা ও রাত্রির সাথে পাউডার ও পমেটম সে হয় এক হরবোলা বর্ণের হাস্যকর আলো ঝুলিয়ে দেয় বাতির মাস্তুলে দড়ি বাঁধা গরুর খুটো লক্ষণ গন্ডির চেয়ে বড় মজবুত তুমি হে বিক্রয়কর মুক্ত শনির পাঁচালী।
লেখন দুই
লালন। দর্পণের সামনে অবনত হতে হয় অতঃপর; অবোধ ক্ষিদের মত; এ সময় গোলাপী অন্ধকারের পাপড়ি মুখ খোলে, শোনা যায়, শুনি —— গোনা যায়, গুণি …. ঢেউ বল, মোহনায় কতগুলো নৌকা আছে নিরন্তর প্রতীক্ষার বল, যে যা বল, মেনে নেব নিরুপম বাধ্যতায় —– । টোপের ভিতরে এক দয়াময় সরলতা বাস করে জেনে সরল পুঁটির মত আমরাও একবার জেনে নেব মায়া কেন সংজ্ঞাহীন নয়।
লেখন তিন
বদল। অবস্থান সাপেক্ষে, মাঠে আমার জন্য তার একটিই মৌলিক চেয়ার। না, এ কোনও সংগীত চক্রান্ত জনক বধ্য নয় চিহ্নিতকরন; অহম্ এখানে স্থির বসো। তাকে ঘিরে যে অসংখ্য বলয়-এ-চেয়ার, তাদের স্বতন্ত্র কোণ, দর্শন-বোধের —- একটি আমার। আমি দেখি —- দ্যাখো, দ্যাখো, গোড়ালির ডান দিকে তিল —–
উড়ানসূচক এই তিল —- যথা বদল হতে হতে আমাদের ভো — কাট্টার পিছনে ছুটছে অধিবাসের কাগজকুড়ানি, বৃদ্ধ – বনিতা- আবাল। আমরাও। যা ভাজ্য, তা ভাজ্য, তা ভাজ্য হয়ে আছে চিরকাল। ; হয় সে পাঞ্চালী। আমরাও। শুধু তেইশ লালন হাঁটে নদী তীর ধরে। কতদূর ঘর তার কত যেতে পারে।
লেখন চার
মেট্রো আসে, মেট্রো যায়। অপেক্ষার অজস্র কামরার দিকে চোখ পড়ে, নীবিবদ্ধ পাটকেলে হোঁচট খেল জবাবদিহির বিকলাঙ্গ রোদ, এখুনি সে বুড়িদিদের পানাপুকুরে ডুব দিয়ে গায়ে মেখে নেবে আরো একটি রাত, অম্নি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসবে ঝাঁকে ঝাঁকে বনিতা জাঙালের অপরিশ্রুত আত্মা, ওদের হাতে মুঠো মুঠো আলোর চাক ভাঙা মৌমাছির গুঞ্জন, প্রতিটি মিছিলে তুমি ওদের দেখতে পাবে, দেখতে পাবে যতদিন আদালত চলবে, দেখতে পাবে যে দিন তুমি একাকীত্বের ভয়ে আত্মমিথুনে মগ্ন হয়ে নিজের বিদল নির্মাণ করেছিলে।
লেখন পাঁচ
আজকাল ছুটির সময় ইস্কুলের গেটে গেটে কানুবাবুদের লিফলেট বিলি করতে দেখা যায়।
নুব্জ্যতা কেবলই অবোধ শাবকের মতো ঘাসফুলের দিকে নুয়ে পড়ে। বিকেলেবেলা দুধেল গাইয়ের পুরনো দুঃস্বপ্নগুলো আবার চাগাড় দেয়। ঝিমিয়ে পড়া সূর্য, একটু পরেই আগুনের অন্ন পুনর্জন্ম নেবে আর তখনই পেটের মধ্যে একটা কাটা রেকর্ড, পাক খেতেই থাকে রেকর্ডটা, খেতেই থাকে পাক একই দিকে, এক কান কাটা ঘুড়ি মত, কানুবাবু আলগা লুঙ্গি টাইট করতে করতে ছুটে আসেন, ওরে বাবা শোন্ শোন্, এদিকে কে কার কথা শোনে, পাক খেতে খেতে একটা অগ্নি পিন্ডের গর্ভপাত বাঙ্ময় হওয়া অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়, অস্পষ্ট আলোয় অসীম শুন্যতা থেকে শব্দের মৌলিক উপাদানগুলো অব্যক্ত থেকে ব্যক্ত থেকে অব্যক্ত থেকে………….
গর্ভপাত থেকে গর্ভবতী থেকে গর্ভপাত থেকে ……. পৌনঃপুনিক ইস্তাহার ………
লেখন ছয়
সামান্যই তফাৎ দূরত্বের ধূসরতা থেকে
তবুও কি কোরে নিরন্তর
এই প্রশ্নের টুকরোগুলোই
যা স্বভাবত মিলিয়ে যায়, হারিয়ে যায়
গল্প হয়ে ওঠে।
অর্থাৎ কয়েকটা আকস্মিকতা
কিছু বিবিধ বর্ণের পাতা, কিছু উদ্ধৃতি
আর নিজেকে বদলে ফেলার একটি চোরা
সুযোগ, যেমন সেই তামাটে আর
তার গভীর রেখাগুলো, আমাদের কানুবাবুর,
পায়ে দোমরানো পাতাবাদাম মুখ
গালের চামড়া আলগা, বাতাসে কম্পমান
রাণী রাসমণি ঘাটের গঙ্গার
হাঁটুডোবা সিঁড়িতে দাঁড়ানো
গামছা ভিজিয়ে মাথায় জল ঢালছেন
তার দুটি অন্ডকোষেই হাইড্রোসিল
বাস করত… বিশেষ বৃহৎ
শিশুরা যখন আবদার করত
দাদু নির্বিকার
ফোগলা হাসি, বলত অই দ্যাখ্ …..
হাসতে হাসতে ছুটে পালাত ওরা;
পড়ে থাকত উসৃঙ্খল জল
আর মাছের লেজের হাসি
মিলেমিশে কলসী থেকে চলকে পড়ত।
লেখন সাত
ফিরে যাবে। আমিও। তবু তার আগে। কার্বাঙ্কালের অভিমুখহীন অবয়ব থেকে তমোঘ্ন অক্ষরের অগ্রসর হয় হলুদ ভঙ্গুর। তার অশ্রুত গায়কী শুনে যাও।
বাতির আলোর মৃতদেহের জন্য মোমের ছোট ছোট অদৃশ্য কোটর ওই শুন্যস্থানে। কাছে যেতে হবে। জেনে নেব মাথার উপরে যে বটগাছের লজ্জিত মুখ উধাও, নীচে সে অখিল। তাহার — কথার বাতাস উত্তেজনায় কম্পমান হলে দাবানলে ব্রীড়ার তন্ত্রী বড় মহীয়ান হয়। দাবানলে ভয়, হয়তো ততক্ষণে আমরা টালা ব্রীজ পেরিয়ে খেয়াঘাটে, উড়ানভূমিতে।
লেখন আট
যেখানে বজ্রপাত সহ বৃষ্টির কথা ছিল
মেঘ কোন দূরাগত জলচরীর করুণ গোঙানি । ডিঙি বেয়ে চলে গেল গুমরে ওঠা ছবি যা আঁকা হয়েছিল আনমনা অসতর্কতায় আদতেই ছবি হয়ে উঠেছিল কিনা সে জানে না, জানে শুধু পানিফুলের চোখে এক অব্যক্ত শিহরিত দ্যুতি আছে যা একমাত্র বন্ধচোখ জানে। গাছ ভরা হলুদ ফুলকি চাল, তরলের উত্তল অবতল ফেলে আগুয়ান পানিফুল ডিঙি নৌকাটি, সে শুধু জানে ডিঙি ছোট তবু সে তরণী এবং দুই থেকে এক যখন জলরঙ হয়, বৃষ্টি অবশ্যম্ভাবী, সে শুধু জানে ডিঙি নৌকার অন্তরে একটি প্রকোষ্ঠ থাকে, দুইয়ে দুইয়ে এক হলে বজ্রপাত সহ কফিনের গান শোনা যায় আর জানে, বট ফলের রেনু ভাঙতে ভাঙতে শ্বেতকেতুর বিহ্বল পরিণতি।