
ফুয়াদ হাসানের কবিতা
ফেইকবুক
১.
কেউ হয় কবি দেয় যত ছবি ঝাড়ে এক বোধ ক্ষোভ প্রতিশোধ ছাড়ে হেরে গান তিনি অভিধান নিয়মিত পোস্ট নিমিশেই রোস্ট বহুত শেয়ার কার মুখ ভার কয়টা লাইক গুণে ঠিক ঠিক পাঁচ-কে হয়েছে তবুও রয়েছে অন্ধ ফলোয়ার কত শত ভাঁড় কাকে যেন খুঁজি পাঠায় ইমোজি হাসি ও কান্না হয়েছে আর না কমেন্টের ঘরে কারা হেলে পড়ে নিশি ম্যাসেঞ্জারে ফাউ গুতা মারে ঐ তর্কবাগীশ কিছু নিরামিষ কেউ থেকে নেই না থেকেও সেই আছ— নীল বাতি জাগে সারা রাতি খুলেছে বাজার দানবাক্সটার বিষ মাখা সাঁই খামোখা লাফাই এই হালচাল হতে ভাইরাল হয় হাতাহাতি তালি নাকি লাথি চায় সংঘাত আজ থেকে বাদ আবার তো ধরি মিছরির ছুরি চলে যায় কত কেউ অবিরত বারবার ঠকে নতুন মোড়কে তুলে রাখে হাত নেই জাতপাত কারো তালা মারা কে লাগাম ছাড়া সবকিছু খোলা পোস্ট আলাভোলা হঠাৎ লাইভে ফের দেখা দিবে ধমকের রোষে এমন আপোষে পুড়ে ছাই বাড়ি হয় চাঁদমারি কান নিল চিলে তাই তো মিছিলে কুশপুত্তলিকা লাল-কালো চিকা সকল ব্লগার শালাদের মার সেটা ভাইরাল চলে গালাগাল দোষটুকু কার জুকার বার্গার!
২.
বন্ধুত্ব ক্ষণিকের এখানে
শত্রুতা চিরস্থায়ী
৩.
যে বন্ধু চলে গেছে
তার সঙ্গে দেখা হয়
অন্য বন্ধুর তালিকায়
আড় চোখে দেখে নিই একবার
এ-ক’দিনে বদলে গেছে চেহারাটা
দীর্ঘ মহামারীর পর যেমন পৃথিবী
ঝগড়াঝাটি ছিল না কিছু
রাহমান-মাহমুদ বিষয়ক তর্ক বিতর্কও
ঝামেলা হয়নি কোন বান্ধবীকে নিয়ে
মাঝে মধ্যে দেখা হয় তার সাথে
বিয়ে বাড়ি, আড্ডায়, রাস্তায়
যে বন্ধু চলে গেছে
তার সাথে দেখা হয়
কোন এক শবযাত্রায়
৪.
আমাকে শুনতে
কিছু ডাটা খরচ হতে পারে
দেখতে চাইলে
কয়েক মেগাবাইট
একসাথে দেখতে ও শুনতে চাইলে
খরচ হতে পারে সর্বোচ্চ সিকি জিবি
আমাকে পেতে কোনো খরচ নেই
৫.
রবিদা রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে ঝুলিয়ে রেখেছি,
জীবন দাশের নামে কেউ একজন ফাউ একাউন্ট চালায়, দুদিন পর পর সুরঞ্জনার ছবি দেয়, বনলতারও, নতুন কবিতা পোস্ট করে, সেখানে আবার কমেন্ট করে বুদ্ধদেব, সজনীকান্তও। মধুসূদন আনফলো করে রেখেছি— বেশি উল্টোপাল্টা বকে, আনফ্রেন্ড করে দিয়েছি বঙ্কিমচন্দ্রকে,নজরুল তো একেবারে ব্লক, নার্গিসকে নিয়ে এতো নাকিকান্না,আর ভালো লাগে না! বিভূতিভূষণের ওয়ালে দু’জন মানিকবাবুর সাথেই দেখ হয়ে যায় প্রায়,ঋত্বিক ঘটক কী-সব সর্বহারাদের নিয়ে ট্যাগ করে সকলকে, আইনস্টাইনতো আজকাল অবৈজ্ঞানিক কথাবার্তা নিয়ে সরগরম করে রাখে চারপাশ, জিহ্বা বের করা ছবিটার নীচে হাজার কে হাসির ইমোজি। মার্ক্সকে কেউ চেনেই না এখানে, দুদিন পরপর দাস ক্যাপিটেল থেকে কয়েক লাইন তুলে দেয়, একটাও যদি লাইক পেতো বেচারা, এ জগত চার্লি চ্যাপলিন আর পুঁজিবাদের, অথচ চে’গুয়েভাটার ছবিতে লাইকের ছড়াছড়ি, বেশিরভাগই নারী।
লালনের এমন ছবিটা কে ভাইরাল করে দিলো, খালি গায়ের সক্রেটিসকে দেখে একপ্রকার লজ্জায় পড়লাম, তার বন্ধু তালিকায় পেয়ে গেলাম হোমার, বাল্মিকী, শেক্সপিয়ার, দেখছি একপাশে সার্ত্রে ও ব্যুভেয়ারও চুপিসারে বসে আছে। প্লেটোকে পেলাম না খুঁজে, এসব ব্যবহার করে না হয়তো বিদ্যাসাগরের মতো, ভ্যানগঁগ, দালিকে খুঁজে পেলেও পেলাম না পিকাসো, ভিঞ্চিকে! প্রিন্সেস ডায়না আছে জানি কিন্তু ওটা কী আদতে মেরিলিন মনরোই ছিল! সেদিন সুচিত্রার প্রোফাইল খুলে দেখি লক করা, ইনবক্সে একটা ম্যাসেজ পাঠাবো ভাবছি, ‘পথে হলো দেরি’
৬.
এই পাঁচ হাজার বন্ধুর ভেতর
কে আসবে বল বাবার অসুখে
বা’কাঁধে রাখবে সান্ত্বনার হাত
কে এসে বোনের বিয়ে সামলাবে
বন্যায় ধরবে ভেসে যাওয়া চৌকাঠ
এতো ভালোবাসার বন্ধুর মধ্যে
পাবে কি কাওকে বিষণ্ন বিকেলে
কাকে দেখা যাবে আড্ডায় ও গানে
ঠিক বুঝে নিবে কথাটার মানে
আসবে ক’জন তুমি মরে গেলে