রুবী সাউ -এর কবিতাগুচ্ছ

রুবী সাউ -এর কবিতাগুচ্ছ

হে প্রজন্ম, আমায় তথাগত করো!

অভ্যুদয়

বৃষ্টি ঝরে গেছে অবিরাম
শনাক্ত গুলির স্তম্ভিত প্রাপ্তির ধারাপাতে
যেন ঝরে যাবে জেনে এই ফিরে যাওয়া
ক্লান্তিকর পৃথিবীর বুকে

বারুদের গন্ধ ছাপিয়ে পোড়া চামড়া
অসহায় আর্ত চিৎকার
অন্ধকারে মিশে যায়

মানচিত্রের নীচে দীর্ঘশ্বাস
দুঃখের গীতবিতান
অঙ্কুরিত হয় মাস সাল তারিখ

আমার মেয়ে কিংবা তোমারই ছেলে
না-ফেরার দেশে অভিমানী চোখে
ঘুমোতে যায়…

‘সুখেষু বিগতস্পৃহ
দুঃখেষু অনুদ্বিগ্নমনা’

হে প্রজন্ম , আমায় তথাগত করো!

ধ্বংসস্তূপে শব্দহীনতা

ইটের স্তূপে চাপা পড়ে গেছে নাম
নাম না-থাকা শিশুদের মুখ
তাদের শেষ হাসি এখন
বুলডোজারের নিচে কুয়াশার মতো গলে যায়।

একজন বৃদ্ধার ঠোঁটে তখনও লেগে—
এক ঢোঁক চা, কিছু বলতে চেয়েছিল
ততক্ষণে ট্যাঙ্ক ঘুরে গেছে রাস্তায়।

আমরা দেখি
খুলে যাওয়া দরজার ফাঁক দিয়ে
কোনো শহর আর শহর থাকে না,
থাকে এক ঝাঁক ঘুমহীন ছায়া।

পোড়ানো বইয়ের পৃষ্ঠায়
একটি কবিতা বেঁচে থাকে
তুমি কি শুনতে পাও?
সে-ই বলে:
‘তোমরা কেউ নেই, তথাগত এসে গেছে—
চোখে আগুন, বুকে জল, হাতে মাটি।’

করুণা ও ক্রোধের মাঠ

ধ্বংস পেরিয়ে আমরা হেঁটে যাই
একটি মাঠের দিকে
যেখানে মৃত শিশুর নাম লেখা
জ্বলন্ত ঘাসের উপর।

বীজেরা কাঁপে
জল নয়, রক্ত সেচ পায় তারা
মাথা তোলে

তোমরা যারা খেয়াল করোনি
তাদের নিঃশ্বাস জমে আছে বাতাসে
তাদের কান্না মিশে গেছে ধানগাছের দোলায়
তাদেরই স্মৃতি থেকে জন্ম নেবে প্রতিরোধ।

একজন নারী দাঁড়িয়ে থাকেন—
হাতে একটি কবরের মাটি,
তিনি বলেন,
‘তথাগত এসেছিল,
কিন্তু তোমরা চিনলে না তাঁকে।
তিনি কৃষকের পোশাকে কাঁদছিলেন।’

জননীর প্রতীক্ষা

তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন—
ভাঙা চূড়ার নিচে, একা
হাতভর্তি কবরের মাটি
চোখে ধানফুলের ঘ্রাণ।

সব হারিয়ে ফেলার পরও
তিনি প্রতীক্ষা করেন,
না কারো ফেরার
না প্রতিশোধের
শুধু এক পরিচয়ের—
‘এই মৃতের মা কে?’

তাঁর নরম হাত ছুঁয়ে যায়
পোড়া কিশোরের গাল
ভেঙে পড়ে না,
তবু হিমশীতল বাতাসে
কাঁপে তাঁর শাড়ির আঁচল।

তিনি বলেন না কিছু,
তথাগত এসে গেছে কি না
জানেন না নিশ্চিত
তবে রাতের তারার মতো
তাঁর চোখে জ্বলে থাকে এক আলো—
যা আমাদের তর্জন নয়,
ক্ষমার দিকে নিয়ে যায়।

স্বপ্নে আগমন

রাত গভীর হলে
তিনি ঘুমিয়ে পড়েন ধ্বংসস্তূপের পাশে
চোখের পাতা ভিজে যায়
কিন্তু হৃদয় শান্ত, আজ যেন অপেক্ষার শেষ।

স্বপ্নে তিনি দেখেন—
এক কৃষ্ণাভ পুরুষ
পায়ে হাঁটছে ছাইয়ের উপর
চোখে দীপ্তি, কাঁধে মৃত শিশুদের ভার।

তাঁর গায়ে ধুলো, পোড়া মাটির গন্ধ
তবু তাঁর কণ্ঠে যেন গান—
“প্রতিটি মৃত্যুই এক জন্মের আলো বহন করে”

কে যেন জিজ্ঞেস করে—
“তুমি কি তথাগত?”
তিনি বলেন না কিছু,
শুধু তাঁর পা রাখার পর
জমিতে ফুটে ওঠে ঘাস

তাঁর ছায়া পড়ে এক মৃতপ্রায় ফুলের ওপর
ফুলটি হালকা নড়ে
হয়তো বাঁচবে
হয়তো না—
তবু স্বপ্নে তিনি হাসেন,
অনেকদিন পর।

শিশুর চোখে

আমি তখনও পুরো মানুষ হইনি
তবু জানতাম গন্ধ—
বারুদের, রক্তের, আর
মায়ের গায়ের ঘাম শুকিয়ে গেলে যে গন্ধ হয়।

আমার খেলনা ছিল
একটা ফাটল ধরা পাথর
আর মৃত ভাইয়ের ছেঁড়া জামা
যেটা ওকে আরেকবার জড়িয়ে ধরতে পারি বলে ধরে রেখেছি।

সবাই বলে, “তথাগত আসবে”
আমি জানি না তিনি কে
তবে একদিন দেখেছিলাম—
এক লোক বসে কাঁদছিল আমাদের ধ্বংস হওয়া বারান্দায়,
আর তার কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছিল একটি বিড়াল
যে কদিন ধরে কারো কোলে যায় না।

আমি ওকে চিনি না
তবু তাঁর চোখে আমার মায়ের চোখ খুঁজে পাই
আর আমি ভাবি,
“হয়তো এটাই তথাগত—
যে কাঁদে, কিন্তু ভয় পায় না।
যে জ্বলন্ত শহরের মাঝে
একটা চুপ করে থাকা ফুলকে ছায়া দেয়।”

আমি তখনও পুরো মানুষ হইনি
তবু জানতাম—
যে কেউ পারে তথাগত হতে
যদি তার বুকের মধ্যে মৃত্যু নয়, করুণা থাকে।

জেগে ওঠা মিছিল

যেখানে মৃত্যু ছিল প্রতিদিনের খবর
সেইখানেই একদিন শুরু হয় হাঁটা—
একটি মেয়ে, যার মা পুড়ে গেছে আগুনে,
একটি ছেলে, যার ঘর ছিল না কখনোই,
আর একজন বৃদ্ধ, যার চোখে এখনো জ্বলছে বাড়ির চুনকাম।

তারা হাঁটে—
কোনো নির্দেশ নয়, কোনো রণচণ্ডী স্লোগান নয়
তারা কাঁধে নিয়ে চলে মৃতদের নাম,
বুকে জড়িয়ে রাখে প্রিয় মুখের শেষ ছবি

রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ছিন্নভিন্ন খাঁচার পাশে
তারা দাঁড়িয়ে বলে:
“আমরাই পাখি হবো এবার—
পালাবো না, উড়বো না,
এই শহরের আকাশেই থাবা বসাবো!”

তথাগত?
হাঁটছেন তাদের মাঝেই—
জুতা ছেঁড়া, চোখে মাটি,
কোনো কথাও বলেন না তিনি
তবু সবাই জানে—
এই নীরবতাই আগুন।

বিস্তারের ভাষা

শহর পেছনে ফেলে তারা হাঁটে
কাঁধে বিদ্রোহ, বুকের ভেতর মৃতের গান।
নতুন শহরে তারা পৌঁছে দেয় স্মৃতির রসদ
ছিন্নমূল ছেলেরা কাঁদে না,
তাদের চোখে জ্বলে বারুদের ভাষা।

বৃদ্ধ স্কুলঘরের দেয়ালে আঁকা হয়
এক অচেনা মুখ—
চোখের নিচে ছায়া, কপালে আঘাত
আর লেখা থাকে:
“তথাগত এসেছিলেন—আমরা ভুলিনি।”

রুটি দিতে দিতে একজন রমণী বলে,
“আমার স্বামী ফিরবে না, জানি—
তবু আজ মিছিলের শব্দে মনে হয়,
সে হয়তো কারও কণ্ঠে বেঁচে আছে।”

ছোট ছোট শহরগুলো জেগে ওঠে,
গ্রামে ঢোকে এক রকম নিঃশব্দ শপথ—
কোনো ধর্মের নয়, কোনো পতাকার নয়
শুধু মাটির প্রতি দায়বদ্ধতা,
রক্তের বিনিময়ে যে দায় আসে জন্মসূত্রে।

তথাগত এখন আর একজন নন—
তিনি বহুস্বর, বহুরক্ত, বহুজন্ম
তিনি জেগে আছেন সমস্ত অপমানের নিচে
এক অনিবার্য সূর্য হয়ে

নীরবতার মুখোমুখি

তারা বলেছিল—
“তোমাদের স্লোগান থামাও
আমরা দেবো বিদ্যুৎ, জল, নিরাপত্তা।”
তারা চেয়েছিল—
যাতে শহর আবার মাথা নোয়ায়
মাটি আবার নাম পাল্টায়।

তথাগত এগিয়ে যান
কারও অনুমতি ছাড়াই,
হাতে কোনো অস্ত্র নেই
কেবল পায়ের ধুলো আর চোখে মানুষের ছায়া

ক্ষমতার টেবিলে যারা বসে
তাদের ঠোঁট শুকিয়ে যায়
তথাগত কিছু বলেন না,
তবু কাঁপে সভাকক্ষের বাতাস
যেন বহু পুড়ে যাওয়া শিশুর একসাথে নিঃশ্বাস

একজন বলে—
“এই লোক কি ঈশ্বর?”
অন্যজন চিৎকার করে—
“না! এই লোক বিপদ!”
তথাগত চেয়ে থাকেন—
অভিশাপের মতো নয়, ক্ষমার মতো
যা গলা টিপে নয়, আয়নার মতো।

সেদিন যারা ক্ষমতায় ছিল
তারা কেউ কথা ভুলে যায়,
কেউ চুপ করে, কেউ পলায়ন করে।
শুধু তথাগত দাঁড়িয়ে থাকেন
যেখানে দাঁড়াতে ভয় পায় সবাই।

অন্ধকারে খোঁজা

তথাগত চলে গেছেন,
ঠিক কখন—কেউ জানে না।
সেই রাতে শিশুরা ঘুমায়নি,
বৃদ্ধেরা বাতি জ্বালিয়ে রেখেছিল দ্বারে,
কেউ বলেছিল—”শহরের শেষ রাস্তা ধরে চলে গেছেন তিনি
পায়ে মাটি, চোখে আগুন।”

তারপর শুরু হয় খোঁজ—
জলে, ছায়ায়, মেঘে, ছিন্নদেহে
মেয়েটি বলে—”একজন পথচারী আমাকে চেয়ে দেখেছিল,
তাঁর চোখে ছিল সেই একই নীরবতা।”

ছেলেটি দেয়ালে খুঁজে পায় ছায়া
একটি গাছ বলে—”তাঁর হাত আমার গায়ে লেগেছিল”
একজন বধির লোক স্বপ্নে শুনেছে তাঁর কণ্ঠস্বর,
“আমি আছি, তোমাদের ভেতর।”

অন্ধকার হয়ে ওঠে নতুন ধর্ম
যেখানে আলো মানে কেবল স্মৃতি।
তাদের প্রার্থনা আর শ্লোক নয়—
একটা শূন্যতা,
যা হৃদয়ের গভীর থেকে জেগে ওঠে।

তথাগত আর একজন নন
তিনি এখন একটি খোঁজ,
একটি অন্ধকারের প্রশ্ন
যার উত্তর—তুমি, আমি, আমরা।

প্রত্যাবর্তন

তাঁর অনুপস্থিতি যত দীর্ঘ হয়
মানুষ ততই খোঁজে
কেউ আঁকে দেয়ালে, কেউ গড়ে মূর্তি
কেউ রাখে বুকপকেটে ছেঁড়া চিঠির মতো।

আর ঠিক তখনই,
কোনো এক সন্ধ্যায়,
বৃষ্টির মতো ক্লান্ত শহরে
একজন হাঁটতে শুরু করে—
নুয়ে পড়া, কিন্তু স্থির।

তার চোখে নেই ঈশ্বরের দীপ্তি
বরং আছে রাত্রির ঘুমহীনতা
তার কণ্ঠে নেই বজ্রবাণী
তবু যারা শোনে,
তারা কাঁপে।

“তুমি কে?”
জিজ্ঞেস করে একজন।
সে বলে না কিছু
তবে তার হাঁটার ছন্দে ফিরে আসে স্লোগান
তার নীরবতায় জেগে ওঠে মিছিল।

এক বৃদ্ধা বলেন,
“এই ছেলেটি তো আমার নাতির মতো—
কিন্তু তার চোখে আমি তথাগতকে দেখি।”
আরেকজন বলে,
“এ তো আমারই কথা বলছে—
আমার দুঃখ, আমার প্রতিজ্ঞা!”

তথাগত ফিরে আসেন
যখন আমরা তাঁকে ধারণ করতে পারি,
আর তাঁকে ফেরানোটাই হয় না—
কারণ তিনি হয়ে ওঠেন
‘আমাদের সবার ভিতরে একজন।’

উত্তরসূরি

শহর এখনো কাঁপে মাঝরাতে
তবু ভোরে কেউ একজন জ্বালায় আলো
চুপচাপ হাতে তুলে নেয় ছেঁড়া ব্যানার,
রক্তমাখা সেই জামা,
আর বলে—”চলো, আবার শুরু করি।”

সে তথাগত নয়,
তবু তার চোখে জ্বলে একই প্রতিজ্ঞা
যেমন ছিল সেই মুখে,
যে একদিন চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল ক্ষমতার মুখোমুখি।

তারা এখন শেখায়—
“নীরবতাই যদি ভাষা হয়,
তবে প্রতিবাদই তার ব্যাকরণ।”
তারা গড়ে তোলে বিদ্যালয়, দেয় দেয়ালে রঙ
আর শিশুদের শেখায় নামতা নয়—
আত্মমর্যাদা।

একদিন
এক বৃদ্ধ এসে বলে—
“তুমি কি তথাগত?”
ছেলেটি হাসে, মাথা নাড়ে,
আর বলে—
“আমি না, কিন্তু আমিও।”

এইভাবেই তথাগত রয়ে যান
উত্তরসূরির হৃদয়ে,
শব্দে নয়, শ্বাসে
প্রশ্ন নয়, পথচলায়।

মোহনায়

সব পথ এসে মিশে যায় এক সঙ্গীতহীন নদীর ধারে
যেখানে পাথরের নিচে শুয়ে থাকে অনন্ত উচ্চারণ—
তথাগত।

তিনি আর কারো নাম নন,
তিনি এখন—
একটি দীর্ঘশ্বাস, যা জন্ম দেয় শব্দকে
একটি দৃষ্টি, যা রচনা করে দিগন্ত
একটি শূন্যতা, যা পরিপূর্ণ।

গ্রামের কিশোর, শহরের কবি,
জীবনানন্দের নিঃসঙ্গ সন্ধ্যা,
এক বিধবা নারীর ঠোঁটের জপ
এক কারখানা শ্রমিকের ঘাম
সবাই তাকে দেখে, ডাকে না
তবু জানে—
“আমার ভেতরেই তিনি আছেন।”

এক শিশু নদীর পাড়ে বসে জিজ্ঞেস করে,
“তথাগত কোথায় থাকেন, মা?”
মা চুপ করে থাকে,
তারপর শিশুর কপালে চুমু খেয়ে বলে—
“ঠিক এখানেই, তুমি যেখানে স্বপ্ন দেখো।”

এভাবেই
তথাগত হারিয়ে যান না
তিনি থাকেন মোহনায়—
সব পলির নিচে, সব বিদ্রোহের আগে
সব ফুলের ঘ্রাণে, সব আগুনের ছায়ায়।

“তথাগত” কোনো কালের, কোনো ধর্মের, কোনো পতাকার প্রতিনিধি নন।
তিনি জন্মেছেন কান্নার ভিতর, বেড়ে উঠেছেন প্রতিবাদের আঙ্গিনায়,
আর তাঁর নীরবতা হয়ে উঠেছে আমাদের চেতনার প্রতিধ্বনি।

এই কবিতার শরীর জুড়ে ছিল ছিন্নমূল মানুষ, পোড়া শহর, দগ্ধ গন্ধ
আর ছিল কিছু শিশুর চোখ—যারা এখনো স্বপ্ন দেখে।
তাঁর প্রত্যাবর্তন কোনো অলৌকিকতা নয়,
বরং আমাদেরই স্বপ্ন-সংগ্রাম, ভালোবাসা আর না-মানার ভিতর তাঁর বসবাস।

তথাগত ছিলেন না, আছেন না—
তথাগত হয়ে উঠতে হয়।
যতদিন কারও বুকের মধ্যে প্রশ্ন জ্বলে
যতদিন কেউ দাঁড়ায় অন্যায়ের মুখোমুখি
যতদিন কেউ নিঃশব্দে ভালোবাসে পৃথিবীকে—
ততদিন তথাগত বেঁচে থাকবেন।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes