সুবর্ণরেখার তীরে
ছন্দা বিশ্বাস

দশম পর্ব

আঠারো

রাজ অন্দর মহলের কথোপকথনঃ

দাসী মনিকার রাজ অন্তঃপুরে ছিল অবাধ প্রবেশাধিকার। সে ছিল দাসীদের সর্বময় কত্রী। তার কথামতো অন্যান্য দাসীরা কাজকর্ম করত। কে কখন কোথায় কী কাজ করবে সে ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া ছিল তাকে। রানি সুদেষ্ণা এই অধিকার তাকে দেন। তাই সে একটু বেশীই খবরদারী করত দাসীবাদীদের উপরে। রানিমা এই বলেছেন তাই এটা কর, করতেই হবে,- দাসীদের দুর্দশার সীমা ছিল না তাই। কার কাছে নালিশ জানাবে? স্বয়ং রানিই যদি কাউকে এই অধিকার দিয়ে থাকেন। অন্তঃপুরে দাসিদের ভিতরে তাই মনিকাকে নিয়ে দারুণ অসন্তোষ দানা বাঁধছিল। অনেকেই ওর উপরে ক্ষেপে ছিল। মাইনে তার হাত থেকেই সকলে পেত। তাই কাজের তদাকরি করা এবং গাফিলতি হলে তার জন্যে শাস্তি বিধান সেই করত। যেমন বাঁশের চাইতে কঞ্চির দড় কখন যদি বেশী হয় ঠিক তেমনি সে মাঝে মাঝেই কতৃত্বের সীমা লঙ্ঘন করত।

একদিন সকলে মিলে ঠিক করল সরাসরি রানিমার কাছে তারা যাবে। অকারণে এতো হুকুমজারি, কথায় কথায় শাস্তি বিধান, কর্মনাশ তারা মানবে না।

মনিকার কানে এ কথাপৌঁছাতে সময় লাগল না। সে তাই আগে ভাগে রানিমার সঙ্গে বিদ্রোহী দাসদাসীদের সম্মন্ধে নালিশ জানাতে গেল। রানি সুদেষ্ণার কক্ষে যাওয়ার সময়ে হঠাৎ সে মেঘমালার গলা শুনতে পেল। বেশ উচ্চস্বরে সে হাসছে। হাসির দমক যেন থামছেই না। গা পিত্তি জ্বলে গেল মনিকার। এই মেয়েটা হয়েছে যত নষ্টের গোড়া। রানিমা রাজা মশায় একেবারে মাথায় তুলেছে। আদরের দুলালী রাজকন্যার প্রিয় সখী কিনা।

মনিকা তাই কৌতুহলী হয়ে মেঘমালার গলা শুনে পর্দার আড়ালে আড়ি পাতে।

রানিমাতা আর রাজকন্যার কক্ষ পাশাপাশি। মেঘমালা খুব নীচু স্বরে রাজকন্যার নিকট গতকালের হাটের বৃত্তান্ত সব শোনাল। সোমদেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ পর্ব এবং কী কী কথাবার্তা হয়েছে সে সব শোনাল।

রাজকন্যা অবাক হয়ে শুনতে লাগল সোমদেবের কথাগুলো। মেঘমালার মুখে তার রূপ বর্ণনা শুনে মনে মনে সেই সুদর্শন যুবকটিকে দেখাবার বাসনা জাগল।

মেঘমালা বলল, রাজকন্যার একটা তসবির হলে সোম বলেছে তাহলে সে তার খুব সুন্দর একখানি ছবি এঁকে দিতে পারে।

ছবি আঁকতে পারে বুঝি?

তা নয়তো কী? একেবারে দক্ষ আঁকিয়ে, বুঝলে কিনা। দেখবে তার প্রমাণ? আমি নিজে চোখে দেখে তবেই বলছি।

সেদিন নদীতীরে সোম দেবের যে চিত্রখানি সে সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছে সেটা বের করে দেখাল।

রাজকন্যা গভীর মন দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সেই ছবি দেখছে।

একবার অস্ফুটে বলল, এ তো অপূর্ব! খুব বড় শিল্পী না হলে এমন চিত্রাংকণ কিছুতেই সম্ভব নয়।

মেঘমালা রাজকন্যার মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে। তার চোখের মুখের প্রতিটা কোণের কী অভিব্যক্তি সেটা সে লক্ষ্য করছে। সোম যে সুদর্শন এক যুবক সে বিষয়ে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। মেঘমালার প্রথম দর্শনেই মনে হয়েছে এ সাক্ষাৎ দেবাদিদেব মহাদেব।

রাজকন্যা গভীর ভাবে দেখছে সোমদেবেরর চোখ দুটি। আয়তকার দুটি চোখে আশ্চর্য স্বপ্নালুতা প্রকাশ পাচ্ছে। উন্নত নাসিকা, বাকান ভ্রু ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসির পরশ মাখা। মহাকালেশ্বরের সঙ্গে আশ্চর্য মিল। সে মেঘমালার দিকে তাকিয়ে বলল, যুবক কি সত্যি এমন দেখতে?

তা নয়তো কী? এ কার চিত্র বলে তোমার মনে হচ্ছে?

না মানে,

কী রাজকন্যে?

মেঘমালা সময়ে সময়ে চিত্রলেখাকে গভীর ভালোবাসা থেকে রাজকন্যে বলেও সম্মোধন করে থাকে।

দাসি মনিকা পর্দার আড়াল থেকে সামান্য মুখ ঢুকিয়ে দেখল দুইজন একটা চিত্রের উপরে ঝুঁকে পড়ে দেখছে।

রানিমাতার ঘরে সুদেষ্ণার প্রবেশাধিকার থাকলেও রাজকন্যা চিত্রলেখার ঘরে সে ঢোকার অনুমতি পাইনি।

বলা ভালো রাজকন্যাই তাকে প্রবেশাধিকার দেয়নি কখনো।

তাই সে মুখ সরিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, কী রে মেঘমালা তুই এখানে?

মেঘমালা এবং চিত্রলেখা দুইজনেই সতর্ক হল।

মেঘমালা দ্রুত সেই চিত্রখানির উপরে রাজকন্যায় ওড়না দিয়ে ঢেকে দিয়ে বলল, এখানে থাকব না তো আমার কোথায় থাকার কথা?

কিছুক্ষণ আগেই না তোকে দেখলাম নদীর পথে যেতে? কী করছিলি নদীতীরে?

আমাকে দেখলে নদীতীরে? আজ?

হ্যাঁ তো। একটু আগেই-

একটু আগে, উহু ভুল বলছ।

ভুল বলছি? গতকাল এই সময়ে দেখলাম তুই একজনের সঙ্গে কথা বলছিস।

তুমি সে সময় কোথায় ছিলে?

আমি ছাদ থেকে দেখলাম। তুই একজনের সঙ্গে কথা বলছিস।

মেঘমালা বুঝতে পারল দাসি হয়ত গতকাল বিকেলের কথা বলছে। সন্ধ্যার প্রাক্কালে সে তো সুবর্ণরেখার তীরেই গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে তো দেখল সোম নিবিষ্ট মনে তার নিজের ছবি আঁকছে। এই সেই ছবি। কিন্তু প্রাসাদের ছাদ থেকে তো দূরে মৌভান্ডারের ওই দিকে দেখা সম্ভব নয়। ও কি তাহলে অন্য কারো মুখে এ কথা জেনেছে। সর্বনাশ!

মেঘমালা অত্যন্ত বুদ্ধিমতী সে কথা আগেই বলেছি। সেও কিছুটা মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে বলল, আমি ওখানে আবার কখন গেলাম শুনি? আর ছাদ থেকে কি অদ্দুর দেখা সম্ভব? চলো দিকিনি আমার দেখাবে কোন জায়গা থেকে তুমি আমায় দেখেছ? গতকাল আমি তো সারাটাবিকেল রাজকন্যার সঙ্গে ছাদেই কাটালাম কই তোমায় তো বাপু কখনো ছাদে উঠতে দেখিনি? কাকে দেখতে কাকে দেখেছ। তোমার চোখে চালসে পড়েছ গো, হেকিম দেখাও। চিকিৎসে করাও বাপু-

মণিকা বিড় বিড় করে বলল, তোমরা কি দেখাদেখি করছিলে শুনি?

এবারে রাজকন্যা জোরে একটা ধমক দিয়ে বলল, আবার আমার ঘরে আড়ি পেতেছ?

বলব মায়ের কাছে। এক্ষুণী তোমার কাজ কিন্তু খতম হয়ে যাবে। রাজ অন্দরে ঢোকার সাহস পেয়েছ তাই বুঝি এতোসব কথা বলার সাহস পাচ্ছ?

মণিকা দেখল কেস ঘুরে গেছে। তাই সে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলল, না গো রাজকন্যে আমি সে ভাবে বলিনি। তুমি আমায় ক্ষমা ঘেন্না করে দিও গো। মা জননীকে কিছু বোলো না।

ঠিক আছে যাও।

মণিকা তখনকার মতো মাফ চাইলেও সে অন্তঃপুর থেকে বাইরে বেরিয়ে অন্য দাসীদের সঙ্গে কানাঘুষো করতে লাগল।

রাজকন্যের সঙ্গে কারো সাক্ষাৎ করিয়ে দেবার কথা হচ্ছে সেটা সে বুঝতে পেরেছে। কিন্তু মানুষটা কে? যাকে রাজ কন্যার মনে ধরেছে? রাজকন্যা তো কক্ষণো বাইরে কোত্থাও যায় না। গেলেও রানিমাতার সঙ্গে নয়ত মহারাজার সঙ্গে। তাও সে পালকিতে নয়তো ঘোড়ার পিঠে চেপে যায়। বাইরের মানুষে সঙ্গে তার আলাপ সীমিত। তাহলে কি রাজ অন্তঃপুরের কেউ?

কে সে?

দাসিবাদীদের ভিতরে এটাই দারুণ একটা রসাল খবর। মনিকা এরপরে ওর অধীনে কর্মরত দুইজন দাসি যাদের বাড়ি মৌভান্ডারের দিকে তাদেরকে বলল মেঘমালার গতিবিধির উপরে লক্ষ্য রাখতে। তবে খুব সাবধানে এ কাজ করতে হবে। মেঘমালা যা চালাক প্রকৃতির মেয়ে। কিছুই বিশ্বাস নেই।

আবার এ সব কথা যদি মহারাজের কানে যায় তিনি কিন্তু শূলে চড়াবেন বলে রাখলাম।

দাসি আবার অন্যদেরকে সাবধান করে দিল। মনিকা দাসী বাদীদের প্রধান। সেই এদের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে। রানিমাতার প্রধান দাসী সে। সে কারণে অন্তঃপুরের অনেক কথা সে জানে। রানিমাতা তাকে বিশ্বাস করে। বাইরের খবরাখবর তিনি মণিকার কাছ থেকে পান। মণিকার সঙ্গে আবার প্রতিহারীর গোপন প্রণোয়ের সম্পর্ক আছে সেটা অনেকেই জানে। প্রতিহারীর আবার সংসার বাচ্চা আছে। মনিকার সঙ্গে তার পরকীয়া সম্পর্ক তাই মনিকা একটু সামলে চলে।

মেঘমালার হাতেও এই তুরুপের তাসটি গোপনে রাখা আছে।

রাজকন্যা সেদিন যখন মণিকার ভয়ে ভীত হয়ে বলল, ওকে বকলাম ঠিকই কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে মাতার কানে যদি এই সংবাদ পৌঁছে যায়?

মণিকা বোধহয় আমাদের সকল কথাই শুনেছে।

তুমি ভয় পেও না। ও কিচ্ছু করতে পারবে না। কিন্তু আমার সন্দেহ হচ্ছে গতকালের ঘটনার সময়ে ওই জায়গায় কে উপস্থিত ছিল?

ঘাসিয়ারা ছিল কি?

রাজকন্যা অনেক ভেবে বলল।

হতে পারে, নদীর তীরে ভালো ঘাস হয়েছে ঘাসিয়ারা ঘাস কাটতে গিয়ে কি দেখেছে তাকে?

কিন্তু ঘাসিয়ারা এসব ব্যাপারে মাথা ঘামাবে কেন?

তাহলে?

আমার মনে হচ্ছে গতকাল পথে একবার প্রতিহারিকে দেখলাম। পাশ দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে চলে গেল।

সেই কি তাহলে মনিকাকে বলে দিল?

কিন্তু তখন তো ও তামার খনির কাছে ছিল। নদীতীর ওখান থেকে বেশ খানিকটা পথ। তবে খনির উপরে উঠলে বহুদূর অবধি লক্ষ্য করা যায়। প্রতিহারি কি তামার খনির ওদিকটা পর্যবেক্ষণে করতে গিয়েছিল?

হবেও বা।

পরক্ষণে মনে হল, আচ্ছা রাজকন্যে, এমন তো হতে পারে কাল মণিকা দাসি প্রতিহারির সঙ্গেই দেখা করতে ওদিকে গিয়েছিল?

আর একজন সখি বলল, বেশ বলেছিস তো? হতে পারে কেন আমার মন বলছে গিয়েছিল। দাঁড়া, আমি মায়ের কাছ থেকে শুনব গতকাল ও বিকেলে কোথায় ছিল? কাজে এসেছিল কি?

সেই সখিটির নাম কাজলতা। তার মাতা এই রাজ বাড়িতে কর্মরতা মহিলা। রানিমাতার সাজ সজ্জা বিন্যাসের দায়িত্ব তার উপরে ন্যস্ত। সে যেমন রাজকন্যায় সাজ সজ্জা , শরীর পরিচর্যার দেখভাল করে তেমনি।

কাজললতা বলল, তবে একটা কথা, মণিকা যদি একবার দেখে থাকে তাহলে ওই জায়গা কিন্তু তোর পক্ষেও নিরাপদ নয়।

এরপরে ও প্রতিহারিকে দিয়েই খবর নেবে। এবার থেকে সোমের সঙ্গে দেখা করতে গেলে আরো সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

তুই আর ওদিকে যাস না কিছুদিন।

তাহলে আগন্তুককে কী বলব? ও ত সুবর্ণরেখার তীরেই অপেক্ষা করবে।

জানে আমি তোমার তসবির নিয়ে যাবো।

রাজকন্যে কিছুক্ষণ ভাবল। তারপরে বলল, ঠিক আছে কাল বিকেলে আমি ঘুরতে যাবো সুবর্ণরেখার তীরেই। পিতাকে সেই মতো ঘোড়া প্রস্তুত করতে বলে দেব। আর তুই থাকবি আমার সঙ্গে।

ঠিক আছে আজ তুই যা। কাল সকাল সকাল চলে আসিস।

উনিশ

চিত্র দর্শন এবং অনুরাগ

চিত্রলেখা শয়নে স্বপনে এখন সেই যুবকের ধ্যনে মগ্ন। সখী মেঘমালা তাকে চারকোলে আঁকা যে চিত্র দেখিয়েছিল। চিত্রলেখা ঘরের দরজা বন্ধ করে আবার চিত্রখানি চোখের সামনে মেলে ধরল। গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগল।

বিড়বিড় করে আপন মনেই বলতে লাগল, মেঘমালা, এ ছবি তুই কোথায় পেয়েছিস?

সেদিন সুবর্ণরেখার চরে মজুরেরা যখন বালি চালছিল তাদের ভিতরে একজন ছবি আঁকছে দেখতে পেল। মেঘমালা নিতান্ত পরিহাস ছলে এগিয়ে যাই্‌ এবং জিজ্ঞাসা করি, “কার ছবি আঁকছ?”

“কী বলল?”

বলে কিনা এক ভিন দেশী যুবকের।

ভিন দেশী যুবক? কে সে?

জানি না বাপু অতশত। বলল তাই শুনলুম। তবে ছবিটা কিন্তু মারাত্মক, তাই না সখী? মনে হচ্ছে এ রাজপুত্রই বটে।

রাজপুত্র! রাজপুত্রের পরিধানে এই পোশাক হতে যাবে কেন? এ মনে হয় কোনো ভিন দেশী যুবক হয়তো কোনো কিছুর সন্ধানে এদিকে এসেছে।

যাই বলো না কেন বেশ দেখতে কিন্তু।

রাজকন্যা চিত্রলেখা তখন ছবিটাকে চোখের সামনে মেলে রেখেছে। গভীর ভাবে কী যেন দেখছে।

কী দেখছ সখী?

দেখছি যুবকের চোখ দুটো। কী সুন্দর না? মনে হচ্ছে স্বয়ং ত্রিকালেশ্বর এই যুবকের রূপ ধরেছে।

ত্রিকালেশ্বর? তিনি আবার কে?

কেন তুই দেবাদিদেব মহাকালেশ্বর মানে মহাদেবের নাম শুনিস নি?

ওহ, মহাদেব? হ্যাঁ, ঠিক বলেছ, তেমনি দেখতে। দেখেছ কী মায়া মুখখানিতে?

ছবিটা নিয়ে সেদিন দুই সখীতে নানা পর্যালোচনা করতে লাগল।

মুখ ফসকে রাজকন্যা বলল, সত্যি মানুষটার যদি খোঁজ পাস আমায় জানাস।

সত্যি মানুষটা তো আছে।

কোথায়?

এই আশেপাশেই। তুই এতোসব কী করে জানলি?

এই ছবি কি আর শিল্পী মন থেকে এঁকেছে? নিশ্চয়ই তাকে সামনে বসিয়ে এঁকেছে।

চিত্রলেখা চুপি চুপি বলল, তুই আজ একবার যা, সেই শিল্পীর সন্ধান যদি পাস তবে বলিস আমি ডেকেছি তাকে।

শিল্পীকে?

হ্যাঁ।

শিল্পীকে ডেকে কী হবে?

আমি যা বলছি তাই কর।

কী করব বলো?

বলিস, আমি তার সঙ্গে দেখা করতে চাই।

যদি তিনি রাজী না হন?

আমি দেখা করতে চাইছি আর তিনি রাজী হবেন না? এ কেমন কথা?

তার মানে তুই বলতে চাইছিস না।

আমি বলতে চাইছি না?

এ আবার তোমার কেমন কথা সখী? তুমি হুকুম করবে আর আমি তোমার দাস হয়ে সেই হুকুম পালন করব না?

তুই আমার দাস হোস না, আমার সখী। আমার প্রাণাপেক্ষা প্রিয়।

আমি একদিন হয়তো তোমার প্রাণাপেক্ষা প্রিয় ছিলাম, কিন্তু এখন নই।

বাজে বকিস না? এখনো তুই আমার প্রিয় একজন।

নাগো, সে জায়গা অচিরেই অন্য একজন দখল করতে চলেছে।

কক্ষণো না।

হ্যাঁ, ইতিমধ্যে করে ফেলেছে। সেটা আমি তোমার চোখেই দেখতে পাচ্ছি।

আমার চোখের ভাষা তুই পড়তে পারিস তাহলে?

পারি না বলছ? সত্যি করে বলো তো তুমি যুবকের ছবি দেখে তার প্রতি তোমার ভালোবাসা জন্মেছে কিনা?

রাজকন্যা নীরব রইল।

তার এই নীরবতার অর্থ মেঘমালার কাছে জলের মত পরিষ্কার হল।

মেঘমালা হাসতে হাসতে বলল, ঠিক আছে, আমি আজ বিকালেই যাচ্ছি নদীর ঘাটে।

সত্যি বলছিস?

আমি কবে তোমার কাছে মিথ্যে বলেছি?

মেঘমালা ছদ্ম অভিমান করে মুখ ঘুরিয়ে নিল।

এই দেখো, আমি কি সে ভাবে বললাম?

দোষ নিও না সখী। তুমি বলেছ জানি কিন্তু আমার মন বলছে অন্য কথা?

কী কথা শুনি?

বলছে সে আমার সঙ্গে নাও দেখা করতে পারে।

কেন দেখা করবে না?

সত্যি মিথ্যা জানি না, কিন্তু আমার মন বলছে। সে অন্য প্রকৃতির মানুষ। চপল স্বভাবের নয় কো মোটেও। আবার গুরুগম্ভীর মুনিদের মতো নয়। তরল হাসিতে লুটিয়ে পড়ে না আবার খুব রাশভারী নয়।

তাহলে কী সে?

জানি না, যদি তার সঙ্গে কখনো তোমার দেখা করিয়ে দিতে পারি তুমি বুঝে নিও।

তাহলে যাচ্ছিস বলছিস?

চিত্রলেখার চোখে ক্ষণিকের আলোর উদ্ভাস মেঘমালার নজর এড়াল না। মুখ দেখে মনে হল সোমদেবের জন্যে তার হৃদয় আকুলি বিকুলি করছে। রাজকন্যা এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকতে পারছে না। বিছানা ছেড়ে ঘরের ভিতরে পায়চারী করছে আর বারে বারে গবাক্ষ দিয়ে বাইর নদীর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে।

প্রেমের আগেই বিরহ দশা এ কি ভালো লক্ষ্মণ?

মেঘমালা বলল, ঠিক আছে আমি তাহলে চললাম। কিছু দেওয়ার থাকলে দিতে পারো।

দেখি তার কাছে যাই আগে। কী বলে শুনি। এখনই মন খারাপ করলে চলবে কেন?

আসলে সেদিন নদীর ধারে বসে সোম নিজেরই এক খানা ছবি আঁকার চেষ্টা করছিল। এমনি উত্তাল থাকে সুবর্ণ রেখা। পাহাড়ি নদী যেমন কারো রূপ তার জলে প্রতিবিম্বিত হতে দেয় না। এও তেমনি। তবে সেদি কোনো কারণবশত বেশ শান্তই ছিল।

সোম দেখল নদীর জলে তার সুন্দর প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। সুবর্ণরেখার স্বচ্ছ জলে নিজের রূপে সে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেল। ভাবল আজ সে নিজের ছবিই আঁকবে।

প্রথমে তার সন্নিকটস্থ এক ধবল প্রস্তর খন্ডের উপরে চারকোল দিয়ে সে নিজের ছবি আঁকল দ্রুত।

তারপরে সেই ছবি দেখে কাগজের উপরে নিখুঁত একটা ছবি আঁকাল। সেই ছবিই মেঘমালা দেখেছে তাকে আঁকতে।

অনেক অনুনয় বিনয় করে সোমদেবের কাছ থেকে সে এই ছবিটা এনেছে।

বিনিময়ে সে সোমকে অনেক তথ্য দিয়েছে। এই রাজ্য, রাজান্যবর্গ তার পরিবার বর্গের কথা। তাদের ইতিহাস এমনকি তাদের কূলদেবী রংকিনীদেবী সম্মন্ধে নানা গল্প করেছে। সোম শুনে কখন উৎফুল্ল হয়েছে, কখন ম্রিয়মান কখনো ভয়ে শংকিত হয়ে কবে? তাই নাকি? তারপরে? ইত্যাদি হাজার প্রশ্ন তুলে ধরেছে মেঘমালার সামনে।

মেঘমালা কিঞ্চিৎ উত্তর দিয়েছে বাকিটা ঝুলিয়ে রেখেছে পরবর্তী সময়ের জন্যে। থাকুক অপেক্ষায়। সব কৌতুহল নিবৃত্ত করলে আর তার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট থাকবে না। আগে তার কাছ থেকে কাজ আদায় হোক তখন না হয় বলা যাবে।

এদিকে মেঘমালার মুখ থেকে যৎকিঞ্চিৎ শ্রবণ করে সোমদেবের কৌতুহল উত্তরোত্তর বাড়তে লাগল।

সোমদেব আরো কিছু কিছু কথা জানতে পারল।

কথাগুলো যে কোন প্রসঙ্গের সে কথা পরে জানা যাবে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes