
সুকৃতি-র গুচ্ছ কবিতা

হার
ব্যর্থ আমি। খুর ভাঙা হরিণের মতো
বিচ্ছিন্ন চিন্তায় মশগুল
হয়ে আছি কুয়াশা জগতে।
এখানে আনন্দ নাই, তবু
মেঘ কেটে গেলে দেখা যায়
আকাশ তারার মতো চোখের তারাও
জ্বলে যায় নীরিহ আবেগে।
আঁচ পাওয়া যায় না তো তার!
২.
যাও… আরও দূরে চলে যাও
যদি পাই এমন ফসল
মেলে থাকা আমন আকাশে
তবে চলে যাও দূরে আরও
কার নাম কোনখানে লেখা বোঝা দায়…
আমিও চাই না ফিরে আসো
ঝড়ের ভিতরে।
খড় কুটো হতে হতে আমি
থেকে যাবো তবু কোনও পাখির বাসায়।
৩.
আমি তো খোলস সেই থেকে
যখন যেদিক থেকে হাওয়া আসে
বেলুনের মতো পৃথিবীতে বেঁকে যাই…
তোমাকে পাই না কোনও সুঁচে
সুতোতেও পাই না এখন…
তবুও সেলাই হয়ে আছি নিয়তিতে।
চাপ
তোমাকে ভোরের দিকে মেসেজ পাঠাই
বেঁচে আছি কি না বুঝে নিতে।
আমার গোলকধাঁধা চাপে
ফুটবল হয়ে গেছে প্রায়।
এখন খেলার ইচ্ছা যদি
মাথা চাড়া দ্যায়
সরাসরি চলে যাই ভিড়ে।
অচেনা মানববোমা ভেবে
মানুষ জড়িয়ে ধরি যেই
মনে হয় ফেটে যাবো নিজে।
কাজল
চলে যেতে হবে আমাকেও
তোমাকেও একদিন তাই…
কোনও এক তারার কিনারে
লেগে টুপ করে ঝরে যাবে
পাখির চোখের কালো জল।
কার আগে যাওয়া সেটা বড় কথা নয়।
আসল কথাটি হল তোমার কাজল
চোখের জলের ভাষা বোঝে।
নারীকুল
একবার পড়েছিল কাটা
এই মাথা তোমার কারণে।
তখন নিজেকে বইয়ের
পাতায় দাঁড়ান মহারাজা
কনিষ্কের মতো মনে হত।
রাজা, তবু মাথা তার ছিল না কোথাও।
বেঁচে ছিল দেহের কারণে।
তোমার ইচ্ছার কাছে নত হতে হতে
শেষে হাত হারিয়ে ফেলেছি।
এখন করার কিছু নেই,
শুধু শুধু হৃদয় টাটায়…
অধমের বেলা শেষে নদীও দাঁড়ায়
দ্যাখে মাথা পেছনে ঘুরিয়ে
আছি আমি, থেকে যাবো
দূরের তারার মতো আলো রেখে
তোমার ঘরের আয়নায়।
বেনামি কবিতা
১.
যখন বিরোধী মানে একটা বাহানা
তখন যোগের জোর কমে যায়।
খুব বেশি বিরোধিতা করতে থাকলে
একটা সময় পরে চাড়া ভেঙে যায়
শাঁস উঁকি দিতে থাকে, যেন
দুর্বলতা বেরিয়ে পড়েছে…
অতয়েব থেমে যাওয়া ভালো
অতয়েব ভালবাসা ভালো
বিরোধিতা করলে আসলে
লক্ষ্য বস্তু থেকে লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে যায়।
২.
পারদের এটাই স্বভাব, ধারালো জ্বরের মতো
কথা বলে কাচের আবেগে।
কেউই কাউকে দূরে সরাতে পারে না
বিকর্ষণ ক্ষমতা ব্যতীত
ভাঙচুর হতে হতে…
যদি না সে নিজে সরে যায়।
৩.
ক্ষত জানে, তারও বেশি ক্ষত নিয়ে
ধীরে ধীরে স্তব্ধ হয়ে যায়
জোনাকির গলিত শরীর।
আপেক্ষিক লাইনেরা জানে
আসলে সমান্তরাল বলে
কিছুই হয় না।
বাকিটা লিখতে হবে
কোনও জ্বর পারদের পরোয়া করে না
তবুও তোমার কাছে পারদ জ্বরের থেকে দামি।
আমিও হ্যাংলার মতো বেঁচে আছি স্নায়ুর কারণে
মিটার হেলিত হয়, অকারণ ঝাড় খায় আয়ু।
যদিও বিশেষ কোনও ইচ্ছা নেই তোমাকে জ্বালাব।
এই বিনি সুতোর মালিকা দিয়ে গলে
তোমাকে নলের সাথে বেঁধে রাখা ফাঁকি মনে হয়।
মনে হয় নিজেকে লম্পট
দোষীর বোতল মনে হয়
অবৈধ প্রেমিকের মতো
সিগারেট ছোট হয়ে গেলে
বাঁশির ভিতর দিয়ে বেরিয়ে পড়েছি…

