
কবিতাগুচ্ছ
: সোনালী ঘোষ

ক্যান্ডেল লাইট ডিনার
তোমাকে পেতে গিয়ে,
মেখে ফেলি এত অপরাধ….
মুখোমুখি বসে যে কখনো, চুম্বনের কথা
একেবারে হয় নি মনে ;তা তো নয়,
তুমি তো কেবল আমায় কাটাছেঁড়া করে,
টেবিলের উপর রাখা জ্বলন্ত মোমের
শিখায় পুড়িয়েছ সবটুকু….
প্রাক্তনী
আমি তো ফিরতেই চেয়েছি;
কিছু সম্পর্ক ,অজুহাতের
নীল আতর মাখিয়ে
আমায় প্রাক্তন করে রেখেছে…
পরিব্রাজক
এই তো ফেরার মরসুম
এখনো যদি না এলে,
গৈরিক বেশ নাও তবে।
আচ্ছা, নিদেনপক্ষে একটা নদী কিনে দিতে পার যদি
প্রিয় পানপাত্র দিয়েই দেবো, স্পর্শজ সুখ রেখো তাতে
ডেকে নিও মেরুপ্রভাদের
আস্ত সূর্যাস্ত মোড়া দেশে
কি নিশ্চয়তা দেবে তাকে?
তুমি যে পারো না ফিরতে কোনদিন
তোমার তো উড়ানে কেবল পরিব্রাজক বৃত্তি….
অশরীরি
আমাদের মাঝে লেখা হয়
কত আবহসংগীত,
তুমি তার কতটুকু বোঝ
যে দূরত্ব মাপা হয় দীর্ঘশ্বাসে
সেখানে কেবল বাঁশি বাজে
আর সুরে সুরে লেখা হয় আমাদের ধর্ম।
স্বীকারোক্তি
এত তীব্রতা শুধু লেখে সর্বনাশ,
তবু একটা ব্যাখ্যা পাই খুঁজে ;
এ জীবনে মেঘভর্তি যন্ত্রণা
খাঁজে খাঁজে যার রামধনু।
ভালোবাসলে,
ঋনী হতেই হবে
যন্ত্রণার কাছে….
ত্রিকোণমিতি
বিকেলের নাম ধরে ডাকি,
শূন্যতা ই আসে ঘুরে ফিরে;
শরীরের দরজা খুলে আচমকাই
মিশে যায়,
অবিশ্বাস্য রকম ভাবে শুষে নেয় সব শোক তাপ….
তুমিও হারিয়ে যাও
কোন এক অতিভুজ বেলায়।
শীত আসে
সারা শীত কাটে অপেক্ষায়, জানালার পাশটিতে কেউ
ছাতিমের গন্ধ রাখে না আর
নিবিড় স্পর্শে জ্বালে না ওম্
আমি তার বিশাল ছায়াটির শব্দ ভেবে নেই
অখন্ড রাতের খোলে অসংখ্য স্ফূলিঙ্গ
নষ্ট করে দেয় সব অভ্যাস
মুছে দেয় সব বিভাজন রেখা
এ সব ক্ষতের ভেতর কি আর শীত ঘুম যথেষ্ট ..
এলিজি
মায়া নদী ঘিরে আছে অজস্র বিষাদ,
নিষিদ্ধ সিঁড়ি বেয়ে, তলদেশ থেকে
কুড়িয়ে আনি দীর্ঘশ্বাস;
কার্তিকের এই অবেলায় একটি নিঁখুত এলিজি
গড়ব বলে ….
শহরের ভেতর নদী বয়ে যায়
কোন কোনো দিন কেটে যায়,
কোন কোন দিন প্রিয় নদীটির মত
আরো একা হয়ে বয়ে যাই
তোমাকে ভাবতে গিয়ে…..
আমার সব পিছুটান ধুয়ে দেয়
ঐ বাদামী রঙের চোখ,
এ সব ধরা পরার আগেই শহরের টানা ফুটপাত ধরে
ছুটতে শুরু করি,
রেস্তোঁরা, সিনেমা হল, নিদেন পক্ষে পার্কের জলের
ধারে অবধি এমন কোন একা মানুষ আমি দেখি নি,
যাকে গিয়ে নদী হওয়ার গল্প শোনানো যায়…
ইন্টারপ্রিটার
এত হারিয়ে যাওয়ার গল্পে
যে অসুখ তা সারবার নয়,
বিষাদের নীচে চাপা পড়ে থাকা দোভাষী মন ও
শীতের রোদের মত কখনোই তীব্রতম হতে পারে না।
উভয় সংকটে ভেসে যাওয়া এক বা একাধিক যাই কারণ থাক
একান্ন শরীরের বিরোধী নয় কেউ
তবু কোন বিরল বিস্ময়ের ভেতর মজে থাকতে পারি নি
এমন কোন মানুষ ও দেখি নি যার কাছে এলে
সব অসুখ ফুলের মত পবিত্র হয়ে যায়…

