
শ্রীদর্শিনী চক্রবর্তী-র কবিতা
বসন্তে লিখিত
১
কলম চলে না বলে লাঙলকে ডেকে আনি
জ্যোৎস্নাবিদিত এই পটে।
দেখা যাক এইবার কীরূপ শস্যের খেলা হয়।
বাসের হাতলে যত লেখা হয় প্রেম-প্রেম উপক্রমনিকা,
উহাদের সম্পাদনা করবার মতন দেবতা
তুমি আমি কেউ নই প্রিয়।
দুরারোগ্য ব্যাধির মত জ্যোৎস্নার মায়ার ভিতরে
তুমুল কর্ষণযোগ্য বাসন্তীশরীর শুয়ে আছে –
ঋতু বলো, হাওয়া বলো অথবা অর্থহীন বলো।
২
অসুখগুচ্ছের পাশে বসে আছে একা পুস্তানি,
বসন্তে কাজ চাই তার।
সে জানেনা কার ব্যর্থতা, সে জানেনা অতিমায়া-ঋতু
অর্ধেক পুড়িয়ে গেছে, অর্ধেক খেয়েছে অতিমারী,
টেলিফোনবিভ্রাট আর যৎ-যাবতীয় এলোঝেলো।
তাকে তুমি সান্ত্বনা দাও, এ গুচ্ছ জোড়া না গেলেও
চৈতী হাওয়ার মুখে কথা ফিরছে নতুন কাজের।
৩
ট্যাক্সিওয়ালার কাছে অনেক গল্প জমা হয়।
পিছনের সিটে কেউ নিদারুণ ঝগড়ে যায়,
কারো ঠোঁটে চুমু ফুটে ওঠে,
কেউ বিষন্ন হাওয়া মুখে, বুকে, কপালে মেখেছে
বসন্তের গুলাল যেমন –
আর কেউ নেমে গেছে বাবুঘাটে অথবা পিজিতে,
কেউ বা শ্মশান-ফেরতা পোড়াগন্ধ দেহে নিয়ে ফিরছে কোথাও।
সে এই শহর জুড়ে ঘুরে ঘুরে যত বাড়ি খোঁজে,
একটাও তার নয়, অন্য কেউ ঢুকে যায় তাতে।
৪
কামিনীগন্ধের মোহে পাড়া সেজে আছে।
আসতে যেতে বুক ভরে গন্ধ নেয় যুবক-যুবতী –
পরস্পরের কাছে আজ তারা যতটা অমিয়,
কাল তা অতীত হবে।
শুধু এ ঘ্রাণের স্মৃতি, তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।
কামিনী গাছটি তার কিছুই জানে না।
৫
বসন্তে লিখিত যত পদ্য আছে তাকে জড়ো করে,
শীতে আমি আগুন জ্বালাবো।
কিছু তো উশুল হবে যাবতীয় উষ্ণতাখরচ।