
সীমিতা মুখোপাধ্যায়-এর কবিতা
সই
কী যেন ব্যথায় হাঁ হয়ে আছে তোর ক্ষতঠোঁট,
আমার ফুটিফাটা বুকখানা নাই-বা দেখলি তুই;
রঙিন চুড়ি, আশ্চর্য কানের দুল, বইমেলা আর বেলুন—
ওরা দেখুক, সদ্যখোলা শ্যাম্পেনবোতলের মতো
কেমন উথলে ওঠে আমাদের হাসির ফোয়ারা!
যত পাপ করেছিলাম, সই, হুক্কাবারের ধোঁয়ায় ধোঁয়ায়
মধ্য-অঙ্গুলী দেখিয়ে দিয়েছি নরকের দরজায়—
বাকিটা জানে কলঘরের টাইলস, শাওয়ার, জলের শব্দ।
তোকে আর আমাকে যারা চায়নি কোনোদিন
তারা তো জানে না— আমরা দুই নাজুক প্রজাপতি,
ভোরের গোলাপি আভায় জন্মে, রোজ
সন্ধের নীলচে আলোয় মরে যাই!
গতিজাড্য
এমনটা বলার কী দরকার ছিল তবে—
তুমি আর আমি, আমাদের বাদুড়-আস্তানা?
এবার অন্য কোনো ঘ্রাণে অভ্যস্ত হতে হবে, পাইনবন।
অশ্রুবালুকাময় তট পেরিয়ে বেগনি শহরের স্কাইলাইন,
একদিকে ব্যর্থতার অহং, কোথাও বিরাগ-অভ্যাস,
সেইসব রুমালচোর সময়, শরীরপরবের আচমকা ঘূর্ণি—
ম্লান হ্যাজাকের মতো চেয়ে থাকে।
পাহাড়ের গায়ে মেঘের ফাঁকে ফাঁকে
কাদের যেন ঘরবাড়ি বয়ে যায়!
হঠাৎ করে পেয়ালা জ্বলে ওঠে,
যন্ত্রণাপুর ছুঁয়ে উড়ান এসে নামে অচেনা এক কমলা জগতে—
সেখানে ডানাওয়ালা ফারিশতা, তাদের ক্যাকটাস-পুরুষাঙ্গ …
আলেয়া-যাপন
কী এক ডাক, আলো দিয়ে মিলিয়ে গেল
জীবনের নিস্তরঙ্গে।
আয়নাবাড়ির জানালা জুড়ে তখন
বিষণ্ণ-ব্যাকুল ফুলের দোকান উঠছে সেজে
অমানিশার মহাকল্লোলে, তোমার গাল-দরিয়া বেয়ে
ব্যর্থতা নামছে সচেতন আড়ালে,
সেই তুমিটুকু শুষে নিয়ে শেষবেলার শরীরে
আমি আকাশ ভর্তি রঙিন খুশি হয়ে উড়ে গেলাম।
আজকাল শক্ত করে দাম্পত্য করি,
কলঘরের কান্নায় ধুয়ে ফেলি অবান্তর অপরাধ।
শিশিরযাপন সেরে, আলেয়াপুরুষ,
কেন তবে বলেছিলে— কোনোদিন কষ্ট দেবে না?