
সোনালী ঘোষ-এর কবিতা
“আমার জন্মের কোন শেষ নেই”
১.
মাইঝ রাইত। ঘুম আর আহে না। জানলার গরাদ ধইর্যা খানিক খাড়াইয়্যা থাহি।নিশুত রাইতে কারা রাস্তা দিয়া হাঁইড্যা যায়, তাগো নিঃশ্বাসের চোডে গাছের শুকনা পাতাগুলান য্যান ঝইর্যা যায়।গাছ হোহো কইর্যা ওডে।জুনাকি পাতার উফর।চাইরদিক সবুজ আর নিশুত সবুজ।ওগো ভিতর শান্তি বসত করে।অভিযোগ নাই, চাওয়া পাওয়া নাই।মোড়ের মাথায় কুন্ডলী পাকাইয়া ভুলো শুধু মাঝেমাঝে চিল্লাইতে থাহে।কারে যে দ্যাহে…
আরো রাত গড়াইল্যে বড় গাড়িগুলানা মাল লইয়্যা হুসহাস কইর্যা ছুডে।থরথর কইরা কাঁইপ্যা ওডে পিচ রাস্তাখান।কোথাকার জিনিস কোথায় যাইব হের ঠিক নাই…
গাছের কোডর থেইক্যা উঁকি দিয়া প্যাঁচায়, ইন্দুর খোঁজে। যে যার জগৎ লইয়্যা খুশি। ক্যাবল আমরাই পারলাম না খুশি হইতে। মাথার ভিতর য্যান একখান ঘুণপোকা কুইর্যা কুইর্যা খায়।একটা আওয়াজ তাড়া কইর্যা নিয়া যায়। রাইত দিন বসতে হুইতে জ্বালাইয়্যা খায়।নিস্তার পামু ক্যমনে?
২.
এহোনো শীত আইতে দেরী। বেলা ছুড্যো হইস্যে বডে। চাইরদিক শুকনা শুকনা। চামড়াগুলানে টান লাগে।ভোরের দিকডায় সইন্ধ্যায় হালকা হিম পড়ে। মনডা উদাস হইয়্যা যায়।
কালী পূজা ভাইফোডা শ্যাস। আলোর চাইরধারে শ্যামাপোকাগুলা ঘুইর্যা ঘুইর্যা মরে।রাইত বাড়লে লোকজন থাহে না রাস্তায়।তহন চান্দের আলোয় রাস্তায় বাইর হইতে ভালা লাগে।গায়ে হালকা চান্দরডি জড়াইয়্যা হাডি। ঝিঁঝিঁ পোহায় ডাক দ্যায়। মাতালডির মত মাতা ঝিমঝিমায়। মনে হয় হাইড্যা যাই, যেই দিক চোখ দুইখান যায়।
কাছেই নদী তিরতিরাইয়্যা বয়।য্যান কত তাড়া আস্যে। চান্দের জলে দেহখান ধুইয়্যা দৌড় দৌড় দৌড়…। ঠাউরমায় মরস্যিল দ্যাশের বাড়ি। কাস্যে পিডে নদী ছ্যিল না, বাপ মায়ে ছাইভস্ম নিয়া হালিশহর গঙ্গায় ভাসাইস্যিল। আজ বাপে ও চইল্যা গ্যাসে। য্যান বড় তাড়া, নিজের মায়ের লগে দেখা করব বইল্যা।
নদীর ধাইরে দাঁড়াইল্যে মনডা হু হু করে। আরো শীত জাকাইয়্যা ধরে। নদীর ধারাডা কেমন য্যান, হাতছানি দিয়া ডাইক্যা মরে আর হক্কলডিরে বুকে কইর্যা লইয়্যা যায়। একদিন আমারেও লইয়্যা যাইব গিয়া। আইচ্ছ্যা ঐডাও কী আমার বাপের ঘর হইব?
৩.
পোলা পোলা কইর্যা মানুষগুলান মরে। একখান ছেমরি হইলে মুখখান চুন হইয়্যা থাহে। ক্যান মাইয়্যা বিয়াইতে হইলে তোগো ব্যাশী যন্তন্না আর ছামড়্যা হইলে ব্যাদনা হয় না?তাগো লেহাপড়ি করাও চাকরী করাও সব কিছু ওগো জইন্ন । ছ্যামড়ি গুলান জলে ভাইস্যা আইস্যে?
সেই ছুডো থেইক্যা হুনস্যি। মাইয়্যা হইস্যিলাম বইল্যা হক্কলে দুঃখ পাইস্যিল।ঠাউর দ্যাবতারে ডাইক্যা কইস্যিল পরের বার য্যান পোলা হয়। পোলায় বংশের বাতি দিব।বাবারে মারে দেখব। হায় রে পোড়া কপাল আমার।
মাইয়্যা বইল্যা তাগো কুনো ইচ্ছা নাই।পায়ে বেড় দিয়া রাহে। পোলায় পড়ব বইল্যা মাইয়্যারে একটু পিছাইয়্যা রাহে।এ ঘর বাড়ি দালান সব ত্যাগ কইর্যা একদিন হাঁডা দেও আরেক বাড়ি। কী ভাবতাস, সুখ পাইবা গিয়াই আগে ফরীক্ষা দাও, কতডি অফমান সওনের খ্যামতা আস্যে।ও গো আফন কর। তাগো সংসারে এডো কাঁডা কাচাও।সম্মান নাই।
বাফের ঘরে যে কয়দিন থাকব্যা সব ঘরের কাম কাজডি শ্যেখ। পরের বাড়ি গিয়া সেইগুলান করতে লাগবে নাইলে সব কইব বাফের ঘর দিয়া কিস্যু শ্যাখে নাই।কিছু কওন যাইব না।
এই মুখফুড়ি গুলান যাইবডা কৈ। এরা হইল গিয়া পরের বাড়ির মাইয়্যা,আর পরের বাড়ির বৌ।এ ঠ্যালে ও ঠ্যালে। অ্যাগো জীবনখান ঠ্যালাঠ্যালির।

