
তৈমুর খানের কবিতা
১
বিমূঢ় মানুষ সব
সিঁড়ির পর সিঁড়ি
নেমে আসে ঝরনার আবেগ
খুঁজে পায় মোহনার মেঘ
মাঠে মাঠে নিশানার স্ট্যাচু
স্মৃতির মালা পরে
কাকে ডাকে রোজ ?
ইতিহাস চেয়ে থাকে
যুগের আরোগ্য কলোনি থেকে
দ্যাখে সব লোক
হাসপাতালগুলি সেবাশ্রম বিলি করে
আর তাদের মসৃণ নার্সেরা এসে
স্বপ্ন দিয়ে যায়
বিমূঢ় মানুষ সব বাঁচে
বেঁচে থেকে তারা স্বপ্ন খায়
২
জানালার ওপারের মুখ
মেঘের পুলকগুলি হাসির বাতাসা খায়
গাঢ় হয় সম্পর্কের ভাষা
তবুও বিশ্বাস কাঁদে, ঘরে ঘরে উত্তুঙ্গ নিরাশা
ঝড়ের শ্রাবণ দোলে, এপারে ওপারে নৌকা যায়
নৌকায় দোলে মাছগুলি
আহা চকচকে মাছেদের আঁশ
রৌদ্রের বাঁশি হাতে নেমে আসে জাগরণ
সেও এক ভাষাপাখি, গান তার উদাসীন গায়
পথ জুড়ে খেলা করে বর্ষণের ক্রিয়া
যা দেখে জুড়ায় হিয়া জানালার
ওপারের মুখ বহুদিন পর ভাবে
আজ সে লিখবে এক পূর্ণ সংবাদ…
৩
ভালো আছি
অন্ধকারে সব ক্ষত ধুয়ে নিই
তারপর নক্ষত্রের আলোয় ঢেকে রাখি
সভ্যতায় আমিও চুপিচুপি
হতে চাই বিজয়ী
রক্ত ক্ষরণের সেই গোপন প্রবাহ
এখনও ঘুমায় বুকে
টের পাও কেউ ? কেউ টের পাও ?
ভালো আছি , ভালো আছি
সমস্ত অবিশ্বাসের কাছে আমিও বিশ্বস্ত গান
গেয়ে চলে গেছি
দূর রাস্তার ধারে যেখানে ঔরস এক
মানবিক বোধ চায় অথবা পড়তে আসে বোধের স্কুলে
সেও জানে প্রজাপতি মরে গেলে
ফুল ঝরে যায় তার শোকে
৪
খিদে
পালাতে পারি না কোথাও
আমি ও আমার ছায়া কাছাকাছি থাকি
দুপুরে গরম ভাতের ঘ্রাণ এলে
খিদে পায়
রোজ রোজ খিদে পায় শুধু!
এই পুকুরের ঘাটে দু’দণ্ড বসি
বহু পুরনো সিঁড়িতে দেখি নূপুরের শব্দ লেগে আছে
আলতা পরা খালি পা কার উঠানামা করে?
দুয়ার খোলা আছে
বাগানের হাওয়া আসছে বসন্তের আমন্ত্রণ নিয়ে
সব কুঁড়ি ফুটবে এবার অনুরাগের পরশ পেয়ে!
পালাতে পারি না,
মাঝে মাঝে কোকিলের মতো ডাকি—
কেন ডাকি?
আমার ছায়াটি বোঝে সব, শুধু আমিই বুঝি না;
আমার শুধু খিদে পায়
এ আর এক অন্য খিদে—
খিদের আগুনে হৃদয় সেঁকি!
৫
প্রস্তুতি
তোমার আঁচলে কত নক্ষত্র ফুটেছে
বিচিত্র আলোর ঝিকিমিকি
আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি!
ওখানে হৃদয় রাখবো তোমার আলোয়
ওখানেই রেখে দেবো আমার বাঁশির সুর
ওখানে কখনো হবে না অন্ধকার!
শুধু রাত্রির সন্তান হয়ে বেঁচে থাকা যায়?
মাইল মাইল রাস্তা হেঁটে জীবনের আয়ু হলো ক্ষয়
অন্ধকারে নিজেকেও বিশ্বাসঘাতক মনে হয়
সারারাত যদিও জেগে থাকি
সারারাত যদিও নক্ষত্রফুল কুড়াই
তবু এক উজ্জীবনের ডাক আসে শুনি
দীর্ঘশ্বাসগুলি লুকিয়ে ফেলি
আর তৃষ্ণাগুলি অস্বীকার করি
গভীর নির্জনে একা চুপি চুপি যাই…
৬
এই জন্ম
যে শব্দ গান হয়নি
আমি সে শব্দের কাছে যাইনি কোনোদিন;
যে মেঘ বৃষ্টি দেয়নি
আমি কি সেই মেঘের কাছে গেছি?
আমার শস্যের ক্ষেতে শব্দ আর গান
আমার মাথার ওপর মেঘ আর বৃষ্টির সম্মোহন।
এই জন্ম শুধুই বাঁশি
এ জীবন শুধুই ভেজা ভেজা অভিমান
দুপুর বিকেল হয়ে আসে
বিকেল রাত্রির ডাক পায়—
গেরুয়া আলোর পথে নামে রাঙাচেলি
রাত্রিতে হেসে উঠবে অদ্ভুত জ্যোৎস্নায়!
বিশ্বাসের ধ্বনিগুলি বেজে ওঠে
অলৌকিক সমুদ্রের নৌকাগুলি ছেড়ে যায়
একে একে সমস্ত নাবিকেরা সাদা পোশাক পরে
আমিও ধূসর গন্ধ মুছে ফেলি মনে মনে
উপলব্ধির সব জানালায়
আমার আসক্তি তীব্র হলে
আবার আবার মেঘ জমে
শব্দেরা গান হয়ে ফেরে।