
ঋজুরেখ চক্রবর্তীর কবিতা
আকাঙ্ক্ষা
তুমি বললে, আলো হোক। আলো হল ডালে ডালে আগুন-পলাশে আর রবীন্দ্রনাথের গানে গানে।
আজ নয়, আজ থেকে বহুকাল আগে, সেই ক্ষাত্র কৈশোর থেকে রাজসিক যৌবনে উন্নীত হওয়ার মোটামুটি সমসময়ে তুমি বলেছিলে একথা। বলেছিলে মানে লিখেছিলে। তখন নিজের লেখার দায় নিতে হত না তোমাকে, তোমার ঢাল ছিল তোমার বয়স, আর তরবারি ছিল প্রতিটি চুম্বনে প্রথম চুম্বনের স্বাদ জাগিয়ে তোলা অবারিত বিশ্বরূপ।
তারপর কালে কালে পাল্টে গেল সবকিছু। তোমার বিমূর্তের সাধনা আর নিরাকারের ধ্যানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তোমার বর্ম হয়ে উঠল নির্জ্ঞান, আর প্রতিরক্ষা হয়ে উঠল নির্বিকল্প। অথচ তখনও তুমি সেই একইভাবে বলতে চাইলে, আলো হোক; আর আলো হল ডালে ডালে আগুন-পলাশে আর রবীন্দ্রনাথের গানে গানে।
আর আজ, এই আজ সকালে, দূর থেকে আবছা ভেসে আসা রবীন্দ্রনাথের গান শুনতে শুনতে যখন ঘুম ভাঙল তোমার, তুমি অনুভব করলে তোমার চাওয়াগুলো নিজেরাই হয়ে উঠছে আলোকিত, আর ডালে ডালে পলাশের পাপড়ি থেকে ছড়িয়ে পড়ছে আগুনের আঁশ।
কিন্তু দেখো, তুমি তো নিজের কাছে বিনিময়ের কোনও শর্ত রাখনি কখনও, যাতে প্রতিটি নিজস্ব অনুভব তোমার নিরঞ্জন মনে হতে পারে, প্রতিটি সতর্কতা মনে হতে পারে নৈর্ব্যক্তিক, আর প্রতিটি অতন্দ্র প্রশ্ন ও আশ্বাস শোনাতে পারে সংলাপের মতো। কিছুই চাও না তুমি, এমনটা যেন মনে হয় সকলের, এমনকি নিজেরও, এটুকুই তো নিজের কাছে চাওয়া ছিল তোমার, ছিল না?
তাহলে, সামনে এই যে অনিশ্চিত আঁকাবাঁকা পথ, কোন চাওয়ায় কোন আলো আজ পাথেয় হবে তোমার?


ভালো লাগলো
অপূর্ব