
মৃন্ময় চক্রবর্তীর কবিতা
খাণ্ডব ও অন্যান্য কবিতা
।। ইশারা ।।
শীতঘুম ভেঙে উড়েছে আমপোকা
এবার কাঠে রস নেই
পাহাড় খেপেছে রোদে
খুব নাকি জল হবে, বউল ফুটবে না
তাও সজনেফুল কীসের ইশারায় ঝরেছে
যদিও পাখিদের গোপন মাতম আজ চারিদিকে।
।। অজগর ।।
দরজা খুলতেই দেখি সপরিবার এক সীল মাছ,
নমস্কার করে বলছে :
রাজনৈতিক বাস্তবতা দুঃস্বপ্ন গলিয়ে ফেলছে,
দেখছেন না ! তাই এলাম।
দেখলাম, নিরাময়হীন জল আমার উঠোনে
প্রতিটা ছায়া থেকে মাংস খুঁটে নিচ্ছে।
আকাশে নক্ষত্র কেঁপে উঠছে ভয়ে, সংকেতে;
এখন ঘুমের ভেতর থমকে আছে ভোমরা;
সমস্ত সাফল্য জেগে জেগে উঠছে ব্যর্থতার মতো।
।। দখিন দুয়ার ।।
আকাশ এখন কানশিরা ফুলের মতো নয়
ধূসর ছ্যাঁদা গলে সূর্যের টুকরো পড়ছে জলে,
মাটির তলায় তেজস্ক্রিয় ঢাকা নড়ছে সুদর্শনের।
কাঠবিড়ালিটা পাথরের চোখে দেখছে
পিঁপড়েসমাজ কীভাবে ছুঁতে চাইছে বৃক্ষচূড়া,
দখিন দুয়ার থেকে উড়ে আসছে দাঁড়কাক কী উপায়ে অনন্ত নরকে।
।। স্বপ্ন, কারুকাজ ।।
লোল চাঁদ একা একা দোলে
কে আর দেখবে তাকে আজ!
কয়েকটি ভালুক, শালিক আর মানুষের শব
সবাই নীরব
শুধু ভেসে আছে জলে
নিছকই স্বপ্নে, কারুকাজ।
।। খাণ্ডব ।।
ভৌতিক বাদুড় ঝুলেছিল রক্তচোষার গল্পে
আজ ভাম এল খবর নিয়ে।
ভামের কথা আমি অনেক শুনেছি,
আমার এক বন্ধুর দোকানে তারা প্রায়ই আসত এককালে।
দোকানের পিছনেই মজা খালের জঙ্গল, তাদের আস্তানা;
তাদের পেচ্ছাপে নাকি অদ্ভুত আতরের গন্ধ ভেসে থাকে।
সেই ভাম এল গাঁয়ে;
গায়ে তড়কা ফুটেছে শীল বাড়ির ছোটো ছেলেটার মতো,
যেন নিরুদ্দেশ মাদারির ছেলেভোলা কাঁপুনে ভালুক।
সে বলল, বাদুড় দেখেছে গতকাল
মানুষেরা মাটিকে ঘাঁটিয়ে দিয়েছে, তলবাসী উঠে আসছে বেয়ে
বরফের ঘুম টলে বাসুকীর মতো অঘোর খাণ্ডবে।
ইন্দ্রপ্রস্থ ডুববে এবার
নিরুপায় ময়কে ফেলে যাওয়া আর্জুনি আগুনে।
।। অবতীর্ণ প্রশ্নমালা ।।
অন্ধকারের আঠায় আটকে গেছে আলো
অদ্ভুত এক সন্ধ্যা নামছে দিগন্তে।
আচ্ছা, জলের ওপর সূর্য কি সবচেয়ে সমান্তরাল?
এই প্রশ্ন আসলে বরফের প্রতিশ্রুতি,
কোটি বছর যা গলেনি।
কিন্তু কালান্তকের তাড়া কি সবাইকে সমান করে দেবে;
খিদে তো ব্যর্থ হল, যূথমৃত্যু কি তা সফল করে দেবে?
উত্তর অজানা, প্রশ্নও ঈশ্বরের মতো ততখানি পরীক্ষিত নয়!

