
অমিত সরকারের কবিতা
নষ্ট আগুনের খোঁজে
১
তোর কিরে কেটে বলছি সই
চিতা থেকে অঞ্জলিতে ফিরিয়ে নিয়েছিলাম আগুন
আয়ুরেখা তখন পুড়তে পুড়তে
ফিরে যাচ্ছে হাড়েদের মাতৃভাষায়
আধখাওয়া রূপকথারা দোল খাচ্ছে সজনার ডালে
কবেকার হারানো সিঁদুরচুপড়ি ফিরে আসছে রিক্সা চড়ে
ডগডগে সিঁথিতে ঘুমিয়ে জবাকুসুম
ডোল ভর্তি ধানস্বপ্ন নিয়ে জ্বলে উঠছে তোষক, বালিশ
আমার ভূমিকা শুধু তোর পায়ের আলতাছাপে
২
আমরা আর কখনো কথা বলব না আতপচালের ভাষায়
বেড়ে দেওয়া ফ্যানাভাত থেকে জ্যোৎস্না উঠে আসবে না
কাঁচামরিচের ঘ্রাণ, ক্ষমা করে দিও এটুকু হিংস্রতা
ব্যাকরণ বিধি, ছোটবেলা থেকে যে সব ছাপ
তোমরা রেখে গেছে পেঁয়াজ ও নুনের নাভিতে
আমি ফুলগাছের গোড়ায় রোজ
ঢেলে দেব সেইসব পুরনো অ্যাসিড
মনে পড়ে, তুই কীভাবে চেটে খেতিস টক অক্ষরমালা
লুকিয়ে থাকতিস দুপুরের পড়ে থাকা এঁটো থালায়
আমিও শব্দের হেঁশেলের
মুখে নুড়ো জ্বেলে ফিরে যাব এইবার
তোর ফেলে যাওয়া ব্রতকথারা ছড়িয়ে থাকবে উনুনডানায়
৩
আহত হেঁশেল থেকে ভেসে আসছে পাখার বাতাস
পিঁড়ে পেতে বসে আছে তিন চার টুকরো ছাপাখানা
চকচকে কাঁসার থালায় তুই বর্ণমালা বেড়ে দিতিস
ফোলানো রুটির সঙ্গে গরম প্রজাপতিদের উষ্ণতা
আহা, কুরুশ কাঁটায় কে আর বুনে দেবে নিখুঁত জ্যামিতি
মাটিজন্ম কোনদিন তার নাগাল পাবে না
শুধু খিদে ভেসে আসবে টুপটাপ বৃষ্টি হয়ে
ফোড়নগন্ধে ভিজে যাবে হলুদমাখা পুরনো প্ল্যাটফর্ম
৪
আলোর কুসুম, স্বপ্নে তোকে ডিমের মত লাগে
আমি ঝাল ঝাল অন্ধকার মাখামাখি রসাল প্রেমিক
মরিচ ও পিঁয়াজ মেখে খেতে চাই তোর ভোর
জিভ জড়িয়ে যাবে, আহা হুহু, হুস হুস, রক্তগঙ্গা
ও মৃত্যু, ছুটে আসা কাক
তুমিই সঠিক চিনেছো ডোমনিকে
আমি তার পাপড়ির ভেতরে বসে চৌষট্টি যোগিনী
তুলোট পাতায় লিখি গোপন রান্নার বজ্রযান
তুমি কী আজও দ্রবীভূত হও নোনা স্বাদে…
৫
একরাশ গুমোট থেকে হুইসেল ভেসে আসছে
যেভাবে ক্রুদ্ধ নৌকার দিকে ভেসে আসে পালতোলা নদী
হেমবর্ণ হবিষ্যির পর রান্নাঘর জমজমাট
কাঁচকলা, আলোচালেরা ঝুলে আছে শিকের উজানে
তবু শিকড়েবাকড়ে জড়িয়ে থাকা মায়া
নিকোনো উঠোনে লেগে থাকা মায়া
ঝুড়িচাপা জ্যোৎস্নার হাঁসেদের পালকে মায়া
ফেলে আসা আঁশবঁটিতেও কত হত্যার স্মৃতি জমে
তুই শুধু ছ্যাঁক শব্দে, গোপন কাঁথার উষ্ণতায়
তুলসীগাছে, আকণ্ঠ প্রণামে
মুছিয়ে দিচ্ছিস এই আমাকে
আমি তোর প্রাচীন নাইটগার্ড
লাঠি হাতে বেরিয়েছি নষ্ট আগুনের খোঁজে…
—

