
মহুয়া বৈদ্য-র কবিতাগুচ্ছ
আভাষ
১.
ভারি পাথরের ঘ্রাণ পাই
অজাত শুশুক আমি মেনে নিই সমুদ্র, চড়াই
তবু বিকিরণ আসে, অকম্পন কথাটির পাশে
আনমনে একমুঠো নিভু নিভু প্রদীপ জ্বালাই
অতুল সে আলোটির মনের ভিতর ঢুকে বসি
ম্লান অক্ষর তার ততোধিক ম্লান উনো মাটি
সন্ধ্যা শাবক আসে নুনের আভাষ পেয়ে একা
পাথর জাগাতে চায় অথচ ভারের পাশে পাখা
মেলেছে পূর্ণিমায়, অসামান্য জোছনা সম্বল
হে অধর মৃতপ্রায় চোখের আয়না ধরে রাখো
২.
এখনো বিকেল হলে এলোমেলো বাতাসের স্বর
সহজে বহন করে অবসর, ধুলোময় গ্লানি
তবুও চোখের দাবি আধো আলো ছায়া আরো আলো
প্রতিটি মুখের দাগে অথবা কী মুখোশের ঘর
আধেক অতল যেন লুকিয়েছে ফানুস-বিপণী
তুমুল উড়ছে রোদ সুদূর আকাশ ছলোছলো
মেঘলা তারার মাঠ জোনাকির নরম কুহক
অসার! কথার কথা! আসলে জোছনা কোজাগর
প্যাঁচার নিখুঁত ঠোঁটে বেড়ালের ঘ্রাণের বাহক,
ছিঁড়ে দেয় স্বাদ গন্ধ! এটুকু সতেজ রীতি জানি,
বাকী কথা টলোমলো।
দিনলিপি
১.
বিছানায় চাদরটি সুকোমল সফেদ রঙের
পেটমোটা মশা এসে তাকেই রাঙাল অযাচিত
মশার শরীরে জানি আমারই রক্ত কিছু বাসা বেঁধেছিল
সাদা চাদরের মাঝে রক্তের রাঙা দাগ কালো হয়ে যায়
আমার রক্ত তবে বাতাসের ঘ্রাণ পেলে এতখানি কালো!
পুণরায় মশা আসে সতর্ক হই এইবার
এতটা উলঙ্গ করে আমার রক্তের কথা কেউ বলে নি কখনো
২.
হারমোনিয়াম যেন টুলের মতন হয়ে গেছে
তার উপরে বইটই, পেন্সিল, ভেঙে যাওয়া ছাতা
দুইখানি তোয়ালেতে কোনমতে পড়ে আছে ঢাকা
সুরের আওয়াজ আর এরপর কতদূরে যাবে
পড়ে থাকা পেন্সিল স্বরলিপি লিখে ফেল তবে
৩.
বেড়াতে যাওয়ার ব্যাগে অগোছালো পাঞ্জাবি ভাঁজ হয়ে আছে
তার সাথে খান দুই ওষুধের পাতা উঁকি মারে
ওই খাপে ভরা আছে জলের টিকিট
এলোমেলো ব্লাউজের হুক এসে আটকেছে ভিতরের চেনে, তার রঙ ফ্যাকাশে বেগুনী
এমন ব্যাগের সাথে টলমল হেঁটে যায় কবির গৃহিণী ।

