অজিত সিং বনাম অজিত সিং  <br /> একবিংশ পর্ব <br />  তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং
একবিংশ পর্ব
তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং প্রথমে ছিল বঙ্গলক্ষ্মী চানাচুর, তারপর এল আজাদ হিন্দ চানাচুর, তারপর একের পর এক বিপ্লব চানাচুর, সর্বহারা চানাচুর, উন্নততর সর্বহারা চানাচুর, এখন চলছে বিশ্ববাংলা। এখানেই কি ভাবছেন গল্প ফুরিয়ে গেল? এবার আসছে একে ফিফটি সিক্স চানাচুর। নাম যাই হোক, সোল এজেন্ট আমি।’ ‘বেওয়ারিশ’ গল্পের চানাচুরওলা এবার ঢুকে পড়েছে বাংলার শিল্পক্ষেত্র থেকে শিক্ষাজগতের ক্ষমতার অলিন্দে।খুন, যৌনতা, প্রতিশোধ, নিয়তিবাদের রুদ্ধশ্বাস সুড়ঙ্গে সে টের পাচ্ছে- -বহুদিন লাশের ওপর বসে বারবার হিক্কা তুলেছি আমরা -বহুদিন মর্গের ভেতরে শুয়ে চাঁদের মুখাগ্নি করেছি আমরা -অন্ধ মেয়ের মউচাক থেকে স্বপ্নগুলো উড়ে চলে গেছে (জহর সেনমজুমদার) এই সবের মধ্যে বাংলার কি কোন মুখ আছে আদৌ? থাকলে কি একটাই মুখ? না অনেক মুখ, সময়ের বিচিত্র রঙে চোবানো? বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী জুড়ে বাংলার অজস্র মুখের ভাঙ্গাচোরা টুকরো খুঁজে চললেন তৃষ্ণা বসাক, তাঁর নতুন উপন্যাস ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং’-এ । সব কথনই রাজনৈতিক, সেই আপ্তবাক্য মেনে একে কি বলা যাবে রাজনৈতিক থ্রিলার? সিটবেল্ট বাঁধুন হে পাঠক, ঝাঁকুনি লাগতে পারে। প্রকাশিত হল উপন্যাসের একবিংশ পর্ব। এই উপন্যাসের সব চরিত্র কাল্পনিক।

২১

কুন্তল কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে দৌড়চ্ছিল। মানে ওর পা দুটো দৌড়চ্ছিল, কিন্তু ওর মন দৌড়তে চাইছিল না, অবাধ্য বাচ্চার মতো বেঁকে বসেছিল।মন, এতদিনের ট্রেনিং করানো রুটিনে অভ্যস্ত মন বদতমিজ দিল হয়ে উঠেছিল, গানের গুনগুনটাও ও যেন ধরতে পারছিল-
‘বদতমিজ দিল, বদতমিজ দিল মানে না মানে না’
সেই বেঁকে বসা মন কুন্তলের পা দুটোকে ক্রমাগত বাধা দিচ্ছিল। ‘দৌড়িও না কুন্তল, কী হবে দৌড়িয়ে?ফালতুই দৌড়চ্ছ! তোমার পাপী পেট ভরানো ছাড়া সমাজের কোন কাজেই তুমি লাগছ না, বরং তুমি আরও অস্থির করে তুলেছ সবাইকে।তুমি মানে তোমরা, তোমাদের চ্যানেল।সবাই শালা ব্রেকিং নিউজ দিচ্ছে। এই ব্রেকিং নিউজের চাপে সমাজটাই যে ব্রেক করে গেল, বুঝতে পারছে না। খাবার তো না, ফাস্ট ফুড। পুষ্টিকর ভাত মাছ নয়, টেস্টি মশলাদার ফাস্ট ফুড। খাইয়ে খাইয়ে তোমরা সবার পেটের বারোটা বাজিয়ে দিলে। একটা করে ইস্যু সামনে আনো, লোকগুলোকে নাচাও, এক সপ্তা, দু সপ্তা গরম গরম খবর, স্টুডিওতে লাইভ, তুমুল ঝগড়া, চা-কফির কাপে তুফান, তারপর যে কে সেই, মহৎ বিস্মরণ, কেউ মনেও রাখেনা কিছু। ধর্ষিতা বিচার পেল কি না, উপোসী গ্রামে চাল ডাল পৌঁছল কিনা, বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ গেল কি না, পুলিশ কাস্টডিতে খুন লোকটার পরিবার কী খেয়ে বেঁচে আছে, দুই বাসের রেষারেষিতে কব্জি থেকে হাত বাদ যাওয়া লোকটা কী ভাবে চাকরি করছে, তার আদৌ চাকরি আছে কিনা- এসব জানার দরকার নেই কারো। তুমি ওদিকে এক গলা জলে ডুবে ছবি তুলছ, কিংবা আগুনের মধ্যে ঢুকে গেছ, গণকবরের ছবি তুলছ, ভাতের হাঁড়ির শূন্য অতলের ছবি তুলছ গ্রামে গিয়ে। কিন্তু তারপর? তারপর আবার নতুন ইস্যু।পুরনো ইস্যুর থেকে গরম ভাপ বেরিয়ে গেচ্ছে ততক্ষণে, বাসি বেগুনির মতো নেতিয়ে পড়েছে কালকের গরমাগরম খবরটা। হলুদ হয়ে যাওয়া নিউজপ্রিন্ট যেমন হয়। কিন্তু প্রিন্ট মিডিয়ার থেকে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া তো আরও মারাত্মক। এখানে খবরের থেকে বেশি গল্প তৈরি হয়। আলোচ্য ব্যক্তির শরীরের প্রতিটা ভাষা ভেঙে ভেঙে প্লেটে করে তুলে দেওয়া হয় দর্শকের মুখের সামনে।উহহ, মনে আছে, মনে আছে তোমার সেই যে ভারতবিখ্যাত অভিনেত্রী দুবাইয়ের হোটেলের বাথটাবে মরে পড়ে ছিলেন, সেই খবরটা তোমরা কীভাবে দেখিয়েছিলে? একটা মেয়ে অভিনেত্রীর ডামি হয়ে বাথটাবে পড়েছিল। কতভাবে যে সে মারা যেতে পারত কিংবা কতভাবে যে সে মারা যেতে পারত না, ওইভাবে মারা যাওয়া যে তার পক্ষে সম্ভবই নয়, কেন সম্ভব নয়, আর কীভাবে সে কারো সাহায্য বা প্ররোচনা ছাড়া একা একা মরে যেতে পারত- তার ওপর পুরো একটা ক্র্যাশ কোর্স যেন। সেই মডেল মেয়েটিকে কত ভাবে মরে দেখাতে হচ্ছিল এইভাবে মরে যাওয়া যায়, কিংবা এইভাবে আদৌ মরা যায় না। খুব কষ্ট হচ্ছিল মেয়েটার জন্যে। ওর তো কত কী করার আছে। মডেলিং যদি করতেই হয়, কত শাড়ি, গয়না, প্রেসার কুকার, স্যানিটারি ন্যাপকিন, সাবান, শ্যাম্পু, এমনকি ছেলেদের পারফিউম, ছেলেদের পোশাকেও মেয়েরাই মডেল, ছেলেরা যেখানে সারা শরীর ঢাকা সুট পরে, মেয়েদের সেখানেও নামমাত্র বিকিনি! সেসব ছেড়ে কেবল মরে যাওয়া, কেবল জলের অতলে চলে যাওয়া। এসব তাকে করতে হবে, কেন না মিডিয়ার খাবার চাই, খাবার! কিন্তু সেই খাবারটা আদৌ মেন কোর্স নয়, সুষম পুষ্টি এতে কেউ আশাও করে না, এ কেবল চানাচুর। খালি পেটে চানাচুর খেলে যা হয়। এ দেশের লোকের তাই অম্বল, চোঁয়াঢেকুর, বদহজমের সমস্যা মেটে না।’
বড্ড বেশি বকছে আজ তার মন, হতচ্ছাড়া মন তাকে এগোতেই দিচ্ছে না, আজ সে ব্রেকিং নিউজের ছবিটা একটুর জন্যে মিস করবে দেখছি।
চানাচুরের কথায় কুন্তলের মনে পড়ল, সেই লোকটার কথা। কতবার ব্রিগেডে গিয়ে দেখেছে লোকটাকে, চানাচুর বেচছে।শুধু ব্রিগেডে কেন, যেকোন রাজনৈতিক সভায় গিয়ে ওকে দেখেছে কুন্তল। এমনকি বাংলা অকাদেমি চত্বরে একবার সাহিত্য উৎসবের উদ্বোধনে এক অধিকর্তা এসেছিলেন, সেখানে বংকিমচন্দ্র দত্ত আর মধুসূদন চট্টোপাধ্যায়ের বাংলা সাহিত্যে অবদানের কথা দিয়ে শুরু করতেই চারদিকে উশখুস, ফিসফিসানি, এক মহিলা অফিসার স্লিপ পাঠালেন ওঁকে, তিনিও অমনি হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে গেলেন বক্তৃতা অর্ধসমাপ্ত রেখে। আর ওই মহিলা অফিসারকেও আর খুঁজে পাওয়া গেল না পরে রাজধানীর আলোকবৃত্তে। নির্ঘাত কোন দূরতম জেলার পাণ্ডববর্জিত গ্রামে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। কী হুলুস্থূল সেদিন ওই ভাঙ্গা সভায়। ড্যামেজ রিপেয়ারে অনেকে নেমে পড়লেও ফিসফিসানি আটকানো গেল না। সেই হট্টগোলের মধ্যেও এই লোকটাকে চানাচুর বেচতে দেখেছে কুন্তল। দু একবার খেয়েওছে ওর চানাচুর। অন্য ফিরিওলার বিক্রি করা প্যাকেট চানাচুরের মতো ন্যাতানো বা তেলচিটে গন্ধ নেই, বেশ টাটকা তাজা, খেতে মজা আছে। হরিদাসের বুলবুলভাজার মতো। তবে আহামরি কিছু নয়। কিন্তু এসব লাইনে কাজের তো সময়ের মা বাপ থাকে না, কখন পেটে ভাত পড়বে ঠিক নেই, খিদে পেলে টুকিটাকি যা পায় খেতেই হয়। কলকাতা বা মফস্বলে তাও একরকম। এমন এমন গ্রাম আছে, সেখানে একটা চায়ের ঝুপড়ি অব্দি নেই, পঞ্চায়েতপ্রধান যদি কিছু ব্যবস্থা করল তো খেতে পেল, নইলে হরি মটর। বাড়ি থেকে মা মাঝে মাঝে চিঁড়ে বাদাম ভেজে প্যাকেট করে দ্যায়, কিংবা বিস্কুটের প্যাকেট দিয়ে দ্যায় এক একদিন। সেসব বের করলে অবশ্য হরির লুট হয়ে যায়। সবারই তো খিদে পায়।আর ভাগ করে খেলে কুন্তলের ভাগে হয়তো দুটো বিস্কুট কিংবা এক মুঠো মুড়ি জুটল। বসন্ত বলে একজন আছে, ওর খুব ঘনিষ্ঠ, সে বলে উট কা মু মে চানা। মানে উটের মুখে একমুঠো চানা ধরলে তার শরীরের অনুপাতে যেমন খাবার হয়, তেমন আর কি।
আর এই লোকটার সামনে পড়লে চানাচুর না কিনে উপায় নেই। অদ্ভুত ন্যাগিং লোকটা। কানের কাছে এসে ঘ্যানঘ্যান করে ‘নিন স্যার একটা নিন। পঞ্চাশ বছরের ওপর ধরে বেচছি সার। আমার মতো কাউকে পাবেন না, কতজন এল গেল চোখের সামনে দিয়ে। সব দুদিনের স্যার। লাইন ধরে থাকার দম নেই। একটা চানাচুর নিন না স্যার। টক ঝাল মিস্টি বিশ্ববাংলা চানাচুর। গান্ধী, সুভাষকে খাওয়াতে পারিনি ঠিকই, তবে নেহেরুজীও খেয়েছিলেন একবার, আর তারপর তো কেউ বাদ নেই’
কুন্তল খুব মন দিয়ে ছবি তুলছিল, বিরক্ত মুখে বলে উঠেছিল
‘শালা বালের চানাচুর!’
লোকটা কিন্তু নির্বিকার মুখে বলে ‘আমি কিন্তু এ লাইনে নতুন নই স্যার। সেই কবে থেকে বিক্রি করছি। প্রথমে ছিল বঙ্গলক্ষ্মী চানাচুর, তারপর এল আজাদ হিন্দ চানাচুর, তারপর একের পর এক বিপ্লব চানাচুর, সর্বহারা চানাচুর, উন্নততর সর্বহারা চানাচুর, এখন চলছে বিশ্ববাংলা। এখানেই কি ভাবছেন গল্প ফুরিয়ে গেল? এবার আসছে একে ফিফটি সিক্স চানাচুর। নাম যাই হোক, সোল এজেন্ট আমি। এই চানাচুর বেচেই সংসার চলছে, সবাই চেনে আমাকে। বুঝলেন না স্যার থিংক গ্লোবাল, অ্যাক্ট লোকাল। চোখ বন্ধ করে নিতে পারেন’
চমকে উঠেছিল কুন্তল। কী অদ্ভুত সব নাম চানাচুরের।আর তার থেকেও অদ্ভুত ওর মুখের কথা। এই কথাগুলো তো শুনে মুখস্থ করার কথা না। এ ওর নিজেরই বানানো।থিংক গ্লোবাল, অ্যাক্ট লোকাল শ্লোগানটা না হয় শুনে আওড়ে দিল, কিন্তু বাকিগুলো, চানাচুরের নামের মধ্যে কী ব্যঞ্জনা! একেবারে খাপে খাপ পল্টুর বাপ! কে লোকটা! মালটা ভগবান টগবান নয় তো, কিংবা ভগবানের সোল এজেন্ট, কালের প্রহরী টহরী কীসব বলে না? দেখে তো মনে হয় বয়সের গাছ পাথর নেই। আচ্ছা গাছ পাথর- একটা প্রাণ আছে, একটার নেই। কেন বলে এরকম? বয়সের গাছও হয় না, পাথরও হয় না, তবু?
কিন্তু মনের কথা পুরোটাই বাজে বকোয়াশ বলে উড়িয়ে দেওয়া গেল কই? এইভাবে খবর করা মানে শুধুই পাবলিককে উত্তেজিত করা, আখেরে কোন লাভ নেই। এ যেন কেবল ফোর প্লের সুড়সুড়ি, আসল খেলাটা কোনদিন খেলতেই দেওয়া হল না জনসাধারণকে। এই বারবার ঢেউয়ের ওপরে আর নিচে নামতে নামতে একেবারে থকে গেছে কুন্তল। ওর আজকাল মনে হচ্ছে এই ক্যামেরা লইয়া কী করিতে হয়? এই ক্যামেরা লইয়া কী করিব? শুধুই পেট ভরানো? অন্য কাজ করেও কি তা করা যায় না? ও যখন ছবি তুলতে এসেছিল, ওর দু চোখে স্বপ্ন ছিল। সমাজের সত্যিকারের ছবি তুলে ধরবে। ওর সঙ্গে যারা শুরু করেছিল, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ওয়েডিং ফটগ্রাফি করে, অনেকে আবার নীল ছবিতে চলে গেছে, পয়সা যদি করতে হয়, ওখানেই। এছাড়া একটা বডি পেন্টিং ফোটোগ্রাফি শুরু হয়েছে, সেটার ভালো বাজার তৈরি হচ্ছে আস্তে আস্তে। একবার এক বন্ধুর ডাকে গেছিল কুন্তল, একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে ওর, বন্ধু বলেছে এটাই ভবিষ্যতের বাজার।কুন্তল ট্র্যাক রাখছে, কিন্তু এগুলো ওর কাছে পুতুল পুতুল ব্যাপার, রক্তমাংসের ছবি এই সব রিয়েল ঘটনাগুলো, বন্যা, খরা, দারিদ্র্য এইসব।কিন্তু বডি পেন্টিং দেখতে গিয়ে একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে। সেখানে একটা মেয়েকে দেখেছে সে। সবাই তাকে জেসি জেসি বলে ডাকছিল। ওটাই আসল নাম কিনা সন্দেহ আছে কুন্তলের। এই লাইনে কেউ আসল নাম বলে না। কারণ ন্যুড হয়ে আর্টিস্ট বা ক্যামেরাম্যানের সামনে দাঁড়ানো এখনো এ দেশে খুব অসম্মানের আর লজ্জার পেশা। পয়সাও তো খুব সামান্য। একবার ওর এক বন্ধু আদি বলেছিল, ‘ন্যাংটোই যখন হবি, ব্লু ফিল্ম করলেই হয়, অনেক টাকা সেখানে। এই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঠ হয়ে দাঁড়ানো, পেচ্ছাপও তো পায় মেয়েগুলোর’। কথাটা খারাপ লাগলেও কুন্তল একেবারে উড়িয়ে দিতে পারেনি। সাধারণ মডেলিংর থেকে বডি পেন্টিং মডেলিং আরও কঠিন। এখানে তো বডিটাই ক্যানভাস। কতবার শরীরে হাত দেবে শিল্পী। সবাই কি সাধু নাকি? তাছাড়া ওই চটচটে রঙ সারা গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে থাকা- চাড্ডিখানি কথা? তবে ওর সেই বন্ধুটা বলেছিল, এখন সারা দুনিয়ায় বডি পেন্টিং খুব চলছে। হঠাৎ হঠাৎ এক একটা জিনিস আসে বাজারে, আবার চলেও যায়। তখন এই ছেলেমেয়েগুলোর কি গতি হবে? হ্যাঁ, এখানে অনেক পুরুষ মডেলও দেখেছে কুন্তল, এত বেশি পুরুষ শরীর আর কোথাও দেখেনি সে।কে জানে বিদেশে কেন এত এসবের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এসব নিয়ে একটু পড়াশোনা করা দরকার। আজকাল ওর পড়াশোনা খুব কমে গেছে। সময়ই নেই, সময় থাকলে মন থাকে না, শরীরও দ্যায় না আর।তখন বিছানায় শুয়ে শুয়ে উদাস আঙ্গুলে চ্যানেল সার্ফ করে, কোথাও হকি দেখালে আটকে যায়, এই একটা খেলা এখনো তাকে টানে খুব। নাহ, এইভাবে আর চলবে না, এই জঘন্য বাইটসর্বস্ব জীবন থেকে তাকে বেরিয়ে আসতে হবে। আবার তাকে পড়াশোনা শুরু করতে হবে। সেই পুরনো স্বপ্নটা ফিরে ফিরে আসছে আবার। ও তো ভেবেছিল বেড়ালটাকে নদী পার করে অজানা শহরে ফেলে এসেছে, সে আর ফিরবে না, কিন্তু নাছোড় বেড়ালের মতো স্বপ্নটা কদিন ধরে ফিরে ফিরে আসছে ঘুমের মধ্যে, আর দেখলেই ও জেগে যাচ্ছে, আর ঘুমোতে পারছে না। সেই যে স্বপ্নটা বহু বছর ধরে সে লালন করেছে গোপনে, একটা সিনেমা বানাবে, ফুল লেন্থ ফিচার ফিল্ম, আঁতেল মার্কা সিনেমা নয়, আবার গাছের ডাল ধরে নাচানাচি করা অবাস্তব সিনেমাও নয়, মাস আর ক্লাস দুয়ের কাছে পৌঁছবে এমন সিনেমা। সিরিও কমেডির ধাঁচে সিনেমা যা একইসঙ্গে হাসাবে এবং ভাবাবে। এবং সেটা পলিটিকাল স্যাটায়ার হবে। ধরি মাছ, না ছুঁই পানির মতো করে স্ক্রিপ্ট লিখতে হবে। গল্পটা সে ভেবেও ফেলেছে। মফস্বলের একজন গরিব শিল্পী, যাকে দিয়ে দেওয়াল লেখায় সব পলিটিকাল পার্টিগুলো।তাকে নিয়েই গল্প। স্টোরিটা ডেভেলপ করতে হবে। এটা করতে পারলে বাংলার আসল মুখ ধরা যাবে। এত জোরে যে ঢাক বাজছে, উন্নয়ন উন্নয়ন, তা ফাঁসিয়ে দেওয়া যাবে । এক ছবিতেই ছবি করে দেওয়া যাবে সবাইকে, এটাই ধরতে চায় সে। তাই মাটি কামড়ে পড়ে আছে। মিছিল এতক্ষণে হাজরা রোড পেরিয়ে গেছে কি? এরপর তো পজিশন নিতে অসুবিধে হবে ওর। তার মধ্যে আবার সাম্যদা ফোন করছে বারবার, ‘একদম ফ্রন্ট থেকে ছবি চাই কুন্তল, বস কিন্তু তোর ওপর খুশি নয়, আগুনের ছবিটাও তুই ভালো তুলতে পারিস নি।’
‘বস কি চাইছে আমি আগুনের মধ্যে ঢুকে ছবি তুলি? শোন সব কিছুর একটা লিমিট আছে। এই যে তুই, যে লোকটার ছেলে আগুনের মধ্যে থেকে বার হতে পারল না, জীবন্ত ঝলসে যাচ্ছে, তুই তাকে গিয়ে জিগ্যেস করছিস, ‘আপনার ছেলে যে আগুনের মধ্যে আছে, আপনার কেমন লাগছে?’ তোর কেউ যদি পুড়ত আর তোকে এসে কোন জার্নালিস্ট এটা জিগ্যেস করত, তোর কেমন লাগত? আমি হলে তোর জিভ টেনে ছিঁড়ে দিতাম রে বোকাচোদা! এইভাবে তোরা টি আর পি বাড়াবি আর আমাকে তার মধ্যে থাকতে হবে? বলগে যা বসকে, তুমি খুশি নও তো বাল ছেঁড়া যায় কুন্তলের। হিম্মত থাকে তো বল গিয়ে শালা’
সাম্যদা রেগে ফোন রেখে দিয়েছিল। তাতে ছেঁড়া যায় কুন্তলের। বসকে কাঠি করবি, কর গে। স্যাক করবে তাই তো? করুক।যদিও সেটা করতে পারবে না এরা। কেউই পারেনি। কোন চাকরিই তার যায়নি, সে নিজেই ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। কারণ ক্রেজি হোক, দুর্মুখ হোক, তার মতো ক্যামেরা কেউ বোঝে না। আর পে প্যাকেজ নিয়েও সে ঘ্যানঘ্যান করে না কোনকালে, কিন্তু তার কাজ নিয়ে কথা বলতে এলে তার ভেজা গরম। শালা কিছু বোঝে না, শুধু খবরদারি। মটকা গরম হয়ে যায় এসব শুনলে। এই নিয়ে এগারো নম্বর চাকরি কুন্তলের মিডিয়াতেই শুধু। অন্য সব বাদ দেওয়া যায় যদি। পৃথিবীতে নেই কোন বিশুদ্ধ চাকুরি, সে কি জানে না? আর এই বাংলায় এই সময় চাকরি বলে কিছু আছে নাকি? সব তো দাসখত দেবার চাকরি। তুমি হাইফাই পড়াশোনা করবে তো তোমার পি এইচ ডি আটকে দেবে, প্রমোশন আটকে দেবে, কমিশন খাইয়ে দেবে, আর এলেবেলে হলে পার্টির বাইক বাহিনীতে জয়েন করো। রাস্তায় সব্জি বেচো, কি দোকান দাও, সেখানেও পার্টি আর পুলিশের মামারা এসে টাকা খেঁচবে। এখন পুরনো বাড়ি রঙ করতে গেলেও ক্লাবের ছেলেদের টাকা দিতে হয়।
এই চাকরিটা গেলে কুন্তল আর চাকরির দিকেই যাবে না।ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করবে। এখনকার দিনে বিয়ে বছরখানেক টেঁকে হয়তো, কিন্তু ছবির ক্রেজ খুব।
ছুটতে ছুটতে হাজরার মোড়ে পৌঁছে গেল। ওই তো মিছিলটা আসছে। সামনে একটা হুইলচেয়ার থাকার কথা। সেখানে সারি সারি হুইলচেয়ার। এত হুইলচেয়ার। থাকার কথা তো একটা!
সাম্যদা ছবি দেখে চমকে ওঠে, এত হুইলচেয়ার! ফোটোশপ মেরেছে নির্ঘাত! কিন্তু কেন? সুইসাইডাল ছেলে একটা!

(ক্রমশ)

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes