বিবস্বান দত্ত-র চতুর্দশপাপ-পদাবলি

বিবস্বান দত্ত-র চতুর্দশপাপ-পদাবলি

শরীরের নাম রাখি কবোষ্ণ কুটির
বদ্‌তমিজ বৃষ্টি আর মৃত আন্ধিয়ার
ভেদ করে অবশেষে। স্মৃতিসমীপেষু-
চাঁদটিকে ভুলে গেছে কৃষ্ণকুন্তলিনী
শব্দে খুঁজে ফিরি নৃত্যময় আলো যার
কথাটিও? কথা! তুমি গোপনেই থাকো
না দেখুক পার্শ্বজন। আমিও না দেখি
আলোকিত সেই জল চোখের কিনার

গৃহস্থ সে লতাটির আঙিনায় এসে
যে দাঁড়ালে, ওগো প্রেম! তোমাকেই বলি
নিষিদ্ধ সে আখ্যায়িকা। বলাটি বারণ।
তুলিতে ধরেন সূর্য তাহার প্রেমিক
আমিও তো একা নই। যদ্যপি সুনীচ
হাত থেকে দিনলিপি খসে পড়ে গেছে

সমস্ত দিনের গায়ে লেগে আছে সেও
সুতোবোনা একফালি বিষণ্ণ চন্দ্রিমা
আজগুবি নাটক হচ্ছে ইন্টিমেট স্পেসে
আমি একা অভিনেতা চতুর্দিক আলো
ছিন্ন করে উপস্থিত সমস্ত প্রেমিকা
নাট্যশাস্ত্র এইখানে লেখা হচ্ছে আজ
ওই লাগল ঝড় আর ওই লাগল মেঘ
ওই লাগল হাওয়াখানি জি-স্ট্রিংয়ের গায়ে

তারও পরে মৃদুদিন একা একা ভাবা
ধ্বংসকথা সবাই কি কবিতায় লেখে?
কবির শরীরে অগ্নি অধিষ্ঠিত হন
বড়ো অল্পকাল। আর তারপর ছাই
হয়ে উড়ে চলে যায় ভবিষ্যৎকাল
সুগন্ধটি থাকে শুধু অপঠিত বইয়ে

অধিকন্তু দুঃখ, (যদি ছিটেফোঁটা থাকে)
চুপিচুপি তুলে রাখি চন্দ্রের কিনার
জমা জলে জ্যোৎস্নাসখা ভেঙে পড়ে থাকে
ভিজে যাওয়া হাওয়া থাকে গ্রিলখানি ধরে
যেমন মা দাঁড়াত সে ফেলে আসা দিন —
প্রথম চাকুরিকাল। প্রেম ছিন্নবীণা
সেও তো পহেলাবার। তদন্তর সেই
কীটদষ্ট পুস্তিকাটি রোদ্দুরে শুকায়

এখন সে অঘোরীর সংসারযাপন
সূচ সুতো বুনে নেবে গেরস্থালি কাঁথা
অপেক্ষা মহার্ঘভাতা। অথচ হে সুদ
দিগন্ত বিস্তৃত হয় প্রত্যহ বিকেলে।
বই শুধু চেয়ে দেখে সমস্ত জীবন
খই হয়ে উড়ে যায়। উড়ে যাচ্ছে রোজ

প্লেনের চাকায় যেন রোদ লেগে আছে
আর একটা গোটা দেশ গাছ হয়ে গিয়ে
ডাল-পালা মেলে দিচ্ছে সুতাপের আশা
বোরখার আড়াল থেকে বয়ে যাওয়া নদী
জনপদ গড়ে নেয় নিজস্ব নিয়মে।
সেই দেশ পশতু নাকি বাংলা ভাষা বলে!
চাঁদ এসে ক্লাস করে নির্ভয় রাত
জোনাকির পথ জুড়ে স্কুলের পোশাক

আমাদের ভেতরে কি মৌলবাদ নেই?
আমিও কি কোনও প্রশ্ন হত্যা করিনি?
নিজের কাছেও আমি রোজ চুপিসাড়ে
লুকিয়ে কি রেখে দিই কোনও অভিসার?
ক্লাসরুম জানলা থেকে আকাশের দিকে
উনুনের ছায়া শুধু প্রলম্বিত হয়

সেই অশ্রু দুর্নিবার ঝড় ছিল বলে
সচেতন টেনে ধরি ঘোড়ার লাগাম
ওইদিকে মেঘেরাও অকৃতিঅধম
ওভারহেডের চাঁদে ঘুণ ধরে আছে।
তাকে বুঝি ডাক দেয় ইতিহাস বই
বুঝি তাকে চিঠি লেখে পোড়া গম ক্ষেত?
সেও চিঠি লিখেছিল হায়ারোগ্লিফিক
চিঠি তাকে ছিঁড়েছিল খাম মনে করে।

এই স্থান ক্রিয়াকালে অতীতকে নেয়
ধুলায় হয়েছে ধূলি লিখন তোমার
হস্তলিপি মনে আছে তোমার এখনও!
বানান ভুলের পাশে যথাযথ রাগ!
তবু কেন ছিঁড়ে যায় ঘোড়াদের সুতো?
কেন তবু সব ঘুণে চাঁদ লেগে আছে

কাল যাই হয়ে যাক বাড়ি এসে তিনি
হাতে তুলে নেবেন সে কালি আলোকিত
যেভাবে জীবনকাব্য বিরচিত হয়
আর তার সাক্ষী থাকে ছিন্নমূল কথা
ওই দ্যাখো এই রাত ফিরল কত দূর?
মেট্রো ধরল সিট পেল এইবার বই
খুলে বসে পড়ল তাই বোঝাটি গেল না
বুকে তার থেমে আছে বঙ্গোপসাগর।

ভেবেছিল রাতটুকু ঘুমহীন হলে
সকালে খসিয়ে নেবে এক মুঠো তারা,
অথচ মাহেন্দ্রক্ষণে ঘুমের ওষুধ
তন্দ্রানিভাননা সেই মেয়েটির কাছে
নিয়ে চলে গেল বলে তারাগুলো একা।
আজকের দিন শুধু আলোকিত কালি

টেনশন তো বেশি হচ্ছে এমনকি সেটা
মায়ের চোখেও পড়ছে লুকোতে পারছি না
এদিকে তো আমি জানি কফির কাপের
বাইরে কোনও মেঘ নেই বিদ্যুৎপ্রবণ
যদিও আকাশ কালকে অংশত মেঘলাই
এবং আমিও কিছু কালবৈশাখী নই
তবুও যে উড়ে যায় চন্দ্রের সমীপে
পৃথিবীর ঝড়ে তাকে ছোঁয়া যায় না

আসলে ব্যাপারটা খুব পোয়েটিক হলো!
বিষণ্ণ বিকেল এসে রাস্তায় দাঁড়াবে
এবং সে নিশ্চিতের পাপ-প্রবণতা
শেষ পাখি ঠিক ঠিক ঠোঁটে তুলে নেবে
সম্ভবত… যদি কিছু এলোমেলো হয়
গোধূলির দিব্যি আমি চাঁদ হয়ে যাব

পাঁচিলের ওপর পা বেপথু শরীর
দুদিকেই চিতাভস্ম মণিকর্ণিকা
নিতান্তই নতুনের স্বাদ নেব বলে
উঠে গেছি। আগুপিছু ভাবিনি তেমন
ভয় করছে। ভালো লাগছে। এই কথা ভেবে
যেইভাবে দিন কাটে উড়ে যাওয়া খই
তার গায়ে হরিনাম লিখে রেখে যাব
হে আমার স্বীকারোক্তি, তোমাকেই বলি

আমার মাথায় লেগে রয়েছেন মেঘ
এ জীবন ঝড়ে কাটবে লিখে রাখা আছে
তাই কিছু আঁধি আঁকি নিজের তুলিতে
যেখানে জন্মেছিলাম সেখানে আগুন
তারপরে আমারও তো দাহপ্রবণতা!
চেয়ে দেখি কোন অগ্নি ঝাঁপ দিতে ডাকে

অথচ মুহূর্তমাত্র জল। তার থেকে
ভাঙা চাঁদ উঁকি দিয়ে বলে, এই শেষ
গল্পকথা অনুপম নৌকো হয়ে ভাসে
আলগোছে সেইখানে সন্ধে শেষ হয়
চিকন পাতার গাছ, ছায়াবৃতা হাসি,
ঝিঁঝিঁপোকা, টানাসুর, বৈরাগ্যের গান
ছড়িয়েছে সমস্ত মফস্বলের বুকে
অথচ সে ক্ষণিকার নাগরিক প্রেম

কফির মদির ঘ্রাণ যতদূর থাকে
ততদূর কক্ষপথ। তার বেশি আর
পেরোনোর কথা নয় শহুরে ক্যাবের।
মুহূর্তের চিঠি রেখে যাচ্ছে কোনও কবি
গ্রন্থভাঁজে। আমি তো শিকড়-বদ্ধ জীব
আমিও কি তার বেশি হেঁটে যেতে পারি?

১০

এক্সপেক্টেশনের ছিটেফোঁটা নেই বলে
এই ঘরে ছেড়ে রাখি সমস্ত পোশাক।
নাটকের অধ্যাপক তারাটির কাছে
আলগোছে যেতে যেতে ভাবি এই শেষ
এই শেষ চাঁদ রেখে চলে যাচ্ছি আমি
এরপর কোনোদিন দেখা সাক্ষাতের
আর কোনো প্রশ্ন নেই। ভাঙা আলোটুকু
ছড়িয়েছে মঞ্চ জুড়ে। যবনিকাপাত

খুব একটা অর্থ নেই এই খেলাটিতে
ঠিক কোন হরিচরণের ভাঁজে লেখা
হয়ে থাকবে এর মানে, ব্যঞ্জনাসমূহ
সেসব অলীক কথা আপাতত শোনো,
ছায়াপথ জুড়ে তার ভবিষ্যৎ নেই।
সময়ের ভাঙা ছেলে হেঁটে আসছে কাছে

১১

নিজেকে চিনি না আমি আয়নায় তাকালে
দেখতে পাই পাহাড়ের ঢাল জুড়ে আঁকা
বরফের আস্তরণে ঢাকা মৃদু গ্রাম
অথচ কী নিরুপম বিস্ময়ের কথা
কোনোদিন আমি কোনও পাহাড় দেখিনি।
এতটা অচেনা লাগে আজকাল নিজেকে!
মুহূর্তই থেকে যাবে এই কথা ভেবে
মুহূর্তেই ঝাঁপ দিল অগ্নিপ্রবণতা

ভাঙাচোরা দিন কাল জুড়ে লেগে আছে
হঠকারী মিথ্যেফুল দুর্নাম বাগিচা
জলে পড়ে গিয়ে ফের যদি উঠতে পারি
নিরুত্তাপ প্রাত্যহিক ট্রেনে ঢুকে যাব
অথবা জলের স্রোত টেনে নিচ্ছে কাছে
অথবা এ আমিখানি ছিন্ন হচ্ছে রোজ

১২

“ধুত্তেরিকা, এই পরবাসে কে যে রবে
অথচ তো কেটে গেছে আটাশ বছর
এবং এ ঘর জুড়ে দেওয়ালের সারি
পাহাড়িয়া মৃদু দিন বৃষ্টিবিলাসিত
কুয়াশায় ঢেকে আছে ভীরু জনপদ
সমস্ত বয়স জুড়ে শীত লেগে আছে
ঘুম ছোঁয়া মনাস্ট্রিতে ঘন্টা বাজছে দূরে
এইখানে নিম্নচাপ বহুযুগ জারি।”

মুনিয়াকে এইসব বলি আর ভাবি
পাখিদের শহর যে কীরকম হয়
সেই কথা ও আমাকে বলেনি এখনও।
আমিও যে তাকে আজ কীভাবে দেখাই
জনপদে আলোহীন গৃহখানি এঁকে
পাহাড়টা কেন জানি পাখি হচ্ছে রোজ!

১৩

প্রতিমা যখন যান অস্তাচলে। একা
মণ্ডপটি পড়ে থাকে। ঠিক তার মত
প্রেম শেষে বসে আছি। আলোগুলি তারা
নেভাতে ভুলেছে শুধু একা ফেলে গেছে।
ভাসানের নৃত্যে ঐ ফেলে আসা স্বর
সকলেই জানত সব। তারা ফুল লতা
বাখরখানির স্বাদে দুঃখদের রাত
রাতেদের পৃষ্ঠদেশে লেগে থাকা ডানা

খসে গেছে তারাটির মতো কোন কালে
উড়তে গিয়ে সেই কথা মনে পড়ে শুধু
সব জল এক দিন শান্ত হয়ে আসে
সব রাত মুহূর্তের ঘুম খুঁজে নেয়
যেসব যন্ত্রণাদের উপশম নেই
তাহাদের তুমি শুধু নির্জনতা দিও

১৪

অতঃপর কবিতার কাছে এসে বলি
এই গল্পে সর্বজ্ঞ-কথক যদি কেউ
থেকে থাকে তবে তাতো শুধুমাত্র তুমি
তুমি বলো এ কেমন নদী আলুথালু
স্বল্পপরিচিতা ঢেউ কেন উঠছে বুকে
দেহ থেকে খুলে যাচ্ছে সমস্ত সভ্যতা
নারীটির কাছে এসে নগ্ন হয়ে বলি
আমি যোগ্য নই দেবী অর্ঘ্যপ্রদানে

তবুও চোখের মণি ছিন্ন করে হাত
কলিজা দু-টুকরো করে অকৃত্রিম রাগে
মায়াময় মুখ নাকি শবরের গ্রাম
মনে হচ্ছে দেবী ছেড়ে চলে যাবে আজ
অথচ যে কেন সেই পরিত্যক্ত দেশে
পড়ে রইল চতুর্দশপাপ-পদাবলি!

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (1)
  • comment-avatar
    Anup+Sengupta 4 years

    ব্লেক একবার বলেছিলেন, Every true poet, wittingly or unwittingly is on the devil’s side. বিবস্বানের কবিতার শিরোনাম দেখে সে কথাই মনে পড়ে গেল। যে একমুঠো কবিতা তিনি এখানে আমাদের জন্যে রেখেছেন, তা শেষপর্যন্ত উন্মোচিত হচ্ছে এক final unity রূপে – একইসঙ্গে unity and multiplicity; আর একজন শক্তিশালী কবির একটি কৃশকায় কাব্যগ্রন্থ পড়ার অনুভূতি হচ্ছে যেন।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes