
অভিরূপ মুখোপাধ্যায়-এর কবিতাগুচ্ছ
দিদিমবাড়ি
ছায়া
নিয়ম মেনে সমস্ত কাজ হল।
ঠাকুরমশাই ডেকে বলছেন মাকে—
এই বছরটা পরিজনরা সাবধানে থাকবেন
সবার সঙ্গে ভ্রমণ করবে ছায়া…
দেখতে-দেখতে একবছরও ঘাটে উঠল আজ
বোবা একটা বিড়াল-ছানা জন্ম নিল ঘাসে
ওর একটা পা ভাঙা
অসহ্য যন্ত্রণায়
অসাড় হয়ে আছে
তোমার ছায়া ওরই মতন তাকিয়ে আছে দিদিম?
মনে-মনে সবার সঙ্গে কথা বলছে রোজ?
দুই বোনের খবর এনেছি
‘কই গেলি রে বনা?’
চমকে উঠল মাসি
তোমার গলার আওয়াজ?
কোত্থাও কেউ নেই…
হাওয়ার এমন কুমন্ত্রণার খেলা!
ঘরের মধ্যে চেয়ার টেবিল। টিভির রিমোট।
শোকেস ভর্তি নানা রঙের ঝিনুক
ঘরের পাশে ঝুলবারান্দা
একবছর মাতৃহারা সেও…
তোমায় জলে ভাসিয়ে দেওয়ার মুহূর্ত থেকেই
মায়ের চোখেও তাকিয়ে আছে
বাজ পড়া এক পাখি
শুকনো নদী। উলটে রাখা ভেলা…
মাম-পাপানের জন্মদিন
সন্ধেবেলা পড়তে বসে এখনও ভাইবোন
দু-জনে দুই ঘরের দরজা
খোলাই রেখে দেয়।
তোমার হাতে গোকুলপিঠে
বাটি ভর্তি সন্দেশ-বিস্কুট।
সন্ধে গড়ায় সন্ধে গড়ায়
আসে না আর কেউ।
চলে যাওয়ার একমুহূর্ত আগে:
আগামীকাল মিঠু
মাম-পাপানের জন্মদিন না?
কথা বলার ক্ষমতা নেই তবু: ওদের
বাড়ি ভাড়ার টাকা থেকে
নতুন কিছু দিস।
নতুন? কত নতুন?
ওরাও এখন সহ্য করছে
নতুনতর ঢেউ…
শ্মশানে সন্ধে-বাজনা
গাড়ির ভেতর শুইয়ে রাখা।
কাচের গাড়ি।
ছোটবেলার নেমন্তন্ন। দিদিমবাড়ি
শুইয়ে রাখা জলের ধারে…
তাকিয়ে আছে
আমার দু-চোখ
ভিক্ষে পাওয়া থালার মতন
হাওয়ার শব্দ। টিনের থালা।
অস্থি
আকাশ ভেঙে উল্কা পড়ছে জলে
আকাশে আজ আমরা ক-জন আলো
যায় ভেসে যায়
উল্কাপিন্ড পদ্মপাতায় মোড়া…
দ্যাখ রে আমার বুড়ির-বুড়ি কোথায় নিরুদ্দেশ!
সুন্দর লেখা,,,