
অলোকপর্ণার ছোটগল্প: সন্তোষ করের মাতৃপরিচয়
কোথাকার বোবা রাগ পুষে রেখেছিল ছেলেটা, দিল পাড়ার মোড়ে সাতসকালে সন্তোষ করের উপর বমি করে,-
“খানকির বাচ্চা!”
রাস্তার সব লোকজন, মহিলা, কুকুর, রিক্সা, রোদ, মেঘ, ছায়া চকিতে সন্তোষ করের দিকে তাকালো। না, তার সঙ্গে সঙ্গে মাকে মনে পড়ল, তা নয়। বরং বউ সুতপার মুখ ভেসে উঠল চোখের সামনে। সন্তোষ আর মুখ তুলে তাকাতে পারলনা। চিৎকার করে বলে দিতে পারলনা, “তোর মাকে… তোর মাকে আমি…”
নেওয়ার কথা ছিল সুজি, চিনি, আর ধুপকাঠি। যেন কিছুই হয়নি, এভাবে সন্তোষ বিন্নুর দোকান থেকে সটান ফাঁকা ব্যাগ দোলাতে দোলাতে ফিরে এলো। যেন কিচ্ছু হয়নি, এককথায় সন্তোষ মেনে নিল একথাই সত্য, এবং এটুকু জানার জন্যেই যেন সে আজ ব্যাগ হাতে সকাল সকাল বিন্নুর দোকান অবধি গিয়েছিল, এবং জানা হয়ে গেলে সে মনে করল এবার ফিরে আসাই শ্রেয়। যেন কিছু হয়নি এভাবে সন্তোষ চটিজোড়া খুলে রাখল দরজার পাশে। ব্যাগেদের আস্তাবলে ব্যাগ রাখলো তুলে। সুতপা রান্নাঘর থেকে জিজ্ঞেস করল, “কী হল? পেলেনা?”
সন্তোষ অস্ফুটে বলল, “বন্ধ”
“লোকটা কী যে বলে… শুনতে পাই না” চেঁচিয়ে ওঠে সুতপা।
মনে বল আনতে হয় সন্তোষের। গায়ের জোরে সে বলে “দোকান বন্ধ।”
কথাটা নিজের কানেই অবিশ্বাস্য শোনালো। বিন্নু সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে দোকান খুলে ফেলে। ঝর, জল, বৃষ্টি, হরতালেও তার দোকান বন্ধ থাকে না। তাই পুনর্বার সে প্রত্যয়ের সঙ্গে, যেন নিজেকেও বিশ্বাস করানো প্রয়োজন এমনভাবে বলে, “দোকান খোলেনি এখনো।”
সুতপা কিছু একটা বলে বসলো রান্নাঘরে। সন্তোষের কানে ঘুণাক্ষরেও তা এলো না। বরং অবিশ্বাস জাগল, ছেলেটা একথা সত্যিই বলল? সত্যি সত্যিই একটু আগে অচেনা একটা মানুষ অহেতুক, সকাল সকাল মুখ খারাপ করল তার উপর? সত্যিই তাকে তার নিজের পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে অকারণে একথা বলা যায়? প্রায় অকারণেই, ছেলেটা কখন সন্তোষের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিল, কাকপক্ষী টের পায়নি। আর সন্তোষ কেনই যে পিছু হটতে গেল? এখন আর মনে পড়ে না। কিন্তু মনে পড়ছে, ছেলেটার পায়ে পা পড়তেই ছেলেটা সকাল সকাল রাস্তার মোড়ে চিৎকার করে ঘোষণা করে দিল সন্তোষ একটি “খানকির বাচ্চা!”
সন্তোষ যদি আজ পিছু না হটত? যদি ডানদিকে, নিদেনপক্ষে বাঁদিকে সরে দাঁড়াত? আর বিন্নুর দোকানের সামনে এসে পৌঁছাত অচেনা ছেলেটা, কিছু কেনাকাটা, হয়তো সার্ফটা, পেস্টটা, বিস্কুটটা, দেশলাইটা কিনে চলে যেত? তাহলে সন্তোষ আজ সুজি, চিনি এবং ধুপকাঠি কিনে ফিরে আসতে পারতো। অথবা যদি সন্তোষ একচুলও জায়গা না ছেড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতো বিন্নুর দোকানে, আর ছেলেটা তাকে এড়িয়ে ডানদিকে বা বামদিকে এসে দাঁড়াত, তাহলেও সন্তোষের আজ সুজি, চিনি আর ধূপকাঠি কেনা হত। কিন্তু সন্তোষ সামনে নয়, ডানে কিংবা বাঁয়েও নয়, পিছু হটেছিল।
খুব জোরে মাড়িয়েছিল কি? সন্তোষের সামনে সুতপা কখন যেন চায়ের কাপ রেখে গেছে, সেদিকে হুশ নেই, কিন্তু তার পায়ের তলায় এখনো যেন ছেলেটার পায়ের পাতা দপদপ করছে। সন্তোষ চকিতে ওই অদৃশ্য পা হতে নিজের পা সরিয়ে নিল। সন্তোষ মনে করার চেষ্টা করল ছেলেটার মুখ। মনে পড়ল, কথাটা শোনামাত্র সে স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়েছিল ছেলেটার দিকে। নিমেষের অবিশ্বাস তখনো ছিল, কথাটা কি তাকেই উদ্দেশ্য করে বলা হল? ছেলেটার চোখের দিকে তাকাতে সেটুকু অবিশ্বাস বাষ্পীভূত হয়ে পাড়ার মোড় ছাড়িয়ে আকাশে মিশে গেল। ছেলেটাকে সে আগে দেখেনি। বয়স কুড়ি একুশ বড়জোর। তার মেয়ের বয়সীই হবে। সন্তোষের কোনো বন্ধু বা বন্ধুস্থানীয়ের ছেলে হলেও হতে পারতো, কিন্তু না, ছেলেটা তার অপরিচিত। একজন অপরিচিত মানুষ, আরেকজন অপরিচিত মানুষকে এত সামান্য কারণে একথা বলতে পারে?
পারে নিশ্চয়ই। ছেলেটা তো পারলো। এ নিশ্চয়ই আজকাল যাকে তাকে বলা চলে। “খানকির বাচ্চা, খানকির পো, খানকির ছেলে, খানকি”,- মনে মনে আওড়ালো সন্তোষ ভাবলো, হ্যাঁ, বলাই যায়… আর বললেই কি সন্তোষের মা রাস্তায় নেমে আসবে নাকি!
তবু মা নয়, একথা শোনার পরমুহূর্তে, সুতপার মুখ ভেসে উঠেছিল সন্তোষের মনে।
চেয়ারে বসা সন্তোষ রান্নাঘরের দিকে তাকালো, আড়চোখে, যেন বাইরে কাউকে একটা সে খুন করে রেখে এসেছে, এখন খুনির মতো সে রান্নাঘরের দিকে তাকাল। সেখানে এখন ঘামেভেজা সুতপা আগুনের সঙ্গে লড়ছে। আগুন নিয়ে খেলছে। আজ আর টিফিনে লুচি সুজি হল না। অন্য কোনোকিছু জবাই হচ্ছে, হয়তো গতকালের কপি বা চিরে বা মিষ্টি আলু।
কিন্তু সুতপা কেন? এ বাড়িতে বহুবছর মা কেবলমাত্র সুতপা, তাই কি? সন্তোষ আড়চোখে দেওয়ালে ঝুলানো নিজের মায়ের সাদাকালো ছবিটা দেখে। যেন নতুন কাউকে দেখছে, যেন আগে কখনো দেখেনি এমন নতুন একটা মুখ। সন্তোষের মা মোটা কালো ফ্রেমের চশমা চোখে ছবি থেকে সন্তোষের দিকে তাকিয়ে আছেন, তাঁর কপালের সাদাকালো সিঁদুরের টিপকে বাইরে থেকে জ্যান্ত সিঁদুর লেপে লাল করে রাখা হয়েছে। “খানকি…”-না, এই শব্দ কোনোভাবেই তার মাকে লক্ষ্য করে বলা যায় না। তবু সন্তোষ, পঞ্চাশ বছর বয়সী সন্তোষ কর এক আস্ত “খানকির বাচ্চা।”
“বলছি এখন চানে না গেলে জল চলে যাবে, কানে কি শুনতে পাও না?” সুতপার কথায় সন্তোষ চেয়ারে ফিরে আসে, আর দেখে ঘড়ির কাঁটা নটা ছুঁতে চলল।
২
“খানকি”, “রেন্ডি”, “বেশ্যা”,- একে অশ্লীল ভাবলে অশ্লীল, না ভাবলে এতো কেবলই পেশা। উপরন্তু প্রাচীনতম। সমাজের পিতৃতান্ত্রিক পরিণামে তৈরি। “পতিতা”, “গণিকা”,- সমার্থক হলেও কেউ গালি দিতে ভুলেও কাউকে একথা বলেনা। বাসের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে সন্তোষ ভাবলো। পতিতাতে সূক্ষ্মভাবে পতনের কারণ উঁকি মারে, আর গণিকাতে সরাসরি আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে মন চলে যায়, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা হয় না। অতএব, সেই “খানকি”, “রেন্ডি”, “বেশ্যা”। বাসের প্রতিটি মুখ আড়চোখে দেখে সন্তোষ। জনা সত্তর মানুষ প্রাণের দায়ে কিলবিল করছে। এর মধ্যে কারও না কারও মা নিশ্চয়ই কখনো না কখনো… এখানে কেউ না কেউ আদপেই “খানকির বাচ্চা”। যদি সত্যিই কারও মাতৃপরিচয় খানকির বাচ্চা হয়ে থাকে, তাতে কোনো কলুষতা, অন্তত সন্তোষের কানে বাজে না। কিন্তু সন্তোষের মা তা নন। তা ওই ছেলেটি নির্ঘাৎ জানে, আর জানে বলেই সোচ্চারে আজ সকালে সেকথা সে বলতে পেরেছে। যদি এমন হয়, ছেলেটাকে যদি সন্তোষ এই মুহূর্তে কাছে পায়, ওর জামার কলার টেনে ধরে সন্তোষ ওকে বলবে, “শুয়োরের বাচ্চা, আমার মা সত্যিসত্যি খানকি”, তাহলে ছেলেটা হয়তো আঁতকে উঠে কলার ছাড়িয়ে দৌড়ে পালাবে। অথবা সন্তোষ এটাও বলতে পারে, “তুই খানকির বাচ্চা, তোর বাপ খানকির বাচ্চা, তোর দাদু খানকির বাচ্চা”। অথবা, “তোর মাকে… তোর মাকে আমি…”। মনে মনে এমন আরও অনেক সম্ভাবনা তৈরি করতে করতে সন্তোষ অফিসে পৌঁছোয়।
সন্তোষ আজ অফিসে না, পুরোটা সময় পাড়ার মোড়েই পড়ে থাকে। টিফিন হয়, টিফিন বাক্স খুলে দেখে পাউরুটি আর ঘুঘনি দিয়েছে সুতপা। ঘুঘনি বানালো কখন? প্রেশারের সিটি তো কানে আসেনি? কানে আজ কেবলই “খানকির বাচ্চা।”
সন্তোষ ভেবে দেখলো, শান্ডিল্য, ভরদ্বাজ, কাশ্যপ প্রমুখ প্রাচীন ঋষিদের থেকে অনুসরণ করে আজকের দিনে যদি এসে পৌঁছানো যায়, তবে প্রতি বংশে কখনো না কখনো কেউ না কেউ বেশ্যাবৃত্তি নিশ্চয়ই করেছেন! এতো আর রকেট সায়েন্স নয়! আলবাত করেছেন। মানুষের জীবন মানুষকে দিয়ে অনেককিছুই করিয়ে নেয়। সন্তোষ নিজের কাউন্টার থেকে মুখ তুলে একবার অফিসের সবকটি মুখ দেখে। আর ভাবে, সেই বাবদ, অফিসের প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনো ভাবে খানকির সন্ততি। ছেলেটি যে তাকে একথা বলল, এমনকি তার শরীরে পর্যন্ত কোনো এক খানকির রক্ত বইছে। এই হিসেবে পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ অনন্তকাল থেকেই অজান্তে খানকির বাচ্চা।
এতক্ষণে আলোর হদিস পেল যেন, মনে মনে উৎফুল্ল হল সন্তোষ। পাড়ার মোড় ছেড়ে অবশেষে সে অফিস কাউন্টারে ফিরে আসতে পারলো।
সন্ধ্যায় বাসে ওঠার আগে সন্তোষের ইচ্ছে হল একবার ওদিকটা ঘুরে যায়, আজ যখন সারাদিন শব্দটার সাথে সহবাস করলো, এখন গলি দিয়ে একটু ঢুঁ মারার ইচ্ছে হল। কলেজে পড়ার সময় একবার মাত্র বন্ধুদের সাথে সেখানে গেছিল সে। তাড়াহুড়োতে কী যে হল, ঘরটা কেমন, বিছানাপত্তর কেমন, এমনকি মানুষটা কেমন বোঝার আগেই যাওয়াটুকু হয়েছিল আর আসাটুকু। এমনকিছু ভালোভাবেও আসা হয়নি। হাতখরচের টাকায় যেটুকু হয়, সেটুকু আসা নিয়ে সন্তোষরা ফিরে এসেছিল। একথা সুতপার জানার বাইরে। কারণ এরপর সন্তোষ এ তল্লাটে আর যাতায়াত করেনি। আজ এলো, প্রায় বছর ত্রিশ পরে। ত্রিশ বছর আগে এখানে যারা থাকতো, এখনো যেন তারাই দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক মুখ, এক চেহারা, এক চোখ, এক স্পর্শ,- পেশাদারী। সন্তোষ গলি দিয়ে বেশিদূর যায় না, রাস্তায় ফিরে আসে। যা দেখার, তা তো দেখাই আছে,- ত্রিশ বছর আগে।
বাড়ি ঢুকতে না ঢুকতে মেয়ে বেরিয়ে আসে, বলে, “দুজন লোক এসেছে, তোমার জন্য বসে আছে আধঘন্টা ধরে, ফোন করছি কতবার, দেখো না?”
সন্তোষের মনে পড়ে না ফোনের আওয়াজের কথা, সে বলে, “কারা এসেছে?”
“চিনি না, পাড়ায় নতুন এসেছে বলল, তোমার সাথে কী দরকার…”
জুতো খুলে ঘরে ঢোকে সন্তোষ, আর দেখে সকালের সেই ছেলেটা, আর বয়স্ক একজন মানুষ তার বসার ঘরে বসে আছে।
“এই যে বাবা এসেছে,” বলে মেয়ে নিজের ঘরে ফিরে যায়।
মেয়ের চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে সন্তোষ। তার মুখ থেকে কোনো আওয়াজ বেরোয় না। বয়স্ক লোকটা বলে, “দাদা, আমার নাম যতীন মল্লিক। ও আমার ভাইপো সৌরভ। আমরা গেল হপ্তায় এ পাড়ায় এসেছি, ওই নস্কর বাড়ির দোতলাটা ভাড়া নিয়েছি, আপনি বসুন না,”
সন্তোষের নিজের বাড়িতে লোকটা সন্তোষকে বসতে বলে। সন্তোষ চুপ করে চেয়ারে বসে। এখনো সে ছেলেটার দিকে তাকাতে পারছে না। যেন রাস্তায় কাউকে খুন করে এসেছে, এমন এক দায় সন্তোষের মুখে চোখ ঢেকে দিয়েছে।
সুতপা কোথাথেকে এসে চা বিস্কুট দিয়ে যায় তিনজনকে।
যতীন মল্লিক বলে, “বোঝেনই তো আজকালকার ছেলে। মেজাজ অল্পেতেই গরম। ও এমনি ছেলে খারাপ নয়, বিকেলে নিজেই আমাকে ঘটনাটা বলল, আজ সকালে ও যা…”
সৌরভ বলে ওঠে, “কাকু, আমায় মাফ করবেন, মুখ ফসকে বলে ফেলেছি”
সন্তোষ আড়চোখে সৌরভকে দেখে। সত্যিই ছেলেটাকে এমনকিছু অভদ্র বলে মনে হলনা। সন্তোষের মেয়ে না হয়ে ছেলে হলে সে সৌরভের মতো দেখতে হতেও পারতো।
যতীন মল্লিক বলে, “বয়সের ধর্ম বুঝলেন, আমরাও করেছি, করিনি? বলুন?”
সন্তোষ এবার বলে, “হ্যাঁ, বহুবার করেছি”, সন্তোষের ইচ্ছে হয় সকালে পাড়ার মোড়ে উপস্থিত সব লোকজন, মহিলা, কুকুর, রিক্সা, রোদ, মেঘ, ছায়াকে টেনে হিঁচড়ে তার বসার ঘরে এনে দেখায়, ছেলেটা কেমন মাফ চাইছে তার কাছে।
যতীন মল্লিক ও সৌরভ এরপর চা বিস্কুট খায়। তারপর মনে করে- মাফ চাওয়া ও পাওয়া হয়ে গেছে, তাই তারা চলেও যায়।
সন্তোষ চুপ করে চেয়ারে বসে থাকে।
সুতপা ঘুরে ফিরে আসে, বলে, “একি এখনো জামাকাপড় ছাড়লে না? ওরা কী বলতে এসেছিল?”
সন্তোষ সারাদিনে এই প্রথম কারো দিকে তাকাতে পারে, সারাদিনে এই প্রথম ও সুতপার দিকে তাকিয়ে বলে, “একটা কথা, তোমায় বলিনি কখনো,”
সুতপা আঁচলে ভেজা হাত মোছে, “কী কথা?”
“কলেজে পড়ার সময়, আমি, তপন, রাজু একবার…”
“একবার কী?”, সুতপার মুখ কঠিন হয়ে ওঠে।
“ওইসব গলিতে গেছিলাম, ওই একবারই। কেমন হয়, কী হয় জানার জন্যে, ওই একবার মাত্র…”, সন্তোষ প্রতিক্রিয়ার আশায় সুতপার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
“ওহ্ এই! সে অনেকেই যায়, এ আর এমনকি, এ আর বলার কি আছে” বলতে বলতে সুতপা ফাঁকা কাপ, প্লেট নিয়ে রান্নাঘরে ফিরে যায়।
সুতপার কথায় স্তম্ভিত হয়ে থাকে সন্তোষ। সকালে পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে সুতপার যে মুখ মনে পড়েছিল, তবে কি তা অহেতুক? তবে কি সকলে সত্যিই…
মায়ের ছবির দিকে তাকায় সে। আর পাঁচজন মায়ের থেকে এমনকিছু আলাদা দেখতে নয়। যে শাড়ি পরে আছেন, যে চশমা পরে আছেন, তাও এমনকিছু অসাধারণ না। তবু আজ সকালে সৌরভ নামে ছেলেটা সন্তোষকে তার মাতৃপরিচয় জানিয়েছে পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে। পঞ্চাশ বছর বয়সে এসে সন্তোষের সন্দেহ হয়, আজ সকালের কথা যদি মাকে সে জানাতে পারতো, মাও হয়তো সুতপার মত এমন অবলীলায় বলত, “এ আর এমনকি, এ আর বলার কি আছে-”
বসার ঘরের চেয়ারে বসে সন্তোষ নিজের পায়ের তলায় সৌরভের পায়ের পাতা কল্পনা করে। পায়ের তলায় কাল্পনিক সেই পায়ের পাতার অস্তিত্ব টের পেলে, সন্তোষ সজোরে মাড়িয়ে দিতে থাকে। মনে মনে হাড় ভাঙার শব্দ হয়। সন্তোষ করের কানে সারাদিনের পর এই শব্দ শ্রুতিমধুর ঠেকে।


খুব ভালো লাগল অলোকপর্ণা।
এমন অনেক দরজায় ঘা দিয়েছ যারা কখনো খুলবে বলে বন্ধ হয়নি। হয়তো আলো-আঁধারীটুকুই অভিপ্রায় ছিল তোমার, পরিবর্তে গল্পের স্বকপোলকল্পিত আবহটি আলো নিয়ে পাঠককে ধন্দে ফেলে দিয়েছে। অধুনার ছোটগল্পের ভূবন আমার অধরা, কিন্তু আপাত-অগভীর মন-ও যে চিররহস্যময় সুললিত অন্ধকারের এক সহোদরা উৎস, তা নিয়ে ধারণা পোষণ করি বৈকি। তবু বলব, তোমার প্রোটাগনিস্ট যে বর্ণময় অন্যমনস্কতায় ঐশ্বর্যশালী, অন্ততঃ আমার একটি অংশের, তা বড় কাঙক্ষণীয়। ঐ খিস্তিটুকুর চারপাশে তাই ঘোলাজলের মত বৃত্ত আঁকতে লাগলাম আমিও, যদিও বেরিয়ে আসবার বিশেষ সদিচ্ছা তৈরী করে উঠতে চাইলেম না।
ধন্যবাদ অত্রি দা
ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ সাদিক দা
কী করে লিখলে গো?প্রেমে পড়ে গেলাম। অসাধারণ ।
ধন্যবাদ