
সোনালী ঘোষ-এর কবিতাগুচ্ছ
সিসিফাস ও মেয়েটি
১.
কেবল আঁধার, খড়ির গন্ডি পেরিয়ে যায় ক্ষীণ রেখাটি,
কত দ্রুত নিঃস্ব করে দেয়,আতরের স্পর্শ
দীর্ঘ অপেক্ষার মত কোন রোগ নেই আর
বুকের ভেতর খলবলে ভাসান
শরীরের খিঁচের কথা মরন ও জানে..
আলতা পরা মেয়েটির পা ধুয়ে যায়
আকাশের বুকে ফুটে ওঠা রঙটির মতো
২.
আজীবন রোদ পোহায়
একটি বাস্তুসাপ
তার বুকে পিঠে সাদামাটা জীবন
৩.
করিডোর জুড়ে রূপালী সুবাস
পায়ে পায়ে দুঃখের ছন্দ
প্রেমিকের চে’ ঢের ভালো নূপুরের শব্দ
৪.
পূর্ণিমার দীঘল মায়ায় বন্দিস
জ্বেলে দেওয়া আলোর চৌকাঠে দুঃখ
তুমি তিল তর্পণ কর ব্যাথার সাগরে
হে অজগর পুরুষ।
৫.
ঝিঁঝিঁ মুখরিত বাসর, অতিথি কেবল জোনাকি
আমন্ত্রণ লিখছে, খসে পড়া পালকে, চন্দ্রাভূক
অবিবাহিত পাখিটি।
৬
…..এভাবেই মুখোমুখি বসে থাকা যায়,
আধবোজা অদ্ভুত নীরবতা
ঘনঘন শ্বাস নেয়, অর্ধমৃত কথা
অযাচিত সব অযাচিত…
দক্ষিনের জানালা থেকে চলে গেছে কবে।
৭.
হলদে পাখির গায়ে আশ্চর্য রঙের বৌ কথা কও
শনশনে হাওয়ায় সহজবোধ্য সুর
ঐ দূরে পরাগ মাখে জীবন
রাখালের বাঁশিতে ডুব দেয় পানকৌড়ি।
৮
একটি মেয়ে এক কলস আকাশ নিয়ে গেলো
নানা রঙের ঢেউ তাতে
জল বয়ে যাচ্ছে আকাশের বুকে
৯.
ইচ্ছা মৃত্যু পুষে রাখে যে মানুষ
প্রতিটি চুমুকে তার বিষন্নতা…
যে নৌকাটি পরে আছে পৃথিবীর মোহে
সূর্যাস্তের সম্বোধনে কেবল অলসতা …
১০.
উত্তরের জানালায় যেন মৃত মানুষের শ্বাস
যে বড়ো অভিমানী…
পূর্বপুরুষের গায়ের আতপ আর ঘিয়ের ঘ্রাণ
নিয়ে শুয়ে থাকে,
এসব বিচ্ছিন্নকামী অসুখ
আরো পৃথুলা করে তোলে ,
কারণে অকারণে অসংখ্য দৃশ্য বেঁকে যায়…
১১.
একসাথে কিছু পথ হাঁটলে সাময়িক নিঃসঙ্গতা
কাটে, এর বেশী নয় কিছু
অথচ অভ্যেস হরিয়ে গেলে পড়ে থাকে
দেওয়াল।
অসমাপ্ত পোট্রেটের পাশে প্রিয় রঙ, তুলি…
শহরে জলছবি মানে আস্তিনে গোটানো শ্রাবণ
হাতব্যাগে সুগন্ধি রুমাল
আর একের পর এক উষ্ণতার গভীরে কত ইলশেগুঁড়ি..
১২.
যেসব গানের পাশে বসন্তগুচ্ছের পাতা ওড়ানোর
স্বীকারোক্তি গোপন আছে ,
তাতে নিভু আগুনের সুর…
অসংখ্য শূন্যতা কাটিয়ে ছায়ার পরিধির ভেতর
ঘুমভাঙা চঞ্চল হরিণ,
যেন সাত সকালে পাখিদের উল্লাসে
এলোমেলো হয়ে গেছে
তার দৃষ্টিতে এখন সিপিয়া টোন…
১৩.
অযথা ভুল বুঝো না,
মানসিক রোগ থেকে সেরে উঠছি জেনেও
আজ অবধি ফিরে আসার দাবী জানায় নি কেউ
তবু আঁচলে অসংখ্য বন্যতা নিয়ে দিনের পর দিন পৃথিবীর কাছে….
ফুল দেখেই বুঝে নিও সে যন্ত্রণা কতখানি ছিল।
১৪.
মদ মোহ আর বিষে মুছেছে যে,
চৌষট্টি কলা ধারণ করেনি।
যে পুরুষ বন্ধ্যা পাথরের গায়ে ভাস্কর্য অস্বীকার করে
তাকে ক্ষুধার্ত ভাবো..
এ অনন্ত সফরে ভুলে যাও সে অনিবার্যতা।
১৫.
যে সাঁতার জানে না তাকে বিসর্জন পায়
সংকট কালে দ্রবীভূত মিথে
রয়ে যায় সিসিফাস।

