সৈকত ঘোষের সম্পূর্ণ কাব্যপুস্তিকা
সেনোরিটা ও আইফেল বিপ্লব
সময়ের যোনি থেকে উঠে আসে মৃত রাক্ষস
শরীরে বিষবাষ্প নিয়ে আমি বৃষ্টিচ্ছায় দেয়াল ভেঙেছি
১.
শীতের চৌকাঠে কিছুটা শিশির লেগে থাকে,
আমি ছুঁয়ে দেখি
খুলে যায় সন্ধের বোতাম
অপেক্ষা রাত জাগা আলো,
ফোয়ারার শূন্যতা নিয়ে সে এসে দাঁড়ায়
তুমি জন্ম নাও,
পালতোলা নিয়তি থেকে আর একটা সেনোরিটা
আমি বুঝি হ্যাঙওভার নিভে গেলে
প্রজাপতি শহর রিবন খুলে দেবে
দেয়ালচিত্রে হেসে ওঠে আমাদের হাসিখুশি জীবন
২.
দুপুরের উল্কি থেকে যে স্বঘোষিত রক্তপাত
আড়ি পাতে বসন্তের জানলায়
আমি তাকে একমুঠো শীতল দিই
সাহস ঘুমিয়ে পড়ে দুর্ভিক্ষের পাশে
ফুটপাত ঘুমিয়ে পড়ে বুকের মার্সিডিজ
পাশাপাশি নরম গালিচা
চুমুর রং থেকে বাতাসিয়া আগুন
লুপ ক্রমেই ভাইরাল হয়
রক্তপাত হাসে, জোৎস্নার মায়াবী ভাষা
এর চেয়ে গভীর এর চেয়ে তাত্ত্বিক আর কিবা হতে পারে সেনোরিটা
৩.
সত্যি কি তাই!
আগুন পোহাতে রক্ত পলাশের কাছে বারবার ছুটে যায়
সভ্যতার কসমিক হরিণ
ধুলোয় কোনও দোষ থাকে না
নির্বিকার মাটির শরীর
আলিঙ্গনের আঁশগন্ধটুকু মুছে দেয়
আমি স্পষ্ট দেখি রাংতা খুলে তুমি ছড়িয়ে পড়ছো
ফোয়ারার জেগে আছে চোখ
আমি স্পষ্ট দেখি কোপাইয়ের অন্ধকারে
পা ডুবিয়ে বসে আছেন বিষণ্ণ রবীন্দ্রনাথ
আসলে ডেস্টিনি একটা মিথ
তোমার জোৎস্নায় মায়া কুড়িয়ে নেয় মৃত শহরের অন্তর্বাস
৪.
নিভে যাওয়া আগুন আসলে নির্মাণসুখ,
লং-ড্রাইভ ইচ্ছেরা কনফেশন আঁকে
ঘরময় হেঁটে বেড়ায় অসময় সঙ্গম
তুমি আড়াল থেকে মেপে নাও যাবতীয় সুখ ফাটল
অঙ্ক শুরু হয়,
মধ্যবর্তী অন্ধকার আর নিশ্বাসের হটস্পটে বেজে ওঠে নাজুক শীত
আমি প্রচণ্ডভাবে ভালোবাসার আগে
ভারসাম্যহীন চাঁদ আর নির্বাক আপেল যুগলকে দেখি
৫.
সমুদ্র কাছে এলে
তোমার চোখে চেনা অভ্যেস ভেঙে যায়
ঠুনকো অন্ধকার আঙুলের পিছুটান ছেড়ে
পাশাপাশি ছায়া ও শরীর
পাশাপাশি নিয়তি জানেমন
আমি স্ট্রবেরি জীবনে ধরে রাখি বিস্ময় সানসেট
মেঘের আঁচলে কোলাবরি শূন্যতা
দেখি দরজা আগলে বসে আছে দমবন্ধ শহর
তুমি হেডফোন কানে বারান্দায় এসে দাঁড়াও,
অক্ষর নোনতা হয়ে ওঠে…
৬.
ঢেউ ভাঙে তোমার ঋতুর মতো অনর্গল,
হাওয়ায় বাজে নির্লিপ্ত রাগিনী
তুমি দূরত্বের লিমিট ভেঙে আশ্চর্য স্পর্শকাতর
সেনোরিটা, বদলে যায় সমুদ্রের ক্যালিগ্রাফি
এটুকুই কি স্থির চিত্র,
নাকি বাজি হেরে যাওয়া সম্ভাবনার মালহার
এরপর সংযম ভেঙে যাবে
সঙ্গম সুখে হেসে ওঠে বাদতামিজ চাঁদ
৭.
তোমার শরীরে জেগে থেকে দেখেছি
মায়া বাড়ে আগুনের
আমি কেবল উৎকোচের মতো
কয়েকটা শব্দ হয়ে জুড়ে আছি
রাষ্ট্র্ববিপ্লব এক মিথ!
এখান থেকে ভালোবাসার চিল উড়ে যায়
গ্রহণযোগ্য গজল জমিয়ে রাখে নেশাটুকু
অহংকারী সাক্ষাৎকার শেষে
পিকপকেট হয়ে যাওয়া স্বপ্নেরা
ভুল বানানে ম্যানিফেস্টো লিখে যায়
৮.
জীবন ভাঙে, জীবন গুছিয়ে নেয়
বিসর্গের পাশে চুপিচুপি এসে বসে অসহিষ্ণু ঢেউ
মুহূর্তের অন্তর্বাস খুলে দেখো,
জীবন একটা অশ্লীল ক্রিয়াপদ
চেনা শরীর অচেনা হয়ে যায়,
চরিত্রের রঙে সেজে ওঠে নামহীন অন্তঃসার
একে তুমি অস্বীকার করতে পারো,
মুঠো ভেঙে সময়ের কুচি জমিয়ে রাখে নাজুক বিমূর্ত
হেসে ওঠে শূন্যের প্রাপ্তিযোগ
সেনোরিটা,
ছায়ার থেকে ছায়াকে আলাদা করবার আগে
তুমি কি ভেবেছো সে কথা?
৯.
জলপাই আদর শেষে যুবতী অক্টোপাস
শূন্যের ফিরাক লেখে
আমিষ বন্দিশে লাজুক বসন্তবৌরি
ঝড় থেমে যায়, গিঁট খোলে সতীন পলাশ
কষ্ট পাবে জানি,
গোধূলি আগলে বসে থাকে বিবাহদাগ
টানাটানির সংসারে উথলে ওঠে দুধ
সিঁড়ি ভুলে গেছে আইবুড়ো-ছাপ
বাতাস জানে কী করে মিলিয়ে যায় ক্ষতকথা
মন-কষাকষি খুচরো সংলাপে
একচোখ অন্ধ হয়ে গেলে পৃথিবীরও ধ্বজভঙ্গ হবে!
১০.
প্রতিশ্রুতি হাসে!
অহল্যার যোনি ছিঁড়ে পিশাচ মূর্ছনা
হাত নেই, কেবল খিদের বাতিস্তম্ভ
ভুলগুলো কিনে নেয় ক্ষমতার মাছরাঙা
এখন শুধুই ওড়ার সময়,
এখন সময় রঙিন ও বাঁজা
মিনিটে মিনিটে ভাঙতে ভাঙতে জুড়তে জুড়তে
অন্ধকার পরে নেয় রামধনু সন্ত্রাস
ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তৃতীয় বন্ধনীর সার্কাস,
ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে বিষধর্ম
ভাতের থালায় জেগে থাকেন অন্ধ বিসমিল্লা…
১১.
ক্রমশ ফিতুর হয়ে ওঠে প্রজাপতি ঢেউ
বানজারা প্রেম সৌভাগ্যের দ্বন্দ্ব সমাসে
প্রসব করে কাঁচামিঠে কবিতা
আমি খাঁচার তোয়াক্কা না করে
পালক উড়িয়ে দিই
শরীর হালকা হলে ঠোঁট গলে নামে চুমুর মৌতাত
আমি রাজা-রানীর গল্পে একটা বারান্দা
খুঁজে পাই,
যেখান থেকে প্রতিদিন মৃত্যুর মানচিত্রে
জন্মকে প্রতিস্থাপন করবে তুমি, ওহ সেনোরিটা
১২.
মৃত্যুর কোনও অনুঘটক হয় না
একদিন চকচকে মৃত্যুকে সেলিব্রেট করবে
লাভ-জিহাদ
আমরা ফরাসি বিপ্লবের আদলে
প্রেমকে ছড়িয়ে দিই হেমন্তের কফিশপে
তর্ক জমে ওঠে পোয়েটিক জাস্টিস নিয়ে
হিপ-পকেটে প্রোগ্রেসিভ মেঘ
টাইমারে চোখ রাখি
এলোচুলে কখন সে এসে দাঁড়াবে পুঁজিবাদের জিপার খুলে!
খুব ভালো লাগলো।