পর্ণশবরীর কথকতা ১৭   প্রাপ্তি চক্রবর্তী

পর্ণশবরীর কথকতা ১৭ প্রাপ্তি চক্রবর্তী

আটপৌরে বাঙালির এই বছরের মতো শেষ উৎসব এলো বলে। এরপর ভাঙা মনে সান্ত্বনা দিতে হরেকমালের সামগ্রী নিয়ে বসবে কার্তিকপুজোর মেলা, নাম বদলে উত্তরভারতে সে হবে দেব-দীপাবলি। গঙ্গার ঘাটে ঘাটে প্রদীপের মালা গাঁথা হবে৷ নাম বদল হয়, উপলক্ষ থাকে এক।

এই সময়ে সন্ধ্যের পর অন্ধকার ছাদে একলা হেঁটে বেড়াতে বেশ লাগে। ইতিহাস প্রাচীন নগর কীভাবে উন্নয়নশীল শহরের রঙে নিজেকে ঢালছে তা বোঝা যায় এই পুরাতন বহুতলের আকাশপথ থেকে৷ এক-আধটা নক্ষত্র ক্ষীণ হয়ে আসা দৃষ্টিতে ধরা পড়ে মাত্র৷ অথচ এই ছাদে লোডশেডিঙের কালে তারার পর তারা মিলিয়ে সাঁঝ কেটেছে কত৷ চোখের সঙ্গে বয়স হচ্ছে এই আকাশেরও। ধূলিমলিন এখন সে। তবু ভালো, কিছু রাতচড়া পাখি এখনো ফসফরাসঢালা ডানা ঝাপটে এগিয়ে চলে পূর্ব থেকে পশ্চিমে। চুপ থেকে বুঝি বাতাস আর রোদ দুই-ই দিক বদল করেছে৷ সূর্য এখন ধীরে ধীরে নির্দিষ্ট কৌণিক বিন্দুর দিকে ঢ’লে পড়ে পড়ন্ত বেলায়। রোদ্দুর চড়া হলেও বাতাস এখন হৈমন্তিক গন্ধ এনে উত্তরের ঘরে ছড়িয়ে দেয়। সারা সকালের বাতাসে কালো গরাদ বেয়ে ওঠা অপরাজিতার লতাটি পাতা ঝরিয়ে ঝরিয়ে বিছানা ভরিয়ে রাখে। বারে বারে পরিষ্কার করতে হয়, কিন্তু বিরক্তি লাগে না মোটে৷ অসময়ে ছাদে হেঁটে দেখি চাদ্দিকে কত কত আলোর মালা, আলোর মেলা।

এখন সময় এসেছে বাহুল্যের। পায়ে পায়ে হেঁটে গেলে শহরজোড়া রঙিন আলোর রোশনাই মনে করিয়ে দেয় এত রঙ ছিল না আমাদের কালে। সংসারে উদ্বৃত্ত তেলে ডুবোনো সলতেতে সাধারণ মাটির প্রদীপ আর তার কিছু পরে মোমের আলো ছিল যথেষ্ট। যাদের অবস্থা অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার মতো ছিল তাঁরা বড় বড় হলুদ বালবের মালা বাড়ির ওপর থেকে নিচ অবধি ঝুলিয়ে দিতেন। মনে পড়ে তখন পুজোর আলোকসজ্জা বলতে ছিল রঙিন কাগজে মোড়া সাদা টিউব আর সেই হলুদ বালব? রঙিন কাগজের মধ্যে থেকে যেটুকু রঙ ফুটে বেরোবে তাতেই রঙিন হবে পথ ঘাট আর মণ্ডপ। স্বল্প সংগ্রহে আনন্দের রসদ খুঁজে পাওয়ার শিল্প হারিয়েছে বাহুল্যের ভিড়ে।

দিনাজপুরের বাড়িতে তখনও প্রতিমা গড়ে পুজো হয়, বাংলাদেশের পুজো তখনও সেখান্র জ্বলছে ধিকিধিকি আঁচে। নির্দিষ্ট দূরত্বে গণ্ডীকাটা উঠোনে বাবা বসিয়ে রাখতেন মোম। কার্তিকের শীতল বাতাসে গলা খুশখুশ। এক-আধটা তালমিছরি মুখে পুরে নরমগরম সদ্য রোদে ফেলা সোয়েটার গলিয়ে চলে যেতুম নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা কবেকার জমিদারদের কালীবাড়িতে। এখন সবার তাতে সমান অধিকার। দক্ষিণদিকের হাড়িপাড়ার বন্ধুরা ওখানে লঙ্কাফটকার হুল্লোড় বসিয়েছে। বহু বহুরাতে শুরু হবে পুজো। ততক্ষণে আমাদের বুড়িমার তুবড়ি, চরকি, রঙমশাল পুড়ে খাঁক হয়ে যাবে৷ নদীর ধার থেকে উঠে আসবে নিশির দীর্ঘশ্বাসের মতো শীতল বাতাস। ঠাণ্ডা লাগবে বলে আরেকটু পরেই মা মাথায় বেঁধে দেবেন সিল্কের কাপড়ের টুকরো। সেসব নিয়ে বাজি পোড়ানো যায় না। আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখব শুধু। দাদু তাঁর বাবার চেয়ারটিতে বসে পাহাড়া দিয়ে চলবেন শিশুদের। চারিদিকে ঘুটঘুটে আঁধার।

দক্ষিণদিকে থাকা ঢিলে প্যান্টুলুন নাকে সিঁকনি নিয়ে সমবয়সি বন্ধুরা নারকোলের মালোইয়ের পেছনে পাটকাঠি দিয়ে প্রদীপ টর্চ বানিয়ে চলবে উত্তরের পুজোবাড়ির দিকে৷ আমার একটাও ছিল না ওরকম। তাদের তুলনায় বাহুল্য থাকায় বিপদ ঘটার আশঙ্কা ছিল বেশি। অভাবের সংসারে মনে বিপদাশঙ্কা আসে মেপে। বড়ো ইচ্ছে হত অমন একখান টর্চ আমারও হোক।

সুয়োরানীরা জানে আনন্দ আসলে দুয়োরানীর উঠোনেই বাঁধা পড়েছে ৷ অতি পাওয়া, পাওয়ার আনন্দকে ম্লান করে দেয়। সংবৎসর আলোর রোশনাই আঁধারের মানে বোঝে না। তার কাছে কালী আর আলো সমার্থক। আঁধারের মধ্যে দিয়ে আলোকের দিকে যাত্রা নয় আরো থেকে আরো বেশির দিকেই তাদের ভবিষ্যৎ।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes