সমীরণ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ

সমীরণ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ

ভয়

এইযে শরীর জড়ানো এত ভয়
চুলের সিঁথির মতো মিলে যায় আলে
সবুজ গভীরে যায় খয়েরি খেয়ালে
একটুকু রোদ্দুর খামারের পাশে
একটু একটু কাঁপে কালচে আকাশে
সন্ধ্যা ঝাঁপিয়ে পড়ে গোধূলির কোলে
রাত্রে আসবে তুমি? আঁধার জমলে
হবে কি সময়? সম্ভাবনাময়?

সেই ভয় নিয়ে যাই পুকুরের ধারে
একফালি চাঁদ জাগা সান্দ্র আঁধারে
মিছিলের মতো তারা দিয়েছিল আলো
ভয়ে ভয়ে সেই আমি এক ডুব দিল
ডুবতে ডুবতে নেমে যাচ্ছে কোথায়
অতল অচল এক আঁধার ঘনায়

রূপকথা চুপ করে স্থির বসে থাকে
আলোও অপেক্ষায়, আঁধারের তাকে –

বিজয়া

দিন ঠিক যায় চলে
শিউলি ফুলেরা বলে
এ কোন বিকেল এল, মেয়ে

হেলা বটতলা দিয়ে
যেখানে থেমেছে গিয়ে
নদী তীর, এক ভাবে, চেয়ে

নিরিবিলি একধারে
আমিও দেখেছি তারে
এতটুকু, চলে গেছে, সে

মুখখানি ঢাকা ছিল
বেশ ছিল দিনগুলো
আলো-ছায়া, সেও তো বাঁচাই

তুমি কি আগুন হতে?
তবে সেই অগ্নিতে
সোজাসুজি, হেঁটে যেতে, চাই

তখন পাড়েতে কেউ
বাড়াবেই দুটি ঢেউ
মুছে নিতে, সবটুকু ছাই


দেনা পাওনা

কতটা ছেড়েছ বল, ঠিক কতখানি
কতখনি পেলে জান, সেটাতো মাপনি
এই যে সবুজ নেশা আকাশের পাশে
একা একা ঢেউ তোলে হেমন্তের শ্বাসে
আলো থকে শুষে নেয় যতটুকু চাই
সে এক নির্লিপ্ত যাপন, সেও তো বাঁচাই

আনন্দ অবাধ গতি শরত সকালে
এই কথা ঋত্বিক বলেছিল বলে
কত জল কত মাটি কত শত ফুল
আমার ঠাকুর তাকে করেনি কবুল

নীল ফুল নীলমণি নীল মেঘে চড়ে
পৌঁছে গিয়েছে সে, কোপাই-এর ভোরে
জীবন মিছিল করে তার পিছু পিছু
নিয়েছিল কতটুকু, দিল সব কিছু


দোমড়ানো পাতা

দোমড়ানো হলুদ একটা পাতা
পড়ে আছে ডাস্টবিনে, একটু আলাদা।
যেই তুলে আনতে গেছি তাকে
অমনি স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে ডাকে
“কী দরকার ওই পাতাটার?”
“দাঁড়াও না দেখি একবার।
এই দেখো, গোলাপের ছাপ, এক কোণে
ফুলদানি থেকে আলগোছে পড়ে গেছে – নাকি? কে জানে!
তুমিই তো রেখেছিলে পাতাটার মাঝে কোন দিন
শুকনো পুজোর ফুল, ভাঁজ করে, এই তো সেদিন
দিন ক্ষণ মুছে গেছে সব
এখানে কি রক্তের দাগ? ঠিক করে জানো?
এইতো এইদিকে দেখি, রয়েছে মেয়ের আঁকিবুঁকি
এইসব ফেলে দেবে? সময় হয়েছে এখনও?”
“কী আছে উল্টো দিকে লেখা?”
“ফেলে দিও গঙ্গার জলে, দক্ষিণেশ্বর গেলে”
“বললে না? কী আছে উল্টো দিকে লেখা?”
মুঠোয় মোচড়ানো পাতা
ধরেছি জীবন, অথবা কবিতা


ঘর

এত যে চেনা ছায়া
এত যে উন্মুখ,
এত যে ছবি আঁকা, মুখের ভিড়
এত যে হাসি তার
নদীর কাছে আছে
বাকিটা ছাই ছাই, কী গম্ভীর

সবাই পার থেকে
ফিরছে ধীর পায়ে
তুমিই একা একা, সমুদ্দুর
রঙিন মাছগুলো
হয়তো প্রজাপতি
ঝিনুক খোঁজ নেবে, এ বন্ধুর

সবাই ফিরে আসে
সন্ধে হয়ে এলে
দেওয়াল জানে শুধু, সবাই নয়
ঝিনুক ঠিক জানে
রেখেছে কোনখানে
সে ঘর পারেনি হতে, স্বপ্নময়

চাওয়া

কিছুতো আনিনি আমি, নিয়ে যাব বলে
কিছুই রাখিনি তাই, সময়ের কলে
কখনো হাওয়ায় ভেসে জানালার গায়
ছেঁড়া ছেঁড়া রোদ এসে একাই দাঁড়ায়
কখন লিখব চিঠি, কাকেই বা লিখি,
কীই বা লেখার থাকে, দিনভোর শিখি
পালায় কেমন করে, কিভাবে লুকোয়
মেঘের আড়ালে থেকে আগুন শুকোয়

আমিতো চাইনি কিছু, জল দিয়েছিলে
টুপ করে ডুব দিই ঢেউয়ের মিছিলে
ভেসে যাই ভেসে যাই, বলা হল নাতো
কীই বা বলার ছিল, সন্ধ্যা আনত
থাকে থাকে জমে থাকে শুধুই ভনিতা
আকাশ পাথর হয়, কেউ বোঝেনি তা


হোক কবিতাই

আমি ভাবি এরপরে কোন্ কথা বাকী
কুন্তী কুর্মীর ঘরে চোলাই এর ঘানি
অথবা ক্ষেতের পাশে একা এককড়ি
দেখছে সূর্যে ডোবে সবুজের জরি
কথকতা আর কিছু মনের মাধুরী
মৌলিক হলে তবে, পাবে মাধুকরী
নরম ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যেতে যেতে
লিখে যাওয়া চাই

অথচ বেলা চায় তুমি মুখে মুখে
ভালোবাসা তুলে রাখো ঘৃণার ধনুকে
এমনতো হতে পারে কথাই বারুদ
মেলাবেই মেলাবে তোমাকে আমাকে
এক বিস্ফোরণে;

কে যে বেলা, কী যে চায় রাখবে না মনে;
তবুও দিগন্ত জুড়ে একটুকু সুর,
প্রেমও বটে, হয়তো বা ভরা রোদ্দুর,
আগুন যেখানে থাকে সেখানে শ্মশানে
একটুকু ছাই


হৃদয়

আমারও হৃদয় আছে –
বৃষ্টি তুমি, দিও জল
সারি সারি হৃদয়ের গাছে;
আমারও হৃদয়ে তোলপাড়
পাঁজরের হাড়ে হাড়ে ব্যথার জোয়ার;
তবু জেনো, শিরা উপশিরা
রয়েছে এখনও, অবিচল;
লড়াইয়ের ময়দানে, রক্তের ধারা
বয়ে আনে, চির চঞ্চল

একদিন থেমে যাবে তারা
ঋণী আমি, শিরা উপশিরা,
স্থির জানি, শেষ রক্তপাতে
হৃদয় ছড়িয়ে যাবে হৃদয়ের সাথে
স্থির জানি,
ঠিক সেই দিনই,
একটি রক্তজবা সুধা দেবে আনি


যাযাবর

যদি করতে না’ও পার, তবু চেষ্টা করতে হয়
এই কথা
যতটা সহজ লাগে, ততটা হয়তো নয়
কত রাত, বারবার, থমকেছে রাতে
আটকে গিয়েছ কুয়াশাতে
ভোর বুঝি আসবে না বাড়ির উঠোনে;

হয়তো অ্যালার্ম বেজে যাবে মুঠো ফোনে
জ্যোৎস্নাও ফিরে যাবে, কিন্তু রোদেরা
তবু এসে দাঁড়াবেনা জানালার পাশে
আলো আর আঁধারের ভাঙা কার্নিশে
দিন রাত এক হবে পাঁজরেতে মিশে

কতবার কথা দিলে, এসে যাবে ঠিক
নিভে যেতে যেতে বাঁচে ক্লান্ত প্রদীপ
বলেছে, এসোনা তুমি, আসনি যখন
যদি আস, বলবই থাক কিছুক্ষণ
জানি, তুমি রাখবেনা, কথা সেই দিনও

কেননা সময় নেই, তুমি যাযাবর
ফিরে যাবে, এই মনও
খুঁড়েছে কবর


জীবনের শেষ শো

সব কিছু ভুলে যেতে পারি, যদি একবার
সন্ধ্যার ছায়া হয়ে আস
সব রঙ নিস্ব হয়ে যাক, এক শুভ্রতায়

জীবনের শেষ শো
ঢেকে যাক, তুমুল বৃষ্টির গন্ধে

তোমার পছন্দে অপছন্দে
পশ্চিমে গিয়েছে যারা ঢলে
পুবের আঁচলে

তাদের গলিত শব, মাটি, তুমি নাও
সন্ধ্যার ছায়া আসে, এইবার, নিভৃতে ঘুমাও


ঝড়

ঝড় জল থেমে গেলে খোসা ছাড়া কমলা লেবুর মতো
সূর্য উঠে আসে। পিছলে পড়া জল পাতায় আনত;
নীড় ভাঙা পাখিরা, পাতার আড়াল থেকে, শুদ্ধ আকাশে
সূর্যের সাথে, পাল্লা দিয়ে ছুটছে –
যাচ্ছে ভেসে, শহর-নদী-গ্রাম
জমছে ধুলো, সুর সব মাথা কুটছে
সেই সুরে ঢেকে, রেখেছে তোমার নাম –

এই দিনও কেটে যাবে, ক্লান্ত সন্ধ্যা ডেকে নেবে রাত্রিকে
সাগরের জলে ভেসে চলা, অচেনা যাত্রীকে
ডাকবে না কেউ; শুধু জল, ধ্রুব তারা, আর তুমি একা;
কোনও তট বাঁধেনি তো তাকে, কোনও সুর যায়নি তো রেখে –
হাওয়ায় যে জল কেঁপে, পিছলে পড়ছে কোনও, শান বাঁধা ঘাটে
সেখানেও তুমি নেই। শুধু, এক বুক ব্যথা বেদনাতে
মুঠো হাতে, জীবনের স্রোতে, ক্ষীণকায় শোণিতের রেখা


যদিও স্বপ্ন

দিন যদি আসে, সন্ধ্যার আবরণে
আমি সে আঁধার, মিলিয়ে নিয়েছি মনে
সে অন্ধকার, যত কালোই হোক
মনে আঁকা তার, কালো হরিণ চোখ

হতেও তো পারে, মুছে গেছে কিছু কাল
হয়তো ঘুমিয়ে, পড়েছিল কবিয়াল
কেউ তো আসবে, জীয়ন কাঠিটি নিয়ে
হারানো সে পথ, ঠিক দেবে চিনিয়ে

হয়তো জাগব, অচিন পরিসরে
স্মৃতিগুলো সব, দূরে যাবে সরে সরে
হয়তো এ বুক, একটু পাথর হবে
নতুন সময়, ডাকবেই উৎসবে

কিছুটা সময় যায় যাক, রাতে মিশে
দাঁড়িয়ে রয়েছি, ভেঙে যাওয়া কার্নিশে
যদি ভেসে যাই, রাত্রির দেশে চলে
শুনব তখনও, স্বপ্ন কী কথা বলে

স্বপ্ন রয়েছে, নোনা ধরা দেওয়ালে
ভাঙাচোরা বেঞ্চ, চেয়ারটা নড়বড়ে
ছোট ছোট পায়ে, স্বপ্ন, মাঠের আলে
অ্যালার্ম ঘড়িতে রোদ্দুর এসে পড়ে


জল ও আগুন

কী কথা আর বলার থাকে
এত কথার পরে
সারাটা দিন আগুন ছিলে
এখন বৃষ্টি ঝরে
এই সূর্য আছে কী নেই
মেঘরা কেন কাঁদে
পুকুর পাড়ে চাঁদ উঠেছে
যন্ত্রণা আহ্লাদে
এবার আগুন মনের মাঝে
গোপন করে রাখি
এখানে জল, ওখানে জল
আগুন, জল নাকি


জন্মদিন

এখন হিসেব দশক দিয়ে হয়।
হিসেব এখন, ঘণ্টা বই তো নয়।
এই তো এলাম হাসপাতাল থেকে।
আবার ডাক, হাসপাতালের দিকে।

নতুন সকাল, নতুন জামা,
নতুন ঘর বাড়ি
সন্ধে হলে নতুন কাপড়,
শেষ পারানির কড়ি

সব কিছুতো একই রকম,
প্রথম দিনই নয়!
নতুন করে পাওয়া হলেই
জন্মদিনই হয়।


যন্ত্রণা

ভেবেছিলাম আমার বস্তি দিয়ে
একটা মিছিল যাবেই যাবে আজ
শুকনো গাছে হয়তো দেবে ছায়া
কেউ না এলে পুকুর পাড়ে জল
এক পা দু পা এগিয়ে আসার ছলে
নামবে আষাঢ় আমার বস্তি দিয়ে

নর্দমার ঢাকনা খুলে গেলে
শাঁখ বাজবে ম্যানহোল দরজায়
বস্তি তখন আঠাশ খানা খাদান
জানিয়েছিল আগুন চাপা ছাই
ভিতর থেকে স্লোগান দিচ্ছে বোন
যন্ত্রণার আর এক নাম – জীবন


কে জানে

কাল রাত্তিরে পেঁচারা ঘুমিয়েছিল
তা’ই যদি নাই হবে, তাহলে বিজয়া,
সূর্য কেন দু প্রহর উদয় পেছলো
রক্তবিন্দু দিয়ে, গড়া পুণ্যতোয়া
নবমীর নিশিকেও যেতে নাহি দিল,
ফোঁটা ফোঁটা সন্ধ্যায় গড়ে ওঠা রাত
তুমি চলে যাবে বলে থমকাল চাঁদ

কাল রাত্তিরে পেঁচারা ঘুমিয়েছিল
তা’ই যদি নাই হবে, তাহলে বিজয়া,
নিশির ডাকের মতো এ কেমন হাওয়া
ছোট্ট ডিঙাটিকে কোথায় ভাসালো;
খেলা হল, গান হল, এইবারে যাও
ছোট্ট ডিঙাটি মোর, নিজেই সাজাও

কবিতা

আমি কোনদিনই কবিতা লিখিনা
যতটুকু পড়া আছে, কিছু দক্ষিণা
এই নিয়ে বেঁচে থাকা; একেই শ্রাবণে
একটু ভিজিয়ে নিয়ে, মাতাল এ মনে
ব্যাঙ আর ঝিঁঝিঁ ডাকা জমে থাকা জলে
নৌকো ভাসাই আমি, তুমি এলে বলে;
প্রথমে আগুন ছিল, তারপরে জল
দিন পিছু বেঁচে থাকা, ভীষণ পিছল
পথে, পঞ্জিকা মতে, তিথি-দিন-মাসে
কী বা যায় আসে
ভাঙছে যখন দিন তখন কথায়
ছোট্ট সুরেলা টিপ মেঘে ভেসে যায়
সেদিন বাইশ হোক কিম্বা তিরিশ
ভেজা আলো পর্দাকে কেবল কাঁপায়;
ছায়া ছায়া প্রহেলিকা অন্ধ দেওয়ালে
বিকেলের ছবি আঁকে ক্লান্ত সকালে

কত টুকু আসে যায় তুমি এলে, গেলে

কবিতা হয়নি

দিনের শেষ আলো, পঞ্চমীর চাঁদ
এসবই দেখেছে গাছেরা;
শেয়ালের চোখ, রক্তের ধারা
এইসব দেখেছিল যারা
তারা বলে, ‘দেখিনি তো কিছু;’
সকাল বিকেল হয়, সন্ধ্যাও আসে পিছু পিছু,
কবিতা, ছবিরা আছে,
খোলা জানালার ধারে বেশ বসে আছে;
অথচ কেউ কেউ, কেন ডুবে, পুকুরের জলে,
এত ভয় কেন হয়;
ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে একেবারে ভিজে
কাদা মেখে ঝোপঝাড়ে গুনি
কটা পাতা ঝরে প’ড়ে করে গেল ঋণী
আমাদের, যারা শুধু, শুধু শুধু বাঁচে


কোজাগরী

আজকে রাত্রে পূর্ণিমা এসছিল
জলের ওপর চিকচিকে পিচ্ছিলও
পড়েছিল আলো, আমি ভাবি ধরি তাকে
যত কাছে যাই, তত দূরে যেতে থাকে
তবু যাই বলো, পূর্ণিমা আজ রাতে
ঠিক এসেছিল, আমার এ চৌকাঠে
আঁধার সরিয়ে, অন্দরে আসতেই
আলো নিভে গেল, দুটো মেঘ ভাসতেই

তা’ও আজ রাতে পূর্ণিমা এসেছিল
বালি মেখে নিল রূপালি জলের আলো,
সাগর পেরোতে, পেরোতে মুক্তা ঝরে
কয়েকটা ঢেউ সাদা হয়ে ভেঙে পড়ে
আঁধারের কোলে, আলোর জন্মভূমি

রাত কত হল? কার খোঁজ করো তুমি?


কথার কথা

কথা হল? কথা ছিল যত?
জবা ফুল ফুটেছে অযুত
সামনের গাছে
শিকড়ওতো জল চায়
বাষ্প হয় নয়নের, পাতায় পাতায়
বৃষ্টি পড়ে, কথাদের
আনাচে-কানাচে

কথা জমে কথাদের ফাঁকে
কথারা পাঁচিল তোলে
থেমে যায়, কথাদের বাঁকে
কিছু হয়, শেষ কথা বলে?
কত কথা হয় না তো বলা
আমি দেখি
কথাদের এই বয়ে চলা

লেখারা তো মুছে যেতে পারে
কথা ঠিক কড়া নাড়ে
সুসময়ে, অসময়ে, দুয়ারে, দুয়ারে

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes