
রাতুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ
মায়াতরু
গাছ তো মানুষেরই অন্য এক রূপ।
ছড়ানো শিকড় জন্ম-জন্মান্তর ভেদ করে চলেছে—
অজানা ভবিষ্যের দিকে।
উত্তোলিত বাহু— ডালপালা ছড়িয়ে
গভীর আলিঙ্গন মগ্ন-প্রত্যাশায়…
শরীরের রোমকূপে জমে উঠেছে প্রতিদিনের
সহ্যাতীত কত গ্লানি, উপেক্ষার কত সঞ্চয়!
শ্রীচৈতন্য প্রসাদী বকুল এগিয়ে দিয়েছেন হাতে:
মন্ত্রের মতো কোথায় যেন উচ্চারিত হয়ে চলেছে
তরোরিব সহিষ্ণুতার কথা…
মন্ত্রহীনের সেই মন্ত্র স্পন্দিত হচ্ছে
আমার শরীরের শিরা উপশিরায়…
রক্তের মতো বয়ে চলেছে আপাদমস্তক
মায়ায় আটকে যাচ্ছে মাটির গভীরে
আমি সেই গাছের ছায়ায় বসে দেখতে পাই
পাতারা আমার শরীরে করে চলেছে
অবিরত অন্তহীন সালোকসংশ্লেষ।
প্রায়শ্চিত্ত
“আমার যেদিন ভেসে গেছে…”
আমি সেই ছায়াপথে একা
নিজের মৃত শরীরখানি বয়ে নিয়ে চলি,
অন্ত্যেষ্টির আয়োজনে—
নিজেরই অশ্রুজল মুখে নিয়ে ধরি।
স্মৃতির বালুকারাশি জড়ো করে
অশ্রুনদীর জলে পিণ্ড ভাসাই…
যে পৃথিবী আমাকে ধারণ করেছে
তার পাদপদ্মে পিণ্ডকণা করি নিবেদন।
আমার মতোই যারা একাকী নির্বাহী—
তাদেরও মুক্তি লিখে রাখি এইক্ষণে
ফল্গুর ক্ষীণ ধারা দিয়ে…
যদি কোনও দিন ফিরে এসে দেখে—
পাপ তার ধুয়ে গেছে কবে,
পড়ে আছে নির্বিকার পাপের শরীর।
চেঞ্জ
কী স্বচ্ছন্দে তুমি একসময় আমার চোখের সামনে পোশাক বদলাতে। আমি অবাক হয়ে চেয়ে দেখতাম কী করে তুমি হয়ে যাচ্ছ সম্পূর্ণ নিরাবরণ। শীতের পাতারা যেমন করে পাতা ঝরিয়ে দেয়। তোমার শরীরের থেকে ঝরে পড়ছে পোশাক। আমি শিহরিত হয়েছি বারবার। ক্ষণিকের শিহরণ পাল তুলে দিয়েছে দূর সমুদ্রের বুকে।সূর্যোদয় ভেসে চলে গেছে সূর্যাস্তের পারে। আজও তুমি ফেরো। পোশাক বদল করতে চলে যাও অন্য ঘরে। আমি বুঝতে পারি তুমি এক এক করে খুলে রাখছ তোমার পোশাক—টি শার্ট, ট্রাউজার, অন্তর্বাস। সেই সঙ্গে শরীরের চেনা গন্ধটা। আমি অনুভব করতে পারি সেই দিনগুলো আমার সমস্ত শরীরে। তোমার জন্য কাপে চা ঢালতে ঢালতে দেখতে পাই রক্তধারার স্রোত বয়ে চলেছে। আমরা কুটোর মতো ভেসে চলেছি।
চা নিয়ে মুখোমুখি বসি…

