পর্ণশবরীর কথকতা ১৩  <br /> প্রাপ্তি চক্রবর্তী

পর্ণশবরীর কথকতা ১৩
প্রাপ্তি চক্রবর্তী

সে আজকাল বসে বসে ভাবে অনেক কিছু। আসলে ছোটবেলা থেকে সে ভেবেই এসেছে। আকাশ-পাতাল, গ্রহ-নক্ষত্র, কী হতে পারত, যদি এমনটা হত, যদি তেমনটা হয়…সবসময় যে সে তার ভাবনাদের আকার দিয়েছে তেমনটা নয়। নিজে নিজেই ভেবে গেছে, খানিকটা কথা বলবার মতো করে। বেশিরভাগ সময়ই নিজের সঙ্গে নিজে থেকেছে সেই আড্ডায়। সে দেখেছে তার সমবয়সীরা তার মতো করে ভাবে না কিংবা তার মতো বিষয় নিয়ে ভাবে না। মা সরস্বতীকে চিঠি লেখে না, দাদুর হাতে লেখা ডায়ারি চেয়ে নেয় না দাদুর থেকে, তীর-ধনুক চালায় না ঘাস-জমিতে বসে; তাই বেশিরভাগ সময়ে তার আড্ডাঘরে একাই আড্ডা জমিয়েছে নিজের সঙ্গে। নিজেই হয়েছে নিজের খেলার সঙ্গী, কথক ও শ্রোতা দুই-ই।

আজকাল বড়ো বেশি অতীতের সুতো বোনে সে। একের পর এক সুতো পাক খাইয়ে রঙিন গোলা তৈরি করে মায়ের হাতের উলের থোকার মতো, আর তা দিয়ে ধীরে ধীরে বুনতে বসে নানান কিসসা।

সে ভেবে স্থির করেছে নিজের কথাটুকু গুছিয়ে বলতে পারলে আরব্যরজনীর একটি রজনী পার করা যায় অন্ধকার অতলের বুকে। কাজেই সে গল্প শোনায়। মৃত্যুর থেকে দূরে, দুশ্চিন্তা থেকে দূরে, অভাবের থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে গল্প শোনায় নিজেকে। নিজের অতীত দিয়ে নিজেকেই ভুলিয়ে রাখে সে। তাই-ই অবসর সময়ে অতীতের সুতো গুটিয়ে আনা এক প্রয়োজনীয় কাজ তার। সেই সুতোর একটা দিকে রয়েছে তার ছেলেবেলা আর অন্যদিকে রয়েছে ছাত্রবেলা। দুইয়ে মিলিয়ে মিশিয়ে জড়িয়ে একখানা সুতো হয়ে গেছে। সেই জড়ানো পাক খাওয়া সুতো তুলে নিয়ে এখন নিয়ম-মাফিক পড়াশোনার শেষে এসে সে যখন পিছনে ঘুরে তাকায় তখন হুড়মুড়িয়ে ভাঙা বানের জলের মতো নামে স্মৃতির ধারা।

কোনো দরকারি কাগজে প্রয়োজনীয় ঘরে নিয়মমাফিক নামের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি নাম অপেক্ষা করে বেয়ে পড়ার জন্য। সে কাগজপত্র খুলে বসে দেখে শান্তিনিকেতনে ভর্তি হওয়ার দিনটি। কত দূর, অথচ কত স্পষ্ট সব এখনো।

এর আগে উচ্চ-মাধ্যমিকের মার্কশীটের উপরে পড়ে গেছে স্কটিশ চার্চ কলেজের সিল, কারণ ওখানেই প্রথম ভর্তি হওয়া। আর প্রথম দিনই কলেজ নেতা-নেত্রীদের প্রথমবর্ষের সম্ভাবনাময় মুখ হয়ে ওঠা। এক নেত্রীর জিন্স, কুর্তি আর হাঁটু পর্যন্ত লম্বা বিনুনি এখনো স্বপ্নে এসে ঘাই মেরে যায় মাঝে মধ্যে৷
সম্ভাবনাময়, কারণ তার কিছু আগেই ছাত্র-নেতাকে পিটিয়ে মারার জন্য কলেজের এস.এফ.আই সমস্ত অফিসিয়াল কাজ বয়কট করেছেন, কলেজে ভর্তির সময়টা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে ঘন্টা চারেক। সকলে হাঁ করে বসে আছে সময় অতিক্রমের দিকে তাকিয়ে আর সংবাদ মাধ্যমের কর্মী ক্যামেরা মাউথপিস নিয়ে জিন্স আর সাদা শার্ট পরা লম্বা বেনী করা মালদার আনকোরা মেয়েটিকে ধরেছেন কিছু গল্পের আশে। সে বিপক্ষে কিংবা সপক্ষে কথা না বলে বাবার হাত ধরে দাঁড়িয়ে গরগর করে বলে গেল সত্যিটুকু। গল্প হল না, সেটুকু শুধু হল ক্যামেরাবন্দী। উল্টোদিকের ফুটপাথ থেকে সেসব দেখলেন ছাত্রনেতা-নেত্রীরা এবং তারপর পরিয়ে গেলেন একখানা কালো কাপড়ের টুকরো। প্রতিবাদের টুকরো।

উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্টের পর সে যতগুলো কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন জানিয়েছিল তারমধ্যে সব্বার আগে ফল প্রকাশ করেছিল স্কটিশচার্চ, যেখানে কি না তার মাসতুতো দাদাও পড়াশোনা করেছিল রসায়ন নিয়ে। বংশানুক্রমে সকলে রসায়ন নইলে পদার্থবিদ্যার, সে একমাত্র নিয়মছাড়া ‘ভবিষ্যতহীন’ বাংলার। এই একটিমাত্র বিষয়কেই একমাত্র বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছিল সে তার ভবিষ্যৎ নির্ণয়ের জন্য।
মে-জুনের ধুলো-গরম-ধোঁয়া আর আসন্ন পরিবার বিচ্ছেদকে সামনে রেখে সে এগিয়ে চলছিল দু’চোখে স্বপ্ন আর একবুক বিশ্বাস নিয়ে নিশ্চিত কিংবা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।

সেই বিন্দু থেকে সময়ের এই বিন্দু একটিমাত্র পলকে পেরিয়ে যায়। পেরিয়ে যায় সেই ছেলে কিংবা মেয়েটি যে বন্ধু হতে হতেও হল না কলেজ বদলানোর কারণে, অথবা আসমানি শাড়ির সেই অধ্যাপিকা যিনি বড়ো ভালোবেসে ডেকেছিলেন তাকে ভর্তির সময়, মিলিয়ে দিয়েছিলেন তাকে বন্ধুত্বের দিকে।

সব কিছুর একটা ‘কী হতে পারত’, একটা সম্ভাবনার অর্ধবৃত্ত থেকে যায়। এ সেই সম্ভাবনাময় অতীতের একসহস্র থেকে একটিমাত্র খুলে নেওয়া পৃষ্ঠা।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes