রূপশ্রী ঘোষের গল্প – ‘বিসর্জন’

রূপশ্রী ঘোষের গল্প – ‘বিসর্জন’

তোমাদের গ্রামে পুজো হয় মা? কাদা দিয়ে ঠাকুর বানায়? কে বানায়?

-আমি কিন্তু আর কাদাকে ভয় পাই না মা। আগে যেমন পেতাম।
-হ্যাঁ পুজো হয়। পাড়ার পরাণজেঠু ঠাকুর বানাত। এখন কে বানায় জানি না। কিন্তু সত্যিই তুমি আর কাদায় ভয় পাও না?
-হুম দ্যাখো, আমার পা আর জুতো দ্যাখো, কাদায় মাখামাখি
– দেখছি তো তাই, ভালো করে পা ধুয়ে এসো। পারলে গরম জলে চান করে নাও
-তোমার দেখছি এখনো কাদায় ঘেন্না গেল না মা। তুমি ছোটোবেলার মতোই রয়ে গেলে
-আহা! কাকে বলছেন উনি! তোমারও ছিল, খেয়াল আছে? বিশাখাপত্তনমে গিয়ে তুমি সি বিচে নামতেই চাইছিলে না… সে কী কান্না নাক মুখ কুঁচকে…
-আরে, সে তো ছোটোবেলার কথা, বাদ দাও। তখন আমি অনেক ছোটো ছিলাম। কত বয়স ছিল বলো?
-তখন সাড়ে তিন, চার হবে, কিন্তু তুমি তখন কেন, এই কদিন আগে পর্যন্ত চাইতে না…
-আচ্ছা আমার কথা বাদ দাও মা, আমি শহরে জন্মেছি, শহরে বড়ো হয়েছি। তুমি গ্রামে জন্মে গ্রামে বড়ো হয়ে, ওখানেই থাকা অবস্থায় কাদাকে ঘেন্না করতে…
-হ্যাঁ করতাম, তার কারণ ছিল অনেক…
-তুমি আমার রঙিন ক্লে বা প্লাস্টিসিনগুলোতেও হাত দিতে না। যাকে তুমি রঙিন কাদা বলতে। তা দিয়ে আমি কত কী বানাতাম…
-আরে ওটায় তো আমার অ্যালার্জি ছিল। আমার হাত চুলকাত। তাই হাত দিতাম না…
-আচ্ছা বেশ, ওটায় না হয় অ্যালার্জি, তোমার গ্রামের কাদায় কী থাকত বলো? ওতে তো আর। রং থাকত না…
-তা থাকত না, কিন্তু যা থাকত তা বলতে গেলেও আমার এখন বমি উঠে আসবে। তুমি একটু থামো না মামমাম, আমাকে নিয়ে আবার পড়লে কেন?
-অমনি, থামো না হয়ে গেল, না? আর আমাকে যে বলছিলে আমি বালিতে নামতে চাইতাম না…
-বালি আর কাদায় তফাৎ আছে মামমাম…
-কী তফাৎ, বললেই না তো?
-ঠিক আছে পরে বলব কখনো…

এভাবেই মা আর ছেলের মধ্যে বচসা চলছিল আমান আর তার মায়ের মধ্যে। বচসা না বলে খুনসুটি বলাই ভালো। আমান ছেলে হলেও তার মা তাকে আদর করে মামমাম ডাকে। আমানের মায়ের মতো আমানেরও ছোটোবেলায় কাদায়, বালিতে ঘেন্না ছিল। কিন্তু আমানের মা যে এখনো কাদায় ভয় পায় তা আমান জানে না। অতসী ছেলেকে কীভাবেই বা বোঝাবে কাদার মানে। এখন গ্রামে গেলেও সে কাদা আর দেখা যায় না। একমাত্র চাষের জমি, পুকুর পাড়, বাগান বা দু একটা ডাঙাজমি ছাড়া। একটা সময় ছিল যখন অতসী কাদার ভয়ে বাইরে বেরোতে পারত না। গোটা বর্ষাকাল জুড়ে তার কান্না পেত। একদিকে কেন্নোসহ নানান পোকামাকড়, সাপ ব্যাঙ, এঁটেল মাটির ভালোবাসা। তাতে মিশে থাকত গোরু, কুকুর থেকে মানুষের অপকর্মের ফল, কী থাকত না সেই মাটিতে বলা মুশকিল। জুতো পায়ে দিয়ে হাঁটার তো প্রশ্নই ওঠে না। তবে একটা মজা হল বর্ষার জন্য তাদের স্কুল একমাস ছুটি থাকত। শহরে যেমন গরমের ছুটি দেয় ওখানে বর্ষার দিত। রাস্তাঘাট, পুকুর সবই এমন বিপদজ্জনক অবস্থায় থাকত যে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোটা একটা ভয়েরই ব্যাপার ছিল। তবুও ছুটি পড়ার আগে বর্ষা এসে গেলে বহু বাচ্চা মজা করে কাদা ঘাঁটতে ঘাঁটতে বাড়ি ফেরত আসত। ছাতার বদলে বড়ো বড়ো কচুপাতা মাথায় দিত। কিন্তু কোনো মজাতেই অতসীর মন গলাতে পারত না। নাকমুখ শিঁটকে, পায়ের জুতোকে চটাস চটাস করে এঁটেল মাটি থেকে টেনে তুলে খুব বিরক্ত হয়ে তবেই বাড়ি ফিরত। আরো মুশকিল হত বর্ষা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগে স্কুল খুলে গেলে। পুকুর ডোবা তখনো টইটুম্বুর, চারিদিকে পাট পচার গন্ধ। কষ্ট হত যারা ভিজে ভিজে পাট কাচত তাদের দেখে। একটানা জলে দাঁড়িয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে পচা জলে, পচা গন্ধে হাতুড়ি দিয়ে ভেজা পাটগাছ পিটিয়ে পিটিয়ে পাট আর পাটকাঠি আলাদা করত মুনিষরা। গায়েন পাড়ার রাস্তা দিয়ে তো একেবারেই স্কুলে যাওয়া যেত না। রাস্তার দুধারের দৃশ্য চোখে পড়লেই অতসীর বমি পেত। কিন্তু কিছু করার ছিল না। তখনকার গ্রামে মানুষ বনে জঙ্গলেই যেত। আর পথিকরাও অভ্যস্ত ছিল নাকে কাপড় চাপা দিয়ে রাস্তা হাঁটতে। অতসী গতবার পুজোর আগে ছেলেকে নিয়ে গেছিল কুমোরটুলি। কাদা দিয়ে ঠাকুর গড়া দেখাতে। ছেলে মাকে প্রশ্ন করেছিল,
-মা তুমি কখনো ঠাকুর বানিয়েছ? বানাতে পারতে?
-না, আমি পারতাম না
-তবে এত যে পুতুল খেলতে তোমার পুতুল কে বানিয়ে দিত?
-দিত অনেকেই, পাড়ার এক বৌদি, এক কাকু, এক দিদি অনেকে…
-তুমি একদম পারতে না? নাকি কাদায় হাত দিতে হবে বলে বানাতে না…
-দুটোই, যেটুকু পারতাম তাতে পুতুলগুলো দেখতে ভালো হত না। অনেক ভালো দেখতে পুতুল ওরা বানিয়ে দিত। সুন্দর সুন্দর দেখতে বউ, বর, বাচ্চা, বাড়ির আরো অনেক সদস্য। আমি পারতাম না
-তুমি কীভাবে জানলে? কাদায় হাত দেওয়ার ভয়ে তুমি তো চেষ্টাই করোনি…
-আমি আটা দিয়ে বানাতাম। সন্ধেবেলা যখন রুটির জন্য আটা মাখা হত তখন তা থেকে কিছুটা আটার তাল লুকিয়ে নিয়ে নিতাম। নিয়ে বানাতাম। দেখেছি, ভালো হত না…
-লুকিয়ে নিতে কেন?
-কারণ দিদুন দেখলেই বকবে তাই। আটা নষ্ট হবে বলে। আটা মেখে তো খাবার বানানো হয়। খাবারের জিনিস, খাবার নষ্ট করতে নেই যে। তোমাকে যেমন বোঝাই সবসময়। তেমনই…
-হুম! বুঝেছি

আমান এখন আর অত ছোটো নেই, কিন্তু খুব যে বড়ো হয়ে গেছে তাও না। বছর দশের ছেলেকে বাচ্চাই বলা যায়। এখনো তার অনেক প্রশ্ন, অনেক কৌতূহল, অনেক লড়াই মায়ের সঙ্গে লেগেই থাকে। তবে বোঝালে বোঝে যে, খাবার জিনিস নষ্ট করতে নেই। কত মানুষ খেতে পায় না। এই কথাটা তার মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া গেছে। শুরুতে বলত,
-খেতে পায় না তো খাবার দিয়ে আসছ না তো?
-দেব কীভাবে? তাদের তো দেখতে পাই না। আমরা যেখানে থাকি সেখানে তো কেউ ঢুকতে পায় না। কিন্তু আমাদের গ্রামের বাড়িতে রোজ ভিখারি আসত। অন্য সময় এলে চাল দিতে হত, দুপুরে এলে ভাত খেতে চাইত। ভাত দেওয়া হত, ভিখারি ফেরাতে নেই বলে।
-আচ্ছা মা, আমি নষ্ট না করলে তারা খাবারটা পাবে কীভাবে? আমি ওভার ইটিং করলেও তো নষ্ট, তারা তো আর পাবে না…
-না, সরাসরি পাবে না। কিন্তু বেশি না খেলে আমি কম রাঁধতাম। কম চাল, সবজি কিনতাম তাহলে তারাও বাজার থেকে কিছু কিনে নিয়ে যেতে পারত বা বাজারের লোক তাদের দিত। আমরা তো বেশি বেশি করে কিনে নিয়ে চলে এসেছি। তারা তো আর কাঁচা জিনিসও কিনে নিয়ে যেতে পারবে না…
-হুম

অতসী নাজেহাল হত, হয়। তবুও বোঝাতে ছাড়ে না। যতক্ষণ পারে ভালো জিনিসটাই ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করে। ঘরে বাইরে যখন যেখানে ছেলেকে নিয়ে বেরোয় সমাজের বাস্তব রূপটা তাকে দেখানোর চেষ্টা করে অতসী। এভাবেই তারা গঙ্গার ঘাটে সিঁড়ির ধাপে বসে পা ঝুলিয়ে গল্প করছিল দুজনে। গোটা কুমোরটুলি রোদের মধ্যে ঘুরে একটু ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল তারা। তবুও সবটা ঘুরে ঘুরে দেখার বা দেখানোর চেষ্টা করেছে অতসী। আমানও খুব খুশি হয়েছে। প্রতিটা ত্রিপল ঢাকা ছাউনীর মধ্যে মধ্যে ঢুকে ঠাকুর গড়া দেখেছে। দেখেছে ঠাকুরে রং করা। তবে আগেকার মতো পুরোনো পদ্ধতিতে আর রং করা হয় না ঠাকুরের চোখ মুখ ছাড়া। এক মেশিন দিয়ে স্প্রে করে করে রং করতে দেখেছে তারা। এভাবে রং করা অতসীও কখনো দেখেনি। তার ছোটোবেলাতে সে মোটা মোটা বড়ো বড়ো তুলি দিয়ে রং করতেই সে দেখেছে। এখনো কলকাতার সব জায়গায় স্প্রে করার চল শুরু হয়েছে কিনা ও জানেও না। তবে ছোটো ছোটো মূর্তি তো রং তুলি দিয়েই করে। বাইপাশের ধারে, অভিষিক্তার রাস্তায়, এন এস সি বোস রোডের একটা জায়গাতেও ত্রিপলের আড়ালে মূর্তি গড়া দেখেছে অতসী। মাঝে মাঝে ছাউনীর ভিতর থেকে রোদে বের করে দিতেও দেখেছে। চারহাত, দশহাত মেলে সব মূর্তিরা রোদ খায় আপন মনে। তবে সেগুলো সবই দূর থেকে যাতায়াতের পথে। ফলে তাদের গড়ার কাজে তারা কী ব্যবহার করে অতসী জানে না। কুমোরটুলি গিয়ে ওই দৃশ্য দেখে ছেলের মতো তারও মজা হয়েছে খুব। বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে গণেশ মূর্তি, দুর্গা মূর্তি সবেতেই রং করা দেখেছে। তারপর তাদের গায়ে কীভাবে রোদ লাগিয়ে কাঁচা মাটি শুকিয়ে নেওয়া হয় সেসবও দেখেছে তারা। পুজোর আগে আগে ভিড় করে কুমোরটুলিতে ঠাকুর বানানো দেখতে যাওয়া একটা চল বটে বহুদিনের, কিন্তু অতসী বহু বছর কলকাতায় থাকলেও সে সবে গতবছর গিয়ে দেখে এসেছে। গঙ্গার পাড়েই তাদের মা ছেলের গল্প চলাকালীন একটি বছর দশকের মেয়ে, ছেঁড়া জামা পরা, নাক দিয়ে সর্দিও গড়ানো, হাতে কয়েকটা ছোটো ছোটো মূর্তি এনে বলল,
-ও দিদি কেনো না একটা, কিনবে? একটা ঠাকুর কেনো না…
-কত দাম?
-তিনশো টাকা…
-কী বলছিস? ছোটো একটা মূর্তি তিনশো টাকা?
-হ্যাঁ, এমনই দাম দিদি… কেনো না
-না রে, এত দাম দিয়ে কিনতে পারব না। তুই ঠিকঠাক দাম বল, তাহলে কিনব…
-ঠিকঠাকই বলছি দিদি, একটা নিলে আমাদের উপকার হবে…
-হ্যাঁ, সে তো জানি… কিন্তু তুই এত দাম বলছিস কেন?
-তাহলে দুশো টাকা দাও দিদি…
-আরে দুশোও দাম না। তুই ঠিক করে দাম বললে আমি নেব। আগে বল এগুলো কে বানিয়েছে? নাকি কিনে এনে বিক্রি করছিস?
-না, কিনে আনিনি। গঙ্গা থেকে মাটি তুলে আমরাই বানাই। আমি আর আমার বোন মাটি তুলে নিয়ে যাই। মা, বাবা, আমি সবাই বানাই আমরা…
-তুইও পারিস?
-হ্যাঁ পারি একটু একটু…
-মূর্তির ফিনিশিং দেখেই বোঝা গেল এ কোনো পাকা হাতের বা কোনো নামকরা পালেদের কাজ না। এটা কাঁচা হাতেই কাঁচা মাটির মূর্তি। রোদে শুকোনোরও ভালো করে সময় হয়নি, সেটা নিয়েই বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়েছে। পুজোর সময় ওটুকু করেও যা আয় করা যায়। এমনিতে তো ওর বয়সী অনেক মেয়ে ভিক্ষেই করছে। একজনকে ভিক্ষে দিলে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসছে। ও তো তাও কিছু একটা বানিয়ে এনেছে। তার বিনিময়ে পসয়া চাইছে…
-দাও না দিদি…
-অতসী আর কথা না বাড়িয়ে পঞ্চাশ টাকা তার হাতে দিয়ে মূর্তিটা কিনে এনেছিল।
আমান সঙ্গে সঙ্গে বলল,
-মা, এটা দেখতে ভালো হয়নি তো। তুমি কিনলে কেন? তুমি যেমন খারাপ পুতুল বানাতে বলো এটাও সেরকম হয়েছে…
-হ্যাঁ, জানি। কিন্তু এ খুব গরিব মানুষ বাবা। তাও তো কিছু একটা চেষ্টা করে বিক্রি করতে এসেছে। তাই কিনলাম। খেয়াল করো ও কিন্তু ভিক্ষে করছে না…
-হুম, তা ঠিক
-তুমি কখনো পার্কস্ট্রিট গেলে দেখবে ওখানেও অনেক বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে রেস্টুরেন্টের বাইরে ছোটো ছোটো ধুপের প্যাকেট, ফুলের তোড়া, বেলুন এটা সেটা নিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করে। কলকাতার বিভিন্ন সিগনালেও করে। আবার কেউ কেউ আছে জাস্ট এমনিই ভিক্ষে চায়…
-জানি। দেখেছি অনেকবার।
-হ্যাঁ, এই ছোটো থেকে ভিক্ষে করে আয় করতে শিখিয়ে দেওয়াটা আমি পছন্দ করি না। তাই তাদের কখনো ভিক্ষে দিই না। আমি। তাছাড়া ভিক্ষা দিই না আরো অনেক কারণে। যাহোক বাদ দাও…। আজ দেখলে তো কুমোরটুলির মূর্তি গড়া? কেমন অভিজ্ঞতা হল তোমার?
-ভালো, ভালোই লেগেছে আমার।
-তুমি আবার কখনো পারলে বড়ো হয়ে এসো, এই আজ যে ছবিগুলো তুললে তোমার ক্যামেরায় তখন ওগুলো দেখো। পাশাপাশি মিলিয়ে দেখবে, কী কী বদল তুমি দেখতে পাও…
-হ্যাঁ, দেখব।
গল্প করতে করতেই দূরে গঙ্গার দিকে হাত বাড়িয়ে আমান চেঁচিয়ে উঠল, মা দ্যাখো কী যেন একটা ভেসে আসছে বলে। দূরে তাকিয়ে দেখল অতসী। ঠিক বুঝতে পারল না। চিতার কোনো আধপোড়া কাঠ হতে পারে। আবার কোনো মৃতদেহও হতে পারে। সামনে, দূরে অনেক কচুরী পানাও ভাসছিল। এসবের ভিড়ে অতসী কখন যেন হারিয়ে গেল। তার মনে পড়ল সে এক ভয়ঙ্কর দুঃসময়ের কথা। তখন অতসী খুব ছোটো। তাদের পাড়ার পরাণজেঠুর কথা মনে এল। পরাণজেঠু ঠাকুর বানাত। পাশাপাশি দু তিনটে গ্রামের ঠাকুর ওই জেঠুর থেকেই কিনে নিয়ে যেত সবাই। জেঠুর দুটো মেয়ে ছিল। বড়ো মেয়ে পূর্ণিমা আর ছোটো মেয়ে প্রতিমা। সেবার পুজোর আগে আগে মহামারি বন্যা এসে গ্রাস করে নিয়েছিল সব। রূপনারায়ণ, মুণ্ডেশ্বরী, দামোদর সবাই ফুঁসতে থাকে তখন। দামোদর মাতলে আর রক্ষে নেই। আশেপাশের গ্রামে বন্যা হয় শুনতে অভ্যস্ত অতসীদের গ্রাম বা আরো কয়েকটা গ্রাম। কিন্তু দামোদরের বাঁধ ভাঙলে আর কেউ রক্ষা পায় না। যে কটা গ্রাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেত তা দামোদরের দয়ায়। ডিভিসি’র ছাড়া জলও অতসীদের গ্রাম গ্রাস করতে পারত না। সেবার ভেঙেছিল দামোদর। বহু মানুষের ঘরবাড়ি, ফসল সমস্ত ভাসিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছিল। তার সঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছিল পরাণজেঠুর গড়া মাটির মূর্তির পাশাপাশি তার জ্যান্ত প্রতিমা। সেই প্রতিমাদিদি আর ফেরেনি কোথাও। আবাহনের আগে জ্যান্ত প্রতিমারও হয়েছিল বিসর্জন। অতসীর চোখ ঝাপসা হয়ে গাল বেয়ে নেমে এল জল। তার ছেলে সেটা খেয়াল করেনি। সে কেবল বলেই চলেছিল, ‘মা দ্যাখো কী ভেসে আসছে’। দূরের সেই ভাসমান জিনিস ভাসতে ভাসতে তাদের কাছে আর এগিয়ে আসেনি। নৌকার ঢেউয়ে অন্যদিকে চলে গিয়েছিল। অতসীর কানে বাজছিল কেবল সেই বানভাসী মানুষের হাহাকার, চোখে ভাসছিল জ্যান্ত প্রতিমার ভেসে যাওয়া। একইসঙ্গে পরাণজেঠুর প্রাণটাও ভেসে গিয়েছিল…। তোড়ে বৃষ্টি হলে কাদা থাকে না। সেবার কোথাও কোনো কাদা ছিল না। সে দৃশ্য চোখ বন্ধ করলে আজও অতসীর চোখে ভাসে। ভেসে যায়, হালকা ঢেউয়ের তালে তালে নয়। একেবারে নিশ্চিহ্ন করে নিমেষে তোড়ে ভেসে যায়।

ভাসতে ভাসতে কোথায় যায়, কোথায় গিয়ে তোলে কেউ জানে না। যারা জানে তারা এ প্রতিমাকে চেনে না। কারণ এ জলে গুলে যায় না, গুলে যায়নি। কেউ কাঠামো কুড়িয়ে এনে আবার নতুন প্রতিমা বানিয়ে পরাণজেঠুর হাতে তুলে দিয়ে আসতে পারবে না কখনো, কোনোদিন। জেঠুও আজ ভেসে গেছে। সন্তান হারানোর বাঁধভাঙা হাহাকারে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes