
অরণি বসু-র কবিতা
নিবেদন
অনন্তের পথে হাঁটতে হাঁটতে একদিন তোমার সঙ্গে দেখা হবে
এইমাত্র আশা নিয়ে পথ চলি।
সহপথিকদের মুখের দিকে তাকাই
বোঝার চেষ্টা করি পরীক্ষার শেষ কোথায়।
প্রত্যেক মুখেই ঈশ্বর প্রত্যক্ষ করি
প্রত্যেক মুখেই শয়তান।
ধ্বংসের ভিতর থেকে জেগে উঠে
ধ্বংসের ভিতরেই বিলীয়মান হয়ে যাই রোজ।
অজস্র কথার পাশে
অজস্র ভঙ্গিমার পাশে
আমার নিবেদনটুকু সমর্পণ করে যেতে চাই।
অনন্তের পথে হাঁটতে হাঁটতে তোমাকেই বন্দনা করি।
হে বন্ধু, হে প্রিয়
সহসা অন্ধকার নেমে এল, অন্ধকার নয় ঠিক,
ধুলিঝড় মত্ত আবেগে নেড়ে দিচ্ছে গাছের ঝুঁটি —
কোথাও কোথাও শাঁখের অভয় বেজে ওঠে।
সুদীর্ঘ প্রবাসে থেকে থেকে আনচান করে ওঠে মন,
বিদ্যুৎ-চমকে পুরনো বন্ধুর মুখ জেগে ওঠে।
তোমার বিধুর গমনপথের কথা ভাবি,
সেদিনও চাঁদ ওঠেনি।
বৃষ্টি পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা, গাছেরা শান্ত এখন।
ফ্ল্যাট-বাড়ির কলিংবেল বেজে ওঠে, একবার — দুবার
লিফট উঠে যায়, লিফট নেমে যায় —
হারানো গল্পের আড়াল থেকে কেউ কি এল?
অসহায় মন অপেক্ষা করে পুনর্বাসনের,
হে বন্ধু, হে প্রিয়, যতদিন যায়
অপ্রত্যক্ষ টান ক্রমশ প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে অন্তরে গভীরে।
ভয়
অরণ্যের গভীরে যখন পথ হারিয়ে ফেলি
ভয় করে,
শহরের ভিড়ে যখন পথ হারিয়ে ফেলি
তখন আরও বেশি
ভয় করে।
জীবন
সরকারি হাসপাতালের বেডে ম্লান মুখে শুয়ে থাকে
প্রকৃত ভারতবর্ষ —-
উদ্বেগ, ভালোবাসা, আকুতি, অসহায়তা,
অবিশ্বাস আর ঈশ্বর।
মর্জিনার পাশে মিনতি,
আবদুল্লার পাশে গোমেজ,
প্রবালের পাশে ধর্মদাস টোটো
পরস্পরের চোখে সান্ত্বনা খোঁজে।
কঠিন বর্ম পরে ডাক্তারবাবুরা আসেন,
সেবিকারা হাসতে ভুলে গেছে কবেই!
রবাহুত মার্জারের দল গুঁড়ি মেরে বসে আছে
উচ্ছিষ্টের লোভে।
কে জানে ক’ঘন্টা!
যেকোনো দিন
চাঁদিফাটা রোদ্দুরে ঝগড়ার তীব্র কোলাহল,
কটুকথার জোয়ার।
ধাক্কাধাক্কিতে বাসুদার বউয়ের হাত ভেঙে গেলে
থমকে যায় আবহ —
শান্ত দুপুর আবার ফিরে আসে একটু একটু করে,
আমরাও ফের যে যার কাজে জুতে যাই।
ফিকে হয়ে আসা বিকেলে উড়ন্ত পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখি
বাসুদা বৌকে ডাক্তার দেখিয়ে ফিরছে।
আকাশে একটু একটু করে ফুটে উঠছে ভ্যালেন্টাইন চাঁদ।
আবহমান ধারাবাহিক ভাবে অনেক ভালো সাহিত্য সম্ভার প্রকাশ্যে আনছে। অসাধারণ।