
শিশির আজম-এর কবিতাগুচ্ছ
কাফকা এইটা চাইনাই
আমার মনে হয় যক্ষার কবলে পড়া কাফকা
সিদ্ধান্তটা ঠিক নিছিল
যে ওর নোটখাতা আর পান্ডুলিপিগুলা আর সব চিঠিপত্র
মানে যা কিছু অপ্রকাশিত
তা পুড়ায়ে ফেলা দরকার।
কিন্তু একান্ত প্রিয় বন্ধু ম্যাক্স, ম্যাক্স ব্রড, পোড়ায়নাই
ওগুলা,
আর আমরা জানিনা
ঠিক কী ধান্দা আছিল
ওর মনে।
এখন ওগুলা তো আমাদের টেবিলে উইঠা আসছে
বই হয়া,
আর কি বিশ্রী দুর্গন্ধ ওগুলো থিকা
আমরা পাইতেছি
আর টেবিলের নিচ থিকা আসতেছে
দুর্গন্ধ।
আমাদের ফুসফুস পাকস্থলি কতক্ষণ
নিবে ওগুলা?
শ্বাস বন্ধ হয়া আসতেছে
কাফকা হয়তো চাইনাই
এইটা।
প্রলেতারিয়েত জুতা
হয় তো বেশি সময় আমি পাবো না
রাতে
আবছা আলোয় ভিনসেন্টের জুতাগুলোকে নিয়ে বসি
মুখোমুখি
হ্যা সেই প্রথম দেখাতেই বুঝে গিয়েছিলাম
ওদের শ্রেণিচরিত্র কী
ওরা কী খায় কোথায় ঘুমায়
যা হোক ওদেরকে নিয়ে আমি আর ভাববো না
অথবা ভাববো
আর আচমকা দরজাটা কেঁপে উঠবে পুলিশের বুটের আওয়াজে
জুলাই ২০২৪
ছাত্র শিক্ষককে পড়াচ্ছে
কি দারুণ ব্যাপার না
ছাত্র শিক্ষককে পড়াচ্ছে
ছাত্র শিক্ষকের টেবিলে পা তুলে দিচ্ছে
মাথায় চাটি মারছে মহা উৎসাহে
ছাত্র শিক্ষককে গাছে বেঁধে রাখছে
সিঁটি মারছে
পেটাচ্ছে
মাথা ন্যাড়া করে দিচ্ছে
দারুণ না
কি সৌভাগ্য আমাদের
বিপ্লব
এরকম জলজ্যান্ত একটা বিপ্লব
আমরা দেখে যাচ্ছি
পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম ভয়ংকর বিপ্লব
কখনও
কেউ দেখেছে
লেনিন
আপনি কিছু জানেন
জুলাই
‘ছাত্ররা কখনও ভুল করে না।’
আর সুশীল
আর গবেষক
আর জাতীয় জাদুঘরের অধ্যক্ষ
আর প্রভাবশালী দৈনিক পত্রিকার জাদরেল সম্পাদক
আর বিশ্বব্যাংক
আর জাতিসংঘ
আর ইইউ
আর মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট
এটা মানে।
খুঁজে খুঁজে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হোক
আর রোকেয়ার
আর লালনের
আর জয়নুলের।
বিপজ্জনক আর অনিষ্টকর সব বই
পুড়িয়ে ফেলা হোক।
ছাত্ররা কখনও ভুল করে না।
ছাত্ররা কখনও ভুল করে না।
ছাত্ররা কখনও ভুল করে না।
৩০ বছর ধরে কবিতা লিখছি
কে ধার্মিক কে নরাধম
প্রচলিত কোন ধারণা বা যুক্তি বা দর্শন দিয়ে
এখন
এদেরকে বিবেচনা করবার দরকার নেই
কেন না একই সঙ্গে ধার্মীক আর নরাধম হতে
বাঁধা কোথায়
৩০ বছর ধরে কবিতা লিখছি
যা সত্য
তাই কবিতা
শুনুন এটা স্রেফ ফাঁকা বুলি
কবিতা
সত্য আর মিথ্যা
দুটোই হয়
রাজধানীতে বিশাল বিশাল মিলনায়তন ভাড়া করে
কবিতা পড়া হয়
রাস্তায়
ছাত্রদের রক্তমাখা জামা
রাস্তায়
ট্যাংক
আর পতপত করে উড়ছে জাতীয় পতাকা
ট্যাংক আর পতাকা
কালার টেক্সচার আর টেম্পেরামেন্ট
কি সদৃশ
মহামান্য রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র বাহিনীর বাৎসরিক কুচকাওয়াজে
অংশ নেবেন
তারপর সন্ধ্যায়
মিউজিক ফেস্টিভালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে
উপভোগ করবেন আমজাদ আলী খাঁর সরোদ
আপনাকে মানতে হবে
সন্ন্যাসী আর সন্ত্রাসী
দুজনই সরোদে বিভোর
কীভাবে
এই প্রশ্ন করবার কোন মানেই হয় না