
কিঞ্চিৎ পরচর্চা-৬
রূপশ্রী ঘোষ
সত্য, অসত্য, অপূর্ণ সত্য
‘অশ্বথামা হত, ইতি গজ’।
খুব ক্ষীণ গলাতে হলেও এই ‘ইতি গজ’ কথাটা যদি না থাকত তাহলে মহাভারত কেমন হত? যেমন হয়েছে তেমন, নাকি সম্পূর্ণ অন্যরকম প্রেক্ষাপট? কারুর জানা নেই। যা হয়েছে তা হয়েছে, সেটা ওই ‘ইতি গজ’র জন্যই। বাস্তবে এরকম অনেক ঘটনা আছে তার প্রেক্ষাপটও যদি সম্পূর্ণ জানা না থাকে বা কারুর মুখ থেকে শোনার সময় সে যদি, সেটা ঠিক ঠিক ভাবে বলতে না পারে তাহলেও তার প্রেক্ষাপট বদলে যায়। কেউ যদি তাতে একটু রঙ চড়িয়ে মশলা করে দেয় তাহলে তো কথাই নেই। একেবারে সোনায় সোহাগা। কম বেশি এরকম নানান ঘটনার সাক্ষী আমরা সকলেই। তাই না? এরকম কী কী ভাবে প্রেক্ষাপট বদলে যায় বা ভুল তথ্য প্রচার হয় তার কিছু ঘটনা আলোচনা করলেই বোঝা যাবে।
যেকোনো বিষয়েরই পুরো প্রেক্ষাপট না বললে অনেক অসুবিধারও সৃষ্টি হয়। যেমন একে অপরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি শুরু হতে পারে। কিংবা কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে অজানা থেকে যেতে পারে। বা কে দোষী কে নির্দোষ সেটাও বোঝা মুশকিল হয়ে যায়। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যখন কোনো কথা বলছেন এবং যার সম্পর্কে বলছেন তাদের সবাইকে নিয়ে বিষয়টা বলুন। যেকোনো বিষয়ই যদি এক তরফা বলা হয় তাহলে সেটা হয় আংশিক সত্য নয় আংশিক অসত্য বা পুরোই বানানো সত্য হয়ে যায়। ওই ‘অশ্বত্থামা হত ইতি গজ’র মতো। এবং যে, সত্যিই দোষী নয় সে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যায়। তা কর্মক্ষেত্রে হোক, পারিবারিক, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন যেকোনো মহলেই হোক না কেন, যেকোনো জিনিস মুখোমুখি হওয়া ভালো। ধরুন এমন একটা বিষয় আমি আপনাকে বললাম যে, ‘জানেন আজ মিস্টার উমুক আর মিসেস তুমুক তাঁর ছেলে বউয়ের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু ছেলের বউ এমন নচ্ছার, নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে জল দেওয়া তো দূরের কথা দেখা পর্যন্ত করেনি’। হ্যাঁ, এটা ছেলের বউই হতে হবে। নিজের মেয়ে বা ছেলে হলে গল্প জমবে না। আপনি কী বুঝবেন বা কী ভাববেন? আপনি ভাববেন, বাব্বা! এত বাজে মেয়ে, মা বাবা কিছুই শিক্ষা দেয়নি? বাড়িতে যেকোনো অতিথি এলেই তাদের যত্ন করা উচিত। খুব ভালো কথা। উচিত তো। হ্যাঁ আমিও বলব উচিত। কিন্তু কেন ঘর থেকে বেরিয়ে এল না, তার অন্তর্নিহিত সত্যটা একবারও তলিয়ে দেখার কথা ভাববেন না? আগে, পিছে, ডাইনে, বাঁয়ে কী আছে একবারও খতিয়ে দেখতে ইচ্ছে করবে না? দেখুন না, দেখবেন আসল চিত্র বুঝতে পারবেন।
যেকোনো বিষয়েরই পুরো প্রেক্ষাপট না বললে অনেক অসুবিধারও সৃষ্টি হয়। যেমন একে অপরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি শুরু হতে পারে। কিংবা কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে অজানা থেকে যেতে পারে। বা কে দোষী কে নির্দোষ সেটাও বোঝা মুশকিল হয়ে যায়। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যখন কোনো কথা বলছেন এবং যার সম্পর্কে বলছেন তাদের সবাইকে নিয়ে বিষয়টা বলুন। যেকোনো বিষয়ই যদি এক তরফা বলা হয় তাহলে সেটা হয় আংশিক সত্য নয় আংশিক অসত্য বা পুরোই বানানো সত্য হয়ে যায়। ওই ‘অশ্বত্থামা হত ইতি গজ’র মতো।
কখনও কখনও এভাবেও প্রেক্ষাপট বদলে দেওয়া যায়। ধরা যাক, কোনো একটা ঘটনা বা বিষয় আপনি কাউকে বলতে চান। সেটা আপনার নিজেরই বলা বিষয়। এবার আপনি যাকে কথাটা শোনাতে চান সেটা সম্পূর্ণভাবে অন্যের নাম দিয়ে চালিয়ে দিতে পারেন। ঠিক এভাবে, জানো, আজ তোমার নামে উমুক এই-এই বলেছে। আমি তো শুনে অবাক, তোমার নামে কত কী যে বলে গেল। তুমি সামনে থাকলে বুঝতে পারতে। সবার সামনে তোমাকে যে কীভাবে অপমান করল কী আর বলব। খুব স্বাভাবিক, তোমার সেসব শুনে তাদের প্রতি রাগ হবে। গা রি রি করবে। যাদের নামে কথাগুলো চাপিয়ে দেওয়া হল তারা বেচারি ঘুণাক্ষরেও কিচ্ছুটি জানতে পারবে না। যদি না কোনো প্রত্যক্ষদর্শী বা প্রত্যক্ষ শ্রোতা কথাটা ‘লিক আউট’ করে। বা আপনি যদি কথাগুলো শোনার পর তাদের ডাইরেক্ট চার্জ না করেন তাহলেও তারা জানতে পারবেন না। এরকম ডাইরেক্ট চার্জ করা উচিত। তাহলে কিন্তু অনেকক্ষেত্রে আসল সত্যি বেরিয়ে আসে। এমন অহরহ অন্যের মুখে চাপিয়ে দেওয়া কথা চলছেই। আপনি শুনে কেবল অবাক হচ্ছেন। এর বেশি এগিয়ে অন্তর্নিহিত সত্য খোঁজার চেষ্টা করছেন না, তাই এটাই চলছে। অর্থাৎ সত্যটা সবারই যাচাই করে দেখা উচিত।
এবার কিছু ঘটনা থেকে আসলে সত্যটা যে কী, সেটা দেখার চেষ্টা করা যাক। ধরা যাক আমাদের পরাধীন দেশের কথা। ইংরেজরা আমাদের দেশ দখল করেছে, শাসন করেছে। আমাদের দেশের বিপ্লবীরা সশস্ত্র সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন করতে চেয়েছে। ইংরেজদের মনে হয়েছে, ওরা সশস্ত্র সংগ্রাম করছে, অতএব ওরা সন্ত্রাসবাদী ওদের মেরে দেওয়া হোক বা অত্যাচার করা হোক। করা হয়েওছে। ইংরেজদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সন্ত্রাসবাদ সত্য, কিন্তু ভারতীয়দের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শাসন মুক্ত হতে চাওয়া কি সন্ত্রাস? আমরা আমাদের হিরো নেতাজী সুভাষকে কি সন্ত্রাসবাদী বলব? নাকি স্বাধীনতা আন্দোলনকারী? তাহলে কোনটা সত্য? সত্যও আসলে বহুমুখী। এর একটা কোনো মুখ হয় না। এবার ধরা যাক আমাদের নকশাল আন্দোলনের সময়ের কথা। এখানেও সশস্ত্র বিপ্লবীরা চেয়েছিল একটা প্রতিষ্ঠান বিরোধীতা। সেটাকে কেন্দ্র করে দু দলের লড়াই। শাসক পক্ষ চেয়েছে বিপ্লবীদের মেরে দিতে আর বিপ্লবীরা চেয়েছে বিদ্রোহ করে দেশে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী একটা সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে। তাহলে কোনটা সত্য? কার দৃষ্টিভঙ্গি সত্য? শাসকের? নাকি বিপ্লবীদের? কমিউনিস্ট? নাকি ক্যাপিটালিস্ট? এবার আরও একটা সহজ বিষয় দেখা যাক। ধরা যাক আপনি দুটো দেশের খেলা দেখছেন। আপনি খুব স্বাভাবিকভাবেই উগ্র দেশপ্রেম থেকে নিজের দেশকে সমর্থন করবেন আর অন্যদেশ আপনার বিরোধিতা। তাহলে কে সত্যি? বা কোনটা সত্য? দেশপ্রেম? নাকি বিরোধিতা? দুজনেই তো দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সত্য। এবার আপনি এত দেশপ্রেম দেখালেন তো? এবার দেশের মধ্যে দেখুন আপনি হিন্দু ও মুসলিম, ও খিশ্চান। আপনার বিরোধিতা কিন্তু অন্য ধর্মের উপর? তাহলে এখানেও কে সত্য? উগ্র হিন্দুবাদ? নাকি অন্যগুলো? আপনার ভগবান, অন্যদের আল্লা, নাকি গড?
তাহলে কোনটা সত্য? কার দৃষ্টিভঙ্গি সত্য? শাসকের? নাকি বিপ্লবীদের? কমিউনিস্ট? নাকি ক্যাপিটালিস্ট? এবার আরও একটা সহজ বিষয় দেখা যাক। ধরা যাক আপনি দুটো দেশের খেলা দেখছেন। আপনি খুব স্বাভাবিকভাবেই উগ্র দেশপ্রেম থেকে নিজের দেশকে সমর্থন করবেন আর অন্যদেশ আপনার বিরোধিতা। তাহলে কে সত্যি? বা কোনটা সত্য? দেশপ্রেম? নাকি বিরোধিতা? দুজনেই তো দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সত্য।
এবার একটু বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকান। ভয়ঙ্কর অবস্থা জানি। এবার ভাবুন কোনটা সত্যি? মেধা না কোটা? যাঁরা সংরক্ষণ ব্যবস্থা করে গেছেন তাঁরা সত্য? কারণ সেই সংরক্ষণ দেখিয়ে তো যুগের পর যুগ চলছে। এদিকে মেধাবীরা মার খাচ্ছে। তাদের প্রতিবাদটা তো তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অবশ্যই সত্যি। শুধু তাদের কেন, অনেকেরই দৃষ্টিতে। তবে যারা কাঁটাতারের এপারে বসে সংরক্ষণের সুবিধা ভোগ করতে করতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে গলা চড়াচ্ছেন, তাদের মুখে এটা মানায় না। যদি গলা চড়াতেই হয়, তাহলে কাঁটাতারের এপারেও ‘আমরা সংরক্ষণ মানি না’ বলে গলা চড়ান। আমি নিজেও এর বিরোধী। কারণ দুহাজার বছর আগে সত্যিই যখন বর্ণভেদ প্রথা চালু হয়েছি্ তখন তো কাজের ভিত্তিতেই হয়েছিল। যাঁরা যে কাজে পারদর্শী তাঁরা সেই কাজই করবেন। নাহলে কারো কারো মতে, ব্যাসদেব শুদ্রের গর্ভে জন্মে ব্রাহ্মণ হতে পারতেন না। এই ২০২৪ সালে বসে মেধাকে মান্যতা দেওয়া হবে না কেন? যার যেমন মেধা সে তেমন কাজ করুক। সেই কাজে পারদর্শী কিনা পরীক্ষা পদ্ধতিতেই নির্বাচন করা হোক। অবশ্যই লিখিত পরীক্ষা, নাহলেই মুশকিল। কারণ ধরুন আপনি ক্লাসের সব পরীক্ষায় বা কোনো কমপিটিটিভ লিখিত পরীক্ষাতেই দারুণ করলেন, কিন্তু ভাইভা বা ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে মোটে উত্তীর্ণ হতে পারছেন না। কারণটা কী? এটাও কি সম্ভব? যে বা যারা চিরকাল লেখা পরীক্ষায় ভালো আর কিছুতেই ইন্টারভিউ ক্লিয়ার করতে পারে না? অথচ সংরক্ষণের দুনিয়ায় আপনার রেজাল্ট ভালো হওয়া সত্ত্বেও সবাই আপনাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। কী করে সম্ভব? এখানে কোনটা সত্য? তাদের কোটা সিস্টেম? নাকি আপনার মেধা? নাকি আপনার নীরিক্ষণের বাজারে পিছিয়ে পড়া নাকি সংরক্ষিত আসনের এগিয়ে যাওয়া?
এ বড়ো গোলমেলে ব্যাপার। যত লিখবেন তত তর্ক বাড়বে। এই যে এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুসারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনা সবকিছু ছেড়ে দেশ ত্যাগ করলেন। সেনাবাহিনীর আওতায় দেশ এবং ছাত্র আন্দোলন সফল। তাহলে এখানে কোনটা সত্য? শাসকের হেরে যাওয়া নাকি ছাত্রদের জিতে যাওয়া? নাকি এর মধ্যে আরও অনেক বিষয় আছে যা আমরা জানি না, অন্তর্নিহিত সত্য অজানা রয়ে যাচ্ছে না তো? যে শুভ উদ্ধেশ্য নিয়ে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল তাতে সমর্থন ছিল মানুষের কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান সত্যতে কারও সমর্থন আছে বলে মনে করি না। নৃশংস হত্যা বা ধ্বংস যা হওয়ার তো হল। রাজায় রাজায় এক হয়ে গেল, উলুখাগড়া ব্রিজ থেকে ঝুলল, পোড়া মাংসপিণ্ডে পরিণত হল। কিন্তু অন্তর্নিহিত সত্য কি কোনোদিন বেরোবে? রাহুল আনন্দ-র মতো গায়কের ৩০০০ বাদ্যযন্ত্র সহ তাঁর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হল। এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রচুর হিন্দু বাংলাদেশী ভারতের কাঁটাতারের সামনে অপেক্ষা করছেন এ দেশে পালিয়ে আসবেন বলে। তাহলে পরিবর্তন সত্য, না কি সত্য মানুষের দুর্ভোগ? মৌলবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া শিল্প, সঙ্গীত, ভাস্কর্য এবং সাধারণ মানূষের কেড়ে নেওয়া প্রাণ সত্য, না কি সত্য শুধুই পট পরিবর্তন? গতকাল যে ডাক্তার মেয়েটিকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করে খুন করা হয় হাসপাতাল চত্বরেই, এর বিচার কে করবে? কেন এত শাস্তি দেওয়া সত্ত্বেও ধর্ষণ কমছে না, কেন মানুষ নারীকে যৌনতার জন্য এক শরীর হিসেবেই শুধু দেখবে? সেই মেয়েটি তো ওখানে মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজই করছিল। মানূষের যৌন প্রবৃত্তি এবুং অবদমনের সংস্কৃতি ঠিক কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের? কোনটা সত্য, উন্নয়নের ফলে তৈরি হওয়া সভ্যতা না কি সভ্যতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা আদিম অসভ্যতা? মানুষের বাইরের সুললিত চেহারা সত্য না কি সত্য মানুষের ভিতরের আদিম সেই প্রবৃত্তিকেন্দ্রিক জীবনানন্দ কথিত ‘যৌনএকাগ্রতা’?
মৌলবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া শিল্প, সঙ্গীত, ভাস্কর্য এবং সাধারণ মানূষের কেড়ে নেওয়া প্রাণ সত্য, না কি সত্য শুধুই পট পরিবর্তন? গতকাল যে ডাক্তার মেয়েটিকে নৃশংস ভাবে ধর্ষণ করে খুন করা হয় হাসপাতাল চত্বরেই, এর বিচার কে করবে? কেন এত শাস্তি দেওয়া সত্ত্বেও ধর্ষণ কমছে না, কেন মানুষ নারীকে যৌনতার জন্য এক শরীর হিসেবেই শুধু দেখবে? সেই মেয়েটি তো ওখানে মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজই করছিল। মানূষের যৌন প্রবৃত্তি এবুং অবদমনের সংস্কৃতি ঠিক কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের? কোনটা সত্য, উন্নয়নের ফলে তৈরি হওয়া সভ্যতা না কি সভ্যতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা আদিম অসভ্যতা? মানুষের বাইরের সুললিত চেহারা সত্য না কি সত্য মানুষের ভিতরের আদিম সেই প্রবৃত্তিকেন্দ্রিক জীবনানন্দ কথিত ‘যৌনএকাগ্রতা’?
এবার আপনি জালটা গুটিয়ে আনুন। পরিসরটা আরও ছোটো করুন। সামনে দুর্গাপুজো। ধরা যাক আপনার এলাকায় পুজো নিয়ে নানান মতভেদ তৈরি হচ্ছে। একে অপরের গায়ে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি চলছে। দু-দলই দু-দলের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সত্য। কোনোটাই চাপিয়ে দেওয়া সত্য বা বানানো সত্য নয়। আংশিক হলেও হতে পারে। এবার যদি নিজেদের যেকোনো সম্পর্কের মধ্যে সত্য খুঁজতে যান সেখানেও অনেক গড়মিল পাবেন। আপনার যেটাকে সত্য মনে হবে অন্যের সেটা নাই হতে পারে। আবার এমনটাও হতে পারে সম্পূর্ণ বানানো একটা গল্প আপনার উপর চাপিয়ে দিয়ে সেটা সত্য বলে প্রচার করা হবে। এবার আপনি সত্যিই গুলিয়ে যাবেন। এমনভাবে আপনার কাছে বলা হবে আপনি সত্য অসত্য ব্যাপারটার মধ্যেই আর কোনো তাল খুঁজে পাবেন না। ওই অনেকটা বিজ্ঞাপনের মতো আর কী। ধরুন ‘আমি তো হরলিক্স এমনি এমনিই খাই’ বা ‘ঠাণ্ডা মতলব কোকাকোলা’ কিংবা সফেদ বলবে, ‘দাগ আচ্ছা হ্যায়’। অর্থাৎ আপনাকে এমনভাবে ভাবানো হবে যেন, ওগুলোই সত্য। ওর বাইরে আর কিছুই নেই। এরকম অনেক উদাহরণ হতে পারে। যারা প্রতিষ্ঠান বিরোধী, উল্টোদিকে তারা তো একটা না প্রতিষ্ঠানের প্যাকেজেরই অন্তর্ভূক্ত। তাহলে কোনটা সত্য? প্যাকেজের বাইরে এসে আপনি যদি প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন করেন তাহলে তো আপনার প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাটা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। খুব স্বাভাবিকভাবেই কোনটা সত্য, কোনটা অসত্য প্রশ্ন উঠে আসবে। অতএব এ বড়ো গোলমেলে ব্যাপার। এবার কবিকে একটু স্মরণ করা যাক – “তবুও মরিতে হবে এও সত্য জানি”।
কিন্তু আর জি করের সত্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বরং বলব এমন যেন আর না ঘটে।
এমন একান্ত করে চাওয়া
এও সত্য যত,
এমন একান্ত ছেড়ে যাওয়া
সেও সেইমতো।
এ দুয়ের মাঝে তবু কোনোখানে আছে কোনো মিল ;
নহিলে নিখিল
এতবড়ো নিদারুণ প্রবঞ্চনা
হাসিমুখে এতকাল কিছুতে বহিতে পারিত না।
সব তার আলো
কীটে-কাটা পুষ্পসম এতদিনে হয়ে যেত কালো।
এই সত্য, আংশিক সত্য আর বানানো সত্যের শিকার কম বেশি আমরা প্রত্যেকেই।