আমার রবীন্দ্রনাথ, আমাদের রবীন্দ্রনাথ <br /> আবির চক্রবর্তী

আমার রবীন্দ্রনাথ, আমাদের রবীন্দ্রনাথ
আবির চক্রবর্তী

জন্মেছিলাম সত্তরের দশকে। আর পাঁচটি মধ্যবিত্ত মফস্বলী বাড়িতে যেমন হয়, বিলাসহীন প্রাত্যহিকতা, দেওয়ালের তাক জোড়া নানাবিধ বই,উঠোন পারে জবা-টগরের পাশে ছোট্টো পুঁইমাচা, কুঁয়োতলায় থানকুনির পাশে রঙবেরঙের সন্ধ্যামনি, লোডশেডিংয়ে হ্যারিকেন, তোলা উনুনে ভাত ফোটার গন্ধে ঘুম ঘুম চোখে পরের দিনের পড়া মুখস্থ,স্কুলে এবং পাড়ায় অন্যান্য অনুষ্ঠানের মতো রবীন্দ্রজয়ন্তীতেও গান গাওয়া,দিদিমনিদের শিখিয়ে দেওয়া যৌথনৃত্য বা নাটক … এ সবই ছিলো। আলাদা করে সবিশেষ রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কিনা, মনে নেই।

তবে মনে আছে,এমন সব গ্রীষ্মকালীন রাতে ছাদ জোড়া বেলফুলের ঝাড় থেকে উঠে আসতো গভীর সুগন্ধ। সবাই মিলে একসঙ্গে মাদুর পেতে ঘুমোবার আগে হাতপাখা টানতে টানতে মা গান গাইতো, মৃদু গলায় সঙ্গতে বাবা। সেইসব জোৎস্নাময় সুগন্ধি মায়ারাতে মায়ের গলা যখন

‘ফুলের উদাস সুবাস বেড়ায় ঘুরে’ থেকে

‘সেই কথাটি লাগল না সেই সুরে

,যতই প্রয়াস করি পরানপণে’-এর সুরচারণে পৌঁছতো,

বাবার আজানুলম্বিত হাতছানি নিশ্চুপে আমাদের বালিস পেরিয়ে স্পর্শ করতো মায়ের সিঁথি, সেই সিঁথি; যে সিঁথির লাল মাখামাখি হয়ে গিয়েছিল পাশের বাড়ির অবিবাহিত বিভাপিসির গালে এবং গলায় ,শেষ বিদায়ের দিনে মাকে জড়িয়ে ধরে বাবার মৃতদেহের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে একটার পরে একটা রবীন্দ্রনাথের গান গাইছিল তখন পিসি, দুজনেরই দুচোখে বন্যা,তন্ময় হয়ে শুনেছিলাম…

‘কিছু বা সে মিলনমালায় যুগলগলায় রইবে গাঁথা,

কিছু বা সে ভিজিয়ে দেবে দুই চাহনির চোখের পাতা’

জীবন না মরণ;প্রেম না বিসর্জন…কাকে আহ্বান করছিল পিসি!

এতদিন যে পিসি বাবার সঙ্গে দু-একটা সামান্য কথা বললেই মায়ের মুখ ভার হয়ে যেত, সেই মাও তো সেদিন কিচ্ছু বলেনি!

দুটি সব হারানো নারী তাঁর গানেই কি আশ্রয় খুঁজেছিল নিজের নিজের মতো করে!

হয়তো। হয়তো বা নয়।

তবে,সেদিনই প্রথম সচেতনভাবে বুঝি, রবীন্দ্রনাথ খুব বড়ো কবি, লেখক,দার্শনিক, সমাজ সংস্কারক বা নোবেল লরিয়েট, লোকে আর যা যা কিছু বলে তাঁর নামে, তার যতটাই তিনি হোন না হোন, সবার আগে তিনি আমার বা আমাদের বন্ধু,নিভৃত প্রাণের সখা, আমাদের পরম আশ্রয়।

তাঁর পরাস্পর্শে,তাঁর গানে আমরা পেরিয়ে যাই অযুত অসহায়তা,অসংখ্য অশুভ। অক্লেশে বরণ করতে পারি জীবনাধিক মরণ অথবা মরণাধিক জীবনকেও।

ক্রমে জীবন এগিয়েছে, ক্ষয়ে-লয়ে,প্রাপ্তিতে,পূর্ণতায় ভরেছে অভিজ্ঞতার ডালি। সেই সঙ্গে আরও দৃঢ়, আরও বদ্ধমূল হয়েছে এই বোধ; অক্ষয় বিশ্বাস।

তাই হয়তো এমন সামাজিক ও প্রাকৃতিক অসহ দহনবেলায়ও গায়ে আঁচল টেনে মহুলগন্ধী ভোরে পথ চলি প্রাণপণ, গিয়ে দাঁড়াই অশথতলায় ভাঙ্গা চেয়ারে সাজানো অপটু হাতে চন্দন ও মালা পরানো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে ভুল সুরে গাওয়া সেই বাচ্চাগুলির পিছনে, যাদের অধিকাংশ জনের বাবা-মাই জানেন না রবীন্দ্রনাথ কি, কেন এবং কেমন…

তবু ওরা স্নানের বেলা নদীঘাটে বসে আপনমনে আওড়ায় ‘আমাদের ছোট নদী’ অথবা মেঘ করলে ‘বর্ষা নেমেছে,গর্মি আর নেই…’ আরও একটু বড়ো হয়ে ‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু… ‘

ওরা আসে,সবাই স্কুলে আসে পঁচিশে বৈশাখের সকালে,তাঁর ছবি সাজায় নিজেদের হাতে তুলে আনা কুর্চি ফুলে,করজোড়ে গায় গভীর ভালোবাসায়,

‘তুমি আমাদের পিতা, তোমায় পিতা বলে যেন মানি… ‘

কখন যেন দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে চোখ থেকে, তাঁকে নিয়ে বাঁচা ছাড়া আমরা যে আজও উপায়হীন। যে যার মতো করে তাঁকে আমরা গ্রহণ করি দেবতার বৈভবে, মানুষী আবেগে, দায়বদ্ধতার অজুহাতে…এ চাওয়া যে আবহমান। তাঁকে পাওয়াও তাই আমাদের ফুরায় না।

তিনি হাসেন অলক্ষ্যে… ‘তব অঞ্চল ছায়া মোরে রহিবে ঢাকি…’, অসন্তোষে, আতুরতায়, আবেগে, বিহ্বলতায় তিনি বেঁচে থাকেন,বাঁচিয়ে রাখেন আমায়, আমাদের;বাঙালি হয়ে জন্মানোর এইটুকুই প্রিয়প্রাপ্তি মানি।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes