সোমা দত্ত-র গল্প ‘নয়নতারা’

সোমা দত্ত-র গল্প ‘নয়নতারা’

কাকার গলা শোনামাত্তর নয়ন দৌড়ে আসে। তার দুচোখ ছাপিয়ে জল উপচে পড়ে। কাকারে জড়িয়ে ধরতে গেলে কাকা ওর হাত দুটো ধরে ফেলে ঝাঁকা দ্যায়। – কী হইসে কী? পাগলের মতো করতাছস ক্যান? সিধা খাড়া হ!
পিছন থেকে মিহি কিন্তু ধারালো মেয়েলি গলা সরব হল। এই রকমই তো করছে ক’দিন থেকে। বোঝাও তোমার ভাইপোকে। এক সপ্তাহ হল, এখনো যদি এরকম করে চলবে কী করে। কাজকম্ম ছেড়ে দাও, খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত করছে না। ও তো নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়বে বলো। তখন তোমরাই আবার আমাদের দোষ দেবে। কাকা হাত জোড় করে বলে, নানা দিদিমণি আপনি ভাববেন না আমি ওরে বুঝিয়ে বলতাছি। নয়নের হাতটা ধরে টেনে বাইরে নিয়ে যায় কাকা। –দ্যাখ নয়ন পুরুষ মাইনসের বেশি কাইন্দন মানায় না। ময়নার লগে তর কষ্ট আমি বুঝি। আমারও মন কাইন্দে মাইয়াটার লগে। কিন্তু কী করবি। তার ভাইগ্য নাই বাঁচনের, গ্যাছে গিয়া। তুই তো আছস। তর তো বাঁচন লাগব। দ্যাশে তর আরো দুইটা ভাই বুনরেও তো মানুষ করতে লাগব। তুই যদি অ্যামনে শোক নিয়া বইস্যা থাকোস…
–কাকা ময়না অ্যামনি অ্যামনি মরে নাই। আমারে কইসিল
–কী কইসিল ক দিকি, জম্ম হাবা তোর বুন, একটা কতা সরে নাই মুকে কোনোকালে, সে তরে কী কইব।
–কাকা আমি দ্যাখসি ময়নারে কাকা, রক্ত ছিল কাকা, রক্ত পড়তাছিল পা দিয়া… নয়ন হাউহাউ কান্নায় ফের ভেঙে পড়ে।
কাকা হঠাৎ রেগে যায়। ফালতু কতা কওন বন্দ কর নয়ন কইয়া দিলাম। জানস কত বড় মাইনসের বাড়িতে কাম করিস? ভিক্ষা মাঙনের শখ হইসে নাকি তর? হেয়ান দিয়া তাড়াইলে ঘরে কুনো তর জাগা নাই এই কইয়া দিলাম। খাবি কী তুই, অ্যাঁ? ময়নার মরা শরিলটা এই নিজের চক্ষুতে দ্যাখলাম, বুঝছস? তখনও বডি পুরা গরম। জ্বর বমি হইসিল, মারা গ্যাছে। বাচ্চাগো কুরোনা হয় জানো তুমি? আইজক্যাল চারদিকে হেই খবর। কিন্তু আমি দ্যাখছি, কী ভালো কাপড় জামা পইর‍্যা শুইয়াসিল ময়নার ফুলের মত শরীলটা। আরে তুই কইতে কী চাস?
–কী বলতে চায় নয়ন সে নিজে জানে না। কিন্তু জানে কিছু একটা বলতে সে চাইছে যা বোঝাতে পারছে না।
কাকা নয়নের দুই কাঁধ ধরে ঝাঁকায়। দ্যাখ যা হইসে ভুইল্যা যা। আরামে আছস এহানে। দুটা পয়সার মুক দেহন যায়। খাওয়া পাস, কাপড় পাস, ডাক্তার, অষুধ সব মাগনায় পাস। বেশি ছটপটাস না। ময়না আছিলই রুগনা। ওর কতা ভাইব্যা প্যাটে লাথ মারনের কী দরকার? তাতে কী ও বাঁইচ্যা ফিরব?
অনেকক্ষণ একটানা কেঁদে নয়ন হাঁফিয়ে উঠেছে তখন। সে থামে তবুও মধ্যে মধ্যে আপনা থেকেই ফোঁপানি চলে আসে তার। সে কাকারে কিছু না বলে, পিছন ফেরে, ধীরে ধীরে ঘরের দিকে যায়। পিছন পিছন কাকাও আসে।
সেই মিহি গলা ফের বলে, কী বুঝিয়ে বলেছ ভাইপোকে? খাওয়া দাওয়া করবে তো এরপর ঠিক করে? নাকি কাজ টাজ করবে না আর আমাদের বাড়িতে। কাকা তড়িঘড়ি বলে ওঠে– আরে না! কী যে কয়েন দিদিমণি! বুনের জন্য মনখারাপ হইছিল। ছোট ছেলে তো। কত বা বয়েস। ও ঠিক হয়ে যাবে গো দিদিমণি।
মিহি গলা বলে,– ঠিক হলেই ভালো। তোমরা এই বাংলাদেশিগুলো বড় প্রবলেমিটিক। এমনিতেই আমাদের কারো মন মেজাজ ভালো নেই। বাড়ির মধ্যে এমন একটা ঘটনা হয়ে গেল। কী ফুটফুটে ছিল গো মেয়েটা। একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে ফের গলাটাকে আরো মিহি করে দিদিমণি বললেন,
নয়ন তুই ভেতরে যা। আর তুমি বাড়ি যাওয়ার আগে ম্যানেজারবাবুর সঙ্গে দেখা করে যেও আমাদের দোকানে গিয়ে। কিছু টাকাপয়সা নিয়ে যেও, বাচ্চা মেয়ে ওর তো শ্রাদ্ধ শান্তি করা যায় না। ব্রাহ্মণ খাইয়ে দিও নাহয় বা যা ভালো বোঝো তোমরা। দোকান চেনো তো?

*

ইস্কুলের বইয়ের ছবিতেও এত বড় বাড়ি কোনোদিন দেখেনি নয়ন। তাদের গ্রামে পরানজ্যাঠা, আনোয়ার চাচা, দিলীপজ্যাঠারা নামকরা সব পয়সাওলা লোক। ওদের দোতলা বাড়ি, আলাদা গোয়াল ঘর, স্নানঘর, কুয়োতলা, পুজোঘর, এসবের পরেও খোলা বিশাল বড় উঠান। সেখানে ওদের মায়েরা বউয়েরা বড়ি দেয়, আচার শুকোতে দেয়, মরিচ শুকোতে দেয় তারপরেও কতটা জায়গা খালি পড়ে থাকে। ওদের বাড়ির ছেলেমেয়েগুলা উঠোনে দৌড়াদৌড়ি করে কুমিরডাঙ্গা খেলে এ ঘর ও ঘর সিঁড়ি ঘর চিলেকোঠা ঘুরে ছাদে চলে যায়, সেখানে দিব্যি ঘুড়ি ওড়ায়। পরানজ্যাঠার ছোট নাতি বাবলু মহা বিচ্ছু। বাড়ির লাগোয়া আম গাছ থেকে বাড়ির ছাদে লাফ মেরে কেরামতি দেখায়। বারণ করলেও কারো কথা শোনে না। মাঝেমধ্যে ওর বাপ এসে এমন খ্যাদান খ্যাদায় কী ওই মাঠ পেরিয়ে নয়নদের ঘর পর্যন্ত চিল্লানোর শব্দ শোনা যায়। তাও সে এমন বিচ্ছু পরের দিন সকাল হলে ফের শুরু করে দেয় লাফ ঝাঁপ। বাবলুর ঠাকুমা বলে, ওই দ্যাখো শয়তানের পোলায় লাফান দ্যায়, বাইনদররে বাইধ্যা রাখন লাগে। বউডারে কইলি শুনব না কিসুতেই। হাত পা ভাইঙা থুব হ্যাইদিন, এই কইয়া দিলাম। তখন মাঝেমধ্যে ওদের বাড়ি যেত নয়ন। ইস্কুলে ভর্তি হওয়ার পর ওই বাবলুর বড় ভাই নয়নের সঙ্গে এক কেলাসে পড়ত।
সকলে বলে, নয়ন আর ময়নার মায়ের নাকি রূপ ছিল তেমন দেখার মতো। বাংলাদ্যাশে নাকি ওদের মায়েরে বিয়ে করার জন্য কত লোক সম্বন্ধ নিয়া আসত দিদার কাছে। ওদের দু ভাই বোনকেও দেখতে শুনতে ভালো, দুইজনেই নাকি মায়ের মতো। এ পাড়ায় ওইজন্যে দুই ভাইবোনকে ভালোবাসে সক্কলে। গরীব বলে, দূর ছাই করেনা কেউ। গত দুই বছরে অবশ্য ইস্কুল যাওয়া হয়নি নয়নের। নয়নের বাপ মদন এলাকার বড় নেতার দলের লোক ছিল। ভোটের আগে এদিক সেদিক নেতার সঙ্গে ঘুরতে হত সকাল সন্ধ্যা রাত। দুবছর আগে ভোটের আগে নেতাকে মারতে কারা যেন চড়াও হল ভোজালি, ছুরি, টাঙি নিয়ে। এরাও কমতি যায়নি। নয়নের বাপ কয়েকজনারে জখম করে নেতারা বাঁচায়েছিল ঠিকই কিন্তু শেষ টাইমে একজন ভোজালি চালায়ে দিছিল। আটকাতে পারে নাই। লোকে বলে নয়নের বাপ মাঝদুপুরে মাছের ঝোল ভাত খেয়ে বার হইছিল তাই ভোজালির কোপ লেগে দু আদখান পেটের মধ্য থেকে নাকি রক্ত আর ডেলা ডেলা ভাত রাস্তায় ছিটিয়ে গেছিল। এসব কথা নয়নকে কেউ বলেনি। পাড়ার লোকের কথাবাত্তা শুনে সে জেনেছে। নয়নের দু বছরের ছোট বোন ময়না কথা বলতে পারেনা। বুদ্ধি শুদ্ধি নাই। কিন্তু তার ইয়া লম্বা একঢাল চুল, ফর্সা রং, চোখা নাক, টানা চোখ। মেজকাকি বলে নামের ঢং দেখো না, কতা কয় না মাইয়া তার নাম রাখসে ময়না। ময়না ইশারায় হাত নাড়ে আর অদ্ভুত একরকমের শব্দ গলা দিয়ে বার করে। ওটাই ওর কথা বলা। ওর কথা শুধু নয়ন বোঝে, মেজকাকি বোঝে আর হরিশের বোন মিলি বোঝে। নয়ন আর ময়নার মা তো মেয়ের জন্ম দিতে গিয়েই মরেছে। কাকী বলে মেয়ে নয়ত ডাইনি আইসে, অমন রূপ ডাইনির হয়। মা-টারে খাইসে ডাইনি আইস্যা, বাপটারেও খাইল এবারে। একে একে দ্যাখো না ডাইনির কাম কাজ কুন দিকে যায়। মায়ের মুখটাও নয়নের মনে নেই। বাবার ফোনে, কাকীর ফোনে ছবি দেখেছে। কিন্তু তাতে বড় কিছু একটা পষ্ট হয়না মা ব্যাপারটা। ময়নার তো মা কী হয় বোধই হয় নাই কোনো। দশ বছর বয়স পার করেছে সে, কিন্তু বুদ্ধি ছোট শিশুর মতো। বাবা যে মরেছে সেটাও বোঝে নাই ঠিকমতো। তবে বাপ যখন বেঁচে ছিল তখন তাঁর থাকাটা বুঝত। বাবা ওকে সুড়সুড়ি দিয়ে হাসাত, ঘাড়ে নিয়ে মাঠে যেত। মধ্যে মধ্যে গুড় বাদাম, হজমি, বরফ আইসক্রিম নিয়ে আসত। রথের মেলায়, রাসের মেলায় কাঁধে চাপায়ে ঘোরাত। সেই কারণে ময়না সারাসময় তাকে খুঁজত মরার পর। ওকে তো কেউ বোঝাতে পারবে না কিছু। নিজে নিজেই কিছু একটা বুঝে নিয়েছে। তবে এখন বড় ঘ্যানঘ্যানে হয়েছে ময়না। বড় কাঁদে আর খেতে চায় বারেবারে এই এক ওর মস্ত দোষ। কাকীটা মারে ওকে। আগেও মারত না তা নয় কিন্তু আগে জোর ছিল। বাপের জোর। এখন সেসব খতম।
নয়ন ময়নার থেকে দু বছরের বড়। কত বা বয়েস। সে একা কী করে সামলায় ওই বোকাসোকা বোনকে! তার পেচ্ছাপ পায়খানার বোধ থাকলেও একা একা বাথরুমে গিয়ে বসার বুদ্ধি নেই। বলামাত্র নিয়ে গিয়ে না বসালে ঘরেই করে দেবে। ঠিক করে খেতেও পারে না। ফেলে ছড়িয়ে একসা করে। তারপর হাপুস নয়নে কাঁদে। নয়ন বোনকে, ঘাড়ে করে দৌড়ায় মাঠের মধ্যে। আল ধরে ছুট লাগিয়ে চলে যায় সেই দূরে। ময়না কান্না ভুলে খিলখিল করে হাসতে থাকে। তারপর খোলা মাঠে দুইজনে গড়ায়। বৃষ্টি পড়লে ময়না ছোট ছোট বলে দৌড় লাগায় নয়ন। কিছুদূর গিয়ে পিছন ফিরে দেখে বোনটা হাবার মত দাঁড়িয়ে ভিজছে। আবার গিয়ে ওর হাত ধরে টেনে বাড়ির দিকে ছুট লাগায়।
এখন ওদের অবস্থা বড় খারাপ। খাবার জোটে বটে দুবেলা কিন্তু কাকী বড় চোপা করে। একটু ভাত বেশি চেয়েছ কী কথা শুনাতে শুরু করে দেবে। কাকা শেষমেশ একদিন বলল, নয়ন রে, চল তোরে কাজে জুতে দিই চল বাপ আমার। আমাগো বাবু অনেক বড় লোকের ঘরে তোর কাজের ব্যবস্থা করসে। লেগে পড় বাপ। এখানে দ্যাখতাছস তো তর কাকী পোলাপানগুলারে নিয়া পারে না মোটে। তর বাপও মরল, হাওয়াখানও বদলাইল। এহন নতুন লোকের হাতে ক্ষমতা আইসে, এরা আমাগো ভাতে মারতে চায়। তুই বাড়ির বড় পোলা। তোরে তো বুঝতে হইব বাপ। নয়ন ঘাড় নেড়ে সায় দিয়েছিল। সে জানত তার আর ইস্কুলে যাওয়া হবে না। তার কাকীর দুবেলা তাদের দুই ভাইবোনের পাতে ভাত তুলতেও মুখ কালো হয়। কাকীরও নিজের দুটো ছোট ছেলে আর একটা মেয়ে। তিনজনই ময়নার থেকেও ছোট। নিজের ছেলেমেয়ে সামলে, বাড়ির কাজ সামলে আবার ময়নার হাজার ঝামেলা সামলাও। নয়ন যতটা পারে বোনকে আগলায় কিন্তু সে মেয়েও কম অবুঝ নাকি। খালী কাকীর পো ধরে ঘোরে আর খাইখাই করে। কাকীর সইবে কেন? একে টাকা পয়সার অভাবে মেজাজ খারাপই থাকে। নয়নের বাবার রোজগার কাকার চাইতে বেশি ছিল। দুজনের সংসার বাবাই দেখত একরকম। বাপ মরার পর তাই সমস্যার বিস্তর। তাই কাকা কাজে পাঠাবে বড়লোকের বাড়ি শুনে তাতে যেতে নয়নের আপত্তি হয়নি। বাবা নেই, মা নেই, ইস্কুলেও যাওয়া নেই, এখানে তার কিছুই নেই। কিন্তু ময়নাকে কে দেখবে?কাকা বলল সে সব ব্যবস্থা করেই রেখেছে। যে লোকের কাজ করবে নয়ন, তার বাড়িতেই দু ভাই বোন থাকতে পাবে। দু বেলা খাওয়া, জামা কাপড় সব ওরাই দেবে। মাস গেলে টাকাও দেবে।মাসে মাসে কাকা গিয়ে দেখে আসবে ওদের , তখন টাকা নিয়ে আসবে। নয়ন বড় হলে পর, সে যেমন বুঝবে করবে বন্দোবস্ত।
রাজি না হওয়া ছাড়া যে তার উপায় নাই সে নয়নও জানত তার কাকা কাকীও জানত। একমাত্র যে কিছুই জানত না সে হল ময়না। যেদিন ভাইবোনে রওনা হল ময়নার সে কী মজা। নয়ন বোনের চুল আঁচড়ে দুই দিকে বিনুনি করে দিল। ময়না কোত্থেকে একটা পাউডার কৌটো নিয়ে এসে নয়নের গায়ে মাখাতে এলো। দেখে সে কী হাসি নয়নের। বোনটা হাবা হোক বোবা হোক ওকে নিয়ে নয়নের কষ্ট ধুয়ে যায়। বাপ যাওয়ার পর এই বোনটাই তো সব। কাকা ট্রেনে করে দুই ভাইবোনকে নিয়ে পৌঁছে দিতে এল।
আর এই এখন সেই বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে নয়ন ভাবছে এই এত বড় বাড়ি হয় কলকাতায়? শুধু সিনেমায় এসব হয় জানত। সিনেমা মানেই তো বম্বে। কলকাতায় প্রথম এলো সে। সেই সিনেমার বাড়ির মতো ইয়াব্বড় গেট। গেটে আবার পুলিশের জামা পড়া দুজন বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে। একজন পুলিশকে কাকা নিচু গলায় কিছু বলল। সে ফোন করল কাকে যেন তারপর গেট খুলে দিল একটুখানি। ভিতরে বিশাল বাগান। কত ফুলগাছ। একটা ছোট ডোবা মত কেটে রেখেছে, তাতে আবার পদ্ম ফুটেছে। পদ্ম তাদের গ্রামের পুকুরে ঢের দেখেছে নয়ন কিন্তু এমন বাড়ির মধ্যে ডোবা কেটে পদ্ম ফোটানো তার কাছে অভিনব।
ওই ডোবা পেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে দরজা ধাক্কানোর আগেই কে একজন মোটামত মাঝবয়সী মহিলা বেরিয়ে এসে বলল, তোমরা পিছনের দরজা দিয়ে এসো। কাকা এদিক ওদিক দেখছে দেখে, ফের বলল, আরে নেমে দ্যাখো না।নেমে ওই পাশ দিয়ে ঘুরে পিছনে যাও। আঙুল দিয়ে দিক নির্দেশ করে দেখালো মহিলা। ময়না আজ একটু সিঁটিয়ে রয়েছে। প্রথমটায় ট্রেনে উঠে খুব আনন্দ পেলেও এতটা দীর্ঘ পথের ক্লান্তিতে সে ঝিমিয়ে পড়েছে। বারে বারে রাস্তায় বসে পড়ছিল চলতে চলতে। কাকা একবার জোরে কানমলা দিছে। তাইতে সুর তুলে কাঁদল বেশ কতক্ষণ। ফের নয়ন চোখ মুছিয়ে ওকে ইশারায় বুঝায় যে এরপর তারা দারুণ খাওয়া দাওয়া করবে দুজন মিলে। ময়না নয়নের জামার কোণাটা মুঠো করে ধরে থাকে। বাবা মরার পর থেকে এমনই গায়ে গায়ে লেগে থাকে বোনটা।
বাড়ির পাশের পথ দিয়ে পিছন পথে গিয়ে তো তিনজনায় থ মেরে গেল গিয়ে। অত বড় বাড়ির পিছন দিকেও একটা বড় উঠানমতো রয়েছে, তার চারধারে গ্রিল দেওয়া। উঠানের বাইরে এক ধার দিয়ে আরো একটা লম্বাটে মতন বাড়ি বড় বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক ধার বরাবর চলে গেছে। অন্য ধারে ছোটো ছোটো তিনটে ঘর তোলা রয়েছে। মধ্যে বাঁধানো পথ। পথের দুধারে ফুল গাছ ভর্তি।
ওরা বুঝতে পারলনা কোথায় যেতে হবে। দাঁড়িয়ে রইল তিনজনায়। কিছুক্ষণ পর কে একজন ডাক দিল। ওই দ্যাখো, তোমরা দাঁড়িয়ে আছো এখানে। ডাকছে তো গো ভিতর বাড়িতে। ওরা তিনজন ঘুরে তাকিয়ে দেখল বড় বাড়ির পিছন দিকের উঠানের গেট থেকে এক মেয়েমানুষ মাথা বাড়িয়ে রয়েছে। গেল সেইদিকে। প্রথমে কাকা, তার পিছু পিছু নয়ন আর ময়না। নয়নের এবার খুব ভয় করতে লাগল। ছোটবেলায় বাবা যেমন জঙ্গলে হারায়ে যাবার গল্প করত, তখন গায়ে যেমন কাঁটা লাগত ঠিক তেমন। যেন সে ময়নাকে নিয়ে কোন গহীন বনে হারাতে এসেছে। এবারে আর রক্ষে নাই।
একটা বড় ঘরের এক কোণায় মাটিতে গিয়ে বসল তারা। একটু দূরে একজন মোটা মতন লোক, তার বাপের বয়সী হবে। তার পাশে একটা খুব ফর্সা সালোয়ার কামিজ পড়া মেয়ে। ওই লোকটার মেয়ে হবে মনে হয়। পরে নয়ন জেনেছে ওকেই মালতিদি বৌদিমণি বলে আর বাকিরা আন্টি।
লোকটা কাকাকে বলল, অসীম পাঠিয়েছে তোদের, বলেছে কাজ টাকাপয়সা সবকিছু ? কাকা ঘাড় নেড়ে বলল হ্যাঁ, বাবু। নয়ন আর ময়নার দিকে তাকাল এবারে লোকটা। তোর নিজের ভাইপো ভাগ্নি নাকি রে? কাকা ফের বলে, হ্যাঁ বাবু। বাবু ওদের দুজনকে মন দিয়ে লক্ষ্য করছিলেন। তারপর বললেন, দেখে বোঝা যায়না তো। মুখের ছিরি ছাদ তো একদম আলাদা। শেষের কথাটা বলে লোকটা পাশের মহিলাটির দিকে তাকাল। মহিলাটির মুখে সামান্য হাসি লেগে ছিল। তিনি বললেন নাম কী রে তোদের। বেশ মিষ্টি তো মুখগুলো। নয়ন চুপ করে আছে দেখে কাকা নিজেই বলল, অর নাম নয়ন আর ওই পাশে ওর বুন অর নাম ময়না। মহিলাটি বলল আয়, আমার সঙ্গে আয় তোরা দুজন। নয়ন কাকার দিকে তাকাল। কাকা বলল, যা যা দিদি ডাকতেছে শিগ্রি যা। নয়ন ময়নার হাত ধরে ওকে ওঠায়, পায়ে পায়ে এগোয় মেয়েটির দিকে। মেয়েটি ঘুরে বলে একমিনিট ওরা এ বাড়িতে বাঙাল ভাষায় কথা বলবে নাকি? বলে সোফার লোকটার দিকে চাইল। কাকা তাড়াতাড়ি বলে উঠল, –বলবে না বলবে না দিমণি, অভ্যেস হয়ে যাবে দুদিনে। বাচ্চা মানুষ তো। মেয়েটি কাকার দিকে একবার তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে ফের নয়নকে বলল, আয় তোরা আমার সঙ্গে।
ময়না কোনো জ্বালাতন করে নি এখানে এসে থেকে। চুপ মেরে গেছে। নয়নের ফের গা টা কেমন করতে থাকে যেন। গলায় ডেলার মতো কি যেন আটকে আছে। শরীরটা কেমন গুলিয়ে উঠছে। তবু সে জানে তাকে যেতেই হবে।

*

সেদিন ভোর রাত থেকে গোঙাচ্ছিল ময়না। সকাল হতেই গলা ছেড়ে কাঁদতে শুরু করল। থেকে থেকে পেট চেপে ধরছে। পেটে ব্যথা করছে ওর নির্ঘাত। – বুনরে এদিক চা, দ্যাখ দিকি পাখি ডাকে কিনা আমারে। ময়না থামে না।– ও বুন, ও ময়না হাগা পাইছে তর? চল যাই আমরা পায়খানা যাই চল। ময়না নয়নের হাত ছাড়িয়ে নেয়। একটাও কথা শোনে না। অন্যদিন এমন করে না সে। মাঝেমধ্যে জেদ করলে মালতিদি ওকে নিয়ে বাগানে ঘুরে আসে। ভোলাদা সাইকেলে বসিয়ে বাজার করে নিয়ে আসে। ময়না এখানে সবার খুব প্রিয়। এই বাড়িতে কাজের লোক বাদ দিলে মোট আট জন লোক থাকে। বড়দাদু, ছোটদাদু, বড়ঠাকুমা, বড়বাবু, মেজবাবু আন্টি অর্থাৎ বড়বাবুর বউ যাকে আন্টি ডাকার নির্দেশ আছে সে আর তার দুই ছেলে। ওদের বড়দা আর ছোড়দা বলে ডাকে নয়ন। মাত্র ছ’মাস হল নয়ন এসেছে এ বাড়িতে কিন্তু সকলকে চিনে গেছে। ময়না কাঁদছিল কিন্তু নয়নকে তখন দোতলা থেকে জামা কাপড় নিয়ে বাইর বাড়িতে রেখে আসতে হবে, ধোয়া কাচা করতে হবে সেসব। ছাদের ঘরে পাখিদের খাবার দিতে যেতে হবে, চিতাকে খাবার দিতে হবে। আরো কত কাজ। চিতা এবাড়ির পোষ্য কুকুর। সর্বমোট তিনটে কুকুর এদের, আর চার পাঁচটা পাখি। চন্দনা আছে, টিয়া আছে অন্যগুলোর নাম জানেনা নয়ন। তবে পাখিগুলো ওর নাম জানে, চেনে ওকে। ময়নাকেও চিনে গেছে ওরা। নাম ধরে ডাকে। নয়ন, এই নয়ন নয়ন– ময়নাটা ডাকে। ময়না যখন তখন ছাদের ঘরে উঠে খেলা করে। একদিন আরেকটু হলেই খাঁচা খুলে পাখি ছাদে উড়িয়ে দিত। ওরা পালানোর নয় কিন্তু তেমন উড়তে তো পারবে না, অন্য পাখি এসে ঠুকরে দিতে পারে। তাছাড়া কুকুরগুলো আছে। মালতিদি খুব বকেছিল সেদিন নয়নকে। কিন্তু আজ ময়না এমন করছে কেন। মালতিদিকেও ধারে কাছে দেখছে না নয়ন। এদিকে বড় বাড়ি থেকে বারবার ডাক আসছে। নয়ন দরজা টা ভিজিয়ে দিয়ে বেরোতে দেখে গীতামাসি আসছে। গীতামাসি এ বাড়ির ঘর মোছার লোক। সকালে আসে। পুরো তিনতলা বাড়ি মুছে বেরিয়ে যায়। গীতাদির কাজ হলে পর তবে বড়বাবু ঠাকুরঘরে ঢুকবে। এ রোজকার নিয়ম। – গীতামাসি একটু ময়নারে দ্যাখো না, খালি কাঁদতেছে বলেই নয়ন কাজ সারতে দৌড় লাগায়।
সেদিন ওপরতলার কাজ সেরে ময়নার খাবার নিয়ে ঘরে ফিরে দেখে ময়না কতগুলো ভাঙা তুবড়ানো বাসন কোসন নিয়ে খেলছে। বাগান থেকে ঘাস ছিড়ে এনে শাক বানিয়ে রান্না করছে। বাসনগুলো নির্ঘাত গীতামাসির জোগাড়। নয়ন বোনকে খাওয়াতে বসে।
কিন্তু সেই যে শুরু হল, আবার কয়েকদিন পরে ময়না জ্বালাতন শুরু করল। নয়ন মালতিদিকে বলল। মালতিদি আন্টিকে বলে কী একটা ওষুধ এনে দিল, ময়না খানিক কান্না বন্ধ করল। কিন্তু কেমন যেন হয়ে যাচ্চিল মেয়েটা। যে মেয়ে সারাসময় খাইখাই করে, সে ইদানিং খায়ই না ঠিক করে, রাতের বেলা নয়নকে জড়িয়ে ধরে এমন শোয় যেন ভুতে নিতে এসেছে ওরে। নয়ন বলে, ছাড় বোন ঘুমোতে পারিনা যে এমন চাপলে। ময়না আঁ, আঁ শব্দ করে আরো চেপে ধরে নয়নকে। নয়ন বোনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ঘুম পারায়। মাঝরাতে ঘুম গাঢ় হলে, হালকা করে ওকে ধরে ঘুরিয়ে শুইয়ে দেয় নয়ন। তারপর ঘুমাতে পারে। গীতাদি বলে, ওকে ভুতে ধরেছে। ঝাড়িয়ে নিয়ে আয় নয়ন। মোড়ের মসজিদে যা আজ শুক্রবার আছে, ওরা ঝাড়িয়ে দিলে রোগ ব্যাধি সব সারবে। নয়ন যায়। ময়না দাদার হাত ধরে চলতে চলতে মাঝরাস্তায় গিয়ে বসে পড়ে। সে হেঁটে যাবে না। ও ময়না ওঠ, এই তো আইস্যা পড়ছে, আর এট্টুখান চললেই আইস্যা পড়বে। চল, ওঠ। ময়না উঠবে না। নয়নের জামা টেনে তাকে বসিয়ে দেয়। মিচকে মিচকে হাসে। নয়ন বোঝে মতলব। ময়না তার কাঁধে চাপতে চায়।
নয়নের হাতে পা রেখে ময়না তার ঘাড়ে ওঠে। বোনকে কাঁধে নিয়ে একরত্তি দাদা দৌড় মারে মসজিদে।
সেদিন ঘটনার বাড়াবাড়ি হয়ে পড়ল। দুপুরবেলা ভাত খাওয়ার পর তেমন কাজ ছিল না। শরীলটাও জুতের লাগছিল না। ঘুমিয়ে পড়েছিল নয়ন। ময়না পাশে বসে খেলছিল আর মাঝে মাঝে এসে নয়নকে থাবরে যাচ্ছিল, যেমন করে সে ময়নাকে ঘুম পারায়। ঘুম ভাঙার পর কোথা থেকে একটা গোঙানোর শব্দ কানে এলো। পাশে ময়না নেই দেখে নয়নের বুকটা কেমন ছ্যাঁৎ করে উঠল। চোখ ডলতে ডলতে বেরিয়ে আসতেই দেখে ময়না সিঁড়িতে থেবরে বসে কেমন একটা করছে যেন। দৌড়ে বোনের কাছে গিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল নয়ন। কেমন একটা গোঁ গোঁ শব্দ হচ্ছে ওর মুখ থেকে। – ময়না ও ময়না কী হল রে তোর। ও মালতিদি, গলা ছেড়ে ডাক দেয় নয়ন মালতিদিকে। মালতিদি এলে দুজনে মিলে, ময়নাকে তুলে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
নয়ন কেমন ভেবলে যায়। ময়নার পা দিয়ে রক্ত গড়ায় ক্যান? –ও মালতিদি। মালতিদি মুখে কাপড়চাপা দিয়ে ডুকরে ওঠে, –ঠাকুর গো।
তুই এইখানে থাক নয়ন, বৌদিমনিরে ডাকি। মালতিদি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়।
নয়ন হাতে জল নিয়ে ময়নার মুখে চোখে ছিটে দেয়। গামছা ভিজিয়ে পা দিয়ে রক্ত মুছাতে গিয়ে দ্যাখে রক্তের ধারা নামতেসে আর নামতেসে। কুলকুল করে সরু নদীর লাল জল বইয়ে যায়। বাপে গল্প বলত সেই যে দূর গায়ে যেহানে উচা পাহাড় আসে, নদী আসে সেই গায়ে এক সুন্দরী রাজকন্যায় থাকত এক রাক্ষসের লগে। রাকখস্ রাজার ঘর থেইক্যা উঠায়ে আনসিল ফুলের মতো মাইয়ারে। –ময়না, বুন আমার, চক্ষু খোলস না ক্যানে বুন। কাঁধে চরে চ মসজিদে নিয়া যাই তরে। ও ময়না… ময়নার গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে।
মালতিদি আন্টিকে নিয়ে এসেছে। এই সর সর দেখি, কোথায়? কী হয়েছে? আন্টি দেখে শুনে মালতিকে নির্দেশ ময়নাকে ভিতরঘরে নিয়ে যেতে। নয়ন পিছন পিছন যেতে, আন্টি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে, –একদম ঢুকবি না ঘরে। বোনকে সামলে রাখতে পারিস না এখন কী দেখতে আসছিস, সর। নয়ন কেঁদে ফ্যালে, ও মালতিদি, বোনের কাছে যাইতে দ্যায় না ক্যান?– এই মালতি, ওকে সরাও তো। যতসব বাংলাদেশিগুলো চলে এসেছে, প্রথমেই আমি বলেছিলাম, ভাই বোন একসঙ্গে দুটোর দায়িত্ব নিতে যেও না তা আবার একজন রিটারডেড চাইল্ড। যত্তসব ঝামেলা।
–মালতি নয়নকে বোঝায়। শোন ছোড়দাভাই ডাক্তারি পড়ে তো, ও ঠিক করে দেবে ময়নাকে। তুই এখন ঘরে গিয়ে বস। রোগীর কাছে ছোটদের থাকতে নেই। কাল সকালেই দেখবি ও ঠিক হয়ে গিয়ে দৌড়াচ্ছে।
নয়ন যায় না। ওইখানেই মাটিতে বসে থাকে এক কোণায়। সারা রাত ওখানেই বসে থাকে। মালতিদি খেতে ডাকে, সে খায়না। কাল সকালে ময়না সারলে, দুজনে মিলে একসঙ্গে খাবে নাহয় তখন।
সকাল হয়। চারদিক ফর্সা হয়ে। পাখির ডাকে, কাগজওয়ালা, দুধওয়ালা একে একে আসে। ময়না ঠিক হয় কই। সকালে পা টিপে টিপে ময়নার ঘরে ঢুকে গায়ে হাত দেয়, নয়ন। ওভাবেই পড়ে আছে সে। জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে গা। ময়না, বুন– নয়ন ডাকে। ময়না একটু চোখদুটো মেলে যেন, তাকায়, একটা হাত বাড়িয়ে নয়নের হাতের আঙুলদুটো মুঠো করে ধরে। ফের চোখ বোজে।
এভাবে কয়েকদিন যায়। ময়না শরীল সারে না। মাঝে মাঝে নয়ন যায়, কপালে হাত বুলায়। ময়না অচেতনভাবে দাদার হাতটা ছোঁয়, হাতড়ে মুখটা ধরে। বিছানা ছেড়ে উঠতে চেষ্টা করে। পারেনা। ছোড়দাবাবুর ডাক্তারবন্ধু আসে, দেখে যায়। কিসব ওষুধ দেয়, মালতিদি খাওয়ায়। দশ বারোদিন পর ময়না একদিন ভোররাতে সেই দূর গায়ের রাকখসের বাড়ি থেকে ডানা মেলে উড়ে যায়। নয়ন দেখে ডানাওলা রাজকন্যার দু পা বেয়ে সরু নদীর রক্ত জল হয়ে বইছে আর বইছে।

*

একটি পরিত্যক্ত কারখানার জঙ্গলাকীর্ণ এলাকায় ওরা সমবেত হয়েছে। ওদের প্রত্যেকের নাম নয়ন অথবা ময়না। একদিন ওরা প্রত্যেক মানুষকে নিজের আত্মীয় বলে ভাবত। এখন ওরা জানে এই রাষ্ট্র ওদের উচ্ছেদ করতে চায়। ওদের শ্রেণীকে অবলুপ্ত করতে চায়। তাই শোষণ আর বঞ্চনার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে নজির গড়তে চায় স্বৈরাচারের।
বহুদিন ধরে রক্তপাত হওয়ার পর ওরা একটা স্বপ্নের গ্রামের নকশা প্রস্তুত করেছে। সেই গ্রাম যেখানে পাহাড় ঘেরা সবুজ জনভূমির মধ্যে দিয়ে সরু নদী বয়ে যায়। সেই স্বপ্নের গ্রাম থেকে সমস্ত রাক্ষসদের উৎখাত করে, ওরা সমস্ত ফুলের মতো শিশুদের জীবন উজ্জ্বল করে তুলবে। তারা সকলে একসঙ্গে ইস্কুলে যাবে, ফিরে আসবে একে অন্যের হাত ধরে।
দলের একজন এগিয়ে এসে নয়নের হাত ধরে। তারপর গলা তুলে বলে, –নয়ন, তুমি কী জানো তুমি কেন এসেছ এখানে?
–জানি, নয়ন গলা তোলে।
–নয়ন তুমি কি অত্যাচারীর রাজত্ব ছাড়খার করতে চাও?
–চাই, আমি অদের শ্যাষ করনের লগে আসছি।
–নয়ন আমরা আজ এখানে সমবেত হয়েছি ওই অত্যাচারী রাজার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তার ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করার জন্য। তুমি কি প্রস্তুত?
–হ, আমি ওদের ঘেন্না করি
–নয়ন, আমরা রাজার ক্ষমতা কেড়ে মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতে চাই শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অর্থ। ধনী, গরীব উঁচু নিচু সবাইকে সমান অধিকার দিতে চাই। তুমি কি শপথ নিতে চাও?
– আমি শপথ নিমু।
নয়ন, আমরা আমাদের কোনো বোনের উপর অত্যাচার হতে দেব না। আমাদের মায়েদের, বোনেদের উপর হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা বিপ্লব ঘোষণা করব। তুমি কী সমবেত বিপ্লবে যোগ দিতে চাও?
–আমি চাই। আমার বুনরে বাঁচাইতে চাই, মায়েরে চাই, বাপরে চাই। আমি সক্কলের বুনরে, মায়েরে বাঁচাইতে চাই।
–নয়ন, তবে গলা মেলাও আমাদের সঙ্গে, বলো বিপ্লবের জয় হোক, গলা তোলো নয়ন। শব্দ দিয়ে ভেঙে দাও ওদের ব্যূহ। বলো নয়ন, বলো ইন কিলাব বলো
–নয়ন সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে ইনকিলাব, ইনকিলাব, ইনকিলাব…
ঠিক তখনই অনেক দূরে পাহাড়ঘেরা গ্রামে ছোট এক নদীর পাশে বসে ময়না তার কচি হাতটা বাড়িয়ে দিচ্ছে নয়নের দিকে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes