সোমা দত্ত -র কবিতাগুচ্ছ

সোমা দত্ত -র কবিতাগুচ্ছ

চঞ্চল ডানা ও কিছুটা স্বপ্ন


আমার দুটি অদৃশ্য ডানা আছে। তাদের ছায়া পড়েনা মাটিতে। আমি উড়ি গোপনে। টিলার রাত্রি থেকে চাঁদের পাহাড়ে। নিশাতুর পাখির ডানার শব্দ পাই, গন্ধ পাই পালকে লেগে থাকা হিংসা, রিরংসা ও সঙ্গমের। পাখিরাও অন্ধকারের চোখে আমাকে দেখে। সে চোখ আশ্চর্য। সে চোখ প্রথম হাওয়ামানুষ দেখেছে। দেখেছে কেমন সাঁতার কেটে, হাওয়া বাতাস ঠেলে, মানুষটা ভাসছে স্বপ্নে বুঁদ হয়ে। সমস্ত ডানাওলা পাখিরা জোড়ায় জোড়ায় অবাক চোখে দেখে, মানুষটি নির্মমভাবে হাওয়া ঠেলে ওপরে উঠছে। সে আর কত ওপরে যাবে? আরো কতদূর একা একা নিজেকে জড়িয়ে ধরে আদর, ভালোবাসা, প্রেম নিয়ে ক্রমশ হালকা হবে? কত হালকা হলে সে চিরদিন ভেসেই বেড়াবে ক্রমাগত মেঘ ছুঁয়ে ছেনে?
আমি কিন্তু জানিনা পাখিরা এসব ভাবে। শুধু এই অদৃশ্য ডানার ভারে একা উড়ে যেতে যেতে ভাবি, হয়তো পাখিরা ভাবছে আমার জন্যে।

তোমার সমস্ত গন্ধ টেনে
যতিচিহ্নে ছড়াব আগরবাতি
তুমি আতর, মৃগনাভী, গন্ধাতুর মত্তহাতি
আমি ভুলে যাই কার বুক, কার পেট, কার জঙ্ঘাজুড়ে শ্রাবণের ধারা
ভাঙি গান, ফেলে দিই যশোমতি
ভুলি নাম, ভুলি পাথরের ফুল
মুঠোভরে গায়ে মাখি অনৃতভাষণ
ফিসফিস করে ওরা বলে
আগুন!আগুন!

আসলে যা ভালোবাসা তার সব মিথ্যে কথা নয়,
প্রবণতা ভেঙে যায় সত্য কথায়
তাই এত কৃত্রিম আলো!
জোর দিয়ে শুধু বলা যায় সংশয় নয়, সন্দেহ
গলিত, অর্ধদগ্ধ, তামাদি ভগ্নকেলাস
এই নাও জল ও আগুন
জ্বালাও
সারিয়ে নাও আমায়

অলীক শরীর
রেখা জুড়ে বক্রপথে বৃত্ত আঁকি
ছোট বড় লোভগুলো
ছিটিয়ে পড়ে এদিক সেদিক
চোখ তুলি সাবধানে–
ধরা পড়েছি কি?
নজরে বিষ আছে
টের পেল তবে?
ছি বলে ঘুরিয়ে নেবে তবে শ্রীমুখ!
ওভাবে বলতে নেই
আড়াল সরাতে নেই
বৃত্ত যে আড়পথে চিনেছে
পটে আঁকা লক্ষ্মীর বুক

তেতলার ছাদ মাশরুম সাদা পালকে পালকে
গাছের মতো শীতের তোষকে বেড়ে ওঠে।
বেড়ে ওঠে আপাত সবুজ শাখা। একটি একা দ্বীপের মতো জেগে উঠেছে বুক।
মাথা রাখো। রাখো ঘুম, রাখো প্রাচীন ঔৎসুক্য,
শীর্ণ চামচ দিয়ে তুলে নাও বিষ।
আঁকো ব্রাউন বিবাদ, শঙ্খচিল, বর্ষীয়ান মই–
ওঠো উপরে আমার ক্রমাগত, নীল বই। এসো বেঁধে নাও স্পাইরালে। আমার কুঞ্চিত কোমরের নীচে দেখো রুপার বিছেটি দোলে অপূর্ব অক্ষরে। চলো সেইসব আজন্ম আদিমে লীন হয়ে ভাসি মোবাইল স্ক্রিনে। ছোটখাটো কটু কথা রোগা হয়ে মরে যাক বিতরণে। আজ শুধু বায়ু আর জল, অথর নিটোল বয়ে যাক হাঁটু বেয়ে তোমার তুমুল নীচে।

গতজন্মের বিবাদ থেকে কুড়িয়েছ মধু। আমাকে মাখাও তার ঘন কায়া, তেতে ওঠা ক্রিস্টাল কণা।
হাতের উল্টোদিকে যেসব রেখা হাঁটে তার থেকে তুলে নাও আয়ু। কিছু কাটাকুটি, উন্মত্ত দরজা বিপরীতে যাক, সদর মসৃণ হোক ভোরবেলা।
এই অসীম শিখাটি পূর্বপ্রেমিক দিয়েছিল উত্তরকালে, তোমাকে দিলাম তার কারসাজি। রাত কবে হয় জীর্ণ জীবনকালে? শুধু আলো ফুঁড়ে আসা অন্ধকার দেখেছি ওই মুখে। তবু এই দান, তবু এই প্রাণ অস্ফুটে লড়ে চলে ভ্রূণের খোঁজেতে। তুমি হাসো, বিদ্রূপে আমি বেড়ে চলি অস্ফুটে,ঋতুর আদেশে।

স্বপ্ন দেখছিলাম আমার হাত ধরে জলের আড়ালে হ্যাঁচকা টান দিলে
মাছের গন্ধ তারপর থেকে বইছি ঘুমজুড়ে
আঁশের মতো জমে গেছে যুবকের প্রেম
তামাটে গায়ের উপরে
ছুলি আর মেচেতার মতো সেইসব দাগ খেলা করে
গা, ঘষে ঘষে যেই রাখি সাবানের উপরে
অমনি সাবান সাপটে ধরে
পিছল এমন, নরম এমন, এমন তরল জলে
শেষপর্যন্ত ক্রীড়া ফেলে দিল জঘন্য নালার ভিতরে
তখনি আবার লাল বিছা, কালো বিছা কামড়ে, হুলের দাপটে ছিঁড়ে ফ্যালে এখান ওখানে
এ যাবৎ ওই ঘুম ভেঙেছে ওখানেই বারেবারে
অথচ তখনো কামড়ে কামড়ে অস্থির ঘুমন্ত স্নান
পীড়া নেয় বিছাদের নামে
চোখে চোখ রাখি ওর ঘুমন্ত শিবিরে
ঘুম পাড়ানোর গানে ওকে বলি
লালকমলের আগে
নীলকমল জাগে


তোমার স্কুলজীবন থেকে দুটি পাতা ধার নেব।
চিঠি লিখব তোমার ছেড়ে যাওয়া প্রেমিকাকে।
ষড়যন্ত্রে ভেঙে দেব তোমার চল্লিশ বছর।
ছিঁড়ে ফেলব তোমার হাড়ের ফর্দ।
অসুখের মত আক্রমণ করব গলে যাওয়ার আগে।
তুমি সুস্থ হবে, আমাকে লাথি মারবে চুমু খাওয়ার পর।
আমার মুখ থেকে টপটপ করে ঝরে পড়বে পায়েস রক্ত।


দূরভাষে বলছি তোমায় চঞ্চল কথা। উপহারে ভরে আছে মুখ–
লালাময় তীব্র সুখাদ্য আমার ঠোঁটের কষে–
ওই দেখো আকাশের কোণে, সূর্যাস্ত ছুঁয়ে বেঁচে আছে তোমার চিবুক
অন্তিম এই সুখতল, নিদ্রানিবেশ, করতলে রেখাচিত্র ধরে পথ চলে।
আমার তীব্রতা বুকে চেপে ধরেছ তুমি
কী পেয়েছ মিথ্যুক!
শুধু এই বালির জীবন, ভাঙা নীড়, অস্থিরতার শীলমোহর
আমি জানি, সব জ্বালাপোড়া বাঁধিয়ে নিয়েছো রক্তপ্রবালে।

১০
অনন্ত দিনের অভ্যাস তোমার দ্রবণে থিতিয়ে পড়ে থাকার। সে বাঁচার কোনো আয়ুষ্কাল নেই, তাগিদ নেই, সাজ নেই–শুধু আলিঙ্গন আছে। কোমল শাঁস– তার সুগন্ধ আছে
দেওয়া নেওয়া কতখানি পআমাদের, কতটুকু শুধুমাত্র তোমার আমি যত জানি, তুমিও জানো তার বেশ কিছু–
তবুও আমার নিপুণ অভিনয়। ঢেকে রাখি বৃষ্টিপাত, ঢেকে রাখি অনাহার, পাত্রের আরশোলা, দেওয়ালের ঝুল–
সে আরাধনা নৃশংস, আদিম। নরমুন্ডের ভিতরে মৃত মাংসপেশী, ঘিলু, শীতার্ত শিরা উপশিরা, করালী মুঠিতে সম্মিলিত হাসি–
সে হাসি সত্যের, সে হাসি শূন্যের, সে হাসি সবুজ দিন–

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (2)
  • comment-avatar
    মৌলিক 2 years

    খুব ভালোলাগা কিছু আবেশ সৃষ্টি করে গেলেন কবি। জীবনের দশ দিক ছেনে আনা পংক্তিমালা।

  • comment-avatar
    Rajendra 2 years

    কিছু কিছু কবিতা যেনো ছুঁয়ে নিলো শরীর
    আত্ম প্রবঞ্চনার মোহ ত্যাগ করে খোলস ত্যাগ করে উন্মোচন _ এইসব লেখার লাইন ধরে মুক্তির মাতাল আনন্দ বয়ে আনে।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes