সুদীপ বসুর গল্প ‘ মেক্সিকান চিকেন পাস্তা ইন হোয়াইট সস্‌’

সুদীপ বসুর গল্প ‘ মেক্সিকান চিকেন পাস্তা ইন হোয়াইট সস্‌’

সেদিন

সেদিন ঠিক সেই মুহূর্তেই একটা কালো গাড়ি এসে থামল।
ভয়ে চিৎকার করে উঠল শাহিন।
রাস্তার লোকজন হকচকিয়ে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে।
‘একী? এতে এত ভয়ের কী আছে?’ আমিও অবাক হ’য়ে জিজ্ঞেস করলাম।
‘হবে না ভয়? আশ্চর্য। কেমন আচমকা গা ঘেঁষে এসে দাঁড়াল!’
‘হ্যাঁ। কিন্তু তা বলে এতটা …’
‘রিঅ্যাক্ট করব কেন? এই তো? জানি, সবাই এটাই বলবে। ন্যাচারালি।’
কালো গাড়ির ভেতরটা অন্ধকার। সেই অন্ধকারের ভেতর কেউ নেই। ড্রাইভারটি… অল্পবয়সী। গাড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক কী একটা ঠিকানার খোঁজ করে আবার গাড়িতে গিয়ে বসল। গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে।
‘কার খোঁজে এসেছে কে জানে!’ শাহিন ফিসফিস করে বলল।
এতক্ষণে আমরা একটা মাঝারি মাপের রেস্তোরাঁর আলো অন্ধকার কোণার দিককার টেবিলে এসে বসেছি। একটু পরে রেস্তোরাঁর আলোগুলো একে একে জ্বলে উঠবে। দেয়ালের ঘাঁতঘোঁৎ থেকে ঝমঝম করে দুঃখের হিন্দি গান বেজে উঠবে এবার। সামনের ডিসেম্বরে আমাদের বিয়ে। বিয়ের কথা ভাবলেই আমার সারা গায়ে কাঁটা দেয়। বিয়ের পর আমরা নির্জন সাংলা ভ্যালিতে বেড়াতে যাবো। গভীর শীতে সাংলা খুবই রহস্যময়। ছায়াচ্ছন্ন কাউন্টারে যে বুড়ো লোকটি এইমাত্র এসে বসল তার হলুদ ডোরাকাটা গেঞ্জির ওপর ডিপ ব্লু দিয়ে লেখা ‘আই অ্যাম আন্ডার কনস্ট্রাকশন’।
‘আমরা আজ একটু বেশি আর্লি এসে পড়েছি।তাই না?’ আমি বললাম।
শাহিন বলল ‘দ্যাখো দ্যাখো …’
কালো গাড়িটা এবার রেস্তোরাঁর একেবারে দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে।

আর একদিন

আর একদিন শাহিন বলল ‘আমার আজ কথা বলার ইচ্ছেটাই নেই।’
‘কেন?’
‘কেন জানি না’
‘শরীর টরীর …?’
‘না ঠিকঠাকই তো আছে।’
‘তবে?’
‘ভয় করছে।’
‘কীসের?’
‘তা জানলে তো আর ভয়টাই করত না।’
আমি মাথা নেড়ে সায় জানালাম।
‘খুব হালকা লাগছে।’
‘হালকা?’
‘হ্যাঁ। পালকের মতো। মনে হচ্ছে আমি আজ কোত্থাও নেই।’
‘শাহিন!’
‘আমি নেই কিন্তু আকাশ তছনছ করে চাঁদ উঠেছে আবার। খুব ধুলো উড়ছে চারদিকে, জানো?’
‘জানি।’
‘অরিন্দম।’
‘কী?’
‘আমি না থাকলে আর কেউ কখনো এই এত নিয়ন আলোর শহরে ভুলেও আমার কথা তুলবে? তুলবে না।’
‘আমি তো তুলব।’
‘তুমি? তুমি তো হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে অরি।’
কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে শাহিন বলল
‘রাত আটটা দশের শেষ ফেরি আমাকে ছাড়াই অন্ধকারে ভেসে যাবে। তাই না?’
‘হুঁ।’
‘একটা করুণ জলের রেখা গড়িয়ে যাবে কমলালেবু বাগানের দিকে!’
‘হ্যাঁ যাবে।’
‘একে কি ভালোবাসা বলবে তুমি?’
‘না।’
‘বলবে বিবাহ?’
‘না।’
এটা একটা কবিতার লাইন।
আমাদের এক অকালমৃত বন্ধু লিখেছিল।
আমি এবার খেলাটা ধরে ফেলেছি। এখন কথার পিঠে কথা চলতেই থাকবে। চলতেই থাকবে। আমি জানি।
কিন্তু চলল না।
শাহিনের মুখ হঠাৎ কালো হয়ে গেল।
‘কালো গাড়িটাও আর কখনও হঠাৎ হঠাৎ এসে দাঁড়াবে না ’, বলল।
তারপর থম মেরে বসে রইল কতক্ষণ।

সেদিনই ঘটনাটা প্রথম শুনলাম। তেমন কিছুই না। মামুলি ব্যাপার। শাহিন তখন পনেরো কি ষোলো। প্রাইভেট কোচিং সেরে বাড়ি ফিরছিল। ক্লাস ভেঙে গিয়েছিল একটু আগেই। সেদিন কী একটা পলিটিক্যাল গোলমালে অঞ্চলটা শুনশান ছিল। তীব্র গরমের খাঁ খাঁ মাঝদুপুর। বাসস্ট্যান্ডে সবেমাত্র এসে দাঁড়িয়েছে শাহিন।

তখনই ঘটনাটা ঘটে। হঠাৎ কোত্থেকে একটা কালো গাড়ি এসে তীব্র ব্রেক কষে থেমে যায় ওর সামনে। গাড়িটা কালো কাচে ঘেরা। কালো কাচ আধাআধি নেমে আসে। জানলা দিয়ে একটা রোমশ পুরুষালি হাত বেরিয়ে আসে। কব্জিতে গোল্ডেন রিস্টব্যান্ড। তর্জনীতে চোখধাঁধানো আংটি। শাহিন চোখ ফিরিয়ে নেয়। ফেরাবার আগে এক ঝলক দেখতে পায় গাড়ির পিছনের সিটে একজন অত্যন্ত সুদর্শন পুরুষ বসে আছে। চোখে ঘোলাটে সানগ্লাস। ‘উঠে এসো শাহিন’, পুরুষটি বলে ওঠে।
শাহিনের গা শির শির করে ওঠে।
সে জোর করে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।
‘যাবে না? ও শাহিন আমায় ভুলে গেলে? আমি রবার্তো। রবার্তো কার্লোস।’
শাহিনের হঠাৎ মনে হল পুরুষটি অচেনা কিন্তু ওই কন্ঠস্বর সে যেন কতকাল ধরে শুনে আসছে।
লোকটা পীড়াপিড়ি করতে থাকে,
‘… ও শাহিন … শাহিন ইলিয়াস … মনে পড়ে না? কথা দিয়েছিলে যে? কিগো?’
কালো গাড়ির পিছনের দরজা অল্প খুলে যায়। শাহিন চিৎকার করে ওঠে।

এই এত বছর পর রেস্তোরাঁর ছমছমে ছায়া অন্ধকারে বসে করতলের ওপর চিবুক রেখে শাহিন বলে ‘অসভ্য জানোয়ার একটা …’। বলে, কিন্তু তার দুচোখ অবিরল অশ্রুতে ভেসে যায়।

শেষদিন

শেষদিন রেস্তোরাঁর আলো অন্ধকারে কোণের টেবিলে শাহিনকে খুব আনমনা দেখাচ্ছিল। বেশ ক’দিন ধরেই কেমন অন্যরকম লাগছে ওকে। কালো গাড়িটা নাকি ইদানিং খুব জ্বালাচ্ছে। বড়রাস্তার দিকে মুখ করে বসেছিল ও। আমি উল্টোদিকে ওর মুখোমুখি। রেস্তোরাঁর আলোগুলো জ্বলে উঠেছে এইমাত্র। বাইরে বিকেলের মরে ছাই হয়ে যাওয়া আলো।
আমরা কথা বলছিলাম।
ওয়েটার এসে ঘুরে গেল এক্ষুণি। হঠাৎ উশখুশ উশখুশ করতে শুরু করল শাহিন। দেখলাম ওর চোখদুটো কেমন বিস্ফারিত হয়ে গেছে। দুটো গাল লাল। চেয়ার ছেড়ে অর্ধেক উঠে দাঁড়িয়েছে ও।
হঠাৎ আমার হাতদুটো চেপে ধরল।
‘অরিন্দম, কালো গাড়ি।’
ঘুরে দেখলাম সেই কালো গাড়িটা রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অল্পবয়সী ড্রাইভার রিসেপশনে এসে কীসের একটা খোঁজখবর করছে।
শাহিন ততক্ষণে উঠে পড়েছে।
‘কোথায় যাচ্ছো?’
‘যেখানে যাবার কথা ছিল। আমার সব মনে পড়ে গেছে।’
‘মানে?’
চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে শাহিনের ফর্সা করুণ মুখ।
শাহিন বেরিয়ে যাচ্ছে।
‘পাগল হয়ে গেছ শাহিন? ’
‘না পাগল নয়। সেই কবে থেকে একটা ধার করা জীবন আমি বয়ে চলেছি অরিন্দম। এবার আমায় শোধ দিতে দাও।’
শাহিন এবার কালো গাড়িটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গাড়িটা কালো কাচ দিয়ে ঘেরা। কালো কাচ আধাআধি নেমে এল। জানালা দিয়ে একটা রোমশ পুরুষালি হাত বেরিয়ে এল। কব্জিতে গোল্ডেন রিস্টব্যান্ড। তর্জনীতে দামী ঝলমলে আংটি।
আমি চিৎকার করে উঠলাম।
শাহিন একমুহূর্ত থমকে দাঁড়াল।
‘আমাকে যেতে দাও প্লিজ। কথা দেওয়া ছিল।’
‘কিন্তু …’
‘কোনো কিন্তু নয়।’
‘তাহলে সামনের ডিসেম্বরে?’
‘হবে না। কিছুতেই আর কিছু হবে না।’
আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম সবাই যে যার মতো বসে আছে, গল্প করছে, কারোরই কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই, যেন কিছুই ঘটছে না।
কালো গাড়ির পিছনের দরজা অল্প খুলে গেল। ব্যাকসীটে একজন অত্যন্ত সুদর্শন পুরুষ বসে আছে। চোখে ঘোলাটে সানগ্লাস।
‘রবার্তো, রবার্তো কার্লোস, আমি এসে গেছি। ’
শাহিন গাড়ির দিকে দ্রুত এগিয়ে গেল। শাহিন গাড়িতে উঠে যাচ্ছে। আমি দৌড়ে বড় রাস্তা অবধি গেলাম।
গাড়ির কালো কাচ উঠে গেল। গাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে গেল। গাড়ির হেডলাইট জ্বলে উঠল। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিল। গাড়ি হর্ন দিল। কালো গাড়ি বেরিয়ে গেল।
আমার পৃথিবী দুলছে। আমার মাথা কাজ করছে না। আমি এখন কী করব?
রেস্তোরাঁর ছেড়ে যাওয়া টেবিলে এসে বসলাম। কেউই কিছু দেখেনি বলে মনে হল। কেউই কিছু শোনে নি বলে মনে হল।
ওয়েটার ছেলেটি এসে টেবিলের ওপর কী একটা রেখে চলে যাচ্ছিল।
‘ঠান্ডা হয়ে যাবে স্যার। খেয়ে নিন।’
ওয়েটারের নাম বিজন।
‘এটা কী হল বিজন?’ আমি চিৎকার করে উঠলাম।
হাসল। উদাসীন। হাড় হিম হাসি।
‘আমি এখন কী করব?’
‘কিচ্ছু না স্যার। এখন আপনি খেয়ে নেবেন। মেক্সিকান চিকেন পাস্তা ইন হোয়াইট সস্‌।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes