
মৌ সেন-এর কবিতাগুচ্ছ
চাঁদের সাম্পান
ভালবাসাহীন যে উঠোনে
গড়াগড়ি খেয়েছে প্রপিতামহী,
সেখানেই জন্মেছে পিতামহ।
সেখানেই জন্মেছে পিতা।
জঠরের ভাষা নয়,
চেনানো হয়েছে শুধুমাত্র বীজ
লালাপোষ থেকে চন্দনকাঠে,
তাই জরায়ুর কাছে সে চির ঋণী ।
ঋণ চেনে যক্ষের মত
উল্টোনো নৌকাটিও ।
অতৃপ্ত আত্মার মত
মৃত্যুহীন বসে থাকে।
রক্তবীজের মত প্রতি মাসে
অনুচ্চারিত দাবী নিয়ে ভাসে।
আশা তবু মরেও মরে না কিছুতেই।
প্রতিটা সফল জন্ম ব্যর্থ হয় পাছে
তাই সেই বাগান জুড়ে ফুটে ওঠে
একটা দুটো ফুল নৌকা সহ।
ব্যর্থ জন্মের শেষে একদিন ঠিক
ঋন শোধ হবে বলে।
স্খলন
ফুল দেব ভেবে গিয়ে দেখি
মশারি টাঙিয়ে দেওয়া আশু কর্তব্য।
এবং চাহিদা মত
বারে বারে গর্ভ ধারণ,
শিবরাত্রির সলতে জ্বলবে বলে।
আমাদের কোনদিন মাঠে শুয়ে তারা খসা দেখা হল না।
ধর্ষণে পা রেখে তাই –
আজ আর ‘প্রেমিক’ লিখিনা।
বীর্য শব্দটাও আলোর বদলে
কখন কালো নদী হয়ে গেছে-
পথ চলতে চলতে।
লোহিত সাগরে
জ্বালা পোড়া শরীর আর চারিদিকে গুঁড়ো শূন্যতা।
ভুলে গেছি সেই কবে পাশাপাশি কবিতা পড়েছি।
স্বামীটিও কালে কালে প্রভু হয়ে উঠেছেন যেন।
আর আমার পাতে কবে কমে গেছে মাছের সাইজ।
আমি যদি আজে কালে পঞ্চাশ ছোঁব ছোঁব করি
শূক্লপক্ষ কাটে যদি ভেসে ভেসে লোহিত সাগরে
সংসার সেও যদি খুব ভারী, ঘাড়ে চেপে বসে,
আমি যদি সন্ধ্যেবেলা সেই চাপে দমবন্ধ মরি?
ভেবে ভেবে এইসব সাতপাঁচ, ভাত টিপে দেখি।
খেতে দিই, নিজে খাই, টিভি দেখি নিয়ম মাফিক।
ফিরে দেখি গলা টিপে মেরেছি সে কোন সম্ভাবনা,
চলে এসে ফিরে দেখা, এ স্বভাব এখনো গেল না।
স্রবন্তী
দরজার ও পাশে হাঁ করে দাঁড়িয়ে ছিলে।
মনে তখনো ক্ষীণ আশা,
এই হয়তো খুট করে শব্দ হবে,
খুলে যাবে আগল।
নদী বইবে,
ভেসে যাবে ভেতর ঘর থেকে-
বারান্দা পার হয়ে থৈ থৈ উঠোন।
কিন্তু তা হবে না।
সব কিছুর মত
একদিন অপেক্ষা শেষ হলে,
তুমি ঠিক ফিরে যাবে।
কড়া নাড়া বন্ধ হবে।
তখনো খুলবে না আগল।
আর তুমি ভাববে,
সব কিছু ঠিক ছিল,
শুধু দরজা খোলেনি,
ইচ্ছে ছিলনা বলেই।
ওদিকে ব্রীড়াবনত লালচে আাকাশ
মিত্তির বাড়ির বৌ দেখবে,
সরকার বাড়ির খুড়ো দেখবে,
এমনকি গাঁয়ের গজা বামুন ও দেখবে।
তুমি তো হে ফল্গুই চেনোনি এখনো!

