
ফুয়াদ হাসানের কবিতা
আম্মা
My mother died today. Or maybe yesterday, I don’t know. I received a telegram from the old people’s home: “Mother deceased. Funeral tomorrow. Very sincerely yours.” That doesn’t mean anything. It might have been yesterday.
[The stranger / Albert Camus ]
০১.
পাতা খোলা সাদা টেবলেট
রাতজাগা ছেড়া জলপট্টি
হারিকেলে মিনমিনে আলো
এঁটো ভাতে বমি চমকানো
বাইরের বালতিতে পানি
তার পাশে বদলানো জামা
মশারির ঘরে বসে থাকা
হাতে মাথা – ঘুম আর ভাঙা
ঘাম দিয়ে ভোর হয় ঘুমে
জ্বর হলে তাকে মনে পড়ে
০২.
মা আমার প্রথম প্রেমিকা
তাই জগতের সব প্রেমিকার মাঝে
ভুল করে তার ঘ্রাণটুকু খুঁজি
মা কি তবে শেষ প্রেমিকাও
দীর্ঘ বিরহপালা অবসান হলে
দূর থেকে দূরতম কিছু বুঝি
০৩.
আমরা দুঃখে পড়লে মায়ের কাছে যাই
বিপদে থাকলে
কষ্টে ডুবলে
তার মসলামাখা শাড়িতে চেহারা লুকাই
তার ঘামভেজা নোনাতা গলায় ক্ষতমুখ ঢাকি
মানসম্মান হারাইলে
টাকা না থাকলে
ধরা খাইলে
সব শেষ হইলে
শূন্য হয়ে আমরা তার কাছে ফিরি
কেউ দিনভর গালি দিলে
কারও মাইর খাইলে
বৌ ভাগলে
দোস্ত ঠকালে
ছ্যাকা খাইয়া তার কাছে যাই
মারপিট শেষে
সব ভেঙে চুরে
যত আকাম আছে
এমনকি খুন কইরাও
মাকে জড়াইয়া ধইরা কান্দি
‘আমি কিন্তু কিচ্ছু করি নাই, করি নাই…’
সে বিশ্বাস করে
০৪.
ঘরে থাকলে বোঝা যায় না
রয়েছ প্রতি বিন্দুতেও
মা না থাকলে ধরা পড়বে
০৫.
মা সম্পর্কে একটিও খারাপ কবিতা নেই।
অন্তত আমার অল্পস্বল্প পড়ার তালিকায়, এর মধ্যে কিছু পড়তে গেলে মন কেমন হুহু করে ওঠে। তাঁকে আবৃত্তি করে শোনাই।
মাকে নিয়ে কোন বাজে সিনেমা দেখিনি।
কোনটি দেখতে গিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে গেছি, উত্তেজনায়, ভেজা চোখ মুছতে-মুছতে বারবার দেখেছি বিশেষ দৃশ্যরা। সচরাচর কোন ছবি একবারের বেশি দেখা হয় না, আর এসব করতে গিয়ে মায়ের প্রেশারের ওষুধটাই আনা হয় নি।
মা বিষয়ক প্রতিটি গানই অসাধারণ।
শ্রুতিমধুর নয় যেসব সেগুলোও কেমন বিমর্ষ করে তোলে। বারবার টেনে-টেনে শুনি, শোনাটুকুতে বিঘ্ন ঘটায় পাশের রুমে একা শুয়ে থাকা মায়ের কাশির দমক।
০৬.
মায়ের সেগুন কাঠের জায়নামাজ
থেকে ভেসে ওঠে কোন নামাজির ঘ্রাণ
পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে মনে মনে ভাবি
সিজদারত পড়েছে কত অযুজল
না-মোছা কবজি বেয়ে পুণ্যার্থী ঘাম
হয়তো মিশেছে তাতে কিছু অশ্রুও
দাঁড়ানোর পাল্লাতে বার্নিশ ম্লান
হালকা পায়ের ছাপ তার চেয়ে, কার!
বসে কতবার পড়ে গেছে তাশাহুদ
মুনাজাতে ছোটখাট দুহাত রেহাল
আধো ভোরের মায়াবী সুর ডেকেছিল
এইখানে বসে কত, ডাকবে না আর
০৭.
মাকে কখনও কোন চিঠি লিখিনি
সেও লেখেনি কোনদিন
প্রয়োজনই পড়েনি
ইদানিং নিয়ম করে লিখছি,
অনেকটা একই ভাষায়–
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানী সাগীরা।
০৮.
ধারণা ছিল মা আমাকেই বেশি ভালোবাসে
ছোটভাই মনে করে শুধু তাকে
একমাত্র বোনটির বিশ্বাস
তার মত কাওকে দেখতে পারে না মা
আমার ছেলেটি বলে সেই সবচেয়ে আদরের
আবার মেয়েটি মনে করে
তার থেকে প্রিয় কেউ হতেই পারে না…
এসবের মীমাংসা চাইলে মা নিশ্চুপ –
স্মিত
০৯.
স্টিলের সুটকেসে
সারি-সারি শাড়ি
হালকা হতে বসা
পুরাতন দাগ
রিপুর মতো
লেপ্টে থাকা স্মৃতিসুতো
জেঠ মাসের রোদে
বেড়িয়ে আসে
রোয়া ওঠা গল্পবুনন
প্রতিটি আলাদা রঙ
কিছু খুব ব্যক্তিগত
‘এটা তোর মেজেমামা
প্রথমবার আসতে
বিদেশ থেকে এনেছে,
লাল জামদানি তোর ফুফুর বিয়ের,
ওটা তোর বাবা –
কখন যেন…’
মায়ের চোখ অতীতে ঝাপসা
আকাশে একটুকরো মেঘ
বৃষ্টির বদলে
শাড়ির সুতোগুলো
টেনে নিয়ে যাচ্ছে
আকাশের দিকে
১০.
মানুষ সর্বোচ্চ ৪৫ ডেল ব্যথা
সহ্য করতে পারে,
এর বেশি পারে না–
বেহুশ হয়ে যায়।
৫৭ ডেল কষ্ট নিয়েও
মায়ামৃগের মতো ইন্দ্রিয়গুচ্ছ
খাড়া করে থাকে একজন
অশ্রুসিক্ত অদৃশ্য হাসিতে,
শুধু একটি কান্নার প্রত্যাশায়।
সুন্দর!
ধন্যবাদ।
মা চিরসুন্দর এক কাব্যগ্রন্থের নাম। হৃদয় ছুঁয়ে গেলো
প্রিয় গল্পকার,ভালোবাসা।