
পাবলো’র ডায়েরি – বসন্তের শোকাচ্ছন্ন সামর্থ্য
সম্রাট সরকার
সজনের ফুল কুড়োতে এসেছি দক্ষিণের মাঠে। খুব ভোরবেলা। দক্ষিণের মাঠে এখন অনেক দূর অবধি সাইকেল চালানো যায়। কারন কোথাও সেরকম ফসল নেই। সকলের ফুলকপি, পালংশাক শেষ। মাঠজুড়ে এখন পাকা সর্ষে। মাড়াই চলছে অনেক ক্ষেতে। মাড়াই দেখতে খুব ভালো লাগে। অনেকটা জায়গা জুড়ে মাছ ধরার মশারি পেতে রাখে। কেউ মাড়াইয়ের মেশিন আনে। কেউ গরু দিয়ে। কেউ আবার বাঁশের পাটার ওপর শুখনো গাছ আছড়ে আছড়ে সর্ষে বের করে। সর্ষেরদানা এক বেয়াদব ফসল। শুধু অদৃশ্য হতে চায়। ছিটকে চলে যায়! গুছিয়ে না রাখলেই কোথায় কোথায় ভ্যানিশ। শুখনো মাটিতে মিশে যাবে। হামিদচাচা এখন দিনে দশবার সেই সব সর্ষের ওপর দিয়ে হেঁটে যাবে। অর্থাৎ এই কদিন হামিদচাচার পায়ের নীচে সর্ষে। অথচ সে জীবনে কোথাও বেড়াতে যাবে না। খুব বেশি হলে বয়সা বিল আর রেলগেটের বাজার। চাচির বাপের বাড়ি দুবার গেছে। একবার বিয়ে করতে আর একবার চাচির বাবা মারা গেলে তাদের কোনো জমিজমায় ভাগ নেবে না, এই মর্মে লেখায় টিপছাপ দিতে।
এবছরের পটলমাচা সবে তৈরি হচ্ছে হামিদচাচার। আমাদের মাচার ভারও তার। পুরনো শেকড় থেকে নতুন লতা ছুটছে মাটির ওপর দিয়ে। আরেকটু বড় হলেই গোছ করে মাচায় তুলে দেবে। দক্ষিণের মাঠ এখনও কুয়াশার দখলে। যেটুকু সূর্যের আলো এসেছে তা সজনেগাছের মাথায়। ঠিক এই রকম – “শুধু ভোরের কিরণ এসে/ তারে মুকুট পড়ায় হেসে”। আমার সঙ্গে এসেছে অনুষ্কা। ও দৌড়ে আমি সাইকেলে। সজনেগাছগুলো মাঠের একেবারে প্রান্তে যেখানে নয়ানজুলি বাঁক খেয়েছে। নয়ানজুলির ঢালু পাড়ে ফুল পড়ে থাকে। খুব সকালে আসলে টাটকা পাওয়া যায়। জলের কাছে নেমে যাই। জলেও ফুল ভাসছে। জল থেকে ধোঁয়া উঠছে। হালকা ঢেউ। জেলেদাদুকে ডিঙিনৌকোয় দেখতে পাচ্ছি আবছা। খুব ভোরে জাল দেখতে আসে। শিরশিরে হাওয়া দিচ্ছে ওপারের বাঁশঝাড় থেকে। বেনেবৌ ডাকছে। আর একটা বর্ষাপ্রিয় পাখি ডাকছে বাঁশের ঝোপে। ইংরেজিতে প্লেইনটিভ কোক্কু। দু-বার করুণ আর্তনাদ ক’রে শেষে কান্নায় ভেঙে পড়ার মত ডাক। ওই ডাকে বসন্তের ভেতরকার সামর্থ্য শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কোকিল তো! দূরবর্তী পিতা-মাতা। বসন্তের সময় চলে আসে আমাদের গ্রামে। ডিম পাড়ার জন্যে ছাতারের বাসা খুঁজে বেড়ায়। আর কয়েকদিন বাদেই এইসব সজনেগাছের গুঁড়িতে অসংখ্য শুঁয়োপোকা জড়ো হবে। বর্ষাপ্রিয় ওদের খাবে আর ছাতারেদের বোকা বানাবে। সংঘ টলে যাবে শুঁয়োপোকাদের, ছাতারেদের।
অনুষ্কাও কি আমাকে বোকা বানাচ্ছে? কোথাও দেখছি না! অথচ আমার সঙ্গে ছুটতে ছুটতে এলো। জেলেদাদু ডিঙি থেকে জলে ডুবে থাকা জাল তুলে দেখছে আর নামিয়ে রাখছে। এভাবে ক্রমে এগিয়ে আসছে। কখনো মাছ বেঁধে থাকলে ছাড়ানোর জন্য একটু থামছে। ডিঙিটা টলমল করে উঠছে। একহাতে কোনোরকমে হাল জলের মধ্যে পুঁতে সামলাচ্ছে। আর অন্যহাতে মাছ ডিঙির পেটে চালান হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি মাছ আবিষ্কারের আগে মুক্তিবনুর পছন্দ অপেক্ষা করে। ল্যাঠা মুক্তিবনুর খুব পছন্দ। তাই ল্যাঠা বাধলেই আলাদ হাঁড়িতে নিক্ষেপ। এমনিতেও ল্যাঠামাছ জেলেদাদু কখনো বিক্রি করে না। তার আয়ত্তে যত ল্যাঠামাছ সব নাতনির জন্য। খুব কাছে চলে এসেছে দাদু। ডিঙিনৌকো হাজির। নৌকোর একেবারে সামনে দাদু ব’সে। পেছনটা খালি। বাবা আসলে খুব ভালো হত। উঠে পড়তে বলতো। আর অস্ফুটে বলতো সুবীর সরকারের কবিতা-
“নদীর পারের চালতাগাছ তোমরা জোরে জোরে হাওয়া/ ছাড়ো/ আর ডিঙিনৌকো ডিঙিনৌকো তোমরা আমার/ বন্ধু হও/ খোলসের ভিতর ঢুকে পড়ুক বয়স্ক শামুক। খুব/ ঘন ঘন দেখা হোক তোমার সাথে-/ তুমি আমাকে খাদের থেকে টেনে তোল। আর/ ভূমিকম্পের পর/ পৃথিবীতে ফিরে আসুক কুয়াশা ও আগুন।“
পেছনে উঁচু পাড়ের দিকে ফিরে দেখি অনুষ্কা নেই। আমি ফুল কুড়াতে থাকি। ব্যাগ এনেছি সাথে একটা । প্রত্যেকটা ফুল কুয়াশাজল মাখা। যেন কাকভোরে স্নান সেরে মৃত্যুঝাঁপ দিয়েছে তারা। আমি ভাবছি যদি জেলেদাদু ডাকে নৌকোয় উঠে আসার জন্য? আমি কি যাব? নাঃ, যাওয়া ঠিক হবে না। ডানদিকে বাঁক ঘুরে সরকারপাড়া, তারপর বয়সাবিল ঘুরে আবার সাঁকোর কাছাকাছি আসতে আসতে আমার খোঁজ পড়ে যাবে। আর অনুষ্কাতো কানমোলা খাবেই। একা ফিরে আসার জন্য। আমরা দুজেন একসাথে উঠতে পারবো না। ডিঙি ডুবে যাবে। আমি দ্রুত ফুল কুড়াই।
নয়ানজুলির পাড় ধরে এরেকটু এগোলেই সেই বাঁক। বাঁকের ওপারে আড়াল থেকে কুয়াশার অন্তরে সাদা ধোঁয়া জেগে উঠছে। এখন পটলের বিগতলতার দাহ কাজ দক্ষিণের মাঠ জুড়ে। গতবারের সমস্ত লতা কেটে একজায়গায় ডাঁই করে শুকিয়ে অগ্নি সংযোগ করে সবাই। না হলে অত লতাঝোপ কোথায় রাখবে? গোটা বছর ফসল দিয়ে বছর শেষে ছাই হয়ে যাওয়া। নতুন লতাপাতাকে জায়গা করে দিতে হবে না! আর আমি উঠব না উঠব না করে জেলে দাদুর ডিঙিতে উঠেই পড়েছি। জেলেদাদুর পেছনে ফেলে রাখা জায়গায় বসে পড়েছি। বাবা ছাড়াও ডিঙি চড়া হয় আমার আজকাল! জেলেদাদু কথা দিয়েছে বাঁক ঘুরে দশ মিনিট ডিঙি চালিয়েই নামিয়ে দেবে। ওখানে নয়ানজুলির জল খাল কেটে আদায় করে তার চারপাশে বাঁধাল দিয়ে মাছের চারা বড়ো করছে দাদু। আর অনুষ্কা পাড় দিয়ে আমাদের সঙ্গে থেমে থেমে দৌড়চ্ছে। আমার ফুলের ব্যাগ ওর হাতে। আমরা যথেষ্ট উস্কেছিলাম ওকে উঠে পড়ার জন্য। কিন্তু ও ঝুঁকি নেয়নি। উঠলে ডিঙিতে জল উঠতই, ওর ফ্রক ভিজতই। মায়ের তদন্ত সামলানোর মত ওস্তাদ এখনো সে হয়ে ওঠেনি বলে তার নৌকাবিহার ক্যান্সেল।
বিরাট জায়গা জুড়ে বাঁধাল দিয়ে জল আটকানো হয়েছে। পাশে বেড়া দিয়ে একটু উঁচুতে দাদুর বিশ্রামের জন্য ছাউনি। ছাউনির আশপাশে জটিল বাঁশঝাড় আর তার সাথে থিকথিকে জিলিপি, বাবলা গাছের গরমিল। আদপে পুরো জায়গাটা ঝোপঝাড়ে ঢাকা। শীতের শেষ এখন। নয়ানজুলির জল তিরতির করে নিচু খাল দিয়ে বাঁধালের ভেতরে ঢুকছে, অথবা গুপ্তপথে বয়সা বিলে নেমে যাচ্ছে। একটু কান পাতলে জল নেমে যাওয়ার মূর্চ্ছনা শোনা যায়। ঠিক এই সময় মানুষজন ডালপালা কেটে কোথাও কোথাও ফেলে রাখে। তার ওপর দিয়ে পারাপার সহজ হয়। ওপারের জমিগুলোতে যেতে গেলে সেই কোন দূরে সাঁকো পেরোতে হয় না। অনুষ্কা ডালপালা ধরে দিব্যি পার হয়ে এল। পায়ে একটু জলকাদা মেখেছে। তবে ফ্রক ভেজেনি। ও এমন কিছুই নয়। কাদার ব্যখ্যা দেওয়ার মত বিশারদ সে বটেই।
ছাউনির ভেতর থেকে যা দেখছি খুব কষ্ট হচ্ছে। পুরো জায়গাটা জাল দিয়ে ঢাকা। যাতে করে কোনো পাখি ওপর থেকে জলে ঝাঁপ দিয়ে চারামাছ তুলে না নিতে পারে। আর এক কোঁচবক বাঁধালের মাঝ বরাবর দড়ি দিয়ে টাঙানো ঝুঁকে পড়া একটা গাছের ডাল থেকে, জালের বিছানার একটু ওপরে। উলটো হয়ে ঝুলছে সে। দাদুর কথায় ঘন্টা তিনেক হল। যথারীতি তার দুই ডানা পিঠার পাশ থেকে খুলে এসেছে। মাথাটা সামান্য বেঁকিয়ে দৃষ্টি সোজা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। পারছে না। প্রতিবার ঝুলে পড়ছে। আর প্রতিবার নতুন করে ঘাড় সোজার করবার শক্তি ফুরচ্ছে। প্রাণ আছে তার দেহে। কিন্তু তা কতক্ষণ আমাদের ঘোর সন্দেহ। যে জেলেদাদু সংসার থেকে মুক্তি চায় প্রতিনিয়ত, যে জেলেদাদু সাথে গামছা রাখেনা কারন গামছা একটা বাঁধন, কোনো ফোন ধরে না, যে জেলেদাদুর নাতনি মুক্তি পেয়েছে নামের মধ্যে, সেই জেলেদাদু কিনা এক কোঁচবক কয়েদ করে জীবন্ত ঝুলিয়ে দিয়েছে! কেন!
– খুব উৎপাত করে।
– তো এভাবে জ্যান্ত ঝুলিয়ে কি হবে?
– ওকে ছটফট করতে দেখে বাকিগুলো ডরাবে, আবার কি!
– দাদু, ওরা কি এত বোঝে? আর সমস্ত বাঁধাল তো জাল দিয়ে ঢেকেই দিয়েছ!
– জানিনা দাদুভাই। খুব উৎপাত। কত দেনা ক’রে চারা করেছি এবার। আর জানো? শালারা ল্যাঠা ধরে বেশি।
পেছনে ঝপাস করে আওয়াজ। অনুষ্কা ডালপালা ধরে জলকাদা মেখে ওপারে ছুটছে। ফ্রক ভিজে কাদা মেখে একসা। আমি চিৎকার করি –
– কোথায় যাচ্ছিস? কাকিমা তোকে এভাবে দেখলে ভীষণ রাগ করবে।
– বাড়ি তো যাব না। তোদের বাড়ি যাচ্ছি। ছাদে পিলুর খাঁচাটা আছে না এখনো? সেদিনইতো দেখলাম।
অনেক পা’য়ে ধরার পর দাদু রাজি হয়েছে। আর বড়জোর আধঘন্টা এভাবে উল্টে ঝুলে থাকলে ও এমনিতেই মরে যাবে। ছটফটাবে না। তাকে দেখে আর কেউ ডরাবে? তার চেয়ে বরং আমাদের দিয়ে দিক। ওকে এই খাঁচায় রাখব। ওর শাস্তি মত খাঁচায় বন্দিই না হয় থাকবে। আর আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করব ওকে বাঁচানোর। অন্তত মৃত্যুর আগে কষ্ট যাতে কম পায়। শেষের মতলব আমাদের মধ্যে থাকে। দাদু বেশ তৃপ্ত আমরা শেষ পর্যন্ত ওকে কয়েদ করেই রাখছি দেখে। পায়ের বাধন খুলে পিলুর খাঁচায় নিক্ষেপ করে তাকে। ঠিক যেভাবে জাল থেকে ল্যাঠামাছ ছাড়িয়ে আলাদা হাড়িতে নিক্ষেপ করে। আমি ওর ইংরেজি নাম জানি। ‘পন্ড হেরন’।
আমি আর অনুষ্কা দুজনেই জলকাদা মেখে ভুত হলাম নয়ানজুলি পার হতে গিয়ে। জেলেদাদুর ডিঙিতে সজনেবাগানে ফিরে আসিনি। অনুষ্কার হাতে সজনেফুলের ব্যাগ আর আমার হাতে খাঁচা। তার মেঝেতে পাখিটা নেতিয়ে শুয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে। চোখ আধবোঁজা। পা, ডানা অসাড়। ঘাড়ের কাছ থেকে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে। অবিন্যস্ত পালক।
রাত্রে বেশ ঠান্ডা। পাখিটা এখন নিজের পায়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও দাঁড়াতে পারছে। তবে কিচ্ছুটি মুখে তোলেনি। এমনকি জলও না। অভিমান? আর হ্যাঁ, আমরা ওকে কয়েদ মুক্ত করে একটা মুখখোলা পিচবোর্ডের বাক্সে ছেড়ে দিয়েছি। ঠান্ডায়, ভয়ে দলা পাকিয়ে রয়েছে বাক্সের এক কোনে। বাইরে উঠোন, দেবদারুসারি জুড়ে থমকে রয়েছে কুয়াশা আর অন্ধকার। আমার পড়া মাথায়। বাক্সের কাছে হ্যারিকেন জ্বেলে রেখেছি । হ্যারিকেনের আলো-তাপে দেখছি এক বনের পাখির চোখ, সেই চোখের মায়া। মা অফিস থেকে ফিরে গেছে অনুষ্কাকে বাড়ি ছেড়ে আসতে আর খড় আনতে। পাখিটার আজ রাতের বিছানা হবে যে ওই বাক্সে! এভাবে রাত্রের ঠান্ডা যদি সে অতিক্রম করতে পারে তবে নতুন সকাল তার। বারান্দা থেকে দেবদারুসারির পাশ দিয়ে যে মাটির রাস্তা দেখা যায় সেখানে আলো ভেসে ওঠে। মা ফিরছে তবে। বাবা অস্ফুটে বলছে –
‘দু-পায়ে রাস্তার কাদা ঘুঁটে ঘুঁটে
ধরে ধরে পার হয়ে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোটা
এই মাত্র চলে গেল
আরো একটা দিন।
মাথার ওপর টিন
শব্দ ক’রে
মাঝে মাঝে চম্কে চম্কে ওঠে।
সজনে গাছের ডাল ধরে দোল খায়
এখনো বৃষ্টির
বড় বড় ফোঁটা।
জলায় এবার ভালো ধান হবে –
বলতে বলতে পুকুরে গা ধুয়ে
এ বাড়ির বউ আলো হাতে
সারাটা উঠোন জুড়ে
অন্ধকার নাচাতে নাচাতে।‘
মা উঠে আসছে উঠোনে। হাতের চার্জার লাইটটা দুলছে। আর দুলছে মায়ের ছায়া তার ছন্দে। খুশির ছন্দে সত্যিই নাচছে মায়ের ছায়া। এই ঠান্ডায় নয়ানজুলিতে স্নান করে ফিরছে মা । এমনিতেই অফিস থেকে এসে ফ্রেশ হত। অনেকদিন পর সুযোগ পেয়ে নয়ানজুলিতে ডুব দিয়ে এসেছে। ঠান্ডায় কাঁপছে মা। মায়ের সাথে এসেছে সজনেবাগানের একরাশ ধোঁয়াকুয়াশা। ঘিরে ধরেছে। পায়ে জলকাদা। অন্যহাতে এক আঁটি খড় হাসতে হাসতে বাবার হাতে তুলে দিচ্ছে।
– সুভাষ মুখোপাধ্যায়!
– কিন্তু তোমার যদি ঠান্ডা লেগে যায়?
– শিগগির ধরো, খড় ভিজে গেল। তুমি সকালে পাখিটার যেরকম ছবি পাঠালে! আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। ওকে এখন দেখে আমার এত ভালো লাগলো! দেখো ও বেঁচে যাবে।
যা হবার তাই হল। রাত্রে মায়ের নাক থেকে জল পড়ছে, কপালটা একটু গরম। অতয়েব আজ আমি আর বাবা মায়ের মাথার পাশে রাত জাগবো। জানালার কপাট খুলে সেখানে নিয়ে রাখা হল হ্যারিকেন আর বাক্স-খড় সমেত পাখিটাকে। ভোরের আলো চিনতে পেরে যাতে সে ডানা মেলে দিতে পারে। বাইরে খুব কুয়াশা। নাইটজার ডাকছে ঢং ঢং করে। বাবা বই পড়ছে। মা ঘুমিয়ে।
– মায়ের কাল আর অফিস যাওয়া ঠিক হবে না, তাইনা!
– হুম্।
– আচ্ছা, জেলেদাদু এখন কি করছে?
– তুমি বলো!
– বাবা, কাল পাখিটা ঠিক উড়ে যাবে তো?
– জানিনা পাবলো! তবে মনে হয় পারবে।
– যদি উড়ে যায় তবে কিন্তু তুমিও অফিস যাবে না, ঠিক তো!