তেলুগু লেখক ভেম্পাল্লে শরিফ-এর গল্পের অনুবাদে শমীক ঘোষ

তেলুগু লেখক ভেম্পাল্লে শরিফ-এর গল্পের অনুবাদে শমীক ঘোষ

ভেম্পাল্লে শরিফ তেলুগু গল্পকার। তাঁর জন্ম অন্ধ্রপ্রদেশের কাডাপা জেলার ভেম্পাল্লেতে।  ২০১১ সালে ‘জুম্মা’ গল্পগ্রন্থের জন্য তিনি সাহিত্য অকাদেমি যুব পুরস্কার পান। এছাড়াও ‘টোপি জব্বার’ এবং ছোটদের জন্য লেখা ‘তিয়ানি চাডুভু’ নামে তার আরও দু’টো গল্প গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা  চাসো পুরস্কার, কর্নাটকের সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, অন্ধ্রপ্রদেশ উগুডি পুরস্কারের মতো আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছে।   

পঙ্গু পৃথিবী

 

ঘুম ভাঙার পর টের পেলাম আমার ডান হাতটা নেই!

রোজ সকালে, ঘুম ভাঙলেই আমি দোয়া পড়ি। বিছানায় বসে দু’টো হাত ভাঁজ করে মুখে ঘষি। আজও তেমনটাই করতে গিয়েছিলাম।

কী আশ্চর্য! আমার ডান হাতটা শরীর থেকে খুলে গিয়েছে! চমকে উঠে বসলাম! দেখি হাতটা পড়ে রয়েছে বিছানার এক কোণে। ঠান্ডা, মৃতদেহের মতো।

আমার ভয় করে উঠল। এ কী! এমন হয় নাকি আবার! কেউ কি কেটে নিল আমার হাতটা। কিন্তু কোথাও এক বিন্দু রক্তও পড়ে নেই!

আমার হাতটা যেন নিম গাছে একটা ডাল। করাত দিয়ে কেউ কেটে আলাদা করে দিয়েছে। রক্তপাতহীন।

‘নাঃ! নাঃ!’ আমি চিৎকার করে উঠলাম। ‘আমার হাত কেটে নিয়েছে!’

চিৎকার শুনে আমার বউ ছুটে এল ঘরে। ‘কী হল! এত চিৎকার করছ কেন!’

আমি আমার ছিঁড়ে নেওয়া হাতটার দিকে তাকালাম!

‘ধুস! এই জন্য এত চিৎকার করছ! আমি ভাবলাম কী না কী হয়েছে। ধুর! তোমার সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি। হাতটা তুলে আলমারিতে রেখে দাও। যখন সময় পাব তখন ডাক্তারের কাছে গিয়ে হাতটা আবার লাগিয়ে নিলেই হল! তুমি সব কিছুতেই এত ভয় পাও কেন? বাচ্চা নাকি।’

বউ গজগজ করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। কিন্তু ওকে দেখার পর আমার ভয়টা আরও বেড়ে গেল! বউয়ের বাঁ-হাতটা নেই!

আমার বউ বাঁ-হাতি। খাবার বাড়ার সময়, জলের গ্লাস নেওয়ার সময়, ঘর পরিষ্কার করার সময়, এমনকী আমাদের সাত বছরের ছেলে চন্দুকে মারার সময়ও, ও শুধু বাঁ-হাতটাই ব্যবহার করে। আর সেই হাতটাই ভ্যানিশ!

ভাবলাম, একবার ওকে ডেকে জিজ্ঞাসা করি। তারপরেই মনে হল, না থাক গে। ও এসে আবার চিৎকার করবে। হয়তো আমাকেই দায়ী করবে! তার থেকে ছেড়েই দিই।

আমি তাড়াহুড়ো করে দোয়া পড়ে নিলাম। বাঁ-হাত দিয়েই ঘষে নিলাম মুখটা। এক হাতেই যতটা সম্ভব তাড়াহুড়ো করে তৈরি হয়ে নিলাম। তারপর খাবারটা কোনওমতে গিলে, আমার লাঞ্চবক্সটা কাটা ডান-হাতের ঠিক ওপরে কাঁধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

স্কুটারটা নিয়ে বেরোব, দেখি আমাদের বাড়িওয়ালা। কী আশ্চর্য! ওর দু’টো হাতই নেই।

যাহ শালা! আজ কী হয়েছে পৃথিবীর। আমি মনে মনে বলে উঠলাম।

একবার ইচ্ছে হল বাড়িওয়ালাকে ওর হাত দু’টোর কথা জিজ্ঞাসা করি। তারপর মনে হল না থাক বাবা! কী দরকার! ও যদি পাল্টা আমার ডান হাত নিয়ে জিজ্ঞাসা করে।

কোনও কথাই বললাম না। শুধু ঈশারা করলাম আমি বেরোচ্ছি।

স্কুটারটা স্টার্ট দিলাম। ভয় করছিল। এক হাতে স্কুটার চালাতে পারব তো? কিন্তু আবারও অবাক হলাম। স্কুটারটা চালাতে তো কোনও অসুবিধেই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, যেন স্কুটারটা একদম এক হাতে চালানোর জন্যই তৈরি করা।

রাস্তায় বেরিয়ে আরও অবাক হলাম। সবাই এক হাতেই স্কুটার চালাচ্ছে। কেউ ডান হাতে। কেউ বাঁ হাতে।

এক রাতেই গোটা পৃথিবীটা পঙ্গু হয়ে গেল!

অফিসে যাওয়ার পথেই পড়ে হাসপাতালটা। এখানকার খুবই নামী হাসপাতাল। দেখলাম সামনে বিরাট লম্বা লাইন। লোকে কাটা হাত নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে লাইনে।

হাসপাতালের সামনে নো-পার্কিং। কিন্তু আমি স্কুটারটা দাঁড় করালাম। সামনে দাঁড়ানো একটা লোককে জিজ্ঞাসা করলাম, কীসের লাইন এটা?

উত্তর শুনে আমি আরও ঘাবড়ে গেলাম। লাইনে দাঁড়ানো লোকগুলোর নাকি এক বছর আগে হাত খুলে গিয়েছে। সেই সময়েই হাসপাতালের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছে তারা। কিন্তু বিরাট ওয়েটিং। এক বছর পরে আজ তারা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়েছে হাত জোড়া লাগানোর অপারেশনের!

মাথায় হাত! এক বছর! আমাকেও এতদিন অপেক্ষা করতে হবে হাতটা জোড়া লাগানোর জন্য!

আর গোটা দেশে এত লোকের হাত খুলে গিয়েছে! আমি তো ভেবেছিলাম কাল রাত থেকেই ঘটনাটার শুরু! কী অবস্থা! এক বছর ধরে এক হাতে কাজ করে করে লোকগুলো তো অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। এখন হাত-জোড়া লাগানোর পর, ওদের আবার দু’হাতে কাজ করা অভ্যেস করতে হবে!

না, না। আমি এরকম করতে পারব না। আজকেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি জোড়া লাগাতে হবে হাতটা।

স্কুটারটা নো পার্কিং জোনেই ফেলে রেখে আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে ছুটলাম।

কাউন্টারের সামনে বিরাট লাইন। তিরুপতি মন্দিরেও এত বড় লাইন পড়ে না। ক’দিন আগেই শুনেছিলাম তিরুপতিতে নাকি লাইনে দাঁড়ানোর জন্য নতুন নতুন জায়গার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখানে সে সবের বালাই নেই। যা ভিড়, হয়ত এক সপ্তাহ পরে কাউন্টারে পৌঁছতে পারব।

লাইনে দাঁড়িয়েই কিছু লোক দাঁত মাজছে। গা ধুচ্ছে। খাবার খাচ্ছে।

চারদিকে প্রচুর ফেরিওয়ালা। তারা লাইনে দাঁড়ানো লোকগুলোকে প্রায় জোর করছে কিছু কেনার জন্য। না কিনলে, যা ইচ্ছে তাই বলছে। নোংরা নোংরা গালাগালি করছে।

মাঝে মাঝে ফেরিওয়ালারা জোর করেই লোকের হাতে জিনিস ধরিয়ে দিচ্ছি। তারপরেও যদি কেউ না কিনতে চায়, তাকে টেনে বার করছে লাইন থেকে। সবার সামনে দাঁড় করিয়ে অপমান করছে।

আমার তো মোটে একটা হাত নেই। এই লাইনে দাঁড়ালে, বাকি হাত-পাও অবশিষ্ট থাকবে না!

এই লাইনে দাঁড়াতে হলে অন্তত হাতে এক সপ্তাহ সময় নিয়ে আসতে হবে। তার সঙ্গে পকেট ভর্তি টাকা আর প্রচুর স্ট্যামিনা।

এমনিতেও দেরি হয়ে গিয়েছে। এখানে এভাবে দাঁড়িয়েও কোনও লাভ হবে না। আমি স্কুটারটা নিয়ে আবার অফিসের দিকে এগোলাম।

অফিসের সিকিউরিটি গার্ড, আজ আমাকে এক হাতেই সেলাম জানালো। আমি চুপচাপ লিফটে করে উঠে গেলাম। যা দেখব ভেবেছিলাম ঠিক তাই। গোটা অফিস এক হাতে কম্পিউটারে কাজ করছে!

ওদের মতো এক হাতে এত সাবলীলভাবে আমি কি পারব?

কিন্তু না। কম্পিউটার খোলার পর দেখলাম একটুও অসুবিধে হচ্ছে না। এক হাতেই মাউজ আর কি-বোর্ড প্রায় এক সঙ্গেই চালাতে পারছি।

কাল অবধি আমার দু’টো হাত ছিল। আজ একটা হাত। অথচ অফিসের একটা লোকও সে নিয়ে আমাকে কিচ্ছু জিজ্ঞাসা করল না। একটু খারাপ লাগল।

পাশের টেবিলের লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কী হল বলোতো! কালও তো আমাদের সবার দু’টো হাতই ছিল। আর আজ এই অবস্থা!’

লোকটা আমার কথা শুনে দাঁত বার করে হাসল। তারপর খিঁচিয়ে উঠল। ‘তুমি একটা গাধা। গাধ শুধু নও স্বার্থপরও। আমাদের সবার অনেকদিন থেকেই একটা হাত। কিন্তু তুমি সেটা লক্ষ্যই করোনি। কাল রাতে তোমার নিজের হাত খুলে গিয়েছে। এখন তুমি বাকিদের লক্ষ্য করলে!’

আমি চুপ করে গেলাম। ঠিকই তো বলছে। আমরা সবাই এরকম। যতক্ষণ না নিজেরা অসুবিধেয় পড়ছি, ততক্ষণ অন্য লোকের কথা কি ভাবি আমরা কেউ? আমি তো এতদিন খেয়ালই করিনি যে ওর একটা হাত নেই। আজ আমার হাত খুলে গিয়েছে। এখন আমি ওরটা টের পেলাম।

আরে! লোকটা তো আমাকে দারুণ একটা কথা বলল! এতদিন এদের কারও দু’টো হাত ছিল না। কিন্তু আমার ছিল। কথাটা ভাবতে ভাবতেই আমার বেশ গর্ব হল।

নাঃ, এইভাবে এক হাত নিয়ে থাকা যাবে না। ছুটি নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। আমি উঠে, বসের কেবিনে চলে গেলাম।

বস পা দিয়ে কম্পিউটারে কাজ করছে! আমি টেরই পাইনি কবে ওর দু’টো হাতই খুলে গিয়েছে!

বসের নিজেরই দু’টো হাত নেই। আর আমি ছুটি চাইব! কেমন অস্বস্তি হল। তারপরেই মনে হল ছুটিটা যে করেই হোক নিতে হবে। আমার এই ভাবে এক হাত দিয়ে চলবে না।

‘স্যার! আমাকে একটা ছুটি দেবেন। এক সপ্তাহের। আমি হাসপাতালে হাত লাগানোর জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেব।’

বস আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন মনে হল আমি একটা মূর্তিমান আহাম্মক।

‘তুমি কি গাধা? না গরু? যদি অত সময় থাকত তাহলে আমি আমার নিজের হাত দু’টো লাগিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতাম না? আমি নিজেই সময় পাইনি। আর তুমি সময় চাইছো! তোমাদের সবাইকে যদি ছুটি দিতে  হয়, তাহলে কাজ করবে কে? আমাকে তো ব্যবসা বন্ধ করে ফুটপাথে বসতে হবে। একটা হাত খুলে গিয়েছে, তাই এসে নাকি কান্না কাঁদছো! কাজ নেই? ওই হাতটা নিয়ে কী করবে তুমি? কী বিরাট কাজটা হবে শুনি? এই মুহূর্তে বেরিয়ে যাও। ফালতু জিনিস নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজের কাজ করো।’

শালার কর্পোরেট কালচার! কেউ কারও কথা ভাবে না। কেউ অন্য লোকের প্রতি সহানুভূতি দেখায় না। শুধু কাজ আর কাজ। লোকের হাত খুলে গিয়েছে, তাও শালা নর্মাল সেজে কাজ করে যেতে হবে।

আমার একটা হাত খুলে গিয়েছে। এখন আমি টের পেলাম যে বাকি সবারও হাত নেই। এর বদলে যদি মাথা খুলে পড়ে যেত, তাহলে হয়তো টের পেতাম বাকি লোকগুলোরও মাথা নেই।

নিজের সিটে গিয়ে বসলাম। বিরক্ত লাগছে। একটা বেজে গিয়েছে। খিদেও পাচ্ছে খুব। মাথায় একটা অদ্ভুত চিন্তা খেলে গেল। শালা খিদেরও যদি মানুষের মতো দু’টো হাত থাকত, আর একটা এখন খসে যেত, তার সঙ্গে একটা পাও, তাহলে মানুষকে অনেক কম খেতে হত।

বাঁ-হাত দিয়ে লাঞ্চবক্সটা নিয়ে আমি ক্যান্টিনে চলে গেলাম। লাঞ্চ বক্সটা খুলতে যাব, এমন সময় সরায়ু ছুটে এল। ও এইচ আরে চাকরি করে। আমার বন্ধুই।

আমি কিছু বলার আগেই আমার মুখের ভেতর একটা লাড্ডু ঠুসে দিল।

‘গুড নিউজ! গুড নিউজ!’ বলে হাসতে লাগল সরায়ু।

‘কী হয়েছে।’ লাড্ডুটা চেবাতে চেবাতেই আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

‘আবার বাচ্চাটা। আমার সোনাটা। আমার সব থেকে আদরে মণিটা… গতকাল আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে!’

‘ক্ষমা করে দিয়েছে! মানে কী… তুমি শিওর ও তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে?’

সরায়ু আমার কথায় পাত্তা দিল না। হাতে লাড্ডুর বাক্সটা টেবিলের ওপর রাখল। তারপর গুনগুন করতে করতে দু’টো হাত তুলে আমার দিকে নাচাতে লাগল।

দু’টো হাত! সরায়ুর দু’টো হাত! আমি অবাক হয়ে গেলাম! ওকি অপারেশন করিয়েছে? খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। না, একদম আসলের মতোই তো লাগছে। যেন রাজহাঁসের দুটো ডানা! উফ কী সুন্দর। আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে সরায়ুর দু’টো হাতের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

সরায়ু চলে গেল। অন্য কাউকে লাড্ডু খাওয়াতে।

আমার আবার মনে পড়ে গেল আমার একটা হাত নেই। গতরাতে খুলে গিয়েছে। খুব কান্না পেল।

কাঁদতে কাঁদতে অস্ফুটে বলে উঠলাম, ‘চন্দু, আমার সোনা বাচ্চা, আমি ডান হাত দিয়ে তোমায় মেরেছি। আমায় ক্ষমা করে দাও… প্লিজ।’

 

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes