
কুড়ুন্দোগাই-এর কবিতা
ভাষান্তর: শীর্ষা এবং শত্তীশ্বরন জ্ঞানশেখরন
সঙ্গম সাহিত্য তামিলনাড়ু তথা দক্ষিণ ভারতের প্রাচীনতম সাহিত্যসৃষ্টি। সহস্রাধিক বছর আগেই যে প্রাচীন তামিল সাহিত্যের রূপ-রস-গন্ধ দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছিল, তা আজও সমান চমকপ্রদ। সঙ্গম সাহিত্যের রচনাকাল সম্পর্কে বহুমত থাকলেও অধিকাংশ বিদ্বজ্জন এবং গবেষকের মতে ৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ৩০০ খ্রিষ্টাব্দ – ৬০০ বছরের এক দীর্ঘ ইতিহাস জুড়ে এই সাহিত্যধারার অবাধ বিচরণ এবং বিস্তৃতি। সঙ্গমযুগের সাহিত্যকে আপাতভাবে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়ে থাকে – ব্যাকরণ (দুটি – অগত্তিয়ম্ এবং তোলগাপ্পিয়ম্), দীর্ঘ রচনা সংকলন (১৮ টি ) এবং ক্ষুদ্র রচনা সংকলন (১৮ টি)। অগত্তিয়ম্ এবং তোলগাপ্পিয়ম্ তামিল সাহিত্যের প্রাচীনতম ব্যাকরণ-এর নিদর্শন, যা তৎকালীন সাহিত্যসমৃদ্ধির মূল ভিত্তিপ্রস্তর। দীর্ঘ এবং ক্ষুদ্র রচনা সংকলনগুলিতে স্থান পেয়েছে ৪৭৩ জন তামিল কবির সর্বমোট ২৩৮১টি কবিতা। কবিতাগুলির পংক্তিবিন্যাস তিন থেকে শতাধিক পর্যন্ত। উল্লেখ্য, সঙ্গম সাহিত্যের কবিতাগুলি মূলত দুটি পর্যায়ভুক্ত – প্রেম (অগম্) এবং যুদ্ধ (পুড়ম্)। এছাড়াও ভক্তিমূলক কবিতাও এই ধারায় স্থান পেয়েছে। কুড়ুন্দোগাই – সঙ্গম সাহিত্যের ১৮ টি দীর্ঘ রচনা সংকলনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যসৃষ্টি। আক্ষরিক অর্থে কুড়ুন্দোগাই হল ‘ক্ষুদ্র সংগ্রহ’ – এই নামকরণের হেতু এই সংগ্রহের কবিতাগুলির চার থেকে আট পংক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধতা। ২০৫ জন কবির সর্বমোট ৪০০টি কবিতা এই সাহিত্যধারার অন্তর্গত। কবিতাগুলির রচনাকাল ১০০-৩০০ খ্রিষ্টাব্দ এবং পর্যায় প্রেম। মানবসম্পর্কে প্রেমের বিভিন্ন আঙ্গিকের প্রতিফলনই এই কবিতাগুলির উপজীব্য হয়ে উঠেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এখানে যে-সাতটি কবিতা দেওয়া হল, সেগুলি মূল তামিল ভাষা থেকে সরাসরি বাংলায় অনূদিত।

১
মাটির থেকেও বিশাল, আকাশের থেকেও অসীম
জলের থেকেও গভীর – নায়কের সঙ্গে আমার প্রেম
যেন দুর্গম পাহাড়ের কালো বৃন্তযুক্ত
কুড়িঞ্জিফুলের মধু
(কুড়ুন্দোগাই – ৩, কবি – দেবকুলত্তার্)
২
রাত্রির মধ্যযাম অন্ধকারাচ্ছন্ন; নিঃশব্দে,
নিশ্চিন্ত ঘুমে, মানুষের দল; ঘৃণাহীন
বিশাল পৃথিবীও ঘুমে;
শুধু আমি একা ঘুমহীন।
(কুড়ুন্দোগাই – ৬, কবি – পদুমনার্)
৩
করুণা আর প্রেম ত্যাগ করে, জীবনসঙ্গীকে ত্যাগ করে,
অর্থের জন্য যারা বাঁচে, বুদ্ধিমান হলে
তারা বুদ্ধিমানই থাক,
মূর্খ হয়ে থাক, নারী, আমিই!
(কুড়ুন্দোগাই – ২০, কবি – কোপ্পেরুঞ্চলন্)
৪
কেউ ছিল না; সে নিজেই তো চোর;
এখন যদি মন পাল্টায়, আমি কী করতে পারি?
ধানের পাতার মতো ছোটো ছোটো কচি পা নিয়ে
জলধারায় মাছ খুঁজতে থাকা পাখিটিই ছিল শুধু,
আমাদের বিয়ের সময়
(কুড়ুন্দোগাই – ২৫, কবি – কবিলর্)
৫
বাছুরে পায় না, বালতিতেও পড়ে না,
শান্ত গাভীটির সুস্বাদু দুধ মাটিতে ঝরে পড়ার মতোই
আমারও নিজস্ব থাকে না, অপদার্থ প্রেমিকও,
বিবর্ণতাই শুধু গ্রাস করতে চায়
আমার শরীরের আমের কিশলয়রঙা
কালচে সৌন্দর্যকে
(কুড়ুন্দোগাই – ২৭, কবি – বেল্লিবীদিয়ার্)
৬
মাথা ঠুকব? না কি আক্রমণ করব?
একলা আমি; পাগলের মতো
আ উ করে চিৎকার করব?
ঘুরে ঘুরে বইতে থাকা অক্লান্ত বাতাস
চঞ্চল করে তুলছে আমার শরীর ও মনকে,
জানে না ঘুমন্ত শহর।
(কুড়ুন্দোগাই – ২৮, কবি – অব্বৈয়ার্)
৭
আমার মা এবং তোমার মা কে?
আমার বাবা আর তোমার বাবার কী সম্পর্ক?
আমরা দুজনেই-বা কীভাবে জানলাম একে অপরকে?
লালমাটিতে হারিয়ে যাওয়া বৃষ্টির জলের মতোই
ভালোবাসায় দুটি হৃদয় আপনা থেকেই মিশে গেল।
(কুড়ুন্দোগাই – ৪০, কবি – সেম্পুলপ্পেয়নীরার্)


সারল্যের পরতে পরতে বিস্ময়। আনুবাদ খুবই ভাল লাগল। আরও পড়তে চাই।
অনুবাদ*
অনেক ধন্যবাদ পার্থদা। আমি চেষ্টা করব। ভালোবাসা নিও ❤️❤️❤️
খুব ভালো কাজ শীর্ষা। আরো অনুবাদ চাই
ধন্যবাদ গো। করব আরো।