কমলেশ রাহারায়ের একগুচ্ছ কবিতা

কমলেশ রাহারায়ের একগুচ্ছ কবিতা

জন্ম উলিপুরের কুড়িগ্রামে ০৬/০৩/১৯৪৬। দেশভাগের পর থেকে আলিপুরদুয়ারবাসী। কিছুদিন রাঙামাটি চা বাগান ও জলপাইগুড়িতে কেটেছে। এরপর স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি সূত্রে পুনরায় আলিপুরদুয়ারে বসবাস। প্রথম জীবনে 'অবতামসী'-র লেখক সুরজিৎ বসুর সান্নিধ্যে বহু সময় কেটেছে। ষাটের দশকে কবিতা লেখার শুরু। ডুয়ার্সের মানুষের জীবনছবি তাঁর কবিতায় নানা সময় উঠে এসেছে। আজীবন নিয়মিত কবিতাচর্চা করলেও প্রকাশিত কবিতার বই মাত্র দুটি: বিপরীত বসন্ত (১৯৯৫), লিনোকাটে তাপ নিচ্ছি (২০১২)। ২০০৬ সালে স্বাস্থ্য বিভাগের চাকরি থেকে অবসর। প্রয়াণ ৩১/১২/২০২১।

 

তুলির শেষটান ডুয়ার্স

 

এই জ্যোৎস্নামাখা সন্ধ্যা ডুয়ার্সের সঙ্গে মিলেমিশে

একাকার হলে পৃথিবীর রূপ আর খুঁজে লাভ নেই

শুনেছি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়-

রাজাভাতখাওয়ার আরণ্যক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন

এমন ঘটনা শুধু কথার কথা নয়

 

আবার হিল্লিদিল্লি ঘুরে অনেকেই ছুটে আসেন

স্বর্গছেঁড়া অথবা মজিদখানার হিন্দুমুসলমানের সম্প্রীতি মেলায়

অনেকেই রায়ডাক হয়ে চলে যান হাতিপোতায়

 

শুনেছি কোন এক সময় ঝুমঝুমি পায়ে বক্সাপাহাড় থেকে

নির্ভীক রানার ডাক পৌঁছে দিত আলিপুরদুয়ারে

কি রোমাঞ্চকর ঘটনা বলুন তো-

 

এখন পরিবর্তনের যুগ- সর্বত্র উন্নতির আঁচ টের পাচ্ছি

কিন্তু রাভানাচ অথবা নৌকায় বসে গন্ডার দর্শন

একটু একটু করে যেন হারিয়ে যেতে বসেছে

 

তবু তুলির শেষটানে এসে যায় মোহময় জয়ন্তীর কথা

যেন এক মানসকন্যা পালিত হচ্ছে অরণ্যকুটিরে

সারাবেলা সে আমাদের ডাকে কেন শুধু-

 

 

গুঞ্জন

 

শুধু গুঞ্জন, উদয় অস্তের মরকতমণি

কোথায় গেল, কেউ বলে এসব গোপন তথ্য

সুগভীর চিহ্ন দৃশ্যত অদেখাই থেকে যায়

তুমি অন্ধ হলে প্রকাশ্যে পুনর্জন্ম হতে পারে তোমার

বেলা অবেলায় এমন কঠিন রহস্য নিয়ত গুনগুন করে

 

হরিৎ গুনগুন জারুল বকুল সেগুন চন্দনে

জ্যোৎস্না প্লাবিত শৃঙ্গ, হরিণ এবং পরবাসে

হঠাৎ কি খেয়ালে বেঁধেছি এমন ঘর

স্বচ্ছ সমর্পণ তবু বিরহ কাটে না।

 

বেপথু হৃদয়

 

এই শুভাকাঙ্খী পূর্ণ চাঁদ

ক্ষণে ক্ষণে পরাগমাখা যাজ্ঞবল্ক্য

দিতে চেয়েছি তবু কেউ কথা বলল না

 

এই প্রদীপ্ত হাওয়া, বেপথু হৃদয়

ছড়িয়ে দিয়েছি চতুর্দিকে

তবু কাছাকাছি এসেও কেউ কিছু বলল না

 

এই নগরপত্তন, নীলচাষ

হৃদয়-জড়িত কর্ণকুন্তী সংবাদ

তোমাকে দিলাম তবু শব্দহীন রয়ে গেলে কেন

 

অপরাজয়

 

জলরং পাখি ডাকে, আয়

খচিত অণ্বেষা ডাকে, আয়

চাঁদ সদাগর ডাকে এসো কড়ি খেলি আজ

 

অপরাজয়, তুমি ফিরে যাও

যারা চিরকাল ডাকে তাদের অন্তরে

মিশে যাও পরাগরেণুতে

 

হিম্মত তোমার রূপটি কেন ছলছল করে

তোমার পর্বত কেন সংগীতের বদলে

ভীষণ অন্ধ জটিল পাথর ক্রমাগত

 

বায়ুচাপ নিতে নিতে হারিয়ে গিয়েছো কেন

আনো বয়ে সেগুন চন্দন, দু’কদম এগিয়ে আনো।

 

পুর্নবার ঘর বেঁধে নেব

 

নির্লিপ্ত হবো কেন, যদি কেউ হয়

তাকে পরমান্ন দেব কেন

আলাদিন আশ্চর্য প্রদীপ

 

আমার উল্টোদিকে মধুচোর

কর্কশ তঞ্চক

এসব উপেক্ষা করে

এসেছি তোমার কাছে স্বরলিপি দাও

 

তুমি ভোঁ-কাট্টা ঘুড়ি নও

নিশ্বাস প্রশ্বাসে দাঁড়িয়ে রয়েছো

আমাদের পাশে, এই অঙ্গীকার

 

কঠিন সমীক্ষা নিতে এসেছি এবার

ভেঙেছি অনেক পথ, ভেঙেছি পাথর

ভাবছি এখানেই স্থির হবো

পুনর্বার বেঁধে নেব ঘর।

 

পরবাসী ছায়া

 

কেউ নেই কেউ যেন ছিল না কখনও

তবু সীমান্তে দাঁড়িয়ে রইলো উদ্বাস্তু ছায়া

এখন বায়ুচাপ নিতে নিতে স্কন্ধ পুড়ে যায়

 

ঈষৎ কুঞ্চিত তার শরীরের ভাষা

একবার মেঘ একবার পাখি

পরবাসী ছায়ায় এসে বসে থাকে একা একা

 

কি নামে ডাকবো তাকে অথবা ফেরার

অথবা পতন, জারুল বকুল এই নামে-

 

বেলা অবেলায় কেন যে কস্তুরী গন্ধ দিচ্ছে

সবান্ধব অক্ষরে অক্ষরে জানে এই মন।

 

কথোপকথন

 

তুমি আমি অবয়বহীন

সবাই কি সমান অক্ষম

 

আমাদের কেউ যদি বন্য বলে

কলঙ্ক রটিয়ে দেয় মরালমরালী

কেন, দোপাটি মল্লিকা তবে কোন বনে

ক্রমশ হাওয়ায় হাওয়ায় শুধু দোলে

 

তুমি আমি তৃষিত মাটিতে কেন একা

আগুনের কোলাহলে একা

মেঘপুঞ্জে অবিরত একা

 

তবে কি নিঃশব্দ, অক্ষমতা ঘিরে ধরে

এ বস্তু সঠিক কিছু বলে না এখন

নিছক সৌজন্য, সুখদুঃখ আর কথোপকথন।

 

উদ্বাস্তু মরুদ্যানের কবিতা

 

মানুষের বিভাজন মানুষ নিজেই করেছে

বাহুর বন্ধন ছেড়ে তুকতাক দিয়ে

গুলবাগিচাকে বানিয়েছে দানবের কারখানা

এখন ভন্ড দানব হা করে বসে আছে গহ্বরে

ঠিক তার পাশে বয়ে যাচ্ছে রংতুলি স্রোত।

 

অবশ্য শিল্পের জন্য এরকম দ্বন্দ্ব থাকা ভালো

যেন মুখোমুখি দু’পক্ষ আলো এবং আঁধার

তস্কর এবং মরুদ্যান।

 

ক্রমাণ্বয়ে এসব আছে বলেই

কেউ অনুর্বর থেকে বেরিয়ে এসে

সহিষ্ণু হৃদয় দিয়ে প্রস্ফুটিত করে দোপাটি মল্লিকা

কেউ বিরহের পালা শেষ করে

সাদা পৃষ্ঠায় রচনা করে অম্লান একটি কবিতা।

 

জীবনবোধের পৃষ্ঠা

 

মাঝে মাঝে ভাবি তুলে আনি সব

আতস সমীক্ষার কালো সাদা মেঘ

স্থলপদ্ম, ভ্রমর গুঞ্জন।

 

মাঝে মাঝে গভীর রাতে ঝিনুক নিয়ে খেলি

ইস্টিকুটুম পাখির কাছে এই যে ছায়াপথ

বিছিয়ে রাখি জারুল বকুল, নকশি কাঁথা মাঠ।

 

জীবনবোধের পৃষ্ঠাগুলো উড়ছে বারোমাস

ত্রিকাল মাটি কী রোমাঞ্চ বৃষ্টি রেখার মতো

মোমের আলো ফোঁটাফোঁটা গলছে সারারাত।

 

সাতসমুদ্দুর আকাশ যেন ভরাট হয়ে ওঠে

স্মৃতির পাতা খুলে দেখি বাঙ্ময় এক আকাশ

কে রেখেছে আমার জন্য ধূপগন্ধ বাতাস।

 

অংকটা ভীষণ কঠিন

 

কেউ বলে না আমার বুকের ওপর দিয়ে

বয়ে গেছে যমুনা গঙ্গার সব জল

আমার বিরহ ঘিরে ফুটেছে রজনীগন্ধা

আমার হাতের ওপর বসেছে লক্ষ্মীপেঁচা।

 

কেউ যেন বলে না কখনও আমি একা

আমি দাবানল, আমি বায়ু

এই পৃথিবীকে চুরি করে

অন্য কোথাও বয়ে নিয়ে যাবো।

 

কেন? এখানে কি প্রতিমার চোখ বেয়ে

শুধুই অশ্রু ঝরে

রুদ্ধ কণ্ঠ, মনোজ্ঞ সংগীত নেই।

 

আরো কথা ছিল

কিন্তু অংকটা ভীষণ কঠিন।

 

 

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes