কবিতার কথা <br />  চৈতালী চট্টোপাধ্যায়

কবিতার কথা
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়

ওঁর সম্পর্কে, বস্তুত ওঁর কবিতাকথা লিখতে বসে আমারও কলম উইথড্র করে নিতে ইচ্ছে হয়।এই শুদ্ধতায় চিরুনিতল্লাশ চালাতে মন চায় না যে! গৌতম বসুর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। লিখলেন চৈতালী চট্টোপাধ্যায়

ব্যক্তিগত আলাপ ছিল একচিলতে।দেখা। হাসিমুখ।আর,’কী, ভালো তো?’এই অবধি। শুধু,প্রতিবার দুজনে দুমুখো হয়ে চলে যাওয়ার পথে আমি ভেবেছি ওঁর নাম গৌতম বসু না হয়ে সুভদ্র বসু হতেই পারত!
এই শান্ত মৃদু মানুষটির থেকে বেরিয়েছে এমন পংক্তি : রাশি-রাশি ছুটন্ত হাত,একটি ঘুড়ি আজকের ভোজন।
আমি কেমন যেন কেঁপে উঠি এটা পড়তে গিয়ে।উল্লাস ও হাহাকার পাশাপাশি সহাবস্থান করে যখন,কবি কেমন ঋষির মতো লিখে চলেন,
…একসময় সূর্য আলো ফিরিয়ে নিলেন, মনে হলো
অবিমিশ্র হাহাকারের কাল, ঘাস থেকে মাঠ,
মাঠ থেকে বালকের দল, তাদের উল্লাসের
উপর দিয়ে হাহাকার বয়ে চলে…
সত্যদ্রষ্টা,দূরদর্শন যাঁর, তিনি প্রায়-অনুচ্চারিত স্বরে ফ্রেমে বেঁধে নেন এই দার্শনিক অনুভবটিকে।
…পথ থেকে একটি হলুদ পাতা কুড়িয়ে নিয়ে তাঁকে
জিজ্ঞাসা করি, ‘এটি কি জীবনের প্রতীক, না মৃত্যুর?’
‘জ্ঞানের, পরাজয়ের’।…
দেখুন, কীভাবে নশ্বরতা পেড়ে ফেলে একজন নশ্বর মানুষকে।কবি গৌতম বসুকে। অহংবোধ, ময়লা ঝেড়ে ফেলার মতো করে অদৃশ্য টুশকিতে উড়িয়ে দিয়ে তিনি হাত রাখবেন তরুণ কবির কাঁধে। তাঁকে ঘন্টার পর ঘণ্টা বুঝিয়ে যাচ্ছেন বাংলা সাহিত্যের উপকথা, তার নানা বাঁক,ঘূর্ণি, তানপুরা বেঁধে-থাখা নতুন পথের ইশারা।আর‌’জ্ঞানের’ শব্দটিকে খাতায় গেঁথে দিয়ে আলতো একটা কমা বসিয়ে তার পাশেই লিখবেন এবার,’পরাজয়ের’।
দেখুন, অনিঃশেষ জীবনকে বর্ণনা করছেন উনি।অমোঘ সেই বর্ণনা। মেঘের গায়ে হালকা রোদ ফুটে ওঠার মতো, অলৌকিক এই ন্যারেশন :
…আকাশ নেমে এসে ছিঁড়ে ফেলেছে আমার জীবন, হাড়ের সংসার, তবু ক্ষতচিহ্ন নেই, তবু ক্লান্তি জানে না বৃষ্টিপাত। গাও বৈষ্ণবী গাও, মনের কোণে এসে দাঁড়াও, মোবিলের টিন হাতে বিষণ্ণ, কন্যাসন্তানটিরে দেখি।…
সারাদিন,একান্তে, গৌতম বসুর কবিতা নিয়ে পড়ে আছি। বুঝতে চাইছি
… আমি জানি,ধুলোর মতন পড়ে থাকা যায়/কিন্তু ধুলো হয়ে-ওঠা ততটা সহজ নয়।/নীরব দৈত্যকুলের হে অবশেষ,প্রণাম…
এর মধ্যে নিবেদন যতটুকু, আমি তা ছাপিয়ে স্যাটায়ারটিও ধরে ফেলি। আমার ডানপাশে,বাঁপাশে, হোক অবশেষ, তবু দৈত্যকুলের নিঃশ্বাস এসে লাগে।
আখতারী বাঈকে এঁকেছেন গৌতম। আমি একে লেখা না,রেখাই মনে করি।এক সমগ্র শিল্পীসত্ত্বাকে লাইন ড্রইঙে গড়ে তোলা যেন! আসুন,দেখি সে অঙ্কনকলা!
…শেষ বাক্যে পৌঁছবার আগেই আপনি কণ্ঠস্বর থামিয়ে দিলেন,
আপনি জানেন, পশ্চাতে কেউ আছেন রুদ্ধ সুর কুড়িয়ে নেবার;…
সাক্ষাৎকারে গৌতম বসুকে প্রশ্ন করা হয়, কবিতা ব্যাপারটা আপনার কাছে ঠিক কীরকম। উনি বলেন,এই প্রশ্নের ফাঁদে আমি পা দিচ্ছি না। কিছু প্রসঙ্গ আছে যার আশেপাশে ঘোরা যায় কিন্তু ছুঁতে নেই। ছুঁলেই তাদের শুদ্ধতা নষ্ট হয়ে যায়।
ওঁর সম্পর্কে, বস্তুত ওঁর কবিতাকথা লিখতে বসে আমারও কলম উইথড্র করে নিতে ইচ্ছে হয়।এই শুদ্ধতায় চিরুনিতল্লাশ চালাতে মন চায় না যে!মহাজীবনমুখি সেসব কবিতা বলবে,
…শব্দও একপ্রকার অন্ধকার,যার উদ্দেশে কান পাতা রয়েছে…
গৌতম বসুর কবিতার কাছে ছেঁড়া ছেঁড়া থেকেছি এতকাল, স্বীকারোক্তি আমার।আজ,এই প্রথম ওঁর কবিতার সঙ্গে এতক্ষণের বসবাস। তাই শুরুতে যে স্বল্প পরিচয়ের কথা লিখেছি তা ফিরিয়ে নিয়ে, হঠাৎই কেমন যেন ফাঁকা লাগছে।বিরহ জাগছে। সেই বিরহ! গৌতম বসু ওঁর গঙ্গানারায়ণপুর নামের, সামান্য তিনটি মাত্র লাইনসম্পন্ন অসামান্য কবিতায় যাকে রেখে দিয়েছেন।
অবশেষে, কোনও এক মধ্যাহ্নে
বাঁশবনের ধারে, যদি কেউ ললাট স্পর্শ করে
ধীরে, অতিধীরে, তাকে দিও, আমার বিরহ।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes