ইবন আরবীর নির্বাচিত কবিতা
অনুবাদ – বেবী সাউ

ভূমিকা

আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে রহ সি সকল মুহই আল-দীন আল-হাতিমি আল আন্দালুস! সাধারণত ইবন আরবী নামে পরিচিত (অথবা ইবনুল ই আরবী)। এক সুফী ঐতিহ্যশালী ধার্মিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তাঁর পূর্বপুরুষরা ছিলেন ‘তায়ে’ আরব উপজাতির। অষ্টম শতাব্দীর কোনও একটা সময়ে তাঁরা সরে যান মধ্য প্রাচ্য থেকে দক্ষিণ স্পেনের দিকে, যেখানে তখন শাসন করত আরবীয় রাজকুমারগণ।

১১৬৪ খ্রীষ্টাব্দ। ইবন আরবী জন্মগ্রহণ করলেন দক্ষিণ পূর্ব স্পেনের মার্সিয়ায়। সে সময়ে লাইবেরিয়ার পেনিনসুলায় ইসলামিক অধিপত্যের দিন আর আগের মতো উচ্চতায় নেই। কিন্তু মরিশ সভ্যতার আভায় আলোকিত ছিল স্প্যানিশ বুদ্ধিজীবীদের আলো। স্পেনের মুসলমান সম্প্রদায়ের জ্ঞান,তথ্য, মতামত আদান-প্রদান হয়েছিল ইউরোপ, গ্রীক এবং সিরিয়ায় তাদের সহ-ধর্মবাদীদের সঙ্গে। পার্সিয়া এবং ইরাক একটি দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল, যা আরও গভীরভাবে অন্য যে কোন ইউরোপীয় সভ্যতার উপর ছাপ ফেলেছিল। দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুতে, আন্দালুসিয়াযর এক আরব যুবকের কাছে বিস্তৃত জ্ঞানের ভাণ্ডার খুলে দেয় তাঁর বিদ্যালয় এবং দক্ষিণ স্পেনের গ্রন্থাগারগুলি। জোরোস্ট্রিয়ান এবং
ম্যানিচিয়ান লোর, হিব্রু এবং খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ব, গ্রীক দর্শন এবং গণিত এবং প্রতিটি মুসলিম দার্শনিক ভাবনা তখন
পাণ্ডুলিপি আকারে পাওয়া যেত। ইবনে বা ইবন আরবী তার সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন তাঁর ব্যতিক্রমী আধ্যাত্মিক কৌতূহল। যা প্রতিটি প্রতিপক্ষকে আঁকড়ে ধরে। সমস্ত উপলব্ধ জ্ঞানের বিকাশ ঘটেছিল মাত্র আট বছর বয়সে। তিনি লিসবনে থাকতেন, যেখানে তিনি অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন মুসলিম গোঁড়া শিক্ষার। তার পাশাপাশি তিনি কোরান থেকে ইসলামী আইন নীতি অধ্যয়ন আরম্ভ করেন। বছরখানেক পরে, ১১৭০ সালে আমরা তাঁকে আলমাহাদেসের মুরিশ সাম্রাজ্যের রাজধানী সেভিলিতে খুঁজে পাই। তিনি সেখানে প্রায় তিরিশ বছর ধরে নিয়মিত ইসলামী শিক্ষার বিভিন্ন শাখা অধ্যয়ন করেন।
এই সময় তিনি প্রচুর ভ্রমণ করেন স্পেন এবং মরোক্কোতে, এবং ১২০১ সালে তিনি সিদ্ধান্ত নেন মক্কা তীর্থযাত্রার।চেয়েছিলেন, রাজনৈতিক উত্থান থেকে রক্ষা পেতে। দূরে থাকতেও চেয়েছিলেন স্পেন এবং জ্ঞানী ওলামাদের সচেতন দৃষ্টি থেকে, যারা সুফী পণ্ডিতের কাছে স্পষ্টত গোঁড়া ধার্মিক। প্রাচ্যে তিনি কেবল মক্কাই সফর করেননি, যেখানে যেতেন, থাকতেন এবং শেখাতেন। কিন্তু সিরিয়া, ইরাক এবং এশিয়ার মাইনর অঞ্চল ততক্ষণে তাঁর সাত্ত্বিক জীবনকে, একজন শিক্ষক এবং চিন্তাবিদ হিসাবে মহান খ্যাতি এনে দিয়েছে। তিনি যেখানেই যেতেন, তাঁকে বিভিন্ন উপহার দেওয়া হত যা পরে তিনি দরিদ্রদের হাতে তুলে দিতেন।
তিনি নিজেই নিজের লেখা প্রায় তিন শতাধিক গ্রন্থের হিসেব উল্লেখ করেছেন। এগুলি ধর্মতত্ত্ব, রহস্যবাদ, জীবনী, দর্শন, কুরআনের ভাষ্য এবং কবিতার বই। ইবনে আরবী ১২৪০ সালে দামাস্কাসে মারা যান, যেখানে তাঁর সমাধিটি এখনো বর্তমান।
ইসলামের মরমীয়া তত্ত্ব , দর্শন এবং কাব্যের এক পথিকৃৎ হিসেবে ইবন আরবী বা ইবনে আরবী আজও স্মরণীয়। তিনি বেশ কিছু কবিতা লিখেছিলেন। তার মধ্যে নির্বাচিত কিছু কবিতা এখানে রাখা হল। বলা বাহুল্য, এই অনুবাদগুলি ইংরেজি থেকে বাংলায় করা হয়েছে।

আবহমানের পক্ষ থেকে
হিন্দোল ভট্টাচার্য

ইবন আরবীর নির্বাচিত কবিতা

১.
জানতাম যদি তারা জানে কিনা কে আছে আমার হৃদয়ে!
আর,যদি বা আমার হৃদয় জানত কী পাহাড় বাঁধা সেখানে
তাদের কি তুমি যত্নে রেখেছ না কি তারা গেছে মরিয়া?.
প্রেমের ভিতরে হারিয়ে গেলেই প্রেমিকেরা হয় বন্দী!


বিচ্ছেদের দিনে, তারাও ঘাতক বেশে
লাল সাদা উটগুলো মরণ দেখায়
অথচ তাহার পরে একদা ময়ূর
ডানা মেলে পাখা মেলে ঘুরে ফিরে যায়

সেসব ময়ূর যেন রাষ্ট্র, ক্ষমতার
নীল ও পান্নার প্রতীক চিহ্নের মতো
সিংহাসনের লোভ অধিকার বশে
বারবার তাকে কেন ক্ষমতা শেখায়

তিনিও কাচের পথে, একা ফুটপাত
আপন সূর্যের দেশ ইদ্রিসের আঁকা
তুমিও হত্যার ছলে নিহত দৃশ্যের
যেভাবে জীবন বোঝে প্রকৃত যীশুকে

প্রতিটি হাঁটার পথ উজ্জ্বল আলোয়
অনুসরণকারীর। আমি মূসা যেন
নারীটি রোমের কন্যা, স্নেহ মায়া হীন
কক্ষটি নির্জন বলে একলা বেলায়
সমাধিফলকে লেখা ‘সে বন্ধুবিহীন’

দায়ূদের সব স্তবক, শিক্ষার্থীরাও
ইহুদি সেবক আর চার্চের ফাদার
বিস্মিত নয়নে দেখে বিচার ব্যবস্থা

বিচারক বিবেচক অঙ্গভঙ্গি দ্বারা
খুঁটিনাটি দেখে নেন সুসমাচারটি
তখন ডিকন আর পিতৃপুরুষের
পরিচয়ে পুরোহিত বিবেচিত হবে

রাজপথ ঘিরে রাখে পোষা সৈন্যদল
আয়োজনে অতিথিও প্রস্তুত রেখেছে

সমস্ত জীবন মোর যেন আত্মাময়
কন্ঠে ফুটে ওঠে মুক্তি, আকুতি আকুল
‘মুক্তি দাও মুক্তি দাও’ আলোক বর্তিকা

পথটি আঁধার মার্গ মন্দের ঝলকে
রক্ষা করো ইবলিস, লাল সাদা উট
আর তাহাদের চালক ছায়াকে


চড়াই-উতরাই ভেঙে আমিও চেয়েছি তাকে
অবস্থানে ছিল সেই নজদ, তিহামা
যেন সরু সীমারেখা, জরায়ুটি ভেঙে
জন্ম ছুঁয়ে চলে গেছে মেরামতহীন

হে আল্লা, আকবর মোর পথ বলে দাও
অপরাধ মুছে ফেলে আরও আলো দাও
দীর্ঘশ্বাস জমে ওঠে চোখ ভরা জল
প্রতিটি ফেরার মন, ফেরা চেয়ে বসে

উট যেন যাত্রাময় গোধূলি লগনে
গৃহ খোঁজে, মন খোঁজে প্রকৃত প্রেমিক…
অথচ প্রতিটি যাওয়া, বিদায় মূহূর্ত
আমাকে কাঙাল করে চিরবিরহীর…


আমার হৃদয় খুঁড়ে পথ লেখা হয়
আমাকে আহত করে, ধৈর্যহীন করে
সেসব যাওয়ার কাছে হৃদয় মরমী
মনটি গভীর হলে বিরহতে পুড়ে

জিজ্ঞাস্য আমার মন খোঁজ নেয় তার
জেনে নেয় বিশ্রামের অবসরস্থল
শিহ গাছটির নীচ নিষিদ্ধ দুপুর
থ মেরে যাত্রীটি তার মিঠা গন্ধ শোঁকে

আমিও হাওয়ার কাছে আদেশ উড়াই
বলি, ‘পরাভূত করো’ খাঁজর গাছের
ছায়াটি একান্ত করে যারা চেয়েছিল
বারবার আদেশের শমন পাঠাই

এবং একাকী যারা বান্ধববর্জিত
হৃদয়ের চোরা স্রোতে দুঃখের ধারা
শুকরিয়া দিও তাকে, একান্ত পিরিত
এ পথ একার জানি পথিকটি একা…

৭.

পরিবেশনের ছল, তাহাদের কাছে ডেকে আনে
বোরখা, হিজাবে ঢাকা চোখ, মুখ, অধিক মায়াবী
চুমু খাই ব্ল্যাক স্টোনটির ঠোঁটে আমিও প্রেমিক

প্রতিটি সূর্যের আলো মায়াময় অথচ শঙ্কিত
বিবেক জাগ্রত করো, জেগে ওঠো আত্মার আলোকে
আসলে ঘুমের রেখা মৃত্যুর মতন চুপচাপ
শান্ত, একা, নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে হাঁটে, দেখে আমাদের

আমরাও হত্যাকারী। কত শত উচ্চাকাঙ্খী আশা
নুড়ি পাথরের পাশে রাখি, আঁকি রক্তের আদল
জানে সব ‘মিনার আল-মুহসাবে’ মৃত শব, দেহ…

বিচ্ছুরিত হয় শোক, মৃতদের স্মরণ সভায়
রাম আর জামের পাহাড়, সরহাত আল-ওয়াদী
আরাফাত লেখে। গুছিয়েছে সৌন্দর্য আলোক
নত হয় তাঁর কাছে। মুগ্ধতার বশে। বারবার।

শিলার ভেতর থেকে ভেসে আসে জমজমের পানি…
তাঁবু পাতে। বসবাসে শান্তিপূর্ণ সহজ সুন্দরে
এখানে দুখের দিন ক্ষণিকের। শান্ত। ম্রিয়মান।
জরা নেই, শোক নেই। নারীদের দল যেন পরী
শান্ত, স্নিগ্ধ, আনন্দিত পুষ্প…

অন্ধকার, মৃত শোক এখানে অধরা, বিস্মৃতির
ঝরে পড়া চুল যেন। পোশাকের গায় লেগে থাকে,
ব্যথার অতীত…

২০

প্রেমের কাতর আমি যেন তার চোখভেজা পাতা
তার নাম করে তুমি দিও তবু আমায় সান্ত্বনা…
তাহার হাতের মায়া, শান্ত সুশীতল, ঘুমঘোর…
ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমাকে নিবিড় কবুতর…

পূর্বপুরুষের কাছে জমে আছে ঋণ, কন্যাসম
লালন পালন করে, পিতা যেন জন্মজন্মান্তের
যেন সেই হওদার কঠিন পুরুষ, বিবাহপ্রাক্কালে
বিবাহিত নারীদের কাছে পাতে আলোর শিঞ্জন

আলোময়, প্রেমিক পুরুষ সেই, হৃদয়বকাশে
আমার দু’চোখে ভোর দেয়,আলো, মুগ্ধ দিবাকর!

রামার বিধ্বস্ত ঘরে কারা যেন দাপাদাপি করে
কারা যেন নিদারুণ হাতে মেরে দেয় সুনিটোল স্তন…
স্নেহ নয়, মাতৃত্বের সুখ নয়… ফর্সা ড্যামেলাস!

আমি ও আমার বাবা সে ঋণে জড়িত, গাজেলার
মুক্তিপণে…পাঁজরে লুকিয়ে রাখি সুরক্ষা চারণ
আগুনের হলকা থেকে বেঁচে যায় সামান্য ভূমিটি
সেরকমই প্রতিটি লাগাম ধরো প্রেমিক আমার!

স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর ব্যবধান, দৃশ্য সুনিবিড়
প্রতিটি দৃষ্টিতে যেন আঁকা থাকে বাসস্থান ভূমি
তোমরা আমার বন্ধু, বন্ধনের সুতোয় জড়াও…
আমিও ছায়ার লোভে ঘুরে মরি। মায়া খুঁজি
খুঁজি সীমারেখা। আমার দরজায় এসো বন্ধু…
আবাসের কাছে নামো। কাঁদুক কাঁদুক ওঁরা, ওঁরা
সাহাবী দু’জন। কাঁদেনি কখনও কেউ এ ধ্বংসস্তুপে…
স্মৃতিবিজড়িত ভূমি, কান্না জমে আছে। চেষ্টা করো
আঁখিজলে ভরে যাক এ ধ্বংস ভূমি। নিদারুণ…
সুকঠোর ভাবে যদি জল নাই ঝরে নয়নের
তুমি কি আমাকে দিতে পারো লবনাক্ত ফোটা?
রূপকথা বলো। বল সেই হিন্দ ও লুবনা গল্পটি
শেখাও সুলায়মান, জায়নাব অথবা সি ইনানের
উপকথাগুলি… আমার চোখের জল, যদি ঝরে…
তারপর তুলে আনো হাজির ও জারুসের কথা…
কথা বল গ্যাজেলেস, চারণভূমিটি! বহুশ্রুত…

প্রতিটি কবিতা গাঁথা চিরায়ত সত্যের আধারে
প্রতিটি খবর জানে সুগভীর কবিতার মানে!
কায়েস ও লুবনার কাব্য যেন মায়া ও দারিদ্রে
ভরা ঘাইলান। শোক দাও শোক দাও অনন্তের
আকুল গলায় বাজে আমার আহত সুর, শব্দ…
মেয়েটির মতো সুস্পষ্ট ভঙ্গিতে হাঁটে,
রাজকীয় ( ইরাকের কন্যা)…
পারস্যের কোমল, রূপসী। শহরের শ্রেষ্ঠ নারী
ইস্রাফান জানে অন্যতম রূপসীর হাসি, মায়া…
মোর কন্যাটিও ইমামের। অথচ আমিই দৃঢ়
বিপরীত দৃষ্টি রাখি
ইয়েমেনের অপত্য আমি। আমি বিপরীতগামী…
এপথ কি কখনো এক হয়? হে আল্লা! যে পথ
বিরোধীর, মোড় নেয় দু দিকের বাঁকে, চিরকাল!
হে আল্লা! আঙুলের মাপ ছোট হয় অথবা বৃহৎ
কোনো শব্দ মিঠা, তেতো জিভের কল্যাণে, আবেগেরও
আল্লা হে, কল্পনা আঁকি, দেখি মিশে গেছে ইয়েমেন
এবং ইরাক একসাথে বন্ধুত্বের মতো, প্রিয়জনে…
আসলে কবিরা দূরদর্শী, তাও মিথ্যে শব্দ, কথা…
আমার কল্পনা ভাঙে, পাথরে আহত হই রোজ

উত্তরের দিকে প্লাইয়েড, সুহাইল দখিনের
বিবাহপ্রস্তাবে রাজি সুহাইল, ঈশ্বর কল্যাণে
শুধু চুক্তিপত্রে দান হয়ে যায় রাজ্য প্লেইডেস…

২৮.
ধাটাল- আজরার গজল বাজে আল-নাকা, লা লা মাঝে
ঘন গুল্ম, জটলার মধ্যে যেন চারণভূমিটি
গোপন।রহস্যময়। পাহাড়ের দিগন্তে রোমাঞ্চ
ওঠেনি নতুন চাঁদ , নাকি কোনো তারা… সীমানায়
আমার আশঙ্কা হয় অগ্নি পাথরের যে বিদ্যুৎ
কখনো হয়নি উপস্থিত, অথচ আমিই চেয়ে গেছি
আমার অনুভূতির জন্য এক প্রজ্জ্বলিত শিখা…

হে আমার অশ্রু, প্রবাহ। অমন চোখ…
ফেলো না’কো লবনাক্ত জল
হে আমার দীর্ঘশ্বাস, আরোহণ!
হে আমার বিভক্ত হৃদয়!
উটের চালক তুমি আরও ধীরে ধীরে যাও,
যে আগুন মোর পাঁজরের মধ্যিখানে, নিভে যাবে!
আমার বিভক্ত অশ্রু প্রবাহিত হলে ভয় পাবে…
অথচ শুরুর আগে, অশ্রু অপ্রতুল… চোখ নেই
তার বাসস্থান হোক তাই বাঁকানো বালির বিচে
মৃত্যুর বিছানা পাতো, আমার কবর সেইখানে
আল- আজরার পাশে জল, আমি ভালোবাসি যাকে
তারা আছে! তাদেরকে ডেকে আনো। কে করে সাহায্য…
যৌবন কামনা করে জ্বলন্ত যুবক! বরখাস্ত
করো তাকে! যার দুঃখ এনে দেয় বিভ্রান্তিসমূহ
সেই তাকে দেয় এ ধ্বংসের সবটুকু অবশেষ

অন্ধকারে একা চাঁদ, কতটুকু গ্রহণের ছলে
নেবে? রেখে যাও বাদবাদিটুকু। নতমুখ, দান
তুলে দাও তাঁহার পিছনে… পিছনের দিক থেকে
এক ঝলক, সুন্দর ভয়ংকর তিনি সৌন্দর্য পূজারি
আশাময় মন, সমর্পণ নিয়ে চাটুকারিতার মতো
তাঁকেও প্রত্যাশী করো, পুনরুত্থানের বোধগম্যে
তিনি সেই মৃতদেহ যিনি আল-নাকা, লা ই লা ই
মাঝে চিরনিদ্রারত। আমিও নিরাশ, যন্ত্রণায়
মরে গেছি, স্থির হয়ে আছে আমার জায়গাটিও
পুবের হাওয়ারা বলেনি কখনো সেই প্রতারণা
কল্পনামণ্ডিত। হাওয়ায় কথা ভাসে, কথা ওড়ে
প্রলুব্ধ আবেশে তুমি শব্দ শোনো, শব্দ ভাঙো আর
সত্য বলে মেনে নাও বাতাসের প্রলুব্ধতা, বাণী…

২৯

তাদের বাঁকানো ঠোঁট, গাল ছুঁয়ে দাউদের কাছ
থেকে ফিরে আসেন আমার বাবা, মুক্তিটুকু পেতে…

হালকা করে বাঁধা খোঁপার, নরম চুল বাঁক নেয়…
অহংকারী সূচিকর্ম আঁকা বস্ত্র পরিহিতজন
বিনয় এখানে নত, পূর্বপুরুষের দান যথা
নবীন আঙ্গিকে তারা তুলে দেয় নব উপহার
তাদের মুখের হাসি, আকর্ষণে প্রভূত উজ্জ্বল
ঠোঁট ভরা চুমু। সুধাভাণ্ড বুক। অঙ্গ নেচে ওঠে…
সুমিষ্ট কথার ধ্বনি ভরে দেয় কান, প্রাণ… যেন
জাদুকরী ভোর… রক্তিমপ্রভায় তারা লজ্জারুণ
ধার্মিক পুরুষ যারা, ভয়ভীত,সে হৃদয়েশ্বরী
অভয় মুদ্রায় প্রায় তুলে দেন বরমন্ত্র, ধ্বনি
মুক্তোঝরা হাসি দিয়ে, মুছে দেন দুর্বলের লালা
যুদ্ধের দৃষ্টিটি মুছে, যে হৃদয় যুদ্ধ বিগলিত
অভিজ্ঞতা বোঝে সেই। হৃদয়ের গোপন মর্মার্থও…
পূর্ণ বক্ষে তাদের বেজেছে আজ আলোকিত চাঁদ
নতুন, গ্রহণহীন… গ্রহণের যোগ্য, আলোময়
মেঘ ও বৃষ্টির দিন, বজ্রপাত, দীর্ঘশ্বাস ভাসে
আমার দু’জন বন্ধু… হে! জীবন অনুগ্রহকারী
আমার রক্তের ফোটা মুক্তিপণ সেই মেয়েটির

সম্প্রীতি এখানে নীতি, মিলনেরও, তাহাদের
না হয় আরব তিনি, বিদেশিও, শুধু জ্ঞানীকেই
ভুলে যায় সেই। বুভুক্ষিত চোখ তার, তরোয়াল
খোঁজে। খাড়া করে। শ্বাপদের মতো দাঁত লোভাতুর…

হে আমার বন্ধুগণ, হাজিরের যে চারণভূমি
তার পাশে থামো… অবসর নাও, থামো বন্ধুগণ…
তাদের জিজ্ঞাসা করি পালিত উটের দল কই?
পরিনতি তাদের বা কী! আমি তো ধ্বংসের, মৃত্যুর
গভীর গহ্বরে ডুবে, ঢুকে গেছি আজন্মের মতো!

আমার সমস্ত জানা ও অজানা দৃশ্য, সেই উট
দ্রুতগামী। তার কাছে রাখা আছে। অভিযোগভার…
উটটিও দ্রুততম, ফলত তাকত শক্তি তার
ক্রমহ্রাসমান! কোমরের চর্বি নেই! দুর্বলতা
ছুঁয়ে আছে ক্ষীণ পা’য়ে! ততক্ষণে আমি তাকে দেখি,
হাজিরের বালুকামালীতে… যুবকেরা উথালবেশী
আল -উথাইলে আসে। হঠাৎই তারা দেখে চাঁদ
ভয়ংকরতম! পাঁজরে জড়িয়ে রাখি তাহাদের…
প্রদক্ষিণে চাঁদ আসে চারপাশে ঘোরে। স্থির আমি,
তাহাকে ব্যতীত কোনও প্রদক্ষিণ নেই আমারও যে!
তিনি তাঁর পোশাকের ট্রেন দিয়ে, পায়ের ছাপ-টিকে
প্রভাবিত করে নেন। সফরের খোঁজ তুমি খোঁজো…
সন্ধানী গাইড যেন। অথচ প্রতিটি খোঁজ, খুঁজে
পেলে পরে হতবাক হও তুমিও রহস্য শেষে…

ঝুঁকে পড়া বৃক্ষশাখা যেরকম দোলে
তাদের বাঁকানো ঠোঁট চিবুকের প্রান্ত ছুঁয়ে যায়
আমার ঈশ্বর তুমি হয়ে ওঠো মুক্তিপণ সেরকম ঝুঁকে পড়ে গিয়ে

৪৯.
কে দেখাবে আমাকে তাহার রঞ্জিত আঙুলগুলি?
কে যেন দেখাবে আজ মধুমাখা জিভখানি তার?

উন্নত স্তনের মেয়েদের, মধ্যে সেই এক মেয়ে
তাদের করেন রক্ষা, মেয়েদের সম্মান সৌন্দর্য
আগলে রাখেন আরও যতটুকু কোমল, কুমারী…

শাখার উপরে চাঁদ, পূর্ণ, তাও ভয়
ডুবানোর …
আমার শরীরে দেশ আছে ; আছে সাজানো বাগান
নিষিদ্ধ ফাঁদেতে এসে পড়ে সেই কবুতর ঝাঁক

প্রতিটি আকাঙ্ক্ষা মৃত ভেবে আবেগ মিলায়…
প্রতিটি ভোগ্যের কাছে বাঁধা থাকে সময়ের ঋণ
বন্ধুটির জন্য শোক হয়, কাতরতা, দোষারোপও
করি সময়কে। তাঁর গুলি আমার
হৃদয়ে ঢোকে
তাকেও হত্যার ছলে গুলি করেছিল নির্বিচার
প্রতিবেশী থেকে দূরে, গৃহটি থেকেও দূরে তারা

আসলে প্রতিটি বিচ্ছেদের ক্ষণ,যেন আমাদের
মিলনেও বিচ্ছেদের ক্ষণ লেখে সময়ে আমার

আমার যন্ত্রণাটুকু তাহাকে সন্তুষ্টি দেবে! দেবে…
তাহার সন্তোষ নেবে কী আমার নিঃস্বতাটুকু!

৫৭

ওহে! উপায় আছে কী কোনো, আরও উজ্জ্বলতা ন্যায্যতাও
পেতে পারে ঝর্ণাগুলি? এমন আছেন কেউ কেউ?
দেখাতে পারেন যাঁরা তাঁর চিহ্নগুলো! আর আমি
বাঁকানো বালির তাঁবুগুলি, তার পাশে রাতে থামি!
দুপুরের ছায়ায় আশ্রয় দেবে কী আরাক গাছ!

আমার ভেতর অনুভবী কন্ঠস্বর বলেছিল,
‘যা অর্জনযোগ্য তার জন্য অবশ্য কামনা করো’!

আমার তোমার প্রতি ভালোবাসা পূর্ণ, পরিতৃপ্ত
হে আমার প্রত্যাশার শেষ! সেই ভালোবাসাটির
জন্য বারবার হৃদয় অসুস্থ মোর অসহায়ও

উন্নত আপনি, ভরা পূর্ণিমার মতো হৃদয়ের
অধিকারী। সেইখানে চাঁদ ওঠে, উত্থানের পরে
যা অস্ত যায়নি! হে সুন্দরী! মহিমায় অহংকারী…
মুক্তিপণ হব তাঁর! কেননা তোমার তুলনায়
কেউ নেই তোমার সমান! সমতুল্য নেই কেউ!

তাহার উদ্যানগুলি শিশিরের জলে ভেজা, স্নিগ্ধ
প্রস্ফুটিত পাপড়িগুলো, ভালোবাসা সৌন্দর্যবিলাসী
স্বাগত জানায় সব তাঁর এই ভালোবাসাটিকে

তোমার ফুলের রাশি হাসে…
তোমার গাছের ডাল, তাজা, যেদিকেই বাঁক নেয়
সেদিকেই গতিপথ বদলায় হাওয়ায় হাওয়ায়

প্রলোভনস্বরূপ এ তোমারও যে অনুগ্রহ লাভ,
তোমার বিদীর্ণ রূপ, হৃদয় বিদীর্ণ করে মোর
ছুটে যায় সজ্জিত নাইট যেন দুর্দশার’পর!

৬৫

তায়বার চোখ, কটাক্ষে ঝলসে ওঠে যেন ধারালো ব্লেডের ডগা…
এবং আমিও বুঝি আরাফাতে সে কী চায়..
অথচ আমার ধৈর্য নেই…

প্রতিটি প্রবাদে উল্লেখিত, সেই যে জামের রাত
এবং আমার সাথে তাহার প্রভূত মিল ছিল…

মেয়ের শপথে মিথ্যা, বিশ্বাসঘাতকেও বিশ্বাস যোগ্য না…

মিনায় প্রার্থনা মোর, যে কামনা অর্জন করেছি
জীবনের শেষ ক্ষণ অব্দি তা কী চলে যেতে পারে!

লা’লা তে তাহার প্রতি আমার যে প্রেম দুর্ণিবার…
সঞ্চারিত। সে জাঁকজমকপূর্ণ
চাঁদটি দেখায়।

তাঁহার হাতের গুলি বিদ্ধ করে রামের হৃদয়
এবং সাবাতে কুটিলতা ফুটিয়ে তোলেন তিনি…
সরান সে প্রতিবন্ধকতা, তিনি, আল- হাজিরের

তাহার মনের ভাব ভাবের অধিক যেন; যেন
ক্ষিপ্রতম বিদ্যুতের ঝলকানি বারিকের পরে…
তারফলে সব আল-গদাবাসি জ্বলন্ত অগ্নির
ন্যায় হ্রাস পায়! আর পাঁজরের মধ্যে যেন সেই
আবেগের ঝড় বয়েছিল তাহাদের বারবার

তিনিও তখন আন-নাকার নিষিদ্ধ গাছটিতে
উপস্থিত… বেছে নেন শোভন মুক্তোর সেরাটুকু
এবং ধাত- আল- আদাতে তিনি সে লুকানো সিংহের
ভয়ে পেছনে ফেরেন! ধু-সামালে তিনিই আবার
আমার রক্ত-প্রাণকে, তাঁর হত্যাকারী যে, তাকেই
জঘন্য দৃষ্টিতে সেই সমর্পণ তুলে দিয়েছেন

রক্ষিত চারণভূমিটির পরে দাঁড়ালেন তিনি
সর্তক দৃষ্টিতে তারপর সেইসব বাতিলের,
বাতিল সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে যতটুকু
বালি বাঁকে বাঁকিয়েছিলেন তাহার সিদ্ধান্ত সব

এবং আলিজে সে তাহার বিষয়টি এইরূপে
বাঁচিয়ে দিয়েছে, যেভাবে পাখির নখ থেকে মুক্তি পেলে
প্রতিটি কুটির চোখ পর্যবেক্ষকের দৃশ্য ভেঙে
বিরাট আকাশ আর টাওয়ারগুলি ভাড়া দেয়…

৭০

শপথ নিয়েছিল যারা, সেইসব চুক্তি গ্রহণকারীর
বাসভবনের দিকে এগিয়ে যাওয়া মেঘ ও বৃষ্টি
পড়তেই থাকে। তাদের ভূমির পরে বাতাসের
ঘ্রাণে নিঃশ্বাস ত্যাগ করো। যাতে এই ইচ্ছা হলে
মিষ্টি বাতাসের দল আপনাকে বলে দিতে পারে
তারা কোথায়, কীভাবে…

আমিও জেনেছি সব ইদানের নিষিদ্ধ সে গাছে
শিবির স্থাপন করেছিল তারা এবং যেখানে
আরার সে গাছগুলি বাড়ে শিহ এবং কাতম…

হে নক্ষত্র, প্রহরী

দ্রুতভাবে রমণীরা উটগুলি রাখে হাওদায়( নির্ধারিত কাজ)
তারমধ্যে পূর্ণ চাঁদ আর ছিল মার্বেল প্রতিমা
কথা দিয়েছিল, আমারই যে হৃদয়ের প্রতিশ্রুতি,
যে তারা আসবে ফিরে! প্রতারণা ছাড়া। ত্যাগ নয়
এরূপ প্রতিশ্রুতির… যখন সে আল-খয়ার্নাক
এবং আল- সাদির উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করেছিল
উদ্দেশ্য এবং ফিরিয়ে দিয়েছে মুখ। তখনই যে
আমি চিৎকার করে উঠি… বলি, ‘ধ্বংস, ধ্বংস…
তাঁহার উত্তর ছিল, বলেছিল ‘ তুমি ধ্বংসের ডাক দিও ‘
শুধু একবার নয়, চিৎকার করে বারবার
ধ্বংসের ডাক দাও…

আরক গাছের ঘুঘু, করুন আমার প্রতি দয়া
ভাগাভাগি করে শঙ্কা বেড়ে গেছে শুধু আপনারও
এবং তোমার কাতরাব, হে কবুতু, আকাঙখীও…
আর প্রেমিকের ফুলে উঠছে বর্ষার উত্তেজনা,
হৃদয় যে গলে যায়, ঘুম যায় কেটে, আমাদের
আকাঙ্ক্ষা ও দীর্ঘশ্বাস দুই গুণ হয়…

কবুতর বিলাপের জন্য মৃত্যু বেঁধে যায় আর
এবং আমরা তাকে, আমাদের বাঁচানোর জন্য
অনুরোধ করি কিছুক্ষণ! হাজিরের জাফিয়ার
কাছ থেকে পাই দম ফেলিবার মতো মেঘ ও বৃষ্টি

আপনার আত্মা যেখানে তৃষ্ণার্ত হবে আর…
মেঘগুলো তোমার পালিয়ে যাবে পূর্ব থেকে দূরে

হে নক্ষত্র প্রহরী, আমার, তুমি সহকর্মী হও
বজ্রপাতের উপর হও গুপ্তচর,হে জাগ্রত
মোর নিশাচর কমরেড হও…

রাতে ঘুমানোর ক্ষণে, ঘুমকেও স্বাগত জানান
এবং আপনি, আপনার মৃত্যু আগে, বসবাস
করতেন সমাধিগুলিতে…

যদি কোনও প্রেমিকা মেয়ের সাথে করতেন প্রেম…
তাহার প্রেমের মোহ আপনাকে সুখ দিত, দিত
আনন্দ অর্জন!

ঘনিষ্ঠতা ওয়াইনে মেশে উপহার, গোপন কথাটি
চাটুকারিময় পুরো চাঁদ…

অনুসৃজনে বেবী সাউ

CATEGORIES
TAGS
Share This
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
Checking your browser before accessing...