অজিত সিং বনাম অজিত সিং সপ্তত্রিংশতি পর্ব <br /> তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং সপ্তত্রিংশতি পর্ব
তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং দ্বাবিংশতি পর্ব তৃষ্ণা বসাক অজিত সিং প্রথমে ছিল বঙ্গলক্ষ্মী চানাচুর, তারপর এল আজাদ হিন্দ চানাচুর, তারপর একের পর এক বিপ্লব চানাচুর, সর্বহারা চানাচুর, উন্নততর সর্বহারা চানাচুর, এখন চলছে বিশ্ববাংলা। এখানেই কি ভাবছেন গল্প ফুরিয়ে গেল? এবার আসছে একে ফিফটি সিক্স চানাচুর। নাম যাই হোক, সোল এজেন্ট আমি।’ ‘বেওয়ারিশ’ গল্পের চানাচুরওলা এবার ঢুকে পড়েছে বাংলার শিল্পক্ষেত্র থেকে শিক্ষাজগতের ক্ষমতার অলিন্দে।খুন, যৌনতা, প্রতিশোধ, নিয়তিবাদের রুদ্ধশ্বাস সুড়ঙ্গে সে টের পাচ্ছে- -বহুদিন লাশের ওপর বসে বারবার হিক্কা তুলেছি আমরা -বহুদিন মর্গের ভেতরে শুয়ে চাঁদের মুখাগ্নি করেছি আমরা -অন্ধ মেয়ের মউচাক থেকে স্বপ্নগুলো উড়ে চলে গেছে (জহর সেনমজুমদার) এই সবের মধ্যে বাংলার কি কোন মুখ আছে আদৌ? থাকলে কি একটাই মুখ? না অনেক মুখ, সময়ের বিচিত্র রঙে চোবানো? বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী জুড়ে বাংলার অজস্র মুখের ভাঙ্গাচোরা টুকরো খুঁজে চললেন তৃষ্ণা বসাক, তাঁর নতুন উপন্যাস ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং’-এ । সব কথনই রাজনৈতিক, সেই আপ্তবাক্য মেনে একে কি বলা যাবে রাজনৈতিক থ্রিলার? সিটবেল্ট বাঁধুন হে পাঠক, ঝাঁকুনি লাগতে পারে। প্রকাশিত হল উপন্যাসের ৩৭তম পর্ব। এই উপন্যাসের সব চরিত্র কাল্পনিক।

৩৭

যারা এখানে বসে আছে, তাদের কোনদিন দেখেননি শতরূপা।দেখার কথাও নয়। কিন্তু রাস্তাঘাটে দেখা হতে পারত, হয়নি কোনদিন। এদের জুটিয়ে এনেছে সেই ছেলেটা, যাকে দিয়ে মাকে খবর পাঠিয়েছিলেন তিনি বেঁচে আছেন। ওর নামটা বারবার ভুলে যান তিনি, ঠিক ভুলে যান না, আসলে ওর নামটা তাঁর একটা যন্ত্রণাময় অতীতকে মনে পড়ায়। ওর নাম দীপ। তাঁর স্বামী, দীপনকেও তিনি তো দীপ বলে ডাকতেন। ভালো বেসে, ভালো না বেসে। ভালবাসা মরে গেলেও নাম থেকে যায়, ডাক থাকে না যদিও। দীপন, সেই সময়ের তাঁর দীপ, আবার বিয়ে করেছে। ওরা ধরেই নিয়েছে তিনি বেঁচে নেই আর। দীপন তাই বিয়ে করে নিয়েছে তার দীর্ঘদিনের সঙ্গিনীকে। হাসিই পেল ভেবে। দীপন তাঁর কাছে যা চাইত, নিঃশর্ত আনুগত্য, তার বর্তমান স্ত্রীর কাছে তা পাবে ভাবলে ভুল হবে। ভেবেই কুলকুল করে হাসি পেল তাঁর। যাক, দীপনকে নিয়ে তাঁর আর কোন ইন্টারেস্ট নেই। কিন্তু এই ছেলেটির নাম বদলাতেই হবে। কী বলে ডাকা যায়? মোমবাতি? টিউবলাইট? যাহ, সাড়াই দেবে না ও ছেলে। সস্নেহে ছেলেটির দিকে তাকান শতরূপা । তাঁর যদি সন্তান থাকত, তবে সে তো এর বয়সীই হত। ছেলেমেয়েকে তো ডাকনামেই ডাকে মায়েরা। দীপু। অনেক কাছের। দীপনের নামগন্ধ নেই এতে।
‘দীপু?’
ছেলেটির চোখে মুখে বিস্ময় খেলে যায়। ম্যাডাম তাকে বরাবর ‘এই ছেলে’ বলে ডেকে কাজ চালান।আজ একেবারে দীপু বলে ডাকলেন! সে খুশি হয়ে ওঠে এই ডাকে। বলে
‘বলুন ম্যাডাম’
‘নামের লিস্টটা দাও’
দীপু একটা প্রিন্ট আউট ধরিয়ে দ্যায়, পাশাপাশি ল্যাপটপটাও খোলে। ম্যাডামের খুব কাছে বসেছে সে। তাঁর খোলা চুল থেকে কি শ্যাম্পুর গন্ধ আসছে?ম্যাডামকে ভয় করে সে, ভালোও বাসে। তার চৌহদ্দির মধ্যে এমন কোন মহিলা সে দেখেনি, যিনি জীবনটাকে পুরো নিজের হাতে রেখে চলেছেন। যদিও ম্যাডাম কী করেন, কোন চাকরি করতে তো দেখাই যায় না, এত ভাল সাজানোগোছানো ঘরদোর, অথচ এরকম একটা পাড়ায় রয়ে গেছেন, সল্ট লেকে টেকে থাকতে পারতেন তো। এই টাকার উৎস কী, তাঁকেও তো টাকা দেন ম্যাডাম, বিনে পয়সায় খাটান না, এসব সে কিছুই জানে না। তার চেয়েও যেটা আদৌ জানে না, ম্যাডাম কী করতে চলেছেন? এতদিন ধরে একটু একটু করে যে কাজ সে করেছে, আজ সেই পুজোর প্রথম প্রসাদ। এই প্রথম মিটিং, ম্যাডাম যেমন চেয়েছিলেন, যাদের আনতে বলেছিলেন, তাদের এনেছে সে।
তালিকায় চোখ বুলিয়ে দেখেন শতরূপা। নাম, বয়স, পেশা, কনট্যাক্ট নম্বর সাজিয়ে সুন্দর করে ডেটাশিট তৈরি করেছে দীপু। গুছোনো কাজ। নামগুলোর ওপর চোখ বোলান তিনি, এদের কাউকেই তিনি চেনেন না, দরকার নেই চেনার। কাজ নিয়ে দরকার। হঠাৎ একটা নামে আটকে যান। এর কথা তো বলেননি দীপুকে। ও কী করে জানল? ওর কোন নম্বর ছিল না তাঁর কাছে। সেই সময় মোবাইল আসেনি হাতে হাতে। যদিও খুঁজে পাওয়া আদৌ শক্ত নয়। সরকারি চাকরি সহজে ছাড়ে না কেউ। বিয়ে করেছে নিশ্চয়, আর পত্রিকাও হয়তো বার করে না, কবিতা লেখে না, কোন স্বপ্নই অবশিষ্ট নেই। একদম বোতাম আঁটা জামার নিচে শান্তিতে শয়ান বাঙালি। ওকে দিয়ে কোন কাজ হবে না। তিনি এমন সব লোকদের চাইছেন, যাদের মধ্যে এখনো আগুন বেঁচে আছে।
যে নামটা দেখে চমকে ওঠা, চোখ তুলে সেই নামটাকে খুঁজতে চেষ্টা করেন, পারেন না। কারণ এখানে যারা এসেছে তাদের কোন মুখ নেই। সবাই মুখোশ পরা, তিনিও মুখোশ পরা। যাতে কেউ কাউকে চিনতে না পারে, তাই এই ব্যবস্থা। প্রত্যেককে একটা কোড দেওয়া হয়েছে। সেই কোড ধরেই ডাকা হবে।বাইরে বেরিয়ে এরা যদি পরস্পরের সঙ্গে দেখা হয়ও, যাতে চিনতে না পারে তার জন্যে এই ব্যবস্থা। কিন্তু গলার স্বর কীভাবে চাপা যাবে? স্বর শুনেও তো ধরে ফেলতে পারে কেউ। তার জন্যে শতরূপা ঠিক করেছেন, এদের সঙ্গে কথা বলবেন পাশের ঘরে আলাদা আলাদা করে।আর এই ঘরে কেউ কথা বলবে না, বারণ করাই আছে। বলতে বললে তবেই মুখ খুলবে।দীপুকে তিনি ইশারা করে বলেন, তিনি পাশের ঘরে যাচ্ছেন। পাঁচ মিনিট পর থেকে যেন পাঠিয়ে দ্যায়। যেরকম সিরিয়ালি আছে, সেরকম ভাবে।
পাশের ঘরটি সামান্য ছোট, কিন্তু অনেক বেশি ঝকঝকে করে সাজানো। ডুবে যাওয়া সোফা, কাচের সেন্টার টেবিল, দেওয়ালে গণেশ পাইন, একদিকে স্পাইরাল বুক কেসে, তাঁর সবসময়ের সঙ্গী বইগুলো। কোটি যোগিনীর গলির চেহারা যাই হোক, এর ভেতরে এসে সবার চোখ কপালে উঠবে। পাঁচ তারা না হোক, তিন তারা হোটেলের মতো ব্যবস্থা। অবশ্য কেই বা আসে এখানে? বাইরের লোক তো কেউই না, দু চারজন খুব কাছের লোক নিয়ে এত বছর তিনি ছায়াযুদ্ধ করে যাচ্ছেন। বাইরের লোক বলতে বহু বছর পর এল পদ্মনাভ আর এই দীপু। পদ্মনাভর আসাটা তো প্ল্যান করা ছিল না। কিন্তু এই মহাবিশ্বের কিছুই নাকি এমনি এমনি ঘটে না। সব কিছুর কারণ থাকে। যে বলত, তার মুখটা স্পষ্ট মনে আছে শতরূপার। তার নামটাও। তার কাছে এসব শিখতেও শুরু করেছিলেন তিনি। নেশা হয়ে গেছিল। নিজের ভবিষ্যৎ জানার নেশা। সেই নেশা ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর চারপাশে। রেজিস্ট্রার থেকে নেতা, মন্ত্রী থেকে সহকর্মী সবাই তাঁর চারপাশে ঘুরত। কে বলবে এরা সবাই দাস ক্যাপিটাল পড়েছে?না পড়ুক শুনেছে তো অন্তত। যারা দশকের পর দশক দেওয়ালে লিখে এসেছে, মার্ক্সবাদ সত্য, কারণ তা বিজ্ঞান, তারাই নিজেদের ভবিষ্যৎ জানার জন্যে পাগল হয়ে উঠল। সেই প্রথম শতরূপা দেখলেন, তাঁর শরীরের আকর্ষণ তুচ্ছ হয়ে গেল মানুষের কাছে কখনো কারো সঙ্গে উইকেন্ড কাটাতে গেলে, আগে যে সারা রাত শতরূপার শরীরে ডুবে থাকতে চাইত, সে তাঁর পিঠে জন্মছক বিছিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে চাইত, তার জন্মস্থানে কোন গ্রহ ছিল, বুধ শুক্রের এখন অবস্থান কী, রাহু, কেতু কী খেলা খেলছে। পিঠের ওপর অন্যদের ভাগ্য নিয়ে শতরূপা ঘুমিয়ে পড়তেন। তাঁর শেষ পর্যন্ত বিরক্তই লাগতে শুরু করেছিল। এই নেশা সবাইকে তিনিই ধরিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর আর এসব ভালো লাগছিল না। যদিও প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছিল এটা তাঁকে বিরাট মাইলেজ দিচ্ছে। আর এর শুরুটা হয়েছিল সেই লোকটার হাতে, যার সঙ্গে আলাপ হবার কোন কথাই ছিল না তাঁর। আমরা কোন পথে হাঁটব, জীবনের পথে আমাদের কার কার সঙ্গে দেখা হতে পারে, তা অনেকটাই ঠিক করে দ্যায় তার পরিবার পরিবেশ, শিক্ষা দীক্ষা, স্কুল কলেজ, সামাজিক স্তর, অর্থনীতি। শতরূপার তো কোন ভাবেই সেই লোকটার সঙ্গে দেখা হবার কথা নয়। তাঁর বাবা মা দুজনেই দীক্ষিত বামপন্থী। ছোট থেকেই বাবা বা মা কাউকে পুজো করতে দেখেননি তিনি। তাঁকে কখনো শেখানো হয়নি ‘ঠাকুর, নমো করো’, তাঁর দিদা মাকে বলে বলে হাল্লাক হয়ে গেছে, ‘ওরে সংসার করছিস যখন, বাচ্চাও হয়েছে, বাড়িতে একটা লক্ষ্মীর সিংহাসন পাত, আমিই সব করে দিয়ে যাচ্ছি, তুই শুধু দুবেলা ধূপ দেখিয়ে একটু জল বাতাসা দিবি আর বৃহস্পতিবার বৃহস্পতিবার একটু চাল কলা পান সুপুরি দিয়ে পুজো করে শেষে লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়বি’। মা কানেও নিতেন না সেইসব কথা। বলতেন ‘মা, আমি একটা লক্ষ্মী না, অনেক অনেক লক্ষ্মী সরস্বতীর পুজো করি, যাদের এক মুঠো চাল জোটে না দিনান্তে’। যদিও ছোটবেলায় দিদার বাড়ি গিয়ে প্রসাদ খেতে ভালো লাগত তাঁর। নিজেদের বাড়িটাকে ন্যাড়া ন্যাড়া মনে হত বড্ড। দু একবার অভিযোগও করেছেন মার কাছে। মা হেসে এক রাশ ছবির বই ধরিয়ে দিয়েছেন। সুকুমার রায়, লীলা মজুমদার যেমন, তেমনি ভস্তক, রাদুগা, প্রগতি প্রকাশনীর রঙ্গিন ছবিতে ভরা বাচ্চাদের কত বই। আর শুধু গল্প নয়, কত বিচিত্র বিষয় তাদের। মনে আছে একবার জন্মদিনে পেয়েছিলেন ভেরা চ্যাপলিনার ‘আমাদের চিড়িয়াখানা’। লেখিকা ছিলেন চিড়িয়াখানার এক কর্মী, তাঁর জীবজন্তু দেখাশোনার অভিজ্ঞতা নিয়ে বই। এখনো ছোটদের উপহার দেবার মতো বই বললে সেটাই মনে পড়ে তাঁর। যাঁরা ভাবেন ছোটদের লেখা মানেই কাল্লুমামার ভাঁড়ামি, নয়তো থ্রিলার বা ভূত, তাদের জন্যে করুণা হয় শতরূপার। ডেনমার্কের বিখ্যাত শিক্ষাবিদ গ্রুন্ডভিগ বলেছিলেন বাচ্চারা সবচেয়ে বেশি শেখে একজন বড়র সান্নিধ্যে তার কাজ দেখে। অর্থাৎ জীবন থেকে। ‘আমাদের চিড়িয়াখানা’ সেই জীবনকেই প্রসারিত করেছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সঙ্গে সঙ্গে সেই সব মূল্যবোধেরও পতন হল যেন। বামপন্থীর সঙ্গে আর দক্ষিণপন্থীর তফাত রইল না। ‘ওটা আমার স্ত্রী করেন’ বলে বাড়িতে পুজোর দায় এড়িয়ে গেলেও, হাতে যে অনেকেরই গুচ্ছের পাথর, তা লুকনো যাবে কী করে? তাঁর মনে পড়ে খুব ছোটবেলায় একটা সময় তাঁরা কমিউনে কাটিয়েছেন। একটা বাচ্চার পক্ষে খুব আনন্দময় ছিল সেই পরিবেশ। সেটা কলকাতাও নয়, মেদিনীপুর টাউনের একটা জায়গায়। কী খাওয়া দাওয়া হত, কোথায় শুতেন এইসব যেন খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। শুধু মনে পড়ে খেলা আর খেলা। একা একা নয়, সবাই মিলে। মণীন্দ্র গুপ্তের ‘অক্ষয় মালবেরি’তে যেমন আছে।

‘Here we go round the Mulberry bush
The Mulberry bush
The Mulberry bush
Here we go around The Mulberry bush
So early in the morning

আমরা ছাড়তাম না কিছুই। বসন্তকালে রক্তিম পলাশ আর শীতের মাঠে যেতে যেতে সাদা দ্রোণফুল তুলে তাদের অকিঞ্চিৎকর মধুও চুষতাম। সেই কণিকামাত্র মধুও জিভের ডগায় মিষ্টি স্পর্শানুভূতি দিয়ে মিলিয়ে যেত। তাও কত সুখ।’
দ্রোণ ফুল কেমন তা জানেন না অবিশ্যি, কিন্তু রংগন ফুলের মধু চোষার কথা খুব মনে আছে। আর আমরুল পাতা তুলে না ধুয়েই মুখে পুরে দেওয়া, কী দারুণ টক টক খেতে, মুখের সব বিস্বাদ কেটে যায়।
শতরূপার মনে আছে সত্যিই অক্ষয় মালবেরির মতো সব পাতা তুলে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতেন সে সময়। এমনকি উঠোনের এক কোণে কালমেঘ পাতার গাছ ছিল, সেই পাতা দিয়ে নাকি জ্বরের ওষুধ হয়, কতবার তুলে খেয়েছেন, সে ভয়ঙ্কর তেতো, তবু খেয়েছেন মুখের কোন বিকৃতি ছাড়াই। তাঁর মনে হয়, এই যে জীবনের নানা স্বাদ, তেতো, মিস্টি, কষটা, ঝাল, নোনতা- এসব খুব ছোট থেকেই বাচ্চাদের খেতে শেখানো দরকার। তাহলে তারা পরে জীবনটাকে খুব সহজ ভাবে নিতে পারে। তিনি কোন একান্নবর্তী পরিবারে বড় হওয়ার সুযোগ পাননি। পার্টি করা, চাকুরে স্বাধীনচেতা মেয়েকে বিয়ে করার জন্যে দাদু ঠাকুমা বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ
করেছিল। মায়ের দিকে দিদা বেঁচে ছিলেন, তাও অল্প দিন। তাই মামা বাড়ি, বা দাদুর বাড়ি, অনেক কাজিন এইসব ঘন সম্পর্ক দেখার সুযোগ হয়নি তাঁর। কমিউনে থেকে তার বহু গুণ মানুষের সঙ্গ পেয়েছেন তিনি। স্মৃতিতে অক্ষয় হয়ে আছে একটা বিরাট পরিবার। দোতলা বাড়ির ওপর নিচ মিলিয়ে অনেকগুলো ঘর। নিচে বিরাট উনুনে রান্না হচ্ছে। কে রাঁধবে, কে কুটনো কুটবে, কে ঝাঁট দেবে, কে পরিবেশন করবে- সব ভাগ করা ছিল আর সেইসব কাজ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করা হত, যাতে কারো একঘেয়েমি না লাগে। প্রথম দিকে বাবারা একটা রুটিন করে দিয়েছিলেন। পরে মায়েরা নিজেরাই সব ঠিক করে নিতেন, এমনকি মাঝে মাঝে ছেলেদেরও রান্না করার কাজ পড়ত, তখন একটা বড় ঘরে মেঝেতে ঢালাও বিছানায় মায়েরা বসে আড্ডা দিতেন বা গল্প শোনাতেন বাচ্চাদের।
তাঁর কখনোই মনে হয়নি, এঁরা তাঁর নিজের মাসী, জেঠি বা কাকী নন। মা যেমন শেখাতেন সেইভাবে ডাকতেন তাঁদের, যামিনীমাসী, রানি কাকিমা, মিলুপিসি- এই ডাকগুলো এখনো মনে আছে। তাঁকে দেখলে কি চিনবে এরা? বেঁচে আছে কি না কে জানে। এদের কথা ভাবলেই নিজের মার কথা মনে পড়ে। মা, মা কেমন আছে? বেঁচে আছে জানেন। কিন্তু কীভাবে? একা একা কী করে কাজ করছে? মার কি তাঁর ওপর খুব অভিমান হয়? তিনি যদি একদিন ফোন করেন, তো কী হয়?

ঐ বাড়িটায় অনেকগুলো বাচ্চা মিলে খুব মজা হত। পেছনের উঠোনে একটা ইঁদারা ছিল, একটা পুকুর ছিল ঘাটওলা। পুকুরে পডে যাবার ভয়ে মা আটকে রাখতে চাইলেও পারতেন না। পল্লবকাকু হেসে বলতেন ‘বউদি ভাববেন না, ওদের জীবন সমুদ্রে সাঁতার কাটতে দিন একা একা। তবেই মানুষ হবে’ মনে আছে মা সে সময় তেমন রান্নাবান্না জানতেন না, কিন্তু সোভিয়েত নারী পড়ে খুব সুন্দর খাসির মাংসের ঝোল রাঁধতেন। আলুও দিতেন। শতরূপা একটা আলু আর একটু মেটে পেলে কিছু চাইতেন না। মা আগে থেকে মেটে গুলো সরিয়ে রাখতেন বাচ্চাদের জন্যে।যদিও বাবা সেটা পছন্দ করতেন না একদম। বলতেন ‘নিজের মেয়ের জন্যে যদি আলাদা করে কিছু সরিয়ে রাখো, তবে তোমার জায়গা এই কমিউন নয়’ এরকম অবশ্য মা একবার দুবার শুনেছে। তারপর থেকে মা নিজের মেয়েকে স্পেশাল আদর দেবার একটা অন্য টেকনিক বার করেছিল। মা টাউন থেকে ভেতরে একটা স্কুলে পড়াত। এক একদিন মা তাঁকে নিয়ে যেত আর যাতায়াতের পথে চকোলেট কিনে দিত। তখন টাউনের একটা দুটো দোকানেই ভালো চকোলেট পাওয়া যেত।চকোলেটের থেকেও মার সঙ্গে ওই মুহূর্তগুলো উপভোগ করতেন শতরূপা। পরে তাঁর মনে হয়েছে, মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই এইভাবে একসঙ্গে থাকতে পারে না। তারা বিশেষ হতে চায় আর আজকের প্রযুক্তি তাকে বিশেষ হবার সুযোগ করে দিয়েছে।বিশেষ করে ভারতীয় মায়েরা সবসময়ই তাদের বাচ্চাদের একটু আলাদা করে যত্ন করতে চায়। আর তাই কি এদেশে কমিউনিজম আরও বিস্তার পেল না? কে জানে। তবে কমিউনে খুব বেশ দিন থাকা হয়নি। শতরূপার খুব অসুখ হল। কলকাতায় আসতে হল। ওখানেও নানান সমস্যা হচ্ছিল সংগঠনের। শতরূপার কাছে সবাই আসতে লাগল মধুলোভী মৌমাছির মতো। দ্রুত উত্থান হল তাঁর। আর সেটাই তাঁর কাল হয়ে দাঁড়াল।
ওরা তাঁকে যেদিন তুলে আনল, সেদিন না তাঁর কাছে ব্যাংকের পাস বই, না কোন পরিচয় পত্র। হাজার খানেক টাকা ছিল। সেই অবস্থা থেকে তিনি কী করে উঠে এলেন আবার? এই প্রশ্ন তো করবেই সবাই। না, পদ্মনাভ করেননি। তিনি তো নিজের জগত ছাড়া কোনদিকে চান না এই কারণেই তো আজ এই অবস্থা।
দীপু আসে, আর খালি এদিক ওদিক চায়। ও সোনাখালি থেকে কম্প্যারেটিভ পড়তে কলকাতা এসেছিল। শহর গ্রামের প্রবল বিভাজন দেখে থকে গেছে। এত ট্রোল হত যে পড়া ছেড়ে চলে যাবে ভেবেছিল। মেধাবী ছেলে, কিন্তু দেখনদারি নেই, ইংরেজি বলতে পারে না। গ্র্যাজুয়েশনের পর কী করবে ভেবে পাচ্ছিল না, গ্রামে ফিরে গেছিল। সেখানেই একটা লাইব্রেরি করতে গিয়ে আলাপ। খুব পছন্দ হল ওকে। তিনি যখন হারিয়ে যান, ও খুব ছোট, ওর জানার কথা নয়। বুদ্ধিমান কারো পক্ষে তাঁকে চিনে ফেলা অসম্ভব নয়। আর সেই সঙ্গে এটাও মনে হবে, যে মানুষটা প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় অন্তর্হিত হয়েছিল, সে কী করে এইভাবে বেঁচে থাকতে পারে? এই টাকার উৎস কী? নিজে প্রথমে কিছু মনে করতে পারতেন না শতরূপা। তাঁর কানে শুধু একটা কণ্ঠস্বর বাজত। সব কিছুর কারণ থাকে। কারণ ছাড়া এই মহাবিশ্বে একটা পাতাও নড়ে না।
কোথায় কোথায় ছিলেন এতদিন তিনি?

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
404 Not Found

Not Found

The requested URL was not found on this server.


Apache/2.4.41 (Ubuntu) Server at hacklink.site Port 80