অজিত সিং বনাম অজিত সিং <br />  ত্রয়োদশ পর্ব <br /> তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং
ত্রয়োদশ পর্ব
তৃষ্ণা বসাক

প্রথমে ছিল বঙ্গলক্ষ্মী চানাচুর, তারপর এল আজাদ হিন্দ চানাচুর, তারপর একের পর এক বিপ্লব চানাচুর, সর্বহারা চানাচুর, উন্নততর সর্বহারা চানাচুর, এখন চলছে বিশ্ববাংলা। এখানেই কি ভাবছেন গল্প ফুরিয়ে গেল? এবার আসছে একে ফিফটি সিক্স চানাচুর। নাম যাই হোক, সোল এজেন্ট আমি।’ ‘বেওয়ারিশ’ গল্পের চানাচুরওলা এবার ঢুকে পড়েছে বাংলার শিল্পক্ষেত্র থেকে শিক্ষাজগতের ক্ষমতার অলিন্দে।খুন, যৌনতা, প্রতিশোধ, নিয়তিবাদের রুদ্ধশ্বাস সুড়ঙ্গে সে টের পাচ্ছে- -বহুদিন লাশের ওপর বসে বারবার হিক্কা তুলেছি আমরা -বহুদিন মর্গের ভেতরে শুয়ে চাঁদের মুখাগ্নি করেছি আমরা -অন্ধ মেয়ের মউচাক থেকে স্বপ্নগুলো উড়ে চলে গেছে (জহর সেনমজুমদার) এই সবের মধ্যে বাংলার কি কোন মুখ আছে আদৌ? থাকলে কি একটাই মুখ? না অনেক মুখ, সময়ের বিচিত্র রঙে চোবানো? বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী জুড়ে বাংলার অজস্র মুখের ভাঙ্গাচোরা টুকরো খুঁজে চললেন তৃষ্ণা বসাক, তাঁর নতুন উপন্যাস ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং’-এ । সব কথনই রাজনৈতিক, সেই আপ্তবাক্য মেনে একে কি বলা যাবে রাজনৈতিক থ্রিলার? সিটবেল্ট বাঁধুন হে পাঠক, ঝাঁকুনি লাগতে পারে। প্রকাশিত হল উপন্যাসের ত্রয়োদশ পর্ব।

(পূর্ব প্রকাশিত-র পর)

১৩

প্রদীপ্তর মনে পড়ে যায় এই লেকচারারশিপের পেছনে দৌড়তে গিয়ে সন্তানভাবনা কেবলই পিছোচ্ছিল তারা।কখনো কখনো সিরিয়াসলি ভাবলেও আবার একটা পোস্টের বিজ্ঞাপন এসে গিয়ে সব ঘেঁটে দিচ্ছিল। দোলন আবার নতুন আশায় বুক বাঁধছিল।পুরনো ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে নতুন সকালে জাগতে চাইছিল।মনে মনে চুলচেরা হিসেব কষছিল এবার ওর কেন হল না, কোথায় কোথায় ওর ত্রুটি ছিল।বার বার রিওয়াইন্ড করে ইন্টারভিউটা দেখতে চাইছিল, দেখছিল ওর ডিপার্টমেন্টের হেড ওকে কীভাবে সূক্ষ্ণভাবে চেটেছেন, ডিন, ভিসি দুজনের শরীরি ভাষাতেই অস্বস্তির ছাপ স্পষ্ট ছিল। ওদের চোখে ঝুলে ছিল একটা প্রশ্ন ‘ কেন খামোখা আমাদের সময় নষ্ট করছ ঝিংকু মামনি? যাও গিয়ে মন দিয়ে ঘর সংসার করো গে যাও’।
কমিটি রুম নম্বর ওয়ানে ঢুকেই একটা বৈরিতা, একটা হিংস্রতার তরঙ্গ ওর দিকে ধেয়ে আসছে, টের পেয়েছিল দোলনচাঁপা। সেটা এত সূক্ষণ যে প্রমাণ করা শক্ত। আজকাল কি ইন্টারভিউর ভিডিও হচ্ছে? এমন একটা প্রস্তাব ই সি মানে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের মিটিং-এ উঠেছিল, জানে দোলন। প্রদীপ্ত ঠিক সরাসরি বলেনি, কিন্তু কারো একজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল, কানে এসেছিল। সেটা কি বাস্তবায়িত হয়েছে? হলেও যে ইতর বিশেষ কিছু হবে না, তা বোঝে দোলন। পুরো প্রক্রিয়াটা হয় একটা অত্যন্ত সুপরিকল্পিত হত্যার চক্রান্তের মতো। হেডের একজন প্রার্থী ঠিক করা থাকে, সেই অনুযায়ী ঘুঁটি সাজানো হয়। এক্সপার্টের নামও ঠিক করে ডিপার্টমেন্ট, বকলমে হেড। সেই হিসেবে এক্সপার্টদের পটানোর ছক কষা হয়।কেউ মদে তুষ্ট, কেউ নারীমাংসে। এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে তাঁদের হোটেলে তোলা এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা সবই হেডের মাথাব্যথা। কারো আবার ধর্ম-ধর্ম বাতিক থাকে। বায়না থাকে দক্ষিণেশ্বর, বেলুড়, কালীঘাট ঘুরিয়ে দেবার। কলকাতা তো রোজ রোজ আসা হবে না।আবার কেউ কেউ ফ্যামিলি নিয়ে আসেন। সেক্ষেত্রে চিড়িয়খানা, জাদুঘর, নিকো পার্ক, ইকো পার্ক দেখানো দস্তুর। যে দেবতা যাতে সন্তুষ্ট। এইভাবে দশোপচারে পুজো করে তাঁদের বলির জন্যে তৈরি করা হয়।আর এই পুরো প্রক্রিয়াটা যাতে সুষ্ঠুভাবে উতরে যায় তার দায়িত্বে থাকেন মনোজিত কুমার মাল, নীলাব্জ চ্যাটার্জি, পরমপ্রিয় বক্সী আর সমরেশ দাস। এরাই ভিসি, ডিন, আলিমুদ্দিন অব্দি যন্ত্রটা মসৃণ রাখে।এরা নিশ্চিত করে যাতে হত্যা হয় অথচ মাটিতে রক্ত না পড়ে। হত্যাই, তবে যে মরল সেও বুঝতে পারে না, এত নিখুঁত অপারেশন। আর মজার কথা হল, বলি দেওয়া হবে প্রার্থীকে, কিন্তু কাঁঠালপাতা খাওয়ানো হয় এক্সপার্টদের।নইলে দুজন যে বাইরের এক্সপার্ট আসেন, তাঁরা তো ওকে চেনেন না, তাঁরাও ওকে এত লাঞ্ছিত করতেন না, যদি না কোন ফিডব্যাক থাকে। কোন টেকনিকাল প্রশ্ন না করে ওকে বারবার অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করা হচ্ছিল, ওর কেরিয়ারের ব্রেক নিয়ে খোঁচানো হচ্ছিল।
তবে সব এক্সপার্টকে কাঁঠালপাতা খাওয়ানো যায় না। যেমন পদ্মা বিশ্বেশ্বরন। তিনি আসা মানেই হেডের পরিকল্পনা বানচাল। বহু তর্কাতর্কি শেষে এন এফ এস হয়ে যাওয়া। মানে নট ফাউন্ড সুটেবল। কোন যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি এই অজুহাতে ইন্টারভিউটাই বাতিল হয়ে যায়।তাই সব হেডই পদ্মাকে এড়িয়ে চলত। তামিল এই মহিলাকে বাগে আনানো তাদের কর্ম নয়। ইনি মদের বোতল কিংবা সুন্দর পুরুষ, কালীঘাট কিংবা চিড়িয়াখানা- কোন টোপই গেলেন না। একেবারেই নো-ননসেন্স পার্সন, আসেন , কাজ সারেন, ফিরে যান। শপিং করার থাকলে নিজেই ব্যবস্থা করে নেন, সবটাই নিজের পয়সায়। এহেন মহিলাকে কে পছন্দ করবে? তাই ঘোষ থেকে পাল পর্যন্ত সব হেডেদের নয়নের মণি ছিল পয়রা আর দুগগল। এরা গোপালের মতো সুবোধ বালক। যেখানে সই করতে বলা হয় সেখানেই সই করে। দুগগল কট্টর নিরামিষাশী।মদও ছোঁয় না। তবে নারীসঙ্গ পছন্দ করে, আর ধর্মেও মতি খুব। দোলনের মনে আছে একবার ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ওর কপালে কালীঘাটের মেটে সিঁদুর দেখেছিল।সিঁদুর লেপা মাংসল লোকটা দোলন ঢুকতেই জুলজুল করে তাকিয়েছিল ওর দিকে। ভিসি আর ডিন চোখে চোখে ইশারা করেছিলেন। হেড পালের ঠোঁটে খেলে গিয়েছিল তৃপ্তির হাসি। তাকে বধ করলেই কাজ হাসিল- এমন একটা ভাব ছিল সেই হাসিতে। আর পয়রার লক্ষ্য হল যেকোন ভাবে ওর জামাইকে ইউনিভার্সিটিতে ঢোকানো। সেই কোন ধেড়েধেড়ে গোবিন্দপুরে পড়ে আছে জামাই বাবাজীবন, একটা অনামী কলেজে।

দোলন ভেবেছিল এই ইন্টারভিউটা দিয়ে নিয়েই একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। ওর এক মাসী ছিল। বিয়ের অনেক বছর পরেও মাসী মেসোর কিছুতেই বাচ্চা হচ্ছিল না। পরীক্ষা করে দেখা গেল মাসীর জরায়ুতে কীসব ত্রুটি। অপারেশন লাগবে। বাচ্চার আশায় একটা করে অপারেশন, তারপর সন্তানের চেষ্টা, আবার ব্যর্থতা, আবার একটা অপারেশন। ওদের সারাটা জীবন এইরকম কাটাছেঁড়া করেই কেটে গেল, জীবনের বাকি আনন্দের দিকে ওরা তাকাতেই পারল না।ওরা তো বাচ্চা ছাড়াও শুধু নিজেদের নিয়েও সুখী হতে পারত।কত কী করার আছে পৃথিবীতে, কত কী চরিতার্থতা আছে জীবনের। তাছাড়া ওরা তো বাচ্চা অ্যাডপ্টও করতে পারত ।শিশুর কলতানে ভরে উঠতে পারত ঘর, নাই বা হল নিজের রক্তের। দোলনও লেকচারারশিপ নামের বুনো হাঁসের পেছনে দৌড়তে গিয়ে নিজেকে কাটাছেঁড়া করতে করতে চলেছিল। টেরও পায়নি জীবনের প্রাইম টাইম, সোনালি সময়টা কীভাবে হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। সেই যে একটা পাতি জোক আছে, সময় আর আইসক্রিম- কোনটাকেই ধরে রাখা যায় না। ছ ছটা ইন্টারভিউ হয়ে যাবার পর ওর যেন হুঁশ ফিরল। মনে হল অকারণে একটা রক্তক্ষয়ী লড়াই সে লড়ে চলেছে। এবার থামা দরকার। ইটজ নট ওয়ার্থ ইট।প্রদীপ্ত যাই বলুক, দোলন খুব নির্মোহভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আর না, এবার সে বাচ্চা নেবে, বাচ্চা স্কুলে ভর্তি অব্দি আর অন্য কিছু ভাববে না।তারপরেও যা করবে, তা এই ইউনিভার্সিটির বাইরে, অন্য কিছু। ওর কি মনে পড়েছিল বিদিশার কথা? নাকি মনেই পড়েনি? বিদিশা ওর জীবন থেকে একদম আলাদা হয়ে গেছিল? সাতদিনের ছুটি নিয়ে ওরা গোপালপুর অন সি আর দারিংবাড়ি গেছিল। বহু বছর পর ওরা এমন ছুটি পেয়েছিল। ওরা ভাবতে শুরু করেছিল প্রদীপ্ত চাকরি করবে আর দোলন সুখী হোমমেকার হবে- এটাই যেন আগে থেকে ঠিক আছে। এই বারবার অপমানের মধ্যে নিজেকে নিয়ে গিয়ে শান্তি নষ্ট করার কোন মানে হয়? জীবন কত চমৎকার তা বিয়ের পর সেই প্রথম তারা অনুভব করেছিল। সন্ধের মুখে পাশের শালবন থেকে ঘুরে ডিয়ার রিসর্টের ঘরে ঢুকে চিকেন পকোড়া আর কফি নিয়েই দরজা বন্ধ করে দিত, নিজেদের শরীরকে যেন সেই প্রথম আবিষ্কার করছিল তারা। নিজেরাও বলতে পারবে না সেই সন্ধেয় কতবার মিলিত হত। পরিশ্রান্ত হয়ে, সম্পূর্ণ নিরাবরণ যখন তারা পরস্পরের বুকের মধ্যে শুয়ে থাকত, তখন প্রশান্ত জেনা, ডিয়ার রিসর্টের ফাইফরমাশ খাটা ছেলেটা দরজায় নক করত ‘স্যার ডিনার’।
প্রদীপ্ত তাড়াতাড়ি উঠে শর্টস পরে দরজা খুলে দিত, ব্ল্যাংকেটের নিচে দোলনের নগ্ন শরীরের কথা ভেবে উত্তেজনা হত তার। প্রশান্ত জেনা রুটি, বেগুনভাজা, চিকেন আর স্যালাড রেখে চলে যেত অদ্ভুত এক ঝিমঝিমে গন্ধের ঘ্রাণ নিতে নিতে। ভালবাসার গন্ধ এরকম হয় রে বোকা! শালফুলের থেকেও ঝিম ধরানো। প্রশান্ত খাবার রেখে চলে গেলে আবার দোলনকে আদর করতে ইচ্ছে হত। দোলন ঘুম ঘুম চোখে ওকে জড়িয়ে ধরে বলত ‘আবার রাতে’
রাতে খাবার পর প্রদীপ্ত কিছুক্ষণ টিভি দেখবে, দোলন ফেসবুক। তারপর ওরা আবার দুজনের কাছে আসবে। গল্প হবে সারারাত, গল্প যেন ফুরোবেই না, সেই গল্প থেকে শেষরাতে কখন যে ওরা আবার ভালবাসতে শুরু করবে কে জানে।

ফিরে আসার একমাস পরেই সেই আকাঙ্ক্ষিত খবরটা পাবে ওরা, আর ছোট একটা কিটে এক বিন্দু তরলের রঙ বদলানো ওদের জীবনেরই রঙ বদলে দেবে। আর, জীবনের কৌতূক এমনই যে তার পরদিনই আবার লেকচারার পোস্টের বিজ্ঞাপন বেরোবে কাগজে। খুব আফসোস হয় ভাবলে প্রদীপ্তর। দোলন তো মনটাকে সরিয়েই এনেছিল। কেন সে জোর করল? তাহলে তো অন্তত বাচ্চাটা থাকত,, দোলন এমন হয়ে যেত না।
দোলন ইন্টারভিউ দিয়ে বেরিয়ে ওকে ফোন করে বলেছিল ‘আমাকে ওরা গ্যাং রেপ করল। নজন মিলে। উহহ প্রদীপ্ত, তুমি আমাকে কেন এর মধ্যে ঠেলে দিলে? কেন? কেন?’
প্রদীপ্ত ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসেছিল ফোন ধরতে। ফোনের ওদিকে দোলন অঝোরে কাঁদছে, বুঝতে পেরেছিল সে, কিন্তু কোন বিপদসঙ্কেত পায়নি। সে বলেছিল ‘বাড়ি যাও তুমি, আমি খোঁজ নিচ্ছি’
‘কীসের খোঁজ নেবে তুমি? লজ্জা করে না তোমার? আমি রেপড হচ্ছি, আর তুমি মজা দেখছ?’
কী রেপ রেপ করছে দোলন, বুঝতে পারছিল না প্রদীপ্ত। ক্লাসের মধ্যে আছে সে। দিন দিন এত ইনকনসিডারেট হয়ে যাচ্ছে যে কেন দোলন? সেই প্রথম একটা সন্দেহ উঁকি মেরেছিল ওর মনে। দোলন কি জেলাস? প্রদীপ্ত লেকচারারশিপ পেল, সে পেল না, এই কারণে কি প্রদীপ্তকে হিংসে করে দোলন? হঠাৎ যেন ওর মনের এই অন্ধকার কুটিল দিকটা দেখতে পেয়ে সে আঁতকে উঠেছিল। সে আস্তে আস্তে বলেছিল ‘আমি পরে ফোন করছি তোমায়। ক্লাস শেষ হলে। ঠান্ডা মাথায় বাড়ি ফিরে যাও’ বলে ফোন কেটে দিয়েছিল ও।
এরপর ক্লাসে মন বসেনি আর। ক্লাস শেষ হতে ও নিজের ঘরে বসে ভাবছিল কাকে ফোন করলে পাকা খবর পাবে। দোলন যা বলেছে, তা বিশ্বাস করতে ওর মন সায় দিচ্ছিল না। দোলন খুব সিরিয়াস টাইপের মেয়ে, হয়তো দশটা প্রশ্নের মধ্যে একটা পারেনি, তাতেই ওর মনে হচ্ছে ওর হয়নি। ভিসির পি এ কে ফোন করবে? না কি এই ক্যাম্পাসের নেতা পরমপ্রিয় বক্সীকে? দুজনকেই ফোন করল সে। ফোন ধরল না কেউই। তার মনে হল দোলনই ঠিক হয়তো। ওর হয়নি। কিন্তু রেপের কথা কি বলছিল কি পাগলের মতো? দোলনকে ফোন করল সে। দোলনও ফোন ধরল না। প্রদীপ্ত ভাবল সকালে টেনশনে প্রায় কিছু খেয়ে বেরোয়নি দোলন, এখন বাড়ি ফিরে নিশ্চয় ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। কাল রাতে দোলন যে ছটফট করেছে প্রদীপ্ত জানে। একবার বলছিল ‘না গেলে হয় না? আমাকে ওরা নেবে না। বারবার ফার্স ইন্টারভিউ। ক্যান্ডিডেট ঠিক করা ছিল প্রতিবার।’
প্রদীপ্ত ঘুমে তলিয়ে যেতে যেতে বলেছিল ‘আমার কাছে খবর আছে এবার কোন ক্যান্ডিডেট ঠিক করা নেই। যারা অ্যাপ্লাই করেছে, কারোর রেজাল্ট তোমার ধারেকাছে নেই। তুমি বলবে তুমি কোন এরিয়ায় কাজ করবে বলে প্রিপারেশন নিচ্ছ’
‘কিন্তু কারো কাছে এনরোল করিনি তো। এনরোল করা উচিত ছিল নাকি?’
‘মাথায় কিছু আছে তোমার? সারাজীবন বই মুখস্থ করে কাটালে। বুদ্ধিটা খাটাও। কতগুলো লবি কাজ করে তুমি জানো? একটা শিবিরে এনরোল করলে, বাকিরা তোমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। সব কূলই হারাবে তুমি। তার ওপর এম টেক করার সময় তো দেখেছ, সবার তোমাকে দেখলে নাল পড়ে। পি এইচ ডি কী করে পাওয়া যায় জানো না? এম কে এম মানে মনোজিত কুমার মালকে চেনো তো? ওকে লোকে কী বলে ডাকে জানো তো? ঘণ্ট। কত লোকের কেরিয়ার ঘণ্ট পাকিয়ে দিয়েছে। একটা ভুল এনরোলমেন্ট আর ও তোমাকেও ঘণ্ট পাকিয়ে দেবে’
‘সেই জন্যেই তো বলেছিলাম আমি আর এসবের মধ্যে ঢুকতে চাই না। যে আসছে তাকে নিয়েই ভাবব শুধু।’
আর কী বলেছিল দোলন, কত রাতে ঘুমিয়েছিল সে, আদৌ ঘুমিয়ে ছিল কিনা, তা জানে না প্রদীপ্ত। সে তো শুধু একটা অপরাধবোধ থেকে মুক্তি চেয়েছিল। চেয়েছিল দোলন যেন তার দিকে আঙ্গুল তুলে বলতে না পারে যে সে তার জন্যে কোন চেষ্টা করেনি।
দোলনের ফোন না পেয়ে কিছু মনে হল না তার। সে নিচে ক্যান্টিন থেকে রুটি চিকেন আনিয়ে খেল, তারপর ল্যাবে ঢুকে গেল। ল্যাব রিপোর্ট সই করে বেরোতে বেরোতে পৌনে ছটা বেজে গেল। নিচে নেমে একটা কফি খেয়ে সিগারেট ধরাল প্রদীপ্ত। এখন বাসে ওঠা যাবে না, ক্যাব নিতে হবে। সিগারেট খেতে খেতে ক্যাম্পাসের দীর্ঘ গাছগুলোর তলা দিয়ে যেতে যেতে প্রদীপ্ত ভাবছিল, দোলনের হয়ে যাবে এবার শিওর। কোন তেমন ক্যান্ডিডেট ছিল না তো। দোলন চাকরিটা পেয়ে গেলে ওরা একটা গাড়ি কিনতে পারবে। দুজনে যাতায়াত করবে। তারপর যে আসছে…
গেট দিয়ে বেরোয়নি তখনও, ফোন বাজল, পাশের ফ্ল্যাটের মিসেস কর, মেকানিক্যালের তপোধীর করের স্ত্রী ফোন করছেন ‘সোজা ইডিএফ এ চলে যান, দোলনচাঁপাকে ভর্তি করা হয়েছে’
সেদিন কীভাবে সে ইডিএফে পৌছেছিল সে ঠিক মনেও করতে পারে না, সব কিছু কেমন ঝাপসা হয়ে গেছে। প্রদীপ্তর মনে হয় সে যেন একটা ঘসা কাচের মধ্যে সেই দিনটাকে দেখছে, শুধু তাই নয়, ঘসা কাচের ওপাশে মানুষগুলো কেমন স্লো মোশনে চলাফেরা করছে। সেইরকমভাবেই সে দেখতে পায় সাদা চাদরের ওপর দোলনের ফ্যাকাশে শরীর। অনেক ব্লিডিং হয়েছিল। বাথরুমে পড়ে ছিল রক্তের পুকুরের মধ্যে। সেই শরীর সেরে উঠল, কিন্তু মন আর সেরে উঠল না। প্রদীপ্ত বুঝতে পারে না, এইসবের জন্যে সত্যি সে-ই দায়ী কিনা।
প্রদীপ্ত আর দোলনকে আগের মতো পায়নি, বাচ্চাটাও থাকেনি। কিন্তু সে তো একটা সুস্থ মানুষ, তারও চাহিদা আছে কিছু। আর কতদিন এই বোঝা টানবে সে?

চায়ে চুমুক দিতে দিতে সে দেখল বাগানের মাঝখানের সুরকি বিছানো রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছে একটি মেয়ে। বছর তিরিশ বয়স হবে। শ্যামলা, লম্বা, বিশেষ করে চোখে পড়ে তার ভারি বুক আর পুরু ঠোঁট। প্রদীপ্তর গলা শুকিয়ে গেল হঠাৎ। তার মনে হল তার জীবন আর আগের মতো থাকবে না।

(ক্রমশ)

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes