অজিত সিং বনাম অজিত সিং  <br /> অষ্টম পর্ব <br /> তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং
অষ্টম পর্ব
তৃষ্ণা বসাক

প্রথমে ছিল বঙ্গলক্ষ্মী চানাচুর, তারপর এল আজাদ হিন্দ চানাচুর, তারপর একের পর এক বিপ্লব চানাচুর, সর্বহারা চানাচুর, উন্নততর সর্বহারা চানাচুর, এখন চলছে বিশ্ববাংলা। এখানেই কি ভাবছেন গল্প ফুরিয়ে গেল? এবার আসছে একে ফিফটি সিক্স চানাচুর। নাম যাই হোক, সোল এজেন্ট আমি।’ ‘বেওয়ারিশ’ গল্পের চানাচুরওলা এবার ঢুকে পড়েছে বাংলার শিল্পক্ষেত্র থেকে শিক্ষাজগতের ক্ষমতার অলিন্দে।খুন, যৌনতা, প্রতিশোধ, নিয়তিবাদের রুদ্ধশ্বাস সুড়ঙ্গে সে টের পাচ্ছে- -বহুদিন লাশের ওপর বসে বারবার হিক্কা তুলেছি আমরা -বহুদিন মর্গের ভেতরে শুয়ে চাঁদের মুখাগ্নি করেছি আমরা -অন্ধ মেয়ের মউচাক থেকে স্বপ্নগুলো উড়ে চলে গেছে (জহর সেনমজুমদার) এই সবের মধ্যে বাংলার কি কোন মুখ আছে আদৌ? থাকলে কি একটাই মুখ? না অনেক মুখ, সময়ের বিচিত্র রঙে চোবানো? বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী জুড়ে বাংলার অজস্র মুখের ভাঙ্গাচোরা টুকরো খুঁজে চললেন তৃষ্ণা বসাক, তাঁর নতুন উপন্যাস ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং’-এ । সব কথনই রাজনৈতিক, সেই আপ্তবাক্য মেনে একে কি বলা যাবে রাজনৈতিক থ্রিলার? সিটবেল্ট বাঁধুন হে পাঠক, ঝাঁকুনি লাগতে পারে। প্রকাশিত হল উপন্যাসের অষ্টম পর্ব।

আগের পর্বগুলি পড়তে ক্লিক করুন — (১), (২), (৩), (৪), (৫), (৬), (৭)

চমৎকার ক্যাম্পাসটা। এই প্রথম এল প্রদীপ্ত । উৎকল ইউনিভার্সিটির এত সুন্দর ক্যাম্পাস! কাল রাতে ভালো বুঝতে পারেনি। গেস্টহাউসে ঢুকতে অনেক রাত হয়ে গেছিল। আজ বেশ ভোর ভোর তার ঘুম ভেঙে গেল। কলকাতায় এমন হয় না। অনেক রাত জেগে সে কাজ করে, কাজ থাকে সত্যি, তাছাড়া সে দোলনের সঙ্গে একইসময়ে শুতে যাওয়াটা এড়িয়ে যেতে চায়। দোলনের গা দিয়ে কেমন একটা কড়া ওষুধ ওষুধ গন্ধ পায় আজকাল। সেটা যে তার কল্পনা তা নয়। দোলন তো সত্যি সারাদিন ধরে অজস্র ওষুধ খায়।খেতে হয়। নার্ভের ওষুধ। এগুলো ওর স্নায়ুগুলো শান্ত রাখে, তাই ওর হাঁটাচলায় সারাদিনই লেগে থাকে একটা ঘুমঘুম ভাব। সে কারণে রাতে ঘুমোতে ওর একটু সময় লাগে, সেইসময়টা ও কেমন অস্থির থাকে। প্রদীপ্ত পাশে থাকলে ওকে ছিঁড়েখুঁড়ে খেতে চায়। অথচ, দোলনকে দেখলে শরীর জাগে না প্রদীপ্তর। বহুদিন। বাইরের কারো কাছে দোলন এখনো চরম প্রার্থিত হবে নিশ্চয়ই। বাড়িতে বিশ্রামে থাকার ফলে ওর শীর্ণ শরীর কূলে কূলে ভরে উঠেছে, ওর ত্বক সরষে ক্ষেতের মতো ঝলমল করে।তবু সেই শরীরের কাছে যেতে তীব্র বিরাগ প্রদীপ্তর। আজ দূরে এসে সেই শরীরকেই কামনা করছিল সে। কোথাও যেন তার মূল রয়ে গেছে, ইচ্ছে করলেও উপড়ে ফেলতে পারবে না।
ফোন বাজছিল। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছিল ‘রাঙ্গিয়ে দিয়ে যাও, যাও, যাও গো এবার যাবার আগে’। কদিন আগে দোল গেছে। ৩১শে মার্চের টাকা শেষ করার জন্যে তড়িঘড়ি অনেক অনুষ্ঠান হয়। এটাও সেইরকম। প্রদীপ্ত ধরল না ফোনটা, বেজে যেতে দিল। কীরকম একটা উৎসব শেষের বিষাদ নিজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে দিল। উঁকি মেরে দেখল দিলীপ মোহান্তি ফোন করেছেন, ওঁর ডাকেই আসা এখানে। নিশ্চয় ওর সারাদিনের কাজ নিয়ে মনে করিয়ে দেবেন। ধরল না প্রদীপ্ত। সে গানটাকেই শুনতে চাইছিল। দু বছর আগে দোলের পরদিন ঘুম থেকে উঠে সে দোলনকে পাশে পায়নি। এমন তো হবার কথা নয়।কড়া সেডেটিভের দরুন অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমোয় দোলন। প্রদীপ্তর মন কু ডেকেছিল। ও রাতের পাজামা পরেই চটি পায়ে কোয়ার্টার ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিল দোলনকে খুঁজতে। রাস্তায় গতদিনের আবির রঙ, মনে হচ্ছিল যেন চাপ চাপ রক্ত।প্রদীপ্তর বুক কাঁপছিল। হঠাৎই সে দেখতে পেল, রাতের নাইটি পরা উশকো খুশকো চুলের দোলন কাঠের ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে। দূর থেকে ওকে ঈশ্বরীর মতো লাগছিল। প্রদীপ্ত ছুটে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরেছিল, ও থরথর করে কাঁপছিল এতক্ষণের টেনশন আর উত্তেজনায়। দোলন কিন্তু, যেন কিচ্ছু হয়নি, এরকম ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। আস্তে করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলেছিল ‘দেখো দেখো ডাহুক, ওই জলের ধারে।’ প্রদীপ্ত দেখে নি, ও আবার দোলনকে ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলছিল ‘কেন, কেন এরকম না বলে বেরিয়ে এসেছ? চিন্তায় আমি মরে যাচ্ছিলাম’ আরেকটা প্রদীপ্ত ভেতরে লুকিয়ে এই প্রদীপ্তটাকে দেখছিল। সে ভাবছিল দোলনকে না দেখতে পেয়ে তার কীরকম আরাম হয়েছিল বুকের ভেতর। মনে হয়েছিল দোলন নামের এই লাশটাকে তাকে আর টেনে বেড়াতে হবে না জীবন ভর। সেই প্রদীপ্তটা আশা করছিল ঝিলে হয়তো এতক্ষণে দোলনের শরীর ভেসে উঠেছে। আরেকটা প্রদীপ্ত তখন পাগলের মতো দৌড়চ্ছিল, খুঁজছিল দোলনকে। দোলনকে পেয়ে সে রাগে ফেটে পড়ছিল, কেন সে অবিবচকের মতো ডাহুক দেখার জন্যে তাকে না বলে এখানে এসেছে। আরেকটা প্রদীপ্তর মনে হচ্ছিল এটা চরম ন্যাকামি। তার হতাশ লাগছিল, চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছিল, বমি পাচ্ছিল।

সেদিন যখন একটা প্রদীপ্ত দোলনের কাঁধ জড়িয়ে কোয়ার্টারে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন আরেকটা প্রদীপ্ত, পা ঘষটে ঘষটে পেছন পেছন আসছিল। সে বুঝতে পারছিল না তার কী করা উচিত? তার কি উচিত সামনের মানুষ দুটোকে খুন করা? নাকি কিছুই হয়নি ভাব দেখিয়ে পাপোশে পা মুছে, সোফায় গিয়ে বসে বসে পা দোলানো।
সেইদিন ফিরে কোনরকমে দরজা বন্ধ করে দোলনকে বিছানায় ফেলে দিয়েছিল প্রদীপ্ত। জামাকাপড় প্রায় ছিঁড়ে বের করে এনেছিল ওর শরীরটা। পাগলের মতো মুখ ঘষেছিল ওর গায়ে। তবু দোলন জাগেনি, আর সেসবের তোয়াক্কা না করে দোলনের শরীরে প্রবেশ করেছিল প্রদীপ্ত। তারপর সে হাউহাউ করে কেঁদেছিল। কাঁদতে কাঁদতে অনুভব করেছিল দোলন, তার পিঠে পরম মমতায় হাত বুলোচ্ছে, আর ফিসফিস করে বলছে ‘তুমি ডাহুকটা দেখলে না কেন সোনা? আমি তোমাকে কালকে আবার ডাহুক দেখাতে নিয়ে যাব। ভোরবেলা একজোড়া ডাহুক আসে ওখানে। আমি জানি’ প্রদীপ্ত দোলনের বুকে মুখ গুঁজে আরও কেঁদেছিল। আরেকটা প্রদীপ্ত তখন বোকার মতো বসে ছিল সোফায়, কাগজ আসার, চা খাবার অপেক্ষা করছিল।
‘স্যার আপনার চা’ গেস্ট হাউসের বেয়ারা মিহির সামনে চা দিয়ে গেল। প্রদীপ্ত চমকে উঠে দেখল মিহিরের হাতে ছটা আঙ্গুল, ভোরের আলোয় কী অলীক দেখাচ্ছে আঙুলগুলো।
সেসময় আবার ফোন বাজল। অচেনা নম্বর। এবার ফোন ধরে এক নারীস্বর শুনল প্রদীপ্ত। ‘সুপ্রভাত। আমি কাননবালা জেনা বলছি।’ পরিস্কার বাংলায় বলল মেয়েটি।
কাননবালা জেনা! প্রদীপ্তের আবছা মনে পড়ছিল। কোন একটা মেলে ছিল নামটা।
সে বলল ‘সুপ্রভাত। আপনি কি জানেন আপনার নামে একজন বিখ্যাত বাঙালি অভিনেত্রী ছিলেন? বাংলার প্রথম সুপার স্টার।’
প্রদীপ্তকে অবাক করে কাননবালা গেয়ে উঠল ‘ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে আমি বনফুল গো’
‘অ্যামেজিং!’
‘আমাকে দেখলে আরও অ্যামেজিং লাগবে আপনার।আমি আসছি মিনিট পনেরোর মধ্যে। আপনার সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করব’ বলেই ফোন কেটে দিল সেই কাননবালা জেনা। অবাক প্রদীপ্ত। তার একটু অস্বস্তি হচ্ছিল। এত স্মার্ট মেয়েদের সঙ্গে সে খুব স্বচ্ছন্দ নয়। তবু সে প্রতীক্ষা করে । একবার ভাবল দোলনকে ফোন করে। কিন্তু দোলন তো সেডেটিভ খেয়ে ঘুমোয়, হঠাৎ করে ওর ঘুম ভাঙ্গালে সেটা কারো পক্ষেই সুখকর হবে না। যদিও কোন রিস্ক নেয়নি প্রদীপ্ত। রাতের জন্যে সেন্টার থেকে একজন আয়া এনে রেখে এসেছে। সকাল থেকে রান্নার মাসি, কাজের লোক এরা তো আছেই। তার মনে হচ্ছে এবার ফিরে গিয়ে একটা দিনরাতের লোক রাখতে হবে। দোলনের জন্যে সে আর কতদিন আটকে থাকবে? দোলনের কথা ভেবে সে ডক্টরেট করেনি, মনে হয়েছে এটা তার প্রতিবাদ, কিন্তু সেই প্রতিবাদ কোথায় পৌঁছল? কেউ কি বুঝতে পারছে কতটা ক্ষতি করেছে ওরা দোলনের? শুধু দোলনের কেন, দুটো মানুষের জীবনই ওরা নষ্ট করে দিয়েছে। কারণ সেই খুনীগুলোর সঙ্গে প্রতিনিয়ত দেখা হয় তার, মিটিং করতে হয় একসঙ্গে, কথাও বলতে হয়, আর প্রতিটি মুহূর্তে ওর বুক থেকে রক্ত ঝরতে থাকে।
নীলাব্জ চ্যাটার্জি। একা বিদেশ যেতে ভয় পায়। তার নাকি ঘুমের মধ্যে হাত খুলে আসে।
পরমপ্রিয় বক্সী। সংস্কৃতি চোদায় কথায় কথায়। আজকাল প্রায়ই সমকাল চ্যানেলে সঙ্গে সুগতর খেউড়ে-তরজায় সন্ধেটা তার মস্ত মস্ত কেটে যায়।
সমরেশ দাস। ফুল থেকে আবির তৈরি করে। পুরো ব্লাফ। আসলে ট্যালকম পাউডারের মধ্যে সেন্ট মেশানো।
মনোজিত কুমার মাল।নিজে পি এইচ ডি করেনি। কিন্তু সবার ডক্টরেটের ভাগ্যবিধাতা। আজকাল হাতের আঙুল বেঁকে যায়, মিটিং-র মধ্যে খেয়াল করেছে প্রদীপ্ত। পাপ পাপ।
এই চারজনেই দোলনের জীবন শেষ করেছে। দোলন যদি এদের খাল্লাস করতে পারত! নাহ দোলন ভোরবেলা এসে ডাহুক দেখবে বড়জোর, তাতে প্রদীপ্তর টেনশনে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু কাউকে খাল্লাস করতে পারবে না ও। বালের মধ্যবিত্ত মূল্যবোধ, বালের সংস্কৃতি।খাল্লাস করতে হলে অন্য কাউকে চাই, যে এই বাঙালি মধ্যবিত্ত নেকুপুসু রবীন্দ্র-নজরুলের একদম বাইরে। বিদ্যুৎচমকের মতো মনে পড়ে একজনের কথা। ক্রিস্টাল চপস্টিকের ক্র্যাব কারির মতো ব্যালেন্সড যার হাত আর মাথার যুগলবন্দী, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তাবড় মাথাই যার কাছে বাঁধা, এই ক্যাম্পাসটাকে যে চেনে হাতের তালুর মতো। এখনই না, পরে পরে, আরও কিছুদিন, আরও ভাবতে হবে।

আজকাল মনে হয় তার কি উচিত ছিল না অন্য কোথাও একটা চাকরি নিয়ে চলে যাওয়া? যন্ত্রণার জায়গাটাকেই আঁকড়ে পড়ে থেকে সে কি একটা মর্ষকামী আনন্দ পাচ্ছে না? তাছাড়া কোন সিস্টেমের সঙ্গে একা মানুষ এইভাবে লড়তে পারে না। সে সিস্টেম রাষ্ট্র বা বিশ্ববিদ্যালয় কি গ্রামের চণ্ডীমণ্ডপই হোক, সিস্টেম মানেই তা সংবেদনহীন। তার ওপর রাগ বা অভিমান করে নিজের ভেতরে ভেতরে গুমরে মরার মতো বোকামি আর হয় না। যদি সে কোন পতাকার নিচে থাকত, যদি তার কান টানলে অনেকগুলো বড় বড় মাথা আসত, তবে সে ম্যাটার করত। সে তো ছাত্র রাজনীতিই করেনি। এই অনুভবভীন সিস্টেমের কাছে তার বা দোলনের এই নষ্ট জীবন, নষ্ট দাম্পত্যের কোন মূল্য নেই।
এতদিন সময় অনেক নষ্ট হয়েছে, প্রমোশন আটকে গেছে। আবার পি এইচ ডির জন্যে কি এদের পায়ে ধরবে আবার? ককখনো না। সে বিদেশ গিয়ে করে আসবে। অন্তত দু বছর তো বাইরে যেতেই হবে। দোলনের কথা আর সে ভাববে না। তার এই বলিদান তো দোলনও বোঝে না। সে একটা অন্য জগতে ঢুকে গেছে, সারাদিন শুধু কন্ট্রোলের বই পড়ে। এর থেকে যদি টিউশনি করত, ভালো ছিল। সেটা শুধু যে দোলন এটা নিয়ে ভুলে থাকবে বলে তাই নয়, টাকাটাও এখন উপেক্ষা করতে পারে না সে। তার তো প্রমোশন আটকে আছে, শুধু দুজনের সংসার তো নয়, প্রদীপ্তকে নিয়মিত টাকা পাঠাতে হয় ভায়ের সংসারে। সেখানে মা থাকে। মার নাম করে অনেক বেশিই টাকা পাঠায় সে। কারণ ভাই প্রাইভেটে চাকরি করে, যদি অভাবের দোহাই দিয়ে মাকে এখানে দিয়ে যায় খুব মুশকিল। এখানে এসে এমনিতে থাকতে মার কোন অসুবিধে হবে না। কিন্তু দোলনের এই অবস্থা সে কাউকে জানাতে চায় না, অনেকদিন সে পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, গেলে একা যায়, দোলনের কথা কেউ জিজ্ঞেস করলে বলে ওর শরীরটা ভালো নেই। শরীর ভালো নেই বললে আবার লোকে একটা কথাই বোঝে। তারা মুচকি হেসে বলে ‘কনগ্র্যাটস। ডেট কবে?’ আর অমনি তার কাছে উৎসববাড়ির সব আলো নিভে যায় এক লহমায়।আর দোলনও ফিরে আসার পর একদম গুম মেরে থাকে অনেকদিন, আবার ওকে নিয়ে মনোবিদের চেম্বারে দৌড়তে হয়। নীল পর্দা টানা ঘুমের মতো ঠান্ডা ঘর, শীত করে প্রদীপ্তের, আবার সেই কথাগুলো উঠে আসবে, উহহ, গা বমি বমি লাগে, আবার সেই একের পর এক ইন্টারভিউ, রক্ত, ইডিএফ, এর মধ্যে শুধু সবুজ শরবতের মতো সেই অপূর্ব দারিংবাড়ির দিনগুলো…

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes