
আত্রেয়ী চক্রবর্তীর কবিতা
বইমেলা ফিরতি জার্নাল
১.
ধুলোর ভিড়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। কালো জামা। শার্টের কলার থেকে ভেসে আসছে স্বীকারোক্তি। আমি ন্যাকা পতঙ্গ, বারংবার ঝাঁপ দেব চিতার অনলে। তার বইয়ের কাটতি আসলে দেবানন্দ-এর ঠোঁটজুড়নো সিটি। আমায় পাওয়া যাচ্ছে না। ফিরব না বলে, ওয়াং-কার-ওয়াইয়ের দৃশ্যপট এঁকেছি শরীরে। মাইকে ভেসে আসছে নিরুদ্দেশ ঘোষণা— “দিওয়ানা হুয়া বাদল”
২.
কোনো এক কবি চায়ের অফার দেওয়া মাত্র বৃষ্টি নামল তুমুল। ‘মমার্ত’ বসেনি মেলার মাঠে। শিল্পীদের ট্রিগারজোনে রেখেছে সরকার। আমাদের ব্যাগ ও অস্তিত্ব চেক করে বাড়ি পাঠাচ্ছে উর্দিধারী পোষা কুকুর। আহ্ ভগবান, তুমি কি অন্ধ? ভগবান হল পিতৃতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা। যেভাবে অদূরে সিগারেট হাতে আমার ব্যক্তিগত কবি। তাকে দেব শরীর, কোল, পীনোন্নত পয়োধরা। রগড়ানি কপালে আলোকস্পর্শ আসলে তৈলচিত্র। আমি নিখুঁত ইম্প্রেশনিস্ট। নিজেকে ধিক্কার দিতে দিতে পরবর্তী বইয়ের দিকে এগোই…
৩.
লং-ড্রাইভের সমীকরণ বদলে ফেলেছে আফজল। যতই লাথ মারি, চূড়ান্ত টক্সিক চরিত্র সেজে চলে আসে স্টলে। কাঁটাতার এক ইউটোপিয়ান থিসিস। রিফিউজি ক্যাম্পের মাজাকি, শোনো, আমি বেবাক ভিখারি— লেখা নেই। হাতকাটা ব্লাউজে মাধুরী সেজেছি আজ। গলায় সস্তার ফুলগন্ধ পাউডার। অন্ধ দোকানি লিটল ম্যাগ প্যাভেলিয়নে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। ও মেঘ, ওর মাথায় ঢালো জল, ঢালো দুর্বীনিত বীর্যচিন্তা।
মুক্তাঞ্চলের খোঁজ না পেয়ে, খয়ের পান তুলেছি জিভে। এই মুহূর্তে গওহরজান আমি। গ্রামোফোন ফিরতি শ্রীধর কথক, “ভালোবাসিবে বলে ভালোবাসি না…”
৪.
আমাদের বন্ধু চলে গেছে প্রেতে ও প্রত্যয়ে। তার গলার দাগ এক ক্যারিশমা, নিশ্চিন্ত স্নান। অন্ন, খাদ্য, বাসস্থানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, অরিত্র সোম শুয়ে আছে মাস্তুলের টেবিলে। টেবিল — লাশকাটা ঘর। টেবিল —মর্গ এবং সারি সারি কবিতার বই। কবিতার বই আসলে লাল পিঁপড়ের দল। প্রকাশক সেজে কেবলই মাংস খেতে আসে। আমার বাংলা ভাষায় প্রবেশ করছে কলোনিয়াল হ্যাংওভার। বইয়ের গন্ধ মিশে যাচ্ছে নির্যাতিতার চিৎকারে। লিটল, লিটল, লিটল ম্যাগ। স্লোগানে মুখরিত শেষঘণ্টা–”জাস্টিস ফর আর.জি.কর”। এই মুহূর্তে জন্ম হচ্ছে যে কন্যা শিশুর, সে আমার আত্মজা। তার নাড়িতে জড়ানো যুদ্ধের ঘণ্টাধ্বনি, প্যালেস্তানীয় ধোঁয়া ও রক্ত।
৫.
কলকাতা পুলিশের ফানুস দেখে, ‘ও চাঁদ, ও চাঁদ’ বলে একলাফ দিয়েছে নেশাগ্রস্ত যুবক। এথেনিয়াম ইশকুলের মাস্টারমশাই। বোনাস নেই। ছাত্র-ছাত্রী নেই। চাকরি টলোমলো। এই মাঠ, মাঠ নয় আর। শুকনো প্রান্ত, চরাচর। জলের পাউচ নেই। সামান্য জলের জন্য অস্তিত্ব লড়াইয়ে নেমেছে বনমোরগ। এক বৃদ্ধ— কবিতা চাই? না, চাই না। আমার ধ্যাবড়া কাজলে লেগে বারুদ ও বিস্ফোরণ। বোধশব্দের সুস্নাতদা আলখাল্লায় কিং লিয়র। একের পর এক স্বগতোক্তি শেষে ঢলে পড়ছে ঘুমের সভ্যতায়। নিভে আসছে অতি তীব্র দহনের কাল। নিভে যাচ্ছে পায়ে পায়ে ঘোরা দু-একটি ফ্লুরোসেন্ট প্রজাপতি। আমার সারা শরীরে নেমে আসছে আঁধার। ব্লাউজের ভিতর জাগছে বসন্তসেনারা, পায়েসের বাটি…