
গোপাল চক্রবর্তীর কবিতা
প্রলাপ
১৷
কাকে বলব অশ্রুপাত
কে আছে কার!
অগত্যা সম্বোধনহীন নিজেকে নিজেই বলা
নিজেকে নিজেই শোনা
এই স্মৃতিসৌধ কল্পতরুমূলে, রাতের নক্ষত্র গুঞ্জনে…
জানি আর ফেরা হবে না
দ্বিধায় ও আর্তিতে
যে মৃত্যু অতিক্রম হলো তার নিকুঞ্জবনে।
দিনের বেদীমূলে রেখে যাই পথভ্রষ্ট পাখিটির
এক একটি পালক জন্ম
মৃত্যু পরবর্তী বিষাদ-গাথা।
২৷
শব্দ গড়ি অবিরত
গড়ি নিরালার খাদ
ঝরনার সন্তান আমি, সাহচর্যে নৌকো খুঁজি না।
বহুজীবনের একটি লেখা
জীবনকে গ্রোথিত করে স্তবকে স্তবকে
কোথাও তো শেষ পাই না।
‘একদিন আমি ছিলাম আনন্দের অভিযাত্রী’
স্বপ্নে বলে গেছ বহুবার
বিব্রত হই, আর কত রহস্য মথিত হবে…
একদিন নিরালা এসে ডেকে নেয়
পথপ্রান্তে পড়ে থাকে ব্যঞ্জিত সম্বোধন জেনেও
কেন যে আমি এখনও সাড়া দিয়ে চলেছি…
—–
জ্বরের রাতে
১।
কৈশোর সখি তুমি,
অসুখের সাথে কী সম্বন্ধ তোমার
স্বপ্ন জীবন্ত করো জাদুকর
ঝরনা বহে স্মৃতির পাহাড় বেয়ে।
আমার অসুখ সারিয়ে দাও।
নির্জন নগরীর এই পরবাস
তোমার তো আছে ঢের বিস্মৃতি
এমন কোনো আপেল বাগানে নিয়ে যাও
রাত কেটে যাবে স্বপ্নহীন।
২৷
জ্বরের রাতের বিচলিত চাঁদ
হারায় মেঘের আড়ালে।
অন্ধকারের দোসর আমি
লুকিয়ে রেখেছি গোপনে
কিশোর দিনের এক মুঠো জ্যোৎস্না।
কতদিন বুকে ব্যথা, বৃথা প্যারাসিটামল
এসো সখি একটিবার
স্বপ্নের আভরণ ঠেলে
ঘুমের কোলাজ ভেঙে…
তোমার আলো তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে যাই।
—
তুমি
তুমি অসুখের মতো আড়াল।
তুমি নির্জনতার মতো ক্লান্ত মেঘ।
তুমি ঘরে ফেরার মতো সুন্দর,
গোধূলির পাখিদের উড়ান।
অসময়ের মতো অনির্ণীত তুমি,
অনিবার্য তুমি মৃত্যুর নাম।
তুমি জীবনের মতো সচ্ছল।
তুমি সুদূরের মতো কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন।
তুমি ভালোবাসার মতো ব্যথা।
সুগভীর তুমি বেহাগের সুর।
আকাশের মতো উদার দুই আঁখি
চঞ্চল তুমি কিশোরীর ক্রীড়ারত নূপুর।
কবিতার মতো দুরন্ত বালিকা
উচ্ছল তুমি স্খলিত তুষার
যেন তীর্থের ধারা, তুমি স্রোতস্বিনী
বন্যা তুমি কূলপ্লাবী অন্য কিছু নও।
সুতীব্র অতল তুমি যেন শীতকাল
মৃগয়ার মতো বিরহ সন্তাপ।
‘রেবতী তুমি দূরের চুম্বন’
প্রিয় মিলন তুমি শেষ বসন্তের মতো।
তুমি অনাদর রাধিকা জীবন
মৃত্যুতে তুমি লখিন্দরের ভাসান,
আমাতে তুমি চির আমিময়।
পৃথিবীতে তুমি একফালি আকাশ।
—-