শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী-র কবিতাগুচ্ছ
ধাবা
প্রতিবার শহর ছেড়ে যাবার সময় পথের পাশে
ধাবাতে কাটিয়ে নিই কয়েক প্রহর।
তাওয়ার ধোঁয়ায় মিশে থাকে পিছুটান
লাচ্চা পরোটা নেচে ওঠে
নেচে ওঠে তন্দুরের নাকছাবি
উদ্দালকের মতো কেউ বাঁধ ভাঙতে দেয় না কিছুতেই
আমি একাধারে ধৌমের মতো ছুটে যাই
একাধারে আরুণির মতো নাছোড়
ধাবায় চাটাই আঁকড়ে আমি শহরকে দূর থেকে দেখি
যেভাবে একদিন এক রাজপুত্র দেখেছিল কুশিনগরের পথে
প্রাসাদ জ্বলছে
রাজপথ জ্বলছে
উনুনের মতো
দাউ দাউ……..
পাশা
উলটে দিচ্ছ চাল আমিও অতল অন্ধকারে
শতনিক সূর্যের শতদুগ্ধ বিষপান করি
আমি অক্ষরজাত।আমার ধমনী যোদ্ধার
আমিই সহিস আমি তীব্র তীক্ষ্ম ভ্যালকিরি ।
আমার পাশার চাল পড়েই ফেলেছ তুমি জানি
খানিক এগোই আমি শূন্য হ্রদের দিকে
খানিকটা তুমি
আশপাশ রক্তশূন্য আর ফিকে।
আমাদের পাশা খেলা হলে প্রশ্ন করবো তাকে
যে ডাকছে প্রতিদিন শহরের মাঝরাতপথে
তার ঠোঁটে বিষণ্ণ মহুয়া থাকে
তার হাতছানিটুকু জয় করে আমি রোজ উড়ে চলি পুষ্পকরথে।
চুপ
যে আমাকে লিখতে দেবে না কিছুতেই
আমার তৃণের আসন বারবার দলে চলে যাবে
যে আমাকে ছিন্নভিন্ন করে বিলিয়ে দেবে মেহফিলখানায়
আমাকে হিমঘরে চব্বিশ ঘন্টা চব্বিশ দিন রেখে দেবে
যে আমাকে ক্যাপুয়ার রাস্তার দুইপাশে জ্বালিয়ে রাখবে রোজ
তার আলো দিয়ে সন্ধ্যারতি করবে রোজ
যে আমাকে একটি একটি করে পাপড়ি ছিঁড়ে দেবে
তার ভালোবাসার খেলার পুতুল
আমাকে রঙের বাক্সে চুবাবে রোজ
কখনো রক্তে কখনো নাড়িতে
কখনো অন্ধকারে
সেই মানুষটিকে আমি আকন্ঠ প্রণাম জানাই
আমি আজ তার বাহুবলে এক
ঐতিহাসিক চুপ।
টোল
কতোবার দেখেও দেখিনি
ওরা হাত পেতে সরে গেছে
আমার পলাশগাছ গুলো
ভাসা ভাসা স্বপ্নের মতো
আলো জ্বলে সবুজ লাল নীল।
কতোবার বুঝেও বুঝিনি
ওপথ দেউল নয় ওখানে দৈত্য থাকে
আলোগাছের শাখাপ্রশাখায় ওরা
অন্ধকারের কুঁড়ি ফুটতে দেবে না
বুঝেও বুঝিনি ঝাউবনের আড়ালে ক্লীব।
কতোবার থমকে গিয়েছি
ওরা হাত পেতে চাইছিল
জল নয়
আলো নয়
সুরম্য আলিঙ্গন নয়
সুগম পথের আশ্বাস
একটুকরো টোল।
তারাফেনি
একটুকরো জলের ওপারে থাম
আমি এইপাশে হাত গুনি
পাথর গড়িয়ে যায়
শব্দ করে না
আর ফিরে আসবে না ওরা।
জলের উপরে মিনার
মিনারের চুড়োয় পতাকা
সন্ধি বিজয় নয়
এ ভাষা অজানা তাই
ওরা কেউ শুনেও শোনে না
তারাফেনি বয়ে যায়।
গোষ্পদের মতো
ওরা আবার আসবে আগামীকাল
পাওনাগন্ডা বুঝে নেবে
কাশবনের ছেনালি বোঝাবে
পাথর গড়িয়ে যাবে নিচে
শব্দ হবে না।