
পার্থজিৎ চন্দ-র কবিতাগুচ্ছ
শব্দ
(কৃতজ্ঞতা- এজেন্টস অফ আনসার্টেনটি / জন ডেনভারস)
ত্বকের ভেতর ফুটে উঠছে তুন্দ্রা’র দিন, ঝিরঝিরে জলস্রোত। ঈশ্বরের অদ্ভুত জ্যামিতির মতো তারা বয়ে যাচ্ছে অরণ্যের দিকে, যার কাছাকাছি তোমাদের গ্রাম, ছোট্ট কটেজ। বরফপাতের দিনে তুমি চলে গিয়েছিলে দূরের শহরে… কিছুটা ধাতব ভাষায় কথা বল আজ। আমি একা বন-কটেজের কাছে বসি, পাখিদের গান শুনি; দেখি বরফের লুপ্ত বিষাদ শেষে গাছে গাছে ফিরে যাচ্ছে পাতাদের দল। ঘর ও মানুষের নিয়তি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে বাঁধা; ছেড়ে যেতে যেতে অনিবার্যভাবে সে কিছু ফেলে রেখে যাবে। এই ফেলে যাওয়া বস্তুসমূহ’ই তার প্রকৃত আশ্রয়, জন্মচিহ্ন। কাঠের দরজা খুলে দেখি দু’টি শব্দ শূন্যে দুলছে। ‘তিশিনাহ’ শব্দটি তুন্দ্রা-বনের নিস্তব্ধতা ধারণ করেছে; মুহূর্তে খান খান হয়ে যেতে পারে ভেবে শ্বাস রুদ্ধ করে ফেলি। গিলে ফেলি নিজের নিঃশ্বাস। শূন্যের ভেতর মুঠো করে ধরি ‘মোচায়নিয়া’… সমস্ত শব্দের মধ্যে জেগে থাকা নিঃস্তব্ধতা। ঈশ্বর আর গাছেদের কথা যে স্তব্ধতার মধ্যে পাক খায় তাই ‘মোচায়নিয়া’। সন্ধ্যায় এ দু’টি শব্দ ধীরে ধীরে পুষ্টতা পায়; তোমার স্তনের মতো গোলাকার নির্জন হয়ে ওঠে। হাত থেকে উড়ে তারা দিগন্তের কাছে গিয়ে বসে। তাদের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যায় একাকী মানুষ; যার বরফ-শরীরে উড়ে আসে শুধু বরফের গুঁড়ো
জিভ
তরল অস্ত্র; অস্ত্র-সম্বরণ, ন্যাটো চুক্তি, মাশরুম-মেঘ – অস্ত্র মাত্রই তরল।
সেখানে ভাসছে দ্বীপভূমি, নাবিকের উচ্ছ্বাস, নিঃসঙ্গ বোটের স্তব্ধতা। নমনীয় জিভ; যে সংঘর্ষে তুমি
তীক্ষ্ণতা অর্জন করেছ লক্ষ বছর, অস্ত্র-সাধকের নুলো হাতে আজ প্রণাম গ্রহণ কর
কান্না
প্রৌঢ়া কাঁদছে। ছোট গ্রাম ছেড়ে ছোট শহরের দিকে চলে যাওয়া ম্যাজিক-ভ্যানের ভেতর প্রৌঢ়া কাঁদছে।
সন্ধ্যার মোড়ে গাড়িটি থামলে খিন্ন হচ্ছে প্রৌঢ়ার স্বর; বৃষ্টির দিনে দূরে মায়ের কবর ভেবে প্রৌঢ়া কাঁদছে।
তার কান্নার পাশে হে, আমার দেশ, যেন জ্বলে থাকে মৃদু কুপির শিখা’টি
ভালো লাগল।