
পিয়াংকী-র কবিতাগুচ্ছ
নগরায়ন আর মাছের আঁশ
শামুকের গতি শ্লথ হলে ডুবে যায় নৌকার পাটাতন
জমায়েত থেকে বেরিয়ে আসে কিছু উদবাস্তু মানুষ
ঝুঁকে পড়া গাছ আর নোয়ানো পাটাতনের নীচে ঝাড়বাতি
কোথাও যাওয়ার নেই, ফেরারও না
তবু সন্ধে হলেই চিল ছুঁয়ে যায় মধ্যতালু
পাড় ভাঙে। বসন্তের প্রথম রাতের কথা মনে পড়ে ভীষণভাবে
কান্না বরাবর জড়ো হয় যেসব খুচরো পকেট
হাতড়ে হাতড়ে পৌঁছে দেখি,
একটি অ্যাকোয়ারিয়াম ছাড়া…
যাক, আসা যে সহজ নয় তা বুঝিয়ে দিয়েছে যারা
এখন তাদের হাতে সমুদ্র
ফেনায়, বুকের ধূসর আঁশটে গন্ধ
নগরীর গায়ে লাল বেনারসি
পিছলে যাচ্ছে মৎসঘর
বসবাস
ক্ষতজল অথবা গালিবের সাহসী ভুল
অক্ষম ব্যথার পাশে বসে আছে মাছরাঙা
ছায়া ঘন হতে হতে আঁধারের কানাঘুঁষো
ফুঁ-এর মধ্য দিয়ে যাতায়াত , দ্বিগুণ তার ফিরে আসা
ফেরীঘাট, জল, মাঝি-সুর…
বাসিন্দাদের ঘরে এখন মাকড়সার জাল।
উপচে পড়া সন্ধেতে খামোখাই দুপুর নির্মাণের অছিলা
পায়ে পায়ে এত হোঁচট কেন ?
কেন গা ভরে বৃষ্টির ছাঁট ?
অনায়াস বিড়ম্বনার পথেও শেষ ট্রেনে যখন ফিরি,
জানি, গন্তব্য আছে এখনও
এখনও তিনরাস্তার মোড়ের বাঁদিক ঘেঁষে দ্বিতীয় বাড়িতে —
জলে ভেজানো আছে একটা জিওলমাছ
শরীর-গাছ
অপেক্ষা চলে গেলে বাঁশি বাজে।
মৃদুকাঠে ক্ষণজন্মা সময়, অস্থির শোক
শরীরের পর্ণমোচী এখন ঝুঁকে পড়া দাউদাউ সাপ
তবু যে পথ দিয়ে বাড়িতে ফিরি…
গাছের নীচে দাঁড়িয়ে মেপে নিই ছায়ার দৈর্ঘ্য
সে পথে রেডলাইট
সূর্যাস্তের সময় বৈঠা বেচাকেনা
ঘরের দেয়ালে টিকটিকি, সঙ্গমরত যুগ্ম ছায়ার পাশে মিইয়ে যায় যাবতীয় ক্লান্তি
ধীরে ধীরে নৌকা , জলের দিকে ঝুঁকে পড়ে চিরহরিৎ শরীর
যুবতী-জনিত
নির্জনতা ভেঙে আসুন, জাঁকানো অন্ধকারে
পথের ধুলো শান্ত হলে
অমাবস্যায় ডানা ঝটকানো পাখি লিখুক গোপন কুঠুরির কথা
জৈবিক ঋণ অথবা ক্ষয়ীভূত চপ্পলে অস্থায়ী দাগ…
ঝরাবালির আদৌ কি দেয়াল ছিল?
অসংখ্য খিদের পাত্রে বাম গালে যেভাবে ফুল ফোটে
যেভাবে সোহিনী রাগের অন্তরা জুড়ে থাকে মধ্যম স্বরের বক্রীটান
ততটা না হলেও, অন্তত সিকিঅংশ …
অপ্রকাশিত অসুখ , উদাসীন নৌকা এবং পিলপিল পিঁপড়ে…
চুম্বনজনিত অপরাধে যাবজ্জীবন হোক আপনার
আতরদানি
যে কোনো মুহূর্তে শেষ হয়ে যাবে এ অধ্যায়
উজান-ভাটির কুয়াশা হঠাৎ উধাও হয়ে
গলিপথে মিশবে অবেলার দারিদ্র্য
তাকে দেখতে অনেকটা আমাদেরই মতন
অনেকটা আবার সেই নম্র বিনীত পুরুষটির মতনও
যার কাঁধে ঝুলে থাকে বাটখারা, গালে বেহুলার সিঁদুর
নিঝুম উপাসনা পার হয়ে যায়, আয়ু ঢোলে ক্রমশ
কোন রাস্তায় গেলে খুঁজে পাব অন্তত তার ছায়াটুকু…
আজান ভাঙে। নৈঋতের সাদা ধুতিতে মুখ ঢেকে বসে থাকে —
আমার ভিতরের চোর আর তাঁর শখের আতরদানি
সম্মোহন-পরবর্তী
এই তো, সেই যানযট, সেই যাতায়াত, সেই নিদ্রাহীন পদাবলী
ব্যবচ্ছেদ করব ভেবেছিলাম বলেই হয়ত শহরের প্রথম চুম্বন কাঁদে এখনও ভরা রাস্তায়।
অনায়াসে নেমে আসা যে সন্ধ্যা, গুহার দেয়ালে ঝুলিয়ে দিয়ে, ছেঁড়া রুটির টুকরোর মতো যাদের ছিটিয়েছিলাম,
আজ তাদের তরফেও কোনো অভিযোগ নেই।
যে যার মতো। অস্বাভাবিক বা স্বাভাবিক। নিয়ম নয়, যেন অনুসৃত আলোর জটলা সবটাই। তবু অনিশ্চিত পা ভেঙে আসে, হাঁটু মুড়ে যায় আজন্মা সেইসব ক্ষণে। অন্দরের জলতল এখন সাবলম্বী আঘাত।
এই তো ভালো! পোষ মানানোর এই প্রক্রিয়ায় ছুঁয়ে যাচ্ছি আঙুলহীন স্বপ্নদোষ
গাঢ় খয়েরী
চিহ্নরা বরাবরই ঈর্ষাকাতর
রেখে যাওয়া ভুল বেছে তারা তুলে নেয় যতটুকু প্রয়োজন
এদিক-ওদিক ছড়ানো যেসব মিহি-মুহূর্ত
স্নানঘরে ঢুকিয়ে বেশ করে সাবান শ্যাম্পু…
সূর্য বয়স্ক এখন , মেদ বেড়ে এখন তাঁর অকাল-রাত
তবু প্রয়োজন অনুযায়ী এক কোপে…
জমানো সন্ধেরা বিলিয়ে দিচ্ছে অতিরিক্ত সব
পাতালে এখন অজস্র পাখি এবং তৎসংলগ্ন…
ময়ালসাপ অথবা ঘুম
বনমোরগ এল, ঘুম এল না
ঘুমের মাথার ওপর সমুদ্র এল অথচ ফিরে এল না হারানো অসুখ
তন্নতন্ন করেও…
শেষঅবধি হাতে এসে জমলো বাঈজী কোঠার পানপিক আর বীর্যপাত
দোষারোপের গায়ে ভিড়ল নৌকো, স্বপ্নদোষের ভেতর মহল্লাবাসীর কলতলা
অবচেতন আর অসম্পূর্ণ বিলাপ মিটিয়ে ঘরে এসেছি
পরিপাটি বিছানায় জুঁইগাছ পুঁতবো বলে জোগাড় করছি মাটি
আচমকা ধাক্কা।
অ্যানাসথেশিয়া ডিপার্টমেন্টের সামনে বিরাট লাইন, প্রায় সকলের গলা পেঁচিয়ে ধরেছে একটি সহজ ময়াল