শুভম চক্রবর্তীর দীর্ঘ কবিতা
ছেঁড়াফাটা ছবিগুলি
বেশ তবে শুরু করা যাক
শেষ থেকে শুরু থেকে আমি থেকে তুমি থেকে
সোজা থেকে বাঁকা থেকে গুহাজল আলোয় গড়াক
বেশ তবে শুরু করা যাক
টেবিলক্লথের গায়ে সাদা সাদা বুদ্বুদের দাগ
আমি মচকে উঠেছি
যেমন আড়মোড়া ভাঙে সাপ
আমির পরত খুলে যেমন জনতা হয় জীব
তেমন মেখলা পরা আকাশরমণী হেঁটে যায়
গলির ভেতর দিয়ে চোখে তার শুধুই কাজল
বেশ তবে শুরু করা যাক
লেখার বিষয় নেই লেখার সময় নেই
দালির ঘড়ির মতো চলকে যায় একেকটা মানুষ
গুহার আঁধারে নামে, ডোবে আর কখনও ওঠে না
তৃতীয় কানের জোরে বাহিরের বাজানো দখিনা
সে শোনে, সে কখনও শোনে না
সত্তার বহির্দেশে বুজকুড়ি কাটে ভীমরুল
অনঙ্গ হাতির দল নেচেকুঁদে বিছানা মাতায়
তারপর কী আর লেখার
ফিরে এসে গল্প করি ফণা গোটানোর
‘শোনো হে দেখেছি সাপ আমরাও অন্যান্য চাতালে
বিভিন্ন গর্ভের ভূত, তবু তো প্রত্যেকে ভূত বটে’
ভূতপূর্ব এ কথাটি রটে বলে বিলক্ষণ ঘটে
খেজুর গুড়ের মধ্যে একটি মাছি একা ছটফটায়
মায়াও এমনই মিষ্টি আমরা তবু রুটি দিয়ে খাই
বেশ তবে শুরু করা যাক
হাটখোলা অখিল বাটে মেশামেশি হোক আমাদের
কোনো বার্ডেন ছিল না
হাত পা ঝাড়া একাকী মানুষ
দেওয়ালে উল্লম্ব হয়ে অন্যদের দেওয়াল ধরাতো
বাইরে মধুর আর্ত বৃষ্টিপাত ছড়িয়ে রয়েছে
ভেতরে কী অটুট খেয়াল
বেশ তবে শুরু করা যাক
কিন্তু কোত্থেকে শুরু ঠিকঠাক বোঝাই যাচ্ছে না
ছেঁড়া ছেঁড়া ক’টি ছবি আমাদের যূথ-নগ্নতার
পারঙ্গম ক’টি স্বপ্ন, দিনে দেখা রাতের এরিনা
সন্ধ্যার আকাশ জুড়ে সাঁইসাঁই উড়ে যাওয়া ঢিল
বান্ধবীকে কুপ্রস্তাব আলগা টোকা দিয়ে ছুঁয়ে যাওয়া
বাসের ভিড়ের মধ্যে নিতম্বের নরম আবেশ
অথবা ফোনের স্ক্রিনে শব্দে শব্দে অতিযৌনতার
ভয়াবহ উদযাপন এ বেলার খবরকাগজে
আমার মাথা ও মুণ্ডু কিছুই ঢোকে না
অখিল একলামি হয় তোমার মিলন ছুঁয়েছেনে
দেওয়ালে চেটানো থাকে টিপ কিন্তু…
চেটানোই থাকে
বেশ তবে শুরু করা যাক
কিন্তু শুরু আর কতদূর
কিন্তু শেষ কতদূর তুরীয় ভূমিতে
মেন্টাল ম্যাপিং এক অনিবার্য টোপোফোবিয়ার
শিকার একটি লোকে এবং অন্যরা ততোধিক
মোষের ঘাড়ের মতো তেলচিটে পরম অপর
আমাদের ঘাড়ে জমে ফলত বিকেল হয়ে যায়
আলকুশি বন থেকে কে যে ডাক পাঠায়
পাগলের মতো এই স্মৃতিকণ্ডূয়ন
রন রন শব্দ হচ্ছে প্রকাণ্ড বহির্দেশ থেকে
আপনা হাত জগন্নাথ
ও নয়ন ও গো পথগামী
বেশ তবে শুরু করা যাক
চাদরের স্পর্শে আমি কুঁকড়ে গিয়েছি
স্পর্শহীনতাতায় একা কুঁকড়ে যায় আমার অপর
অপরাধবোধ গাঢ় হয়
তেপায়া চেয়ারে বসে সারাক্ষণ শূন্যের ভ্রমণ
এবং ভেতরে পূর্ণ অবিমিশ্র স্রোতলগ্নতার
প্রপঞ্চের ক’টি বীজ বন্ধার জমিনে রেখে যাব
কিন্তু কোথায় যাব দেহ গেহ বন্ধুর খাটালে
নিদারুণ কূটাভাস নিদারুণ আভাসহীনতা
জগতে আনন্দযজ্ঞে কোনো নিমন্ত্রণ বেঁচে নেই
ভেতরে সেঁধিয়ে যায় নিরাকার নীলাভ নরক
আর আমার বিষয়হীনতা
আমারই কাজের মাসি কুলিকামিনের ভিড়ে মিশে
সমূহ নির্জ্ঞান পায় আমি তার হদিস পাব না
বেশ তবে শুরু করা যাক
পাদরির বেদনা ছুঁয়ে হিজড়ের বেদনা ছুঁয়ে
দ্যাখো, আলো, ক্রমে আসিতেছে
ভবনের বাইরে দ্যাখো কিঙ্করের অনির্বাণ শিখা
অতি-চিতি সড়সড়িয়ে বনে ঢুকে যাবে
কখনও আসবে না ফিরে
কখনও লোকাল ট্রেনে চেপে
তোমাদের আমাদের দেখাই হবে না
গুহার বাইরে বসে মাংস খাবে আদিম লোকেরা
গনগনে উত্তাপে কত মিথ জন্ম নেবে
আপেলে কামড় দেবে ন্যাংটোপুটু যে কোনো মানুষ
নোয়ার নৌকা এসে মিশে যাবে পুরাণের জলে
তাতে দোলা লেগে হাওয়া দেবে
সে হাওয়ায় কেঁপে যায় শ্মশ্রু আমাদের
আর পিউবিক হেয়ার তারাদের গায়ে লেগে দিনমানে ঝিকমিক করে
বেশ তবে শুরু করা যাক
আমাদের ছিল এক পুরানো দেওয়াল
পুরানো জানিয়া তাকে ভুলিনি জনাব
খুব নিম্ন বৃত্ত আমাদের
খোয়াবে খোয়াবে বাঁচা আমরা চিলেকোঠার সেপাই
হাজরি আর মুড়ি দিলে গাঁয়েগঞ্জে রামায়ণ গাই
পুরানো দেওয়াল ছিল আমাদের তবু আমরা বোধিধর্ম নই
সত্তার বহির্দেশে কিছু ফুসকুড়ি রাখবোই
বেশ তবে শুরু করা যাক
পিলচু বুড়োর হাড় পাওয়া গেল মিথের ভেতরে
আমাদের খুব জাগরণ
আমরা অস্ট্রিক নাকি কাঁদরের নিচে থাকা হাড়
নাকি সম্ভাবনা, নাকি জিজ্ঞাসা জন্মের কোনো খেই
আমরা জানি না
লিপস্টিক লাগানো ঠোঁট আমাদের মেয়েদের নয়
বেশ তবে শুরু করা যাক
এইটবি-র বাসে বসে আছি
বাইরে কুসুম ঠাণ্ডা হাওয়া
ভেতর অনেক গান গাওয়া
এপারে খণ্ড খোঁড়া ছবি
ওপারে শুধুই মিলে যাওয়া
এপারে নদীর এইপার
ওপারে নদীর ওইপার
যেরকম উদ্ধারণ থেকে
কাটোয়ায় হয় পারাপার
বেশ তবে শুরু করা যাক
শেষের অন্তর্গত শুরু
একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে
ছেলেটি নাচায় জোড়াভুরু
কিন্তু আমি এসব জানি না
বিষয়হীনতা বেড়ে যায়
নাকাবন্দি জ্বলে ওঠে কাড়াদের নিজস্ব খেলায়
বেশ তবে শেষ করা যাক
একদিনের ট্যুর থেকে ফিরে এল অপরেরা নিজকাজে মন দিল শিশু
খায়দায় হিসু করে বিছানায় এবং করে না
শব্দের ওপারে গিয়ে দ্বন্দ্ব হাতড়ায় কিছু ভুলভাল মানুষ
ঘটাকাশে শূন্য বলে পটাকাশে এঁকে রাখে ছবি সে দ্বন্দ্বের
শ্রমণের নীরবতা নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে বাঙ্ময়
বেশ এবার শেষ করা যাক
ছেঁড়াফাটা ছবিগুলি গোলাকার পিণ্ড ক’রে অসীম আকাশ জুড়ে মেলে রাখতে হয়।
খুবই ভালো লাগল । তবে কবিতাটি আরও দীর্ঘতা দাবি করছে। এইরকম আমার মনে হল।
ধন্যবাদ জানবেন
ভালো লাগল। তবে আমার মতে একটু এডিটিং প্রয়োজন ছিল হয়ত। পড়তে গিয়ে একটু লুসিড লাগছে।
ধন্যবাদ জানবেন
স্বাভাবিক উৎসারণ।সুন্দর ।তবে একটু অতিকথন আছে । কিন্তু ভালো বলতেই হবে ।
লেখার অনায়াস গতি খুব ভালো লাগলো। কোথাও পৃথক আরোপণ নেই।