
অনুভা নাথ-এর কবিতা
যুদ্ধের মানুষ
তরল বিষাদে ডুবো জাহাজের মতো খড়কুটো আঁকড়ে রয়েছে যুদ্ধের মানুষ।
মাটির মতো কালো,নিবিড় শোক। অনন্ত বুলেট আর ফুরন্ত বেলায় চোখ ঝলছে উঠছে আগুনের গনগনে তাপে।
অথচ অন্তরীক্ষের ছবিতে দেশটির বিন্যাস একই রকমের।
সে দেশের নদীরা যেন এক একটা চিতা। জলের মতো স্বচ্ছ অথচ গভীর দহনে জ্বলে উঠছে অবিরত।
শিশুদের খেলনাবাটিতেও সন্ত্রাসের বসত। তারা ফুল জানে না, চেনে না ভালবাসা আবেশ। তাদের মুখগুলো যেন এক একটা বারুদের নল। পুড়তে জানে,গড়তে নয়।
অথচ তখনও অন্তরীক্ষের ছবিতে দেশটির বিন্যাস একই রকমের।
গাছ আর নারী নি:স্ব হয়েছে হিসাবের আবর্তে। দু’দিনের বাঁচা,পরিবর্তে তিনবার ছিঁড়ে,কামড়ে তছনছ…
অথচ কী অদ্ভুতভাবে,অন্তরীক্ষের ছবিতে দেশটির বিন্যাস একই রকমের।
তর্পণ
উদযাপনের আলোয় মুক্তি খুঁজে চলে বিলম্বিত জীবন।
অগরুচন্দন,তিলাঞ্জলি আর মন্ত্রের প্রতিক্ষায় জেগে ওঠেন আমার বাবা।
পুবের আকাশে তখন জলকণার দাগ লাগা সূর্য ছুঁয়ে দিচ্ছে ফেলে আসা মুহূর্ত
একটু জল… পিতৃলোক থেকে নেমে আসে পূর্বপুরুষের আবেদন
শিউলির অবগাহন জুড়ে আমি স্বগতোক্তি করি,কী দেব তোমায়? এই নি:স্ব,রিক্ত পৃথিবীর কাছে আমি যে তোমার চেয়েও বেশি অসহায়।
জলে ঢেউ ওঠে,আমি ঘূর্ণি দেখি।গভীর, সর্বগ্রাসী শুষে নেওয়া এক ঘূর্ণি।
আয়ুর ঈশ্বর অলক্ষ্যে হাসেন,আমি চোখ বন্ধ করে নিই।
মুগ্ধ পাহাড়
কার্তিকী হিমঘ্রাণের মতো পাতলা সন্ধ্যের কাছে আরও নতজানু হয়ে যাই।
পাহাড়ি ফুল আর প্রেয়ার ফ্ল্যাগের পবিত্র দাগের মতো অপেক্ষারা ছড়িয়ে পড়ে স্মৃতির পলকে।
শিশিরের দানা জমাট বাঁধে ভোরের আনাচে কানাচে।
নীল স্কার্ফ জুড়ে তখন শুধু রুদ্ধ ঝরণার প্রলাপ ঝরে পড়ে দিনের শরীরে।
সবুজ গুমখুন রঙের ওই স্তূপ থেকে পাইন কুড়িয়ে নেয় সময়ের অবকাশ।
হেয়ারপিন বেন্ড খুলে রাখে তার ধূসর এলোখোঁপা। সাদা কুয়াশায় তখন পালকের মতো আঁচড় কাটে আকাশের শরীরে।
কিশোরীর চুলের ফিতে আরও সরু হতে হতে কখন যেন নদী হয়ে ওঠে।
উপত্যকার ট্যুরিস্ট রোদ পাহাড়ের ঢেউয়ে
সমর্পণ করে সমস্ত মুগ্ধতাকে।